skip to Main Content

বিশেষ ফিচার I বিয়ের রকমফের

বিয়ের রীতি সর্বত্র এক নয়। ফলে সামাজিক এই প্রথায় সৃষ্টি হয়েছে বৈচিত্র্য। লিখেছেন উদয় শংকর বিশ্বাস

এক বা একাধিক নারী ও পুরুষের সমাজ-সমর্থিত মিলনই বিয়ে। এই মিলনের সঙ্গে মানুষ কিছু অধিকার ও দায়বদ্ধতা লাভ করে। নৃবিজ্ঞানীরা বিয়েকে সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখেছেন। সমাজবিজ্ঞানী ওয়েস্টমার্ক অবশ্য বিয়েকে ধর্মীয়ভাবে সমর্থিত নারী ও পুরুষের সম্পর্ক হিসেবে দেখেছেন। একত্রে বসবাস ও পরস্পরের যৌনতায় অধিকার জন্মায়, এ কথাও তিনি জানিয়েছেন। আসলে বিয়ের প্রধান উদ্দেশ্য হলো সন্তানলাভ তথা বংশরক্ষা। পুরাণে বলা আছে, মহর্ষি উদ্দালকের পুত্র শ্বেতকেতু হলেন ভারতবর্ষের বিয়ের আদি প্রবর্তক। কথিত আছে, তিনি একদিন দেখেন, এক ব্রাহ্মণ তাঁর মাকে হাত ধরে ঘর থেকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। এ দৃশ্য দেখে তিনি উত্তেজিত হন। উদ্দালক ছেলেকে রাগ প্রশমন করতে বলেন এবং জানান, গরুর মতো মানুষেরও নিজের বর্ণে অবাধে বিহার করার পূর্ণ অধিকার আছে। শ্বেতকেতু পিতার কথায় সন্তুষ্ট হতে পারেননি এবং পরবর্তীকালে ‘মর্যাদা’ নামক সমাজে নতুন এক নিয়ম চালু করেন। মর্যাদা শব্দের অর্থ জমির আল বা সীমারেখা। ছেলেমেয়েরা যাতে অবাধে মিলন করতে পারে, সে জন্য তিনি খোলা মাঠে আল বেঁধে দেন। তাঁর এই আল বাঁধা থেকেই পরে সমাজে বিয়ের প্রথা চালু হয় বলে মনে করা হয়। প্রাচীন সে ধারা এখনো অব্যাহত।
পৃথিবীতে এমন কোনো সমাজ নেই, যেখানে বিয়ের চল নেই। অবশ্য বিভিন্ন সমাজে বিয়ের ধরনের পার্থক্য রয়েছে। যেমন হাওয়াই দ্বীপের বেশির ভাগ অধিবাসী বুড়ো বয়সে বিয়ে করেন, যাতে সে সময় দেখাশোনা করার লোক পাওয়া যায়। একই নিয়ম দেখা যায় ভারতের নাগা, বোডো ও ধিমাল অধিবাসীদের মধ্যে। আবার চীনে একধরনের বিয়ে আছে, যা ভুতুড়ে বিয়েরই নামান্তর। এতে পাত্রপাত্রীর বেঁচে থাকারই প্রয়োজন নেই। মৃত ছেলে-মেয়ের যে কারও সঙ্গে বিয়ে হতে পারে। এ ক্ষেত্রে আসল উদ্দেশ্য দুটি পরিবারের মধ্যে বৈবাহিক সম্বন্ধ পাতানো। তামিলদের মধ্যে একেবারেই ভিন্ন রীতির বিয়ে দেখা যায়। ছেলেমেয়েদের জন্মের আগেই তামিল অভিভাবকেরা বিয়ে ঠিক করে রাখেন। বিয়ের ক্ষেত্রে পিতা-মাতার মত বা সিদ্ধান্ত যে সবক্ষেত্রে চূড়ান্ত তা নয়। তিব্বত ও সিকিমের কোনো কোনো আদিবাসীদের বিয়েতে পিতা-মাতার থেকে মামার গুরুত্ব বেশি দেখা যায়। দক্ষিণ ভারতের যোগী জাতির বিয়েতে মামাই সর্বেসর্বা ভূমিকা পালন করেন। পাকিস্তানের ব্রাহুই আদিবাসীদের মধ্যে মেয়ের বিয়েতে বাবার কোনো ভূমিকা নেই। সেখানে গোষ্ঠীর বিধানই চূড়ান্ত। গোষ্ঠীর কর্তৃত্ব পিতার কর্তৃত্বের নামান্তর। সে বিধান যেমনই হোক না কেন, তাকে অমান্য করার কোনো উপায় নেই। সাধারণত সামাজিক রীতি মেনে নিজ গোষ্ঠীর মধ্যে যে বিয়ে সম্পাদন হয়ে থাকে, তা অন্তর্বিবাহ বা এন্ডোগ্যামি। নিজ গোষ্ঠীর বাইরে অপর কোনো গোষ্ঠীর সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপিত হলে বহির্বিবাহ বা এক্সোগ্যামি বলে। বহির্বিবাহ হতে পারে বহির্গোষ্ঠী, বর্হিগোত্র বা বহির্গ্রামে। যেমন আরাবাক পুরুষদের বিশেষ একটি গোষ্ঠীতে বিয়ে করতে হয়। গন্দ ও বৈগাদ দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে দুই ভাইবোনের মধ্যে ভাইয়ের যদি একটিমাত্র ছেলে এবং বোনের একটি মেয়ে থাকে, তাহলে সেই ছেলেমেয়ের বিয়ে হয়। কিন্তু যদি একাধিক ভাই থাকে, তাহলে বোনের মেয়ে তাদের মধ্যে যেকোনো একজনকে পছন্দ করে বিয়ে করতে পারে। এ ক্ষেত্রে সে তাঁর পছন্দ করা ছেলের পা ছুঁয়ে কিংবা ছেলের বাড়ি গিয়ে বসে থাকলে সকলে বুঝবে সে কাকে বিয়ে করবে। মধ্য এশিয়ার কিরগিজ, সাইবেরিয়ার ফুরাক ও বুরিয়াটাদের বিয়েতে বর কিংবা কনে কেউই উপস্থিত থাকে না। পাপুয়া নিউগিনির মাসিমদের বিয়ের অনুষ্ঠানে বরকনে থাকে না। মহীশুরের লাম্বার্দিদের বিয়ের আসরে শুধু বর থাকে না। দুপক্ষের মেয়েরাই বিয়ের যাবতীয় কাজ সম্পাদন করে। ভারতের কাদির আদিবাসীদের মধ্যে দেখা যায়, কোনো ছেলে যদি বিয়ে করতে চায়, তাকে নিজের গ্রাম ছেড়ে অন্য কোনো গ্রামে এক বছর ধরে বসবাস করতে হয়। আবার কম্বোডিয়ার সমাজে বিয়ের সময় বর তাঁর আত্মীয়স্বজনের কপালে সিঁদুর লাগিয়ে দেয়। পলেনেশিয়ার কোনো কোনো জায়গায় দেখা যায়, বরের মা ও কনের মা পরস্পরের রক্তে রক্ত মিশিয়ে সম্বন্ধ পাতায়।
তবে, সব সমাজেই দেখা যায়, সগোত্রে বিয়ে নিষিদ্ধ। যেমন একসময় নিষিদ্ধ ছিল বিধবাকে বিয়ে করা। বিধবা বিয়ে বাঙালি সমাজে এখন অবশ্য প্রচলিত। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর উনিশ শতকে বিধবাবিয়ের প্রচলন করেছিলেন। এই বিয়েরও রকমফের সমাজ থেকে সমাজে ভিন্ন। ভারতের কোথাও-কোথাও এখনো এমন দেখা যায়, অবিবাহিত ব্যক্তি যদি বিধবাকে বিয়ে করতে চায়, তাহলে তাকে মূল বিয়ের আগে শেওড়া, মহুয়া, আম ইত্যাদি বৃক্ষের সঙ্গে বিয়ে সম্পন্ন করতে হয়। এ ক্ষেত্রে বিবাহিত বৃক্ষ প্রথম স্ত্রী এবং বিধবা মহিলা দ্বিতীয় স্ত্রীর মর্যাদা লাভ করে। এটিকে ‘বিকল্প বিয়ে’ বলা হয়। কখনো-কখনো এ ধরনের বিয়ে হাঁড়ি, পাতিল, বল্লম, তলোয়ার কিংবা লোহার সঙ্গেও হয়। রাজবংশী আদিবাসীদের মধ্যে এখনো ‘গো-গাছ’ নামক একটি ভিন্ন ধরনের বিয়ের প্রথা দেখা যায়। প্রথানুসারে বিয়ের দিন বরকে উত্তমরূপে সাজিয়ে বরের আত্মীয় ও বন্ধুবান্ধব নিকটবর্তী মহুয়া কিংবা শেওড়াগাছের কাছে নিয়ে যায়। বর সিঁদুর পরিয়ে সেই গাছকে আলিঙ্গন করে। এরপর বরের আত্মীয়স্বজন তাঁর ডান হাতের সঙ্গে সুতা দিয়ে গাছকে আবদ্ধ করে দেয়। বিশেষ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সেই সুতা ছিন্ন করে তারা কনের বাড়িতে যায় কনে তুলে আনার জন্য। মু-া ও রউতিয়া সমাজে এ ধরনের বিয়ে মহুয়া ও আমগাছের সঙ্গে হয়। যে গাছের সঙ্গে হোক না কেন, সবক্ষেত্রে সিঁদুর দিয়ে গাছকে রাঙানো হয়। অপদেবতার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া অথবা নবদম্পতির সম্ভাব্য বিপদ থেকে নিস্তারের জন্য এমন বিয়ের রীতি প্রচলিত আছে।
কৃত্রিম অভিনয়ের মাধ্যমে কন্যাকে বিয়ে করাকে ‘পল্লন বিয়ে’ বলে। বাংলাদেশের বাউল সম্প্রদায়ের মধ্যে ‘কণ্ঠীবদল বিয়ে’ বলে একধরনের বিয়ের রীতি প্রচলিত আছে। এতে বর-কনে উভয় উভয়ের হাতে নলখাগড়ার তৈরি কণ্ঠীবদলের মাধ্যমে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হয় সন্তান না নেওয়ার শর্তে। পরীক্ষামূলক বিয়ে বা ট্রায়াল ম্যারেজে বর ও কনে পরস্পর পরস্পরকে পরীক্ষা করে নেয় সন্তান ধারণ করতে পারবে কিনা। একসঙ্গে থাকতে থাকতে পরস্পরকে ভালো লাগার মাধ্যমে সাহচর্যমূলক বিয়ে বা কমপ্যাশনেট ম্যারেজের উদাহরণ অহরহ দেখা যায়। বরের গায়ে আগুনের সেঁকা দিয়ে সহ্যশক্তির পরীক্ষার মাধ্যমে একধরনের বিয়ে প্রচলিত আছে, যা ‘গাদবা বিয়ে’ নামে পরিচিত। এমন রীতি কাক্সিক্ষত না হলেও প্রাচীন ভারতে বিচিত্র সব বিয়ের ধারা প্রচলিত ছিল।
প্রাচীন ভারতে ব্রাহ্ম, দৈব, আর্ষ, প্রাজাপত্য, আসুর, গান্ধর্ব, রাক্ষস ও পৈশাচ নামক আট প্রকার বিয়ের প্রচলন ছিল। যাজ্ঞবল্ক্য ও মনুস্মৃতিতে এসব বিয়েকে সমর্থন করা হয়েছে। প্রকরণগত পার্থক্য থাকলেও প্রাচীন ভারতীয় সমাজে বিয়ের গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। বস্ত্র-অলংকারাদি ইত্যাদি পণসহযোগে সৎবংশীয় ও সচ্চরিত্র বরকে আহ্বান করে নিজের কন্যার সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার প্রথা ছিল ব্রাহ্ম বিয়ে। এতে মন্ত্র উচ্চারণ ও যজ্ঞ সম্পাদনের প্রয়োজন হতো। ‘দৈব’ হলো দ্বিতীয় প্রকার বিয়ে, যার অর্থ দেবসম্বন্ধীয় বা দেবভাবাপন্ন। অর্থাৎ ঋত্বিককে সরাসরি কন্যাদান করা হতো দৈব বিয়ের মাধ্যমে। মহাভারতে আছে, রাজা লোমপাদের কাছে দৈববিধান এসেছিল, তিনি যেন কোনো মুনির সঙ্গে তাঁর কন্যাকে বিয়ে দেন। দৈববিধান অনুসারে রাজ্যে বৃষ্টিপাতের আশায় লোমপাদ মুনি ঋষ্যশৃঙ্গের সঙ্গে পালিত কন্যা শান্তার বিয়ে দিয়েছিলেন। দৈব বিয়ের উদাহরণ খুব বেশি পাওয়া যায় না। তবে আর্ষ বিয়ের উদাহরণ অনেক রয়েছে। ‘আর্ষ’ শব্দটির অর্থ ঋষিসম্বন্ধীয়। এই বিয়েতে বরের কাছ থেকে দুটি গরু নেওয়ার বিধান ছিল। মূলত গরুদানের মাধ্যমে কন্যাদান হতো। কন্যাপক্ষ শুল্ক হিসেবে গরু গ্রহণ করত কৃষিব্যবস্থা সচল রাখার জন্য। অপরদিকে বরকে ধনরত্ন দিয়ে তুষ্ট করার মাধ্যমে যে বিয়ে সম্পন্ন হতো, তা প্রাজাপত্য বিয়ে নামে পরিচিতি পায়। আসুর বিয়ে পঞ্চম প্রকার বিয়ে। ‘আসুর’ শব্দের অর্থ অসুরসম্বন্ধীয়। কন্যাকে ধন দিয়ে কেনার মাধ্যমে এই আসুর বিয়ে সম্পন্ন হতো। একে অত্যন্ত নিন্দনীয় মনে করা হতো। পাশাপাশি কন্যার মতামতের ভিত্তিতে যে বিয়ে হতো তাকে বলা হতো গান্ধর্ব বিয়ে। এই বিয়ের মাধ্যমে বর ও কনের মধ্যে প্রণয়পূর্বক সম্পর্ক স্থাপিত হতো। দুষ্যন্ত ও শকুন্তলার বিয়েকে গান্ধর্ব বিয়ের উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যায়। শাস্ত্রে বলা আছে, কামী পুরুষ যদি সকামা কুমারীর সঙ্গে নির্জনে মিলিত হয়, তবে সেই মিলনই গান্ধর্ব বিয়ের স্বীকৃতি পাবে। বর্তমানে এই ধরনের বিয়ের উদাহরণই বেশি দেখা যায়। সে সময়েও কন্যাকে তুলে নিয়ে জোরপূর্বক বিয়ে করার নজির ছিল, একে নাম দেওয়া হয়েছে রাক্ষস বিয়ে। রাক্ষস বিয়ে ছিল অমানবিক। কিন্তু এ থেকেও অমানবিক বলা যায় পৈশাচ বিয়েকে। সুপ্ত অথবা প্রমত্ত কন্যাকে বলাৎকার করে রমণই হলো পৈশাচিক বিয়ের ধর্ম। এ ধরনের বিয়ে এখনো দেখা যায়।
বর্ণিত এসব বিয়ের মধ্যে ব্রাহ্ম, প্রাজাপত্য ও গান্ধর্ব বিয়েকে ধর্মসঙ্গত বা শ্রেষ্ঠ বলা হয়েছে। ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র সব বর্ণের সবার জন্য সকল বিয়ে বৈধ ছিল না। চারবর্ণের মধ্যে শূদ্র ছাড়া বাকি তিন বর্ণকে ‘দ্বিজাতি’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। দ্বিজাতি শব্দের অর্থ- যার দুই জাতি। আর্ষ ও আসুর বিয়েতে কন্যাপণ ছিল বলে এ দুটিকে উৎকৃষ্ট মনে করা হয়েছে সবার জন্য। রাক্ষস বিয়েকে ক্ষত্রিয়দের জন্য অধর্মজনক বলা হয়েছে। পৈশাচ বিয়ে ছিল সব সময়ে পরিতাজ্য। বৈশ্য ও শূদ্ররা আসুর বিয়ে করতে পারতো। গান্ধর্ব ও রাক্ষস বিয়ে ক্ষত্রিয়দের মধ্যে সীমিত পরিসরে প্রচলিত ছিল। অপরদিকে শূদ্রা রমণীকে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্যরা বিয়ে করতে পারত এমন বিধান ছিল। ব্রাহ্মণী ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্যর ভার্যা হতে পারত। ক্ষত্রিয়ের ক্ষত্রিয়া ও বৈশ্যা এবং বৈশ্যকে স্বজাতীয় কন্যা গ্রহণ করতে হতো। আবার এমনও নিয়ম ছিল ক্ষত্রিয়া ও বৈশ্যা অপেক্ষা বয়ঃকনিষ্ঠা হলেও ব্রাহ্মণীই ব্রাহ্মণের জ্যেষ্ঠা স্ত্রীর মর্যাদা পেত। একইভাবে ক্ষত্রিয়া বৈশ্যার ছোট হলেও সে বড় বলে পরিগণিত হতো। ছেলে ও মেয়ের বিয়ের বয়সের ক্ষেত্রেও তারতম্য ছিল। ত্রিশ বছরের বরের জন্য দশ বছরের মেয়েকে নির্বাচন করার বিধান ছিল। অর্থাৎ পাত্রীর বয়স হতে হবে পাত্রের বয়সের এক-তৃতীয়াংশ। বিয়ের আগে বর ও কনের বংশ পরীক্ষা করার আবশ্যকতা ছিল। উভয়ের পিতৃবংশ ও মাতৃবংশ যেন উৎকৃষ্ট হয় তা দেখে নেওয়া হতো। সেই সঙ্গে সমান কুল থেকে কন্যা গ্রহণ করলে বিয়ে শুভ হবে বলে ধরে নেওয়া হতো। কন্যা যদি রূপেগুণে সর্বাঙ্গসুন্দরী হতো, তাহলে অপেক্ষাকৃত নীচ বংশ থেকেও তাকে গ্রহণ করার বিধান ছিল। এত সবের পরেও বর নিজের বংশে ও মাতামহের বংশে বিয়ে করতে পারত না। এ ছাড়া খুব রোগা বা মোটা, পাত্রের থেকে বয়সে বড়, প্রব্রজিতা, অনাসক্তা, পিঙ্গলবর্ণা, চর্মরোগে আক্রান্ত, কুষ্ঠরোগাক্রান্ত, শ্বেতী কন্যাকে বিয়ের কোনো নিয়ম ছিল না। এমনকি ভ্রাতৃহীনা কন্যাকে বিয়ে না করার জোর বিধান ছিল। উত্তর ভারতে এখনো পিতৃকুলের ঊর্ধ্বতন সাতপুরুষ ও মাতৃকুলের পাঁচপুরুষের মধ্যে বিয়ে নিষিদ্ধ। স্বজন বা জ্ঞাতির মধ্যে প্রচলিত এই বিধানকে সপি-বিধি বলা হয়। বিয়ের ক্ষেত্রে বর ও কনের বয়স সমাজভেদে আলাদা। সাধারণত পাত্রের তুলনায় পাত্রীর বয়স কম হয়, এ নিয়ম সর্বত্র এক নয়। ‘বাঞ্ছনীয়’ বিয়েতে পাত্র অপেক্ষা পাত্রীর বয়স বেশি। বয়সের তারতম্য দূর করার জন্য বিয়ের সময় মেয়ের কোমরে বয়সের পার্থক্যসূচক তৎসংখ্যক নারকেল বেঁধে দেওয়া হয়। বাংলাদেশের মুরং, সেন্দুজ, পাঙ্খোয়া, বনযোগী, খুমি ও খাসিয়া আদিবাসীদের মধ্যে মেয়ের বয়স ছেলের বয়সের থেকে সাধারণত বেশি হয়। সংস্কৃতি যেমন সমাজভেদে ভিন্ন, তেমনি বিয়েতেও কোনো সমাজের সঙ্গে কোনো সমাজের মিল নেই। জৈবিক, অর্থনৈতিক বা সামাজিক- যে কারণেই বিয়ে হোক না কেন, তার রীতি-পদ্ধতি মানব সমাজেরই সৃষ্টি।

লেখক: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের
অধ্যাপক এবং গবেষক
মডেল: অন্তরা
ওয়্যারড্রোব: মানসা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: সৈয়দ অয়ন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top