skip to Main Content
00

ফ্যাশন উইক I নর্র্থ ইস্ট ফ্যাশন উইকেন্ড ২০১৭

ভারতের গুয়াহাটিতে মনোরম পরিবেশে অনুষ্ঠিত হলো ফ্যাশন শো। দু’দিনের এই আসরে পোশাকের দীপ্তি ছড়িয়ে এসে লিখেছেন আফসানা ফেরদৌসী

ফেসবুকে দেখা গেল, ইফ্ফাত নামের এক ফেসবুক ফ্রেন্ড শিমুল সালাহ্ উদ্দিনের পোস্টে আমাকে ট্যাগ করেছিল। যেখানে তিনি ডিজাইনার খুঁজছিলেন ভারতের একটি শোর জন্য। তারপর তিনি ডিজাইনারদের পোর্টফোলিও বাংলাদেশ হাইকমিশন গুয়াহাটিতে পাঠান। ৫ ডিসেম্বর বিকেলে ফোনটি বেজে ওঠে। দেখি, কলটি এসেছে ভারতীয় একটি নম্বর থেকে। বাংলাদেশের অ্যাসিস্ট্যান্ট হাইকমিশনার (গুয়াহাটি), কাজী মুনতাসির মুর্শেদের কল ছিল এটি। তিনি আমন্ত্রণ করলেন ইন্ডিয়ার গুয়াহাটিতে নর্থ ইস্ট ফ্যাশন উইকেন্ড ২০১৭ ফিনালে ডিজাইনারের জন্য। বললেন, গত বছর বিবি রাসেল ছিলেন, এই বছর আমরা আপনাকে নিমন্ত্রণ করছি। সত্যি বলতে অনেক শো বাইরে করেছি, লন্ডনে বিবি রাসেলের সঙ্গে এক মঞ্চে শোও করেছি। কিন্তু এই আমন্ত্রণ অন্য রকম এক ভালো লাগায় ভরিয়ে দিল আমাকে।
সংগঠক দীপঙ্কর কাশ্যপ থেকে নিমন্ত্রণপত্র পেলাম। মাত্র এক সপ্তাহ আগে, যখন আমার ভিসা নেই। এদিকে ৩৫টি পোশাকের কালেকশন। তারপরেও কালেকশন গুছিয়ে রেখেছিলাম। অবশেষে যাওয়ার এক দিন আগে ভিসা পেলাম এবং ১৬ ডিসেম্বর বিকেলে গুয়াহাটিতে পৌঁছলাম। ওই দিন ছিল ২ দিনের শোর প্রথম দিন। ১২ জন ভারতীয় ডিজাইনার তাদের কালেকশন দেখিয়েছিলেন সেদিন। বিজয় দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ অ্যাসিস্ট্যান্ট হাইকমিশন একটি কালচারাল প্রোগ্রামের আয়োজন করেছিলেন। তাতে বাংলাদেশের ব্যান্ড গান পাগল এবং সেরা নাচিয়ে এসআই ইভানের নাচের দলের পারফরম্যান্স গুয়াহাটিবাসীর মন কেড়েছে। বিদেশে বসে বিজয় দিবসে নিজের দেশের এমন অনুষ্ঠান দেখে সত্যি অনেক গর্ব হচ্ছিল।

ভেন্যু শিল্পগ্রামে গেলাম রিহার্সালের জন্য। ছিলাম ওই দিনের ফিনালে ডিজাইনার। ৩৫ জন মডেল এবং কোরিওগ্রাফারের সঙ্গে রিহার্সাল শেষ করলাম দুপুরের মধ্যে। খোলা আকাশের নিচে সবুজের মধ্যে ৫০০ দর্শকের ভেন্যুটি ছিল অসাধারণ।
সন্ধ্যা ৭টায় প্রোগ্রাম শুরু হলো। খুব সুন্দর পরিবেশ। খোলা আকাশ, দূরে পাহাড়, আকাশে তারা এবং মাটিতে একটি সুন্দর র্যাম্প। দ্বিতীয় দিন ছিল শোর শেষ দিন এবং ১২ জন ডিজাইনারের কালেকশন ওই দিন দেখানো হয়। এরই কল্যাণে আমি আসামের নিজস্ব ফ্যাশনের বিচিত্র ধারা সম্পর্কে ধারণা পাই। ভারতের অন্যান্য রাজ্যের কাজও দেখার সুযোগ হয়। আমি যেহেতু ফিনালে ডিজাইনার, আমার কালেকশন দিয়েই ঘটেছিল প্রোগ্রামের উপসংহার।
গ্রিনরুমে এতজন মডেলকে রেডি করা সহজ হতো না, যদি ফেসবুকে পরিচয় হওয়া ইফফাত না থাকতো আমার শোর দিন। যেহেতু আমার শো শেষে ছিল, তাই এতে অংশগ্রহণ করা প্রায় সব মডেলকে পোশাক পরাতে পেরেছিলাম। তারাও অনেক সহযোগিতা করেছিল অল্প সময়ে প্রস্তুতি নিতে।

৩টা ভাগে বিভক্ত ছিল। প্রথম কালেকশন পটচিত্র থিমের, যেখানে ম্যাটেরিয়াল ছিল খাদি কাপড়। সঙ্গে আমার তৈরি করা খাদি পটচিত্রের গল্প। ওখানে ১৩টি পোশাক ছিল, সঙ্গে হ্যান্ডপেইন্টেড কনভার্স। বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে ছিল খাদি গল্পের ফিউশন পুঁথিগান। লিখেছেন ও গেয়েছেন শফিউল জনি। আমার এই কালেকশনের জন্য গানটি রচিত। গুয়াহাটির শ্রোতারা এর প্রশংসা করেছে।

দ্বিতীয় কালেকশনে ছিল স্পেশাল জামদানি সোয়েটার কালেকশন, যেখানে আমাদের দেশের জামদানিকে নতুন করে ভারতীয়রা দেখেছে। গুয়াহাটির মানুষ জামদানি শাড়ি খুব পছন্দ করে এবং এর মোটিফ সোয়েটারে দেখে তারা মুগ্ধ হয়েছিল এবং অন্য ডিজাইনাররা আমার এই কালেকশনের প্রশংসা করেছিল। যেহেতু গুয়াহাটি আমাকে আমন্ত্রণ করেছে, তাই কালেকশনটিতে স্থানীয় একটি গান ব্যবহার করেছিলাম।
তৃতীয় কালেকশনের থিম ছিল ওয়াক অব হ্যাপিনেস। এতে আমি সমাজ এবং পরিবেশের কিছু ইস্যুকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। রাজশাহী সিল্কে নকশিকাঁথার মাধ্যমে। সুন্দরবনের বাঘ, নদী, ধর্ষণ, মাদক, বিশ্বায়ন উঠে এসেছে এই কালেকশনে। মডেলরা খালি পায়ে, মাইকেল জ্যাকসনের আর্থ গানের সঙ্গে মঞ্চে হেঁটেছেন। 
পাঞ্চালি গুপ্তা ছিলেন আমার শো স্টপার। ৩৫ জন মডেল, ৩৫টি ড্রেসে, ১৬ মিনিটে আমার বাংলাদেশকে ইন্ডিয়ার র্যাম্পে তুলে ধরেছিল। একটি স্মারক এবং স্কার্ফের মাধ্যমে শো শেষে আমাকে সম্মান জানানো হয়।

অরিয়ান নয়াব, অঞ্জু হাজারিকা, মেহজাবিন এরশাদ, মৌসম চৌধুরীসহ আরও ২০ ডিজাইনার ছিলেন এই উইকে। অরিয়ান নয়াবের পুরো কালেকশন ছিল মেনজ ওয়্যার। অঞ্জু হাজারিকা আসামের ট্র্যাডিশনাল এথনিক কালেকশন প্রদর্শন করেন। মেহজাবিন এরশাদ প্রদর্শন করেন এথনিক ও ফিউশনের মিশেলে গড়া কালেকশন। মৌসম চৌধুরীও আসামের ট্র্যাডিশনাল পোশাক দেখিয়েছেন। ওখানকার ডিজাইনারদের সবাই কালারফুল ফ্যাব্রিক ও এমবেলিশমেন্ট ব্যবহার করেন।
দেশের বাইরের শোর ভালো দিকগুলো হলো, নতুন একটি দেশের ঐতিহ্য জানা, তাদের ফ্যাশন থেকে শেখা এবং নতুন কিছু বন্ধু পাওয়া। তাই যখন কোনো ফ্যাশনের কাজে বাইরে যাই, সে দেশের সংস্কৃতি বোঝার চেষ্টা করি। যা আমার অভিজ্ঞতার ঝুড়িতে নতুন একটি অধ্যায় যোগ করে।

ছবি সৌজন্য: লেখক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top