skip to Main Content

বিউটি ফিচার I বেসপোক বিউটি

সৌন্দর্যচর্চায় স্বকীয়তাই এখন শীর্ষে। আজকাল তাই বিউটি ব্র্র্যান্ডগুলোর ব্যক্তিকেন্দ্রিক ব্যাপ্তি ঘটছে

চল্লিশ বছর আগের কথা। লিন স্যান্ডারস নামের একজন কসমেটিক কেমিস্ট বাজারে নিয়ে আসেন তার নিজস্ব বিউটি ব্র্যান্ড ‘কসমেটিকস আ লা কার্ত’। ইউনিলিভার আর ইয়ার্ডলের মতো বিখ্যাত ব্র্যান্ডগুলোতে রিসার্চার হিসেবে অভিজ্ঞ লিনের এই ব্র্যান্ড ছিল আর দশটা মেকআপ ব্র্যান্ড থেকে আলাদা। কারণ, ব্র্যান্ডটির মূল নীতি। ‘ট্রাই বিফোর ইউ বাই’ নীতিতে চলা ব্র্যান্ডটিতে বিক্রি হতো ‘মেড টু মেসার’ অপশনে তৈরি সব কসমেটিক। এগুলো কেনার ক্ষেত্রে কাস্টম ব্লেন্ডিং ছাড়াও স্কিন ম্যাচিংয়ের সুবিধা ছিল। লিন অভিজ্ঞ মেকআপ আর্টিস্টদের নিয়োগ দিতেন, যারা ক্রেতার স্কিন টোন আর টাইপ বুঝে তৈরি করতেন কাস্টমাইজড ব্লেন্ডের ফাউন্ডেশন। এমনকি কালার ম্যাচিং লিপস্টিক আর আইশ্যাডোও তৈরি হতো স্টোরে বসেই। ক্রেতার সঙ্গে কনসাল্ট করে। মূলত কালার কসমেটিকস ব্র্যান্ডগুলোতে বিকল্পের অপ্রতুলতা থেকেই কসমেটিকস আ লা কার্তের জন্ম। ফলে সমস্যা মিটে যায় অনেক সৌন্দর্যসচেতন নারীর। ব্যক্তিচাহিদার ভিত্তিতে তৈরি এসব সৌন্দর্যপণ্য ব্যবহার করে তারা সেজে উঠতে পারেন তাদের শ্রেষ্ঠ সংস্করণে।
বছর-পুরোনো এ ধারণাই পাল্টে দিচ্ছে সৌন্দর্যচর্চার প্রচলিত পদ্ধতি। পরিবর্তিত হচ্ছে মেকআপ, স্কিন অ্যান্ড হেয়ার কেয়ার প্রডাক্ট তৈরির ধারা। আগে বিউটি ব্র্যান্ডগুলো কাজ করতো ‘ওয়ান সাইজ ফিটস অল’-এর মতো ব্ল্যাঙ্কেট বিউটি নীতিতে। তবে এখন ব্যক্তিই তৈরি করছে ব্র্যান্ড। প্রাধান্য পাচ্ছে তার প্রয়োজন। সে অনুযায়ী তৈরি হচ্ছে পণ্য। প্রেসক্রাইবড প্রডাক্টের জায়গা দখল করে নিচ্ছে পার্সোনালাইজ প্রডাক্ট। এর কারণও রয়েছে মেলা। বিকল্পের অভাব তো ছিলই, তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ক্রমবর্ধমান ‘কালচার অব কাস্টমাইজেশন’। পোশাক, খাবার কিংবা সৌন্দর্যপণ্যে অন্যের অভিমতকে অনুকরণ কিংবা গুরুত্ব দেওয়ার দিন শেষ। নিজস্ব প্রয়োজন এবং পছন্দকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন সবাই। সঙ্গে যোগ হয়েছে সাম্প্রতিক এক সমীক্ষার ফল। সে অনুযায়ী, বিশ্বের তিন-চতুর্থাংশ নারী ভুল সৌন্দর্যপণ্য ব্যবহারে অভ্যস্ত। তাই ফল তো মিলছেই না, উল্টো ক্ষতির হার এবং সে আশঙ্কাই বাড়ছে। ফলে বিউটি ইন্ডাস্ট্রিতে বাড়ছে বেসপোক বিউটির বাজার। বড় বড় বিউটি ব্র্যান্ডও ঝুঁকছে এ ট্রেন্ডে। রেগুলার কালেকশনের পাশাপাশি তৈরি হচ্ছে বিশেষায়িত বেসপোক বিউটি প্রডাক্ট আর স্কিন কেয়ার রেঞ্জ।
মেকআপ
নতুন কিংবা পুরোনো- কসমেটিকস কোম্পানিগুলোর প্রচেষ্টা এখন একটাই- নিজস্ব পছন্দ এবং প্রয়োজন অনুযায়ী পার্সোনালাইজড প্রডাক্ট ক্রেতার কাছে পৌঁছে দেওয়া। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে সহজ এবং প্রচলিত প্রক্রিয়া হচ্ছে ক্রেতাদের অনলাইনে করা প্রশ্নের উত্তর নিয়ে পর্যালোচনা। তার সঙ্গে কালার ম্যাচিং ম্যাচ টু ম্যাচ টেকনোলজি দিয়ে চুল, চোখ ও ত্বকের রঙের ভিত্তিতে তৈরি করা হয় সৌন্দর্যপণ্য। লন্ডন বেজড কসমেটিকস কোম্পানি ট্রিনি লন্ডন বেসপোক পণ্য তৈরিতে বেছে নিচ্ছে এই পদ্ধতি। বেসপোক আইমেকআপ তৈরি করছে ‘আইকো’ নামের একটি ব্র্যান্ড। ক্রেতারা তাদের আইল্যাশ, শেপ আর পছন্দের স্টাইলের ওপর ভিত্তি করে উত্তর দিচ্ছেন ব্র্যান্ডটির ওয়েবসাইটে থাকা অনলাইন ফর্মে। সে অনুযায়ী কাস্টমাইজড ফর্মুলা এবং ব্রাশের কম্বিনেশনে তৈরি হচ্ছে মাসকারা। সমীক্ষা বলে, শতকরা ৭৮ ভাগ নারী ফাউন্ডেশন বাছাইয়ের সময় ভুল রঙের শেডটা বেছে নেন। সে সঙ্গে লাইটওয়েট, ফুল, কাভারেজ, ওয়াটার প্রুফ, ইলিউমিনেটিং, অ্যান্টি এজিং, ব্লারি, ময়শ্চারাইজিং ফাউন্ডেশনের হরেক রকম অপশন থেকে নিজের যথাযথটা বেছে নিতে গিয়ে হিমশিম খান অনেকেই। এই অবস্থায় বেসপোক ফাউন্ডেশন অনেক সুবিধাজনক। ক্রেতাদের প্রশ্নের উত্তর পর্যালোচনার পাশাপাশি ইনস্টোর কনসালটেশন আর অত্যাধুনিক সব যন্ত্রের মাধ্যমে বেছে দেওয়া হয় যথাযথ শেড। বেসপোক ফাউন্ডেশন তৈরিতে কভার ফ্রিক্সের কাস্টম কাভার ড্রপ, বুটসের বিউটি ব্র্যান্ড নাম্বার সেভেন এ ক্ষেত্রে এগিয়ে আছে তালিকায়।
ত্বক এবং চুলচর্চায়
ত্বকচর্চার জন্য তৈরি পণ্যগুলো মূলত তৈলাক্ত, শুষ্ক আর মিশ্র ত্বকেই বিভক্ত। কিন্তু প্রচলিত এই ধারার বাইরেও ত্বকের অনেক রকম সমস্যা থাকে, যা অনেক বড় বড় স্কিন কেয়ার ব্র্যান্ডও পাশ কাটিয়ে যায়। বেসপোক বিউটি ট্রেন্ডই এ ক্ষেত্রে বড় ভরসা। স্কিন কেয়ারের জগতে এ ট্রেন্ডের বড় আবিষ্কার ফেস ম্যাপিং। ত্বককে আরও ভালো করে বোঝার জন্য মূলত ডিজাইন করা হয় এটি। এ প্রক্রিয়ায় ত্বকের ইঞ্চি থেকে ইঞ্চি বিশ্লেষণ করেন বিশেষজ্ঞ স্কিন থেরাপিস্টরা। বের করে আনেন ত্বকের প্রয়োজনীয় সব তথ্য। সেগুলো মেনে এক্সপার্ট মিক্সোলজিস্টরা তৈরি করেন সিরামসহ ত্বকচর্চার নানা পণ্য। অনেক কোম্পানি আবার বিশেষজ্ঞদের তৈরি অনলাইন প্রশ্নোত্তরের ভিত্তিতে তৈরি করেন পণ্য। সঙ্গে আধঘণ্টার ক্লিনিক কনসালটেশনও চলে। তারপর নানা ধরনের বুস্টারের কম্বিনেশনে তৈরি হয় বেস ক্রিম। ত্বকের সমস্যা চিহ্নিত করে ক্রিমে যোগ করা হয় নানা ধরনের উপাদান। এ ছাড়া ক্লায়েন্টের ত্বকের হাইড্রেশন এবং অয়েল লেভেল চেক করেও অনেক কোম্পানি তৈরি করে ত্বকচর্চার পণ্য।
পার্সোনালাইজড হেয়ার কেয়ারের দারুণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে সিস্টেম প্রফেশনাল। যারা ১৭৪ মিলিয়নের ওপর প্রডাক্টের কম্বিনেশনে ক্রেতাদের জন্য তৈরি করছে চুলের বেসপোক সলিউশন।
ফেশিয়াল
বিউটি পার্লারের সার্ভিস লিস্টে থাকা পুরোনো সেই ফেশিয়ালগুলোর বদলে কাস্টমাইজড বেসপোক ফেশিয়াল অনেক বেশি কার্যকর। পার্লারগুলোর প্রিসেট ট্রিটমেন্ট থেকে একদমই আলাদা এগুলো। ক্লায়েন্টের ত্বকের অবস্থা দেখে, সমস্যা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হয়ে ডিজাইন করা হয় বেসপোক ফেসিয়াল। শুধু সেই ক্লায়েন্টের জন্য। গ্রাহক ভেদে পাল্টে যায় পিল, পেপটাইডের মতো উপাদান। তারতম্য হয় প্রেসারের মাত্রায়, পাল্টে যায় প্রেসার পয়েন্ট। প্রক্রিয়াতেও আসে পরিবর্তন। ফলে ত্বক পায় তার প্রয়োজন অনুযায়ী পরিপুষ্টি।

 জাহেরা শিরীন
মডেল: সূর্য
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: সৈয়দ অয়ন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top