skip to Main Content

বিশেষ ফিচার I পুরোটা পরোটা!

ভেতো বাঙালির নাশতায় জাঁকিয়ে বসা এই পরোটা আসলে মোগলদেরই উদ্ভাবন। তবে প্রকরণ পাল্টেছে। স্থানভেদে যোগ হয়েছে কারিগরদের মুনশিয়ানা। বদলেছে স্বাদ। ইতিহাসের পথ ধরে ঢাকাই পরোটার সুলুকসন্ধানে সামীউর রহমান

বাড়ির পরোটা কেন চতুর্ভুজ হয় আর রেস্তোরাঁরটা (এখনো আমরা যাকে হোটেল বলি) কেন বৃত্তাকার হয়, সেই উপপাদ্য আজও কেউ মেলাতে পেরেছেন? তবে আকৃতি যে রকমই হোক— সঙ্গে কাবাব, ভুনা মাংস, ডিম, চা কিংবা নিদেনপক্ষে খানিকটা চিনিসমেত পরোটা খেতে মজা। যদি হয় ঠিকঠাক ভাজা!
চার শ বছরের পুরোনো এই শহরটা ঘুমায় খুব কম সময়ই। গাড়ির হর্ন আর মানুষের শোরগোল কমে আসে, রাত যত গভীর হয়। ফজরের আজানের ধ্বনিতে মুয়াজ্জিন আবার প্রাণ ফিরিয়ে আনেন এই শহরে। নিভে আসে রাস্তার বাতিগুলো, উনুন জ্বলে ওঠে। সকালের হাওয়ায় ছড়িয়ে পড়ে পরোটা ভাজার সুবাস! কৃষিভিত্তিক এই বাংলায় প্রাতরাশ হিসেবে গুড়-মুড়ি, খই-বাতাসা আর পান্তাভাতের প্রচলন ছিল বেশি। আর শীতকালে খেজুরের গুড়ের পিঠাপুলি। সেখান থেকে শহুরেদের প্রাতরাশ হিসেবে পরোটা কীভাবে সর্বজনীন হয়ে উঠল, সেটা গবেষণার দাবি রাখে।
দিল্লির লাড্ডুসংক্রান্ত প্রবাদটির কারণে ভারতের রাজধানীর লাড্ডুর কথা ইতিহাসে লাড্ডু পাওয়া ছাত্রটিরও অজানা থাকার কথা নয়। তবে একটু যারা খোঁজখবর রাখেন বা পায়ের তলায় যাদের সর্ষে, তাদের নিশ্চয়ই জানা আছে যে ভারতবর্ষের ঐতিহাসিক এই নগরীতে একটি জায়গার নামই হচ্ছে পারাঠেওয়ালে গলি বা পরোটার গলি! পুরান দিল্লির মশহুর চাঁদনী চকের একটি সরু গলির দুধারে শতবর্ষী পুরাতন সব পরোটার দোকান। ইতিহাস বলে, সম্রাট শাহজাহানের আমলে এই জায়গার পত্তন; নকশা করেছিলেন খোদ শাহজাহানের কন্যা নূরজাহান! শুরুতে অবশ্য এখানে পরোটা বিক্রি হতো না, পরোটা বিক্রির শুরু ১৮৭০ সালের পর থেকে। কেন, তা জানতেও যে খানিকটা ইতিহাসের শরণ লাগবে!
১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহ যা আদতে ভারতবর্ষের প্রথম স্বাধীনতাসংগ্রাম, ব্যর্থ হওয়ার মধ্য দিয়ে পতন হয় মোগল সাম্রাজ্যের। ভারতবর্ষ চলে যায় সরাসরি ব্রিটিশ শাসনের অধীনে। ফলে মোগল পরিবারের হেঁশেলে বংশপরম্পরায় কাজ করে আসা অনেক শাহি পাচক, রসুই বেকার হয়ে পড়েন। তারাই এরপর যৎসামান্য পুঁজি নিয়ে চাঁদনী চক এলাকায় শুরু করেন খাবার তৈরি ও বিক্রি। প-িত গয়াপ্রসাদ শিবচরণ ছিলেন এ রকমই একজন, ১৮৭২ সালে পারাঠেওয়ালে গলিতে তিনি শুরু করেছিলেন পরোটা বিক্রি। এখন তার ষষ্ঠ পরবর্তী প্রজšে§র বংশধরেরা পূর্বপুরুষের স্মৃতি ধরে রেখেছেন। এ রকম আরও বেশ কয়েকটি দোকান সেখানে আছে, যারা বিক্রি করে থাকেন নানান স্বাদের পরোটা।
এতখানি পড়ে মনে হতে পারে, চাঁদনী চকের এই পারাঠেওয়ালে গলি থেকেই বোধ হয় মোগলাই পরোটার উৎপত্তি! ডিমের পুরভরা ডুবোতেলে ভাজা চৌকোনা এই পরোটার সঙ্গে রেস্টুরেন্টের ঘন দুধের কড়া চা না হলে যে সান্ধ্যকালীন আড্ডা জমে না। অবাক করা বিষয় হচ্ছে, মোগলাই পরোটার জš§স্থান দিল্লি নয়! পারাঠেওয়ালে গলির বেশির ভাগ দোকানই শুদ্ধ ব্রাহ্মণ পাচকদের হাতে পরিচালিত, এখানে ডিম তো দূরের কথা পেঁয়াজ-রসুনেরও উপস্থিতি নিষিদ্ধ। কঠোরভাবে নিরামিষাশী নীতি পালন করা হয় এখানে। ময়দা ও হাতে পেষাই করা আটার খামিরের ভেতর স্বাদমতো পুদিনাপাতা, ধনেপাতা, আলু, কাজুবাদাম, শুকনো ক্ষীরের খোয়া, ফুলকপি, মুলা, মটরসহ নানা ধরনের এক বা একাধিক পুর মিশিয়ে পরোটা বানিয়ে সেটা ভাজা হয় ঘিয়ে ডুবিয়ে। তারপর গরমাগরম পরিবেশন করা হয় মুলা-গাজরের আচার, টক দই আর সবজির সঙ্গে।
মোগলদের রাজধানী থেকে চলে আসা যাক ব্রিটিশ ভারতের প্রথম রাজধানীতে। যমুনার ধার থেকে গঙ্গাপাড়ের কলকাতায়। এখানে বাঙালির পছন্দের জলখাবার লুচি আর আলুর দমের রাজত্বে পরোটার প্রবেশ কঠিন হলেও এর বহিরাঙ্গটা দ্রুতই পরোটার দখলে চলে যায়। নিজামের বিফ কাঠি কাবাবকে পরোটা দিয়ে পেঁচিয়ে রোল করে দিতে বলেছিলেন কোনো এক সাহেবসুবো, তার ছিল রেসকোর্সে গিয়ে ঘোড়দৌড়ের বাজি ধরার তাড়া। তিনি বাজি ধরতে গিয়ে বাঙালির হাতে রোল ধরিয়ে দিলেন! সেই যে কাঠিতে গাঁথা শিক কাবাবকে পরোটা দিয়ে ‘রোল’ করে দিতে বললেন, এরপর থেকে কাঠি রোল যাকে বলে সগৌরবে চলিতেছে! সিনেমায় যেমন ‘রোল’ পাল্টায়, তেমনি রোলেরও ভোলবদল হয়েছে। ভেতরে কাবাবের বদলে ডিম, পনির, আলু ইত্যাদি ঢুকেছে কিন্তু অন্তর্জগতে আমিষ বা নিরামিষ যা-ই থাকুক না কেন, বাইরে মুচমুচে লাচ্ছাদার পরোটা। কলকাতার স্ট্রিট ফুডের কথা উঠলে এগরোলের কথা আসবেই! আর এই এগরোল কিন্তু আদতে পরোটার মোড়কের ভেতরে ডিমভাজাই!
কলকাতার রোলের কথা যখন উঠল, তখন নবাব ওয়াজেদ আলী শাহের কথাই-বা বিস্মৃত হই কেমন করে! কারণ, লক্ষেèৗ থেকে কলকাতা এসে আসর গুলজার করা এই নবাবই কলকাত্তাওয়ালাদের দিয়েছেন সত্যিকারের রোলের ধারণা।
ঢাকায় পরোটার প্রচলন নিঃসন্দেহে পুরান ঢাকার নবাবি অন্দরমহল থেকেই। সৈয়দ মুজতবা আলী ঢাকাইয়া কুট্টিদের সম্পর্কে লিখেছেন, তারা হচ্ছে মোগলদের শেষ ঘোড়সওয়ার সৈন্য। উত্তর ভারত থেকে বুড়িগঙ্গাপারে এসে আস্তানা গাড়া এই ঘোড়সওয়াররা বিচিত্র বুলির সঙ্গে যে মোগলাই খানাটাও নিয়ে এসেছিল, সেটা পুরান ঢাকায় একবার ঢুঁ মারলেই বোঝা যায়। ১৮৯৪ সালে চকবাজারে ব্যবসার শুরু করেন আলাউদ্দিন। তিনি ছিলেন হালুইকর অর্থাৎ ময়রা; এসেছিলেন লক্ষেèৗ থেকে। নানান রকম মিষ্টি, হালুয়ার সঙ্গে কিমা পরোটা, টানা পরোটাও বিক্রি শুরু করেন। এখনো তার পরবর্তী প্রজšে§র হাত ধরে এই পরোটার স্বাদ পাচ্ছেন রাজধানীবাসী। আরও অনেকেই মিষ্টির দোকানে রসগোল্লা কালোজামের পাশাপাশি পরোটার বন্দোবস্ত রাখতেন। মরণচাঁদের দই-পরোটা আর দেশবন্ধুর পরোটা-ভাজির উল্লেখ আছে বাংলাদেশের প্রবীণ সাহিত্যিকদের স্মৃতিকথায়। রাজনীতিবিদদের স্মৃতিচারণায় মেলে স্টেডিয়াম এলাকায় অধুনালুপ্ত ‘রেক্স’ রেস্টুরেন্টের কাবাব পরোটার কথা, যেটা কারাবন্দি অবস্থায় খেতে চেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও! কবি সুফিয়া কামালের স্মৃতিকথায় আছে, তাঁর নানা নাকি সেহরিতে ভাতের বদলে কোরমা দিয়ে পরোটা খেতেন! তবে স্টেডিয়াম প্রসঙ্গ যখন এলোই, তখন ইসলামিয়ার কথাই-বা বাদ যায় কেন! এই রেস্তোরাঁ ছিল খেলাপাগল দর্শক থেকে ক্রীড়াবিদ মায় সাংবাদিক— সবার কাছে কলকাতার কফি হাউসের নামান্তর। তবে সেটাও লুপ্ত হয়েছে বেশ কয়েক বছর।
সকালের নাশতায় ডাল-ভাজির সঙ্গে কিংবা সন্ধ্যার আড্ডায় শিক কাবাবের সঙ্গী হিসেবে পরোটাকে বলা যায় ‘ফুড ফর অল সিজনস’। রাস্তার ধারের ছাপরা হোটেল থেকে শুরু করে তারকা হোটেলের বুফে ব্রেকফাস্টের টেবিলেও এটি স্বমহিমায় বিরাজমান। প্রতিটি রেস্তোরাঁ কিংবা কারিগরেরই আছে এটি ভাজার নিজস^ কৌশল, যার কেরামতি লুকিয়ে আছে ময়ান দেওয়া থেকে শুরু করে পরোটার ভাঁজে ও ভাজার উপকরণে। শান্তিনগর বাজারের একটি রেস্তোরাঁয় পরোটার কারিগর হিসেবে কাজ করেন জামাল। প্রায় ষোলো বছর ধরে কর্মরত জামাল জানালেন, কাইতে অতিরিক্ত কিছু ‘মালামাল’ যোগ করলে আর প্যাঁচটা ধরতে পারলেই বানানো যাবে মজাদার খাস্তা পরোটা। সেই গোপন মসলা আর কিছুই নয়; গুঁড়া দুধ, ডিম, চিনি ও কলা। এই সবকিছু দিয়ে তেল মাখিয়ে মথে নিতে হবে, তারপর কুসুম গরম পানির একটু বেশি গরম পানির সঙ্গে পরিমাণমতো লবণ গুলিয়ে নিয়ে সেই পানি দিয়ে ময়ান দিয়ে বানাতে হবে খামির। তা ঢেকে রাখতে হবে ভেজা গামছা দিয়ে।

তারপর খামির থেকে পরিমাণমতো ময়দার কাই ছিঁড়ে নিয়ে লম্বা করে বেলে আড়াআড়ি ভাঁজ করে নিয়ে প্যাঁচাতে হবে। সেই প্যাঁচানো খামির আবার চ্যাপ্টা করে বেলে নিয়ে গরম তাওয়ায় চারদিকে তেল দিয়ে সমান করে ভেজে নিলেই হবে মচমচে পরোটা। অনেকে এতে খাস্তা ভাবটা বেশি আনার জন্য শেষবেলায় হালকা ডালডা বা বনস্পতি ঘিয়ে দুটো পিঠ ভেজে নেন। সেটা গরম গরম খেতে মুচমুচে লাগলেও ঠান্ডা হলেই শক্ত হয়ে যায়। আরেক ধরনের পরোটা আছে, যেটা জায়গাভেদে ফেনি পরোটা বা মালাবারি লাচ্ছা পরোটা নামে পরিচিত। এটি বানাবার ঝক্কি বেশ! ময়দার কাই লম্বা করে বেলে নিয়ে তাতে ঘি বা তেল মাখাতে হবে। এরপর ধারালো ছুরি দিয়ে আড়াআড়ি অনেকগুলো দাগ দিয়ে লেচিটাকে ফালি ফালি করে নিতে হবে। এরপর অনেকটা শীতলপাটি বোনার মতো করেই ভাঁজে ভাঁজ মিলিয়ে গোল করে পাকিয়ে নিতে হবে মন্ডটা। যেটা দেখতে অনেকটা হবে চুলের ফিতার মতো। সেটাকেই তারপরে আবার বেলন দিয়ে বেলে বৃত্তের আকার দিয়ে ভেজে নিতে হবে তাওয়ায়। এই পরোটার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ভাজার পরও ভাঁজগুলো অটুট থাকে, আর খেতে হয় খুবই মুচমুচে!
ডিম, বুটের ডাল, মুগডাল, সুজির হালুয়া, পাঁচফোড়নে আলু-পেঁপে আর গাজরের সবজি থেকে শুরু করে কলিজা ভুনা, মুরগির গিলা কলিজার লটপটি কিংবা বাংলাদেশি রেস্টুরেন্টগুলোর অনন্য আবিষ্কার ‘চিকেন স্যুপ’ যা কিনা নারকেল দেওয়া সাদা ঘন মিষ্টি ঝোলে মুরগির পাখনা বা বুকের মাংসের টুকরো; সকালবেলা রাজধানীবাসীর নাশতার চাহিদায় পরোটার নিয়মিত সঙ্গী।

তবে পরোটা কখন কার সঙ্গে ডেটে (পড়ুন টেবিলে) যাবে, সেটা অবশ্য নির্ভর করে পকেটের স্বাস্থ্যের ওপর! হোটেল স্টারের কারওয়ান বাজার, বনানী, সিটি কলেজ-সংলগ্ন শাখাগুলোতে সাতসকালে হাজির হলে মনে হতে পারে, পরোটা উৎসব চলছে! ছাত্র, চাকরিজীবী কিংবা কিন্ডারগার্টেনে বাচ্চাদের রেখে আসা মায়েরা, হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে আসা রোগীর স্বজন— পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন, বেশির ভাগের পাতে পরোটা আছেই! সন্ধের কাবাব আয়োজনের সময় অবশ্য বদলে যায় এর চেহারা। তখন পাওয়া যায় স্পেশাল লুচি পরোটা, যা তাওয়ায় সেঁকা নয় বরং ডুবো তেলে ভাজা। শিক কাবাব, তাওয়া ঝাল ফ্রাই কিংবা ব্রেন মাসালার সঙ্গে গরম গরম পরোটা, সঙ্গে টক দই আর সর্ষে বাটা দিয়ে মাখানো শসা, কাঁচা মরিচ আর পেঁয়াজের স্যালাডের নেশায় মজলে কী করে যেন কদিন পরপরই সন্ধেবেলায় স্টার কাবাবে হাজির হয়ে যাবেন।
বাংলার স্বাধীনতার ইতিহাসে যেমন অবিস্মরণীয় নাম পলাশীর প্রান্তর, তেমনি শিক্ষাজীবনেও এক পুণ্যভূমি রাজধানীর পলাশীর মোড়! ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ— এই ত্রিমোহনায় অবস্থিত পলাশীর মোড়ে মধ্যরাতের চায়নিজ পরোটা খাননি, এই তিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমন শিক্ষার্থী বিরল। ভ্যানের উপর সসপ্যানে সবজি, ডাল আর ডিমের খাঁচির পাশে বেলা কাগজের চেয়ে একটু পুরু পরোটা। পাশেই গনগনে আগুনের উপর তাওয়ায় সেটা সেঁকে দিচ্ছেন আরেকজন। সামনে বেঞ্চে বসে খাচ্ছে একদল তরুণ, পাশেই ল্যাম্পপোস্টে হেলান দিয়ে রাখা গিটার। মধ্যরাতে পলাশী মোড়ের এই দৃশ্য নিয়মিত। সবজি ও ডিম একসঙ্গে তাওয়ায় ঘুঁটে সবার প্লেটে সমানভাবে তুলে দেওয়া খাদ্যটির নাম ‘চায়নিজ’ কি কমিউনিজমের ধারণা থেকেই হলো! কান টানলে মাথার মতোই পলাশী কথা এলে এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের সকালের নাশতার দোকানগুলোর কথাও চলে আসে। এখানকার ‘মামা’দের স্মৃতিকেই বোধ হয় বলে ফটোগ্রাফিক মেমোরি। এত এত ছাত্র, কে তেল ছাড়া পরোটা খায় আর কে তেলে ভাজা, কে কড়া ভাজা, সেগুলো তাদের মেমোরি কার্ডে সেভ হয়ে যায় অল্প কদিনেই!
মোগলাই পরোটা বোধ হয় পিৎজার এদেশীয় সংস্করণ! পিৎজা যেভাবে একটা বৃত্তকে নিখুঁতভাবে ছটা বা আটটা ভাগে ভাগ করতে শেখায়, তেমনি এটাও শেখায় একটা বর্গক্ষেত্রকে কীভাবে ৯টা কিংবা ১২টা সমান বর্গক্ষেত্রে ভাগ করতে। ডিম, কিংবা কিমার পুর ভরা মোগলাই পরোটা পাড়ার রেস্টুরেন্টের হিট বা হট (উভয় অর্থেই, গরম না খেলে মজা নেই কিনা!) আইটেম। কখনো কখনো মেয়ে দেখতে গিয়ে মেয়ের ভাবিকে দেখে ক্লিন বোল্ড হয়ে যাবার মতো মোগলাইয়ের চেয়ে সঙ্গের স্যালাডটা হয়ে ওঠে বেশি সুস্বাদু। শসা, পেঁয়াজকুচির সঙ্গে রাই সরষের দারুণ কম্বিনেশনে মাখা এর রসায়নে মনটাও হয়ে উঠবে মোগল বাদশাহদের মতো দিলখোলা।

এসবের বাইরেও রাস্তায় ঠেলাগাড়িতে করে বিক্রি করতে দেখা যায় শাহি পরোটা, যা বিশাল, বিক্রি করা হয় ছিঁড়ে ছিঁড়ে আর ওজনে মেপে। সঙ্গে থাকে সুজির হালুয়া। হালে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বসনিয়ান পরোটা, যার রেসিপি উৎসবে-পার্বণে নাশতার আয়োজনে অনেকেই পত্রপত্রিকার দেখে অনেকেই বানাচ্ছেন এই পদ। ‘সোমুন’ বলে একধরনের রুটি খাওয়া হয় বসনিয়ায়, এটা হয়তো সেই খাবারেরই খানিকটা বাংলাদেশি সংস্করণ। এ ছাড়া আলুর পুর ভরা আলুপরোটা, পনিরের পুর ভরা চিজ পরোটাও মিলবে ধানমন্ডি ও গুলশানের বেশ কিছু রেস্তোঁরার মেনু কার্ডে। তেমনি একটি রেস্তোঁরা ‘কয়লা’। উত্তর ভারতীয় খাবারের জন্য সমাদৃত এই রেস্তোঁরায় আলু পুদিনা পরোটা, পনির পরোটা, তন্দুরি লাচ্ছা পরোটা, কিমা পরোটাসহ অনেক রকম পরোটাই পাবেন।
লেখাটা পড়ে যদি জিভে জল চলে আসে আর মনটা পরোটার জন্য উতলা হয়ে যায়, তাহলে বেরিয়ে পড়–ন পছন্দসই গন্তব্যে। রাস্তার ধার থেকে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত সুদৃশ্য কামরা— সর্বত্রই সগৌরবে এই খাদ্য বিরাজমান। আর যদি আলসেমি করে গদি ছাড়তে না চান, তাহলে ফ্রোজেন পরোটার প্যাকেট এনে ফ্রিজে রেখে দেবেন। ইচ্ছে হলেই ভাজবেন, দু মিনিটেই তৈরি হয়ে যাবে মুচমুচে পরোটা। কোরবানির ঈদের এই সময়টায় পরোটা কী দিয়ে খাবেন, সেটাও যদি বলে দিতে হয়, তাহলে তো সবই মিছে!

লেখক: কালের কণ্ঠের সিনিয়র স্পোর্টস রিপোর্টার এবং রসনালিখিয়ে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top