skip to Main Content

ফুড বেনিফিট I স্বাদের লাউ সাধের লাউ

স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্যচর্চায় লাউয়ের অবদান অসামান্য। এর জুসও যথেষ্ট উপকারী
লাউ কোকারবিটাসিয়া বর্গের একটি সবজি। এর রয়েছে ৯৬৫টি প্রজাতি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং সুপরিচিত প্রজাতিগুলোর একটি হলো কলাবশ। লাউও এই প্রজাতির। এই উদ্ভিদের ফুল সাদা। এই সবজি বিভিন্ন আকার (গোল, লম্বা, বোতলাকৃতি) হয়ে থাকে। ধারণা করা হয়, লাউয়ের উৎপত্তি আদি আফ্রিকায়। কলম্বাসের আমেরিকা আবিষ্কারের আগে হাজার হাজার বছর ধরে আফ্রিকা ও এশিয়ায় লাউ চাষের প্রচলন ছিল। পরে অভিবাসন-প্রক্রিয়ার ফলে এর চাষাবাদের বিস্তার ঘটে এবং বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে।
লাউ উৎপাদন করা হয় মূলত খাওয়ার জন্য। তবে প্রাচীনকাল থেকে শুকানো লাউ দিয়ে তৈরি পাত্র বা পাইপ তরল পদার্থ রাখার কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
এই সবজিতে আছে নানা পুষ্টি উপাদান। প্রতি ১০০ গ্রামে রয়েছে কার্বোহাইড্রেট ৩ দশমিক ৩৯, প্রোটিন শূন্য দশমিক ৬২, ফ্যাট শূন্য দশমিক ০২, ডায়াটারি ফাইবার শূন্য দশমিক ৫ গ্রাম। ভিটামিন সি ১০ দশমিক ১, সোডিয়াম ২৬, লৌহ শূন্য দশমিক ২০, ম্যাগনেসিয়াম ১১, ফসফরাস ১৩, জিংক শূন্য দশমিক ৭০ মিলিগ্রাম এবং ফোলেটস ৬ মাইক্রোগ্রাম।
লাউ বিভিন্ন রোগের দাওয়াই হিসেবে অসাধারণ। সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রতিদিন পর্যাপ্ত লাউ খাওয়া প্রয়োজন। ভিটামিন সি, কে এবং ক্যালসিয়ামে সমৃদ্ধ বলে এটি হৃদ্‌পিণ্ড সুস্থ রাখে আর কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দেয়। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ১ গ্লাস লাউয়ের জুস খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আসে। এটি রক্তচাপের মাত্রা স্থির রাখতে অত্যন্ত কার্যকর। বিশেষ করে গরমের দিনে এই জুস শরীরে প্রশান্তি জোগায়। পানিশূন্যতা রোধ করে। লাউয়ে দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয় ফাইবার আর প্রচুর পানি থাকায় কোষ্ঠকাঠিন্য, অ্যাসিডিটি থেকে মুক্তি দেয়। পাইলসজনিত সমস্যায় লাউ খেলে ভালো ফল পাওয়া যায়। এর ৯৬ ভাগ পানি দেহে পানিযোজনে সাহায্য করে। দেহের অতিরিক্ত তরল বের করে মূত্রবর্ধক রূপে কাজ করে। ১ চা চামচ লেবুর রসের সঙ্গে ১ গ্লাস লাউয়ের জুস মিশিয়ে খেলে মূত্রনালির জ্বালার উপশম হয়। এই সবজিতে আছে ভিটামিন সি, ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস, পলিফেনল অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যৌগ। এগুলো এতই শক্তিশালী যে দেহের গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যঙ্গ লিভার ও কিডনি পরিষ্কার রাখতে সক্ষম।
লাউয়ের জুস আমাদের দেহে কোলাজেনের উৎপাদন বাড়ায়। যা হাড়, রগ, তরুণাস্থিসহ বিভিন্ন সংযোজক অংশকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
গর্ভবতীদের জন্য লাউ খুব স্বাস্থ্যকর সবজি। উচ্চ ডায়াটারি ফাইবারে ভরা বলে এটি পরিপাকবর্ধক হিসেবে কাজ করে। গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য বা ওজন বৃদ্ধির সমস্যা দূর করে। লাউয়ে আছে প্রাকৃতিক আয়রনের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান, যা গর্ভবতীদের জন্য জরুরি। গর্ভাবস্থায় রক্তের প্রয়োজন বৃদ্ধি পায়। এ সময় তাই পরিমাণমতো লৌহের জোগান দরকার। এর উচ্চমাত্রার ভিটামিন সি শরীরে লৌহ উপাদানকে সঠিক পদ্ধতিতে শোষণ হতে সাহায্য করে। লাউয়ে সোডিয়াম, পটাশিয়াম এবং প্রয়োজনীয় মিনারেলও রয়েছে। সোডিয়ামের ঘাটতির জন্য গর্ভবতী মহিলারা অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন। লাউয়ের জুস সোডিয়ামের অভাব পূরণ করে। পাশাপাশি তৃষ্ণা নিবারণে ভূমিকা রাখে।
ত্বক ও চুলের সৌন্দর্যে এর অবদান অসামান্য। লাউয়ের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যৌগগুলো ফ্রি র‌্যাডিকেলের সঙ্গে যুদ্ধ করে অক্সিডেটিভ ড্যামেজ থেকে ত্বকের কোষগুলোকে সুরক্ষা দেয়। লাউয়ের জুস ত্বকের কালচে দাগ, বলিরেখার মতো বিভিন্ন বার্ধক্যজনিত সমস্যা কমাতে সক্ষম। শরীরের টক্সিন দূর করে ত্বকে ফিরিয়ে দেয় কোমলতা। মুখের ব্রণ এবং কুঁচকে যাওয়া রোধেও সক্রিয়। এটি ত্বকের ময়লা সরানোর পাশাপাশি অতিরিক্ত তেলও শোষণ করে। লাউয়ের কোলাজেন নমনীয়তার জোগান দিয়ে ত্বক রাখে টানটান। তিলের তেলের সঙ্গে লাউয়ের জুস মিশিয়ে পান করলে নিদ্রাহীনতার সমস্যা থেকে মুক্ত থাকা যায়। এই দাওয়াই ত্বকের জন্যও ভালো।
নিয়মিত এবং পরিমাণমতো লাউ খেলে সূর্যের ক্ষতিকর আলট্রাভায়োলেট রশ্মি থেকে ত্বককোষ মুক্ত থাকে। স্কিন ক্যানসারের মতো মারাত্মক রোগের ঝুঁকিও কমে যায়। লাউয়ের ভিটামিন, মিনারেল এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যৌগ চুলে পুষ্টি জোগায়। তিলের তেলের সঙ্গে এর জুস মিশিয়ে চুলের গোড়ায় ভালো করে ম্যাসাজ করলে যথেষ্ট উপকার পাওয়া যায়। এটি চুলের গোড়া শক্ত করে, ফলে চুল পড়া বন্ধ হয়। উজ্জ¦লতা বাড়ে। মাথার ত্বকের রক্তসঞ্চালন ক্ষমতার বিস্তৃতি ঘটে। অন্যান্য পুষ্টি উপাদান জিংক, কপার, আয়রনের প্রভাবও চুলের বৃদ্ধিতে দারুণ ক্রিয়াশীল। আয়ুর্বেদে সাদা হওয়া চুল থেকে নিস্তার পাওয়ার জন্য এই মিশ্রণটিকে ফলদায়ক মনে করা হয়। সমপরিমাণ আমলকী এবং লাউয়ের জুসের মিশ্রণ উকুন হওয়া রোধ করে। এটি পান করা যায় কিংবা মাথার ত্বকে ম্যাসাজ করা যায়।
লাউ স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী বটে, কিন্তু এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও রয়েছে। এর জুসে তিতাজাতীয় কিছুর মিশ্রণ যেন না ঘটে। নইলে গ্যাস, উদরাময় হতে পারে। এ ছাড়া লাউয়ের জুস গর্ভবতী মহিলাদের জন্য বিপজ্জনক। এটি গর্ভপাতের কারণ হয়ে থাকে। সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন এমন মায়েদের তিতা জুস খাওয়া উচিত নয়। এটি মা শিশু উভয়ের জন্য ক্ষতিকর।

 রেন্টিনা চাকমা
ছবি: সংগ্রহ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top