skip to Main Content

বিশেষ ফিচার I উৎসব, রান্না ও মসলার ইতিবৃত্ত

মসলার মাধুর্যে পদ সুস্বাদু। রসনা উদ্বেল হয় রান্নার অতুল্য রসায়নে। উৎসবের এই মসলা উপকরণ আর নানা পদের রসাল কাহিনি শুনিয়েছেন আহমাদ শামীম

পেটপূজা তথা ভোজনের প্রশ্নে বাঙালির জুড়ি মেলা ভার। প্রতি বেলায় কয়েক পদের খাবার না হলে যে আমাদের চলেই না। আর উৎসবের দিনগুলোয় মুখরোচক হরেক রকম খাবার রান্নার ধুম পড়ে যায় ঘরে ঘরে। শুধু রান্না করলেই তো আর হয় না, খাবার হতে হবে সুস্বাদুও বটে। তো, খাবার সুস্বাদু করতে হলে কী প্রয়োজন, প্রয়োজন একটাই—মসলা। স্বাদ, বর্ণ ও গন্ধের মেলবন্ধনে খাবার অতুলনীয় হয়ে ওঠে মসলার কল্যাণেই। বিভিন্ন রান্নায় বিভিন্ন মসলা, ফলে আমাদের এখানে মসলার বৈচিত্র্যও কিন্তু কম নয়। যে মানুষটি রান্না করতে ভালোবাসেন, তার হেঁসেলঘরে থাকে নানান মসলার ছড়াছড়ি। কারণ, রান্নায় মসলার যেকোনো বিকল্প নেই। মসলা ছাড়া রান্নার কথা ভাবাই দায়।
বাঙালির রসনাবিলাসের ইতিহাসও কম পুরোনো নয়। বলা চলে, কয়েক শ বছর পাড়ি দিয়ে নানান বিবর্তনের মধ্য দিয়ে আজকের এই জায়গায় এসেছে আমাদের রসনাবিলাস। ফলে, দেশের সীমা পেরিয়ে ভিনদেশেও ছড়িয়েছে আমাদের রান্নার সুখ্যাতি। এর কারণ আর কিছুই নয়, রান্নায় বাহারি সব মসলার ব্যবহার। পেঁয়াজ, রসুন, আদা, জিরা, ধনে, হলুদ, মরিচ, লং, দারুচিনি, কালিজিরা, মেথির মতো এত সব বাহারি মসলা বাংলাদেশ তথা এই উপমহাদেশ ছাড়া অন্য কোথাও দেখা যায় না। আর উৎসবের কালে সেটা হোক ঈদ, পূজা কিংবা বিয়ে, এ সময়ে খাবারের যে দীর্ঘ তালিকা তৈরি হয়, সেখানে তো মসলার ব্যবহার বেড়ে যায় দ্বিগুণ।
আজকের দিনের সুস্বাদু রান্নায় বাহারি মসলার ব্যবহার কিন্তু হাজার বছরের অভিজ্ঞতার ফসল। এই অঞ্চলের মাটি, রোদ-বৃষ্টি আর আলো-ছায়ার কল্যাণে এখানে গড়ে উঠেছে বৈচিত্র্যময় উদ্ভিদজগৎ। সুগন্ধি তেজপাতা হয়তো একদিন ছিল সাধারণ কোনো গাছ মাত্র। সুঘ্রাণের কারণে কেউ এটা ব্যবহার করেছে রান্নায়। দারুচিনি যে গাছের বাকল, সেটা কে না জানে! এভাবে একে একে আরও মসলার নাম, যেগুলো কীভাবে এবং কবে রান্নার অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে, তা বলা মুশকিল বৈকি, ইতিহাসেও লেখা নেই নিখুঁত কোনো তথ্য। তবে এ কথা সত্য, এখানকার প্রকৃতির এসব উপহার কিন্তু দিনে দিনে বাড়িয়েছে আমাদের জিহ্বার স্বাদ।
ইতিহাস বলে, প্রায় হাজার বছর আগে থেকেই ভারতীয় উপমহাদেশ বিখ্যাত ছিল মসলা-বাণিজ্য ও বিচিত্র সব মসলার উৎপাদনের জন্য। বর্তমান ভারতের কেরালা রাজ্যের অন্তর্গত কাজিকোড় জেলার কালিকট বন্দর প্রাচীনকাল থেকেই ছিল মসলার বাণিজ্যের প্রধান কেন্দ্র। মালাবার, মালয়, ইন্দোনেশিয়া প্রভৃতি অঞ্চলে উৎপাদিত গোলমরিচ, এলাচি প্রভৃতি মসলা মালয়ের মালাক্কা হয়ে ভারতের কালিকট ও পার্শ্ববর্তী অন্যান্য বন্দরে আসত। তারপর আরব বণিকেরা মসলাবোঝাই জাহাজ নিয়ে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে লোহিত সাগরের বন্দরে বন্দরে ভিড়ত। সেখান থেকেই এই মসলা পুরো ইউরোপের বাজারে ছড়িয়ে যেত। এভাবেই মসলার বাণিজ্যের ওপর ভিত্তি করে সমৃদ্ধির শিখরে ওঠা কালিকট বন্দরের খ্যাতি ছিল বিশ্বজুড়ে।
প্রাচ্য অঞ্চলের সবচেয়ে বেশি মসলা উৎপন্ন হতো ইন্দোনেশিয়ার দ্বীপগুলোতে। এই অঞ্চলে দ্বীপের সংখ্যা ছিল প্রায় তিন হাজার। দ্বীপগুলো ছিল মসলার জন্য বিখ্যাত। প্রাচীনকাল থেকেই এদের সঙ্গে ভারতবর্ষের যোগাযোগ ছিল। বহু শতাব্দী আগে ভারতীয়রা মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়াসহ অন্যান্য স্থানে অনেক উপনিবেশ স্থাপন করেছিল। ভারতের বণিকেরা ইন্দোনেশিয়া থেকে জাহাজ বোঝাই করে মসলা নিয়ে আসত, আর তাই নিয়ে দেশে দেশে বাণিজ্য করে ফিরত। ভারতের বণিকেরা ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে কবে থেকে মসলা-বাণিজ্য শুরু করেছিল, তা নির্দিষ্ট করে বলা যায় না। তবে কালিদাসের রঘুবংশ কাব্যে তার কিছুটা উল্লেখ আছে। কবি সমুদ্রের ওপারের দ্বীপগুলো থেকে সুগন্ধি মসলাবোঝাই ভারতীয় জাহাজের বর্ণনা করেছেন। ফলে, প্রাচীনকাল থেকেই ভারতবর্ষ মসলার জন্য ইউরোপীয় দেশগুলোর কাছে আকর্ষণের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল।
মসলার হাত ধরে ইতিহাসের গলিপথ ঘুরে এবার আসা যাক বঙ্গদেশে। নদীমাতৃক প্রাচীন বাংলার মানুষদের জীবনযাপন ছিল মূলত কৃষিভিত্তিক। গোলা ভরা ধান, পুকুর ভরা মাছ আর গোয়াল ভরা গরুর প্রবাদ সত্য বৈ মিথ্যা ছিল না। সে সময়কার উচ্চবিত্তদের জীবনধারায় উৎসব আনন্দেও ছিল বাহারি রান্না ও আহারের প্রচলন। সাহিত্যের পাতা থেকে যদি উদাহরণ দিই, মঙ্গলকাব্যের মনসামঙ্গলের অন্যতম প্রধান চরিত্র চম্পক নগরের বিত্তশালী বণিক চাঁদ সওদাগরের ছেলে লখিন্দরের বিয়ে বেহুলার সঙ্গে। সেখানে দেখা যায়, রান্না আর খাবারের উৎসব বসেছে যেন। রান্না হয়েছে ১৮ ধরনের মাছের পদ, বেসন দিয়ে চিতল মাছের কোল ভাজা, মাগুর মাছ দিয়ে মরিচের ঝোল, বড় বড় কৈ মাছ কাটার দাগ দিয়ে জিরা-লবঙ্গ মাখিয়ে ভাজা হচ্ছে তেলে। আরও আছে মহা শোলের অম্বল, ইচা তথা চিংড়ি মাছের ঝোল, রোহিত মাছের মাথা দিয়ে মাষকলাইয়ের ডাল, আম দিয়ে কাতলা মাছ, পাবদা মাছ ও আদা দিয়ে শুকতুনি, আমচুর দিয়ে শোল মাছের পোনা, তেঁতুল মরিচসহ বোয়াল মাছের ঝাঁটি, ইলিশ মাছ ভাজা, ভাঙনা, রিঠা, পুঁটি মাছ ভাজা। মাংসের পদের মধ্যে খাসি, হরিণ, মেষ, কবুতর, কাউঠা (ছোট কচ্ছপ) প্রভৃতির মাংস দিয়ে রান্না হয়েছে নানাবিধ ব্যঞ্জন ও অম্বল।
বাংলার স্বাভাবিক খাদ্যাভ্যাস, রান্নার প্রকার ও প্রকরণ সময়ের পরিক্রমায় বিবর্তিত হয়েছে নানানভাবে গ্রামীণ জনপদের তুলনায় এই পরিবর্তন ঘটেছে বেশি শহরে। বাঙালির খাবারের পরিবর্তন বলি আর বিবর্তন বলি, সেটা হয়েছে নানান সময়ে এখানে আসা বহিঃশক্তির হাত ধরে। ১৬১০ (মতান্তরে ১৬০৮) সালে ঢাকা বাংলার প্রাদেশিক রাজধানীর স্বীকৃতি পায়। মোগলেরা আসার আগে আফগান তথা পাঠানেরা এখানে আসে। তাদের সঙ্গে অনেক তুর্কিও ছিল। পাশাপাশি মোগলদের সঙ্গে এসেছিল পশ্চিম ভারতীয় এলাকার বিশেষ করে, দিল্লি আর আগ্রার জনগণ। সঙ্গে ছিল ফার্সিভাষী পারস্য এলাকার মানুষ। ইংরেজ, গ্রিক, পর্তুগিজ, ফরাসিরা তো ছিলই; দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আমেরিকা ও আফ্রিকান নিগ্রো সেনাসদস্যরা ঢাকায় এসেছিল। ভারতের পূর্বাঞ্চলের গোর্খা রেজিমেন্টও ঢাকায় ছিল অনেক দিন। ঢাকায় যেসব ইসলামি সুফি-সাধক এসেছেন—তাদের অনেক সঙ্গী-সাথী ছিল বাগদাদ, বসরা, ইয়েমেন ও আরব অঞ্চলের অধিবাসী। দেশভাগের পর পাকিস্তানের আওতায় এসে এখানকার অধিবাসীদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিহার, কানপুর, নাগপুর, হায়দরাবাদ, বেরেলি, ইস্পাহানী, মারাঠা ও মাদ্রাজি জনগোষ্ঠী। পশ্চিম বাংলার মুসলমানরাও এখানে আবাস গড়েছে কালে কালে। পাকিস্তান আমলে পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী আর বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশের ৬৪ জেলার অধিবাসীরা বসবাস শুরু করেছে ঢাকায়। এ ছাড়া ব্রিটিশ আমলে অনেক পেশাজীবী চীনা ঢাকায় বংশপরম্পরায় বাস করছে। পাকিস্তান আমলে পাঞ্জাব, সিন্ধুদের কিছু অধিবাসী ঢাকায় ঠাঁই নিয়েছে। পেশাজীবী, ব্যবসায়ী, যোদ্ধা, রাজকর্মচারী, রিফিউজি, ভবঘুরে; সময়ের প্রয়োজনে একদল এসেছে, একদল চলে গেছে আবার অনেকে এখানেই স্থায়ী হয়েছে। সমাজ সভ্যতার স্তরে স্তরে আন্তঃসামাজিক সম্বন্ধ গড়ে তুলে মূলত ঢাকা শহর শত শত বছরে অনেক বর্ণের, ভাষার, সংস্কৃতিকে যুগে যুগে আত্মস্থ করে নিজস্ব এক অনন্য মহিমা সৃষ্টি করে নিয়েছে। ফলে বাংলার তথা ঢাকার জনজীবনে ভোজনবিলাসিতায় নানান কিছুর সংমিশ্রণ তো ঘটেছেই, পাশাপাশি ভিন্ন ভিন্ন বর্ণ, উপাদান ও স্বাদমিশ্রিত খাবার তালিকার সমৃদ্ধি ঘটেছে কালে কালে। মূলত এসব ঘটনাই বাংলার রান্নার ভূগোল পাল্টে দিয়েছে।
ইতিহাসের অধ্যাপক শরীফ উদ্দীন আহমেদের মতে, ‘ঢাকাই খাবার বা ঢাকার স্থানীয় খাবার বলে যে খাবার প্রচলিত, সেটা মূলত মোগলদের খাবার। তবে এর রকমভেদ আছে। পারস্যের খাদ্যরীতির সঙ্গে ঢাকার খাদ্যরীতির মিশেল ঘটেছে। রান্নার ঢঙে পরিবর্তন এসেছে। পারস্যের রান্নায় যে মসলা ব্যবহৃত হয়, তার পরিবর্তে দেশীয় মসলা যুক্ত হয়েছে। কালক্রমে তৈরি হয়েছে নতুন এক খাদ্যধারা।’
প্রাক্-মোগল যুগে ঢাকার সুলতানি খাদ্যাভ্যাস ছিল তুর্কি, আরব, ইরানি বৈশিষ্ট্যমন্ডিত। তাদের মাংস-রুটি খাওয়ার অভ্যাসের সঙ্গে ঢাকার স্থানীয়দের ভাত-মাছের অভ্যেস মিশে গিয়েছিল। এরপর আসে মোগলরা, ঢাকায় সুবেদার ইসলাম খানের বাবুর্চিদের হাতে তৈরি খাবার মোগল খাবার হিসেবে পরিচিতি পায়। ঢাকার রান্নায় ব্যবহৃত অনুষঙ্গ যুক্ত হয়ে দিনে দিনে এই খাবারই ঢাকাই খাবার নামে পুরান ঢাকায় তথা বর্তমান ঢাকাসহ পুরো দেশেই সমানভাবে বিস্তার ও জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। এসব খাবারের মধ্যে আছে বিরিয়ানি, তেহারি, পোলাও, মোরগ-পোলাও, কোরমা, রেজালা, জর্দা, কোফতা, নানান পদের কাবাব, কালিয়া, নেহারি, বোরহানিসহ আরও হরেক পদের খাবার। এসব খাবারের আদি রান্নার প্রক্রিয়া কালে কালে বিবর্তিত হয়ে যোগ হয়েছে স্থানীয় মসলা ও কলাকৌশল। আর দিনে দিনে এসব খাবারই আমাদের স্থানীয় উৎসব আনন্দের প্রধানতম খাবার হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে।
উৎসব-পার্বণে আমাদের এখানে মাংসের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য। মাংসের কয়েক পদের কথাই যদি ধরি, যেমন মাংসভুনা, কালাভুনা, কালিজিরা দিয়ে মাংস, কলিজাভুনা, খাসির রেজালা ইত্যাদি—এগুলোয় কী কী মসলা লাগে, একবার চোখ বুলিয়ে দেখে নেওয়া যাক। গরুর মাংসের ভুনা করতে প্রয়োজন হবে টক দই, পেঁয়াজকুচি, আদাবাটা, রসুনবাটা, লাল গুঁড়া মরিচ, কাঁচা মরিচ, হলুদগুঁড়া, এলাচি, দারুচিনি। গরুর কালাভুনা তৈরিতে প্রয়োজন মরিচগুঁড়া, হলুদগুঁড়া, জিরাগুঁড়া, ধনিয়াগুঁড়া, পেঁয়াজবাটা, রসুনবাটা, আদাবাটা, গরমমসলা (দারুচিনি ও এলাচি), পেঁয়াজকুচি, কাঁচা মরিচ। তবে পছন্দ অনুসারে স্বাদ বাড়াতে আরও অনেক মসলাই ব্যবহার করা যেতে পারে। কালোজিরা দিয়ে গরুর মাংস রাঁধতে প্রয়োজন পেঁয়াজকুচি, মরিচ ও হলুদগুঁড়া, আদা-রসুন বাটা, গরমমসলা, কালিজিরা, আস্ত মরিচ।
বর্তমানে বিশ্বে ১০৯ ধরনের মসলা চাষ হলেও বাংলাদেশের মানুষ ব্যবহার করে প্রায় ৪৪ ধরনের মসলা। দেশে ব্যবহৃত মসলার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—আদা, হলুদ, মরিচ, রসুন, পেঁয়াজ, কালোজিরা, গোলমরিচ, জাউন, শলুক, আলুবোখারা, বিলাতি ধনিয়া, ধনিয়া, চিপস, সাদা এলাচি, কালো এলাচি, দারুচিনি, জাফরান, তেজপাতা, জিরা, মেথি, শাহি জিরা, পার্সলে, কাজুবাদাম, পানবিলাস ইত্যাদি মসলাপাতি।
স্বাদ আর সুঘ্রাণের জন্য মসলার ব্যবহার হলেও মসলার রয়েছে দারুণ পুষ্টিগুণও। রান্নায় যে দারুচিনি ব্যবহৃত হয়, এটা আমাদের শরীরের ব্যাকটেরিয়া ধ্বংসে কাজ করে। কাঁচা মরিচে রয়েছে ভিটামিন সি। লালমরিচ আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যকে ভালো রাখে, বাড়ায় রক্তচলাচল ও ক্ষুধা। হলুদ কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিকও বটে। হলুদে থাকে প্রচুর আয়রন আর কাঁচা হলুদ রক্তস্বল্পতায়ও খুব কাজে দেয়। পেটের যেকোনো পীড়ায় আরাম দিতে পারে কালিজিরা। প্রতিদিন অল্প পরিমাণে কাঁচা কালিজিরা চিবিয়ে খেলে স্বাস্থ্য ভালো থাকে। পেঁয়াজ আমাদের শরীরের রক্তকে তরল করে, যা শারীরিক সুস্থতার জন্য জরুরি। রসুন রক্তের চর্বি কমাতে সাহায্য করে। জিরায় রয়েছে ক্যালসিয়াম, যা হাড় ও দাঁতের জন্য উপকারী। কাঁচা ধনেপাতায় আছে পটাশিয়াম, যা আমাদের শরীরের পানির সমতা ঠিক রাখে। জায়ফল বা জয়ত্রীতে রয়েছে আয়রন ও ভিটামিন এ।
বাংলাদেশে ব্যবহৃত সব মসলার প্রায় অধিকাংশই আসে বাইরে থেকে আমদানির মাধ্যমে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে কয়েকটি মসলা পণ্যের আমদানি চিত্র সংক্ষেপে দেখে নেওয়া যাক। প্রথমেই বলি আদার কথা। আদা অর্ধেকের বেশি আমদানি করা হয় ইন্দোনেশিয়া থেকে। এরপরই আছে চীন। এ ছাড়া মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, মাদাগাস্কার থেকেও আদা আসে বাংলাদেশে। দারুচিনির বাজার মূলত চীন ও ভিয়েতনাম থেকে আসা পণ্যের দখলে। দেশে আমদানি করা এলাচির সিংহভাগ আসে গুয়াতেমালা থেকে। সামান্য কিছু ভারত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুর ও ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি হয়। অতিপ্রয়োজনীয় রসুনের বাজার দখল করে রেখেছে চীন। বাকিটা ভারত, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করা হয়। গোলমরিচের চাহিদা মেটানো হয় ভিয়েতনাম থেকে আমদানির মাধ্যমে। এ ছাড়া ভারত, মাদাগাস্কার, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ড থেকেও গোলমরিচ আসে। জিরা আসে ভারত থেকে, আমদানি করা জিরার ৭০ শতাংশের বেশি আসে দেশটি থেকে। এ ছাড়া তুরস্ক, মিসর, পাকিস্তান, কম্বোডিয়া থেকেও আমদানি হয়। আমদানি করা লবঙ্গের অর্ধেকের মতো আসে ব্রাজিল থেকে। এ ছাড়া আসে মাদাগাস্কার, শ্রীলঙ্কা, কমোরোজ দ্বীপ, ভারত ও ইন্দোনেশিয়া থেকে। সর্বোপরি দেশে প্রতিবছর বিভিন্ন মসলার চাহিদা প্রায় দেড় লাখ টন, যার বাজারমূল্য দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি!
রান্না করা খাবার উপাদেয় করে তুলতে মসলার কোনো বিকল্প নেই। উৎসবে-পার্বণে যখন রান্নার হিড়িক পড়ে যায় আমাদের ঘরে ঘরে, তখন শুধু স্বাদের কথাই বলি। স্বাদের অনুঘটক মসলার কথা স্মরণ করি কজনা। নানান কাজের কাজি এই মসলার তো শুধু একটি পণ্য, বরং মসলা আমাদের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও জীবন-যাপনের অন্যতম অনুষঙ্গও বটে।

ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top