skip to Main Content

বিশেষ ফিচার I ভালোবাসার ছোঁয়া -দিলরুবা নাসরিন

গাম্বিয়া থেকে ফেরার পথে আমার গায়ে আলতো করে জড়িয়ে থাকে একটা মায়ার চাদর। ফ্লাইটে বসে সেই মায়াবী চাদরের বুননে স্মৃতি সাজাই—সবই ভরে থাকে ভালো লাগায়, ভালোবাসায়। এবার ফেরার পথে অনুভব করলাম মায়াবী সেই চাদরে গেঁথে আছে ছোট্ট একটা কাঁটা— যা খচখচ করে আমাকে বিঁধেই চলেছে।
সবই তো ছিল ঠিক আগের মতোই! আটলান্টিকের পারে গাম্বিয়ার রাজধানী বানজুলে ফ্লাইট থেকে নেমেই যেন স্বর্গরাজ্যে। জীবনে অনেক সুন্দর হোটেল দেখেছি নানান দেশে, কিন্তু বানজুলের এনগালা লজ শিল্পীর তুলিতে আঁকা— সমুদ্রের পাড় ঘেঁষে যেন একটি সাজানো বাগান। হোটেলের প্রবেশপথ থেকেই শুরু বাগানটি—দৃষ্টিনন্দন সবুজের অসাধারণ ল্যান্ডস্কেপ। ফুলের বাগানের মাঝ দিয়ে ঝিনুক বিছানো সরু পথ নিয়ে যায় অতিথিকে অস্থায়ী ঠিকানায়। বাগানের চারপাশে ছোট ছোট দোতলা ভবনে ঢোকার মুখে ফুলের লতানো গেট—যেন অভ্যর্থনার জন্য সেজেগুজে তৈরি। এই গেটগুলো আমাকে নিয়ে যায় কৈশোরে— মনে করিয়ে দেয় কানুনগোপাড়ায় আমাদের বাসার সামনের সেই নীল অপরাজিতার গেটটির ছবি। কানে বাজে ‘নীল প্রজাপতি নীল অপরাজিতা, নীল আকাশের নীচে…’। গায়ত্রী বসুর এই গান প্রথম আব্বার মুখেই শুনেছিলাম। প্রতিটি দোতলা ভবনের আবার নিজস্ব বাগান! সেখানে বসার আয়োজনও শৈল্পিক। রুমের দেয়ালে ঝোলানো পেইন্টিং থেকে মশারি সজ্জা— সবই যেন শিল্প! সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ করে বইয়ের প্রাচুর্য— প্রতিটি রুমে এবং ভবন-সংলগ্ন বাগানের মাঝখানে একটি করে বইয়ের শেলফ। আমাদের বাসার লাইব্রেরিটির কথা মনে পড়ে। প্রায় এক যুগ আগে প্রথমবার যখন গালা লজে গেলাম, অনেক কৌতূহল ছিল এই হোটেলের মালিক সম্পর্কে। একটুও অবাক হইনি জেনে যে হোটেলটির মালিক একজন ডাচ। কে না জানে ডাচদের শৈল্পিক গুণের কথা! কেমন করে যেন এবারও আমি ১২ নম্বর রুমটি পেয়েছি— আমার ধারণা, এই হোটেলের রুমগুলোর মধ্যে এটাই সবচেয়ে সুন্দর। জানালার পর্দা সরালেই সমুদ্র, লাগোয়া ছোট্ট বারান্দায় বসে সন্ধ্যায় সমুদ্রের বুকে বৃষ্টি দেখেছি। আবার বৃষ্টিধোয়া সকালে কফি হাতে সমুদ্রের উজ্জ্বলতা দেখেছি সূর্যের ঝলমলে আলোয়। এমন সুখ পৃথিবীতে খুব বেশি নেই। বারান্দা থেকে সিঁড়ি নেমে গেছে সমুদ্রে— যখন ইচ্ছে যেতে পারি সোজা সমুদ্রের বালুকাবেলায়! আমার কর্মস্থল গাম্বিয়ার শেষ মাথায় বাসে নামের এক অনুন্নত এলাকায়। এখানে জুলাই মাসের দিনগুলোতে চামড়া পোড়া গরম আর সন্ধ্যায় অঝোর ধারায় বৃষ্টি! এই সময়টাতে সাপের বড্ড উপদ্রব, সন্ধ্যা নামলে বাইরে হাঁটতে ভয় লাগে বৈকি! কিন্তু এবার আমার সঙ্গে তার চাক্ষুষ সাক্ষাৎ হয়নি, হয়েছে ই-মেইলে। ফেরার পরদিনই সহকর্মীরা ১৩ ফুট লম্বা এক অজগরের ছবিসহ ই-মেইলে কৌতুক করেছে: ‘ইনি সম্ভবত তোমার সাথে দেখা করতে এসেছিল, কিন্তু একটু দেরি করে ফেলেছেন’! ভাগ্যিস, দেরি করেছিল! যদিও সাপের কারণে এই সময়ে গাম্বিয়া যাওয়া নিয়ে পরিবারের আপত্তিকে যুক্তি দিয়ে উড়িয়ে দিই— সাপের কামড়ে মৃত্যু লেখা থাকলে সেটা নেদারল্যান্ডস বা আমেরিকায়ও হতে পারে! কিন্তু ছবিতে তাকে দেখে মনে হলো, সাক্ষাতে হয়তো তার সাইজ দেখেই অক্কা পেয়ে যেতাম! এ-ও জানি, এই ভয় অল্প কয়েক মুহূর্তের, আবার আমি ফিরে যাব! গাম্বিয়ান শিশুদের ভালোবাসার কাছে সাপের ভয় হার মেনে যায়। তাই প্রায় এক যুগ ধরে চলছে এই পথচলা। বাসেতে কাজ শেষ করে আধা বেলা গাড়িতে কাটিয়ে ঘরে ফেরার জন্য যখন বানজুল এয়ারপোর্টে পৌঁছি, অনেকটাই ক্লান্ত হয়ে পড়ি। তা কেটে যায় ডিপ্লোমেটিক লাউঞ্জের তত্ত্বাবধায়ক উসমান জালোর আন্তরিকতা আর উষ্ণ আতিথেয়তায়! প্রতিবারের মতোই এস এন ব্রাসেলস ফ্লাইট সময়মতো বানজুল ছেড়েছে। সবই ঠিকঠাক, তবু মন ছিল কিছুটা বিক্ষিপ্ত!
সন্ধ্যা ৭টা ২৫ মিনিটে রওনা হলেও রাত নয়টার আগে এই ফ্লাইটে কোনো খাবার বা পানীয়র ব্যবস্থা নেই। বানজুল থেকে আধা ঘণ্টার আকাশ দূরত্বে সেনেগালের রাজধানী ডাকার। এখানে যাত্রী ওঠানামার ঘণ্টাখানেকের একটা যাত্রাবিরতি। ডাকার থেকে যাত্রী নিয়ে ওড়ার পর ব্রাসেলস ফ্লাইটে প্রথম জলখাবার পরিবেশন করা হয়। তাই বলে মনে করার কোনো কারণ নেই যে ক্ষুধার কারণে আমার মন খারাপ! সঙ্গে আছে আমার সবচেয়ে প্রিয় খাবার— এক বোতল ঠান্ডা কচি ডাবের পানি আর একটা প্লাস্টিক বক্সে সেই ডাবের শাঁস/জেলি। আমাকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ খাবারের তালিকা তৈরি করতে দিলে এই দুটিকে সবচেয়ে ওপরের দিকে রাখতাম। আমার সহকর্মীরা আমার এই বিশেষ ভালোবাসার কথা জানে। যে কদিন আমি গাম্বিয়া থাকি, আমার জন্য সময়োপযোগী নারকেল, তাল, আমের সরবরাহ অব্যাহত থাকে। ফিরে আসার সময় আবার পোঁটলা বেঁধে দেয়! ফ্লাইটে বসে যখন খাই, আরও বেশি সুস্বাদু মনে হয়। কারণ, এগুলোর সঙ্গে থাকে অনেক ভালোবাসা। অতএব খাবারও আমার মন খারাপের কারণ নয়।
ডাকারের যাত্রাবিরতির সময়ই ঘটলো ঘটনাটি। আমি আমার সিটে বসে মাগরিবের নামাজ পড়ছিলাম। কিছুক্ষণ পর শুনলাম পাশের এক ভদ্রমহিলার গলা, ‘এই ব্যাগ কি তোমার’? সম্ভবত উপরে রাখা আমার ল্যাপটপের ব্যাকপ্যাকটা নিয়েই প্রশ্ন। এটা বিমানের ক্রুদের রুটিন চেকের অংশ— কোনো যাত্রী ব্যাগ ফেলে রেখে নেমে গেলেন কি না! নামাজ ভেঙে উত্তর দেবার মতো জরুরি কিছু নয় দেখে আমি নামাজে মন দিলাম। গত এগারো বছরে আমি এই ফ্লাইটে কমপক্ষে পঁচিশবার গাম্বিয়া যাতায়াত করেছি। তাই নিয়মগুলো জানা আছে। ডাকারে যাত্রী নামার পর একে একে সব কেবিন লাগেজ তাদের চেক করতে হয়, ২০-২৫ মিনিট সময়ের ব্যাপার। নামাজ অব্যাহত দেখার পরও দ্বিতীয়বার একই প্রশ্ন শুনে বিস্মিত হলাম। গাম্বিয়া ৯০ শতাংশ মুসলিমের দেশ। অপেক্ষাকৃত কম সময়ে এবং মূল্যে ইউরোপ ভ্রমণের জন্য ব্রাসেলস এয়ারলাইনসে অনেক বেশি গাম্বিয়ান যাত্রী থাকে। এই ফ্লাইটের একজন ক্রুর তো নামাজ না বোঝার কথা নয়! আমার পাশে বসা মাঝবয়সী গাম্বিয়ান ভদ্রলোকের বিনীত কণ্ঠ শুনতে পেলাম, ‘ও তো নামাজ পড়ছে। তুমি কি দয়া করে দুই মিনিট পরে আসবে?’ ভদ্রলোকের বিনীত অনুরোধের জবাবে বিমানবালার রুক্ষ জবাব শুনে এবার সত্যি বিরক্ত হলাম, ‘আমার হাতে সময় নেই, এখনই ব্যাগ শনাক্ত না করলে আমাকে ব্যাগটি ফ্লাইট থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে।’ নিশ্চয় প্রবীণ কেউ হবেন! নবীনেরা যত সহজে ভিন্ন ধ্যানধারণা গ্রহণ করতে সক্ষম, প্রবীণেরা হয়তো ততটা নন। নামাজ শেষ করার পর আমার থেকে মাত্র দুই সারি দূরে দাঁড়ানো তরুণী ক্রুকে দেখে আমি হালকা একটা ধাক্কা খেলাম, জানালাম ‘ব্যাগটি আমার’। তার চোখে খানিকটা বিস্ময়— একবার আমার দিকে, আবার আমার মাথার উপরে লেখা সিট নাম্বার ও ব্যাগ মিলিয়ে দেখছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, তার আর কোনো প্রশ্ন আছে কি না। আমাকে অবাক করে সে হঠাৎ বললো, ‘তুমি কি ইন্ডিয়ান’? বুঝতে পারলাম, নামাজরত অবস্থায় মাথা ঢাকা থাকায় সে আমাকে দেখেনি, ঘোমটাবিহীন আমাকে দেখে সে ইন্ডিয়ান ভেবেছে। ভাবতেই পারে! আমি নির্লিপ্ত গলায় ‘না’ বলে জিজ্ঞেস করলাম, ‘এর সঙ্গে আমার ব্যাগের কোনো সম্পর্ক আছে কি না।’ সে মিষ্টি হেসে প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে আমার সঙ্গে গল্প শুরু করলো। কোথায় থাকি, গাম্বিয়া আসার কারণ…ইত্যাদি। আমিও জানলাম তার সম্পর্কে—নাম অ্যানা, বাড়ি বেলজিয়ামে, পাঁচ বছর ধরে এই ফ্লাইটে কাজ করছে। মনে হলো সে খুব উপভোগ করছে এই খোশগল্প—বার কয়েক পরনের দেশি ফতুয়া এবং আমার কাজের প্রশংসাও করলো। গল্প করতে করতে সে পাশের খালি সিটের হাতলে বসে পড়েছে। এরই মধ্যে মিনিট দশেক কেটে গেল। আমিই তাকে একসময় মনে করিয়ে দিলাম ব্যাগ শনাক্ত করার অসমাপ্ত কাজের কথা। কিছুটা উদাসীনের মতো জানালো—প্যাসেঞ্জার উঠতে আরও মিনিট বিশেক লাগবে। অতএব তাড়া নেই! ‘তাহলে তো আরও পাঁচ-দশ মিনিট তোমার সঙ্গে গল্প করার সুযোগ পাচ্ছি।’ আমার প্রশ্নের উত্তরে সে সহাস্যে সম্মতি দিল। এবার আমার কণ্ঠ বেশ শীতল, ‘আমি যখন নামাজ পড়ছিলাম তখন তোমার কথা শুনে তো মনে হয়েছিল তোমার সময়ের অভাব’!

গাম্বিয়ায় বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকের সঙ্গে লেখক

মেয়েটি সঙ্গে সঙ্গে খুব লজ্জিত কণ্ঠে বললো, ‘আমি অত্যন্ত দুঃখিত’! জিজ্ঞেস করলাম, কয়েক মিনিটের ব্যবধানে বোধোদয়ের কারণটি কী! সে বারবার একই উত্তর করছে, ‘আমি তো বলেছি, আমার আচরণের জন্য অত্যন্ত দুঃখিত।’ হয়তো ভয় পেল আমি তার নামধাম সব জেনে বসে আছি। তার সম্পর্কে অভিযোগ করি কি না। আমি তাকে নিশ্চিত করলাম! অভিযোগ করার কোনো উদ্দেশ্য নেই আমার, জানি— করেও কোনো লাভ নেই। হয়তো এই মেয়ে চাকরি হারাবে, কিন্তু তার বন্ধ মনের দুয়ার তাতে খুলবে না। আমি ভাবার চেষ্টা করেছি। এই ইউরোপিয়ান তরুণীর প্রাথমিক অস্বস্তি কি আমার ধর্ম নিয়ে, নাকি আমাকে একজন আফ্রিকান ভেবে! এতক্ষণের আলাপচারিতায় বুঝেছি, বয়সে তরুণ হলেও মানসিকতায় সে অনেকটুকু পেছনে, বাহ্যিক জগৎ সম্পর্কে তার ধারণা অপ্রতুল। আমি তার সঙ্গে আরও কিছুটা সময় কাটালাম। দুজনের অভিজ্ঞতা বিনিময় করলাম। পৃথিবীর উন্নত, অনুন্নত অনেক দেশে যখন উগ্রপন্থী ও সন্ত্রাসবাদের তান্ডব চলছে, ৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশ গাম্বিয়ায় সে রকম খবর কখনো শোনা যায়নি! বানজুলের রাস্তায় বা বিচে গেলে ভুল হতে পারে, এটি ইউরোপের কোনো দেশ। কিন্তু সারা বছর বানজুল ভরে থাকে ইউরোপিয়ান পর্যটকে। বেড়াতে এসে গাম্বিয়ান শিশুদের প্রেমে পড়ে সারা জীবন এখানে কাটাচ্ছেন এমন ইউরোপিয়ানের সংখ্যা অনেক। বানসাঙ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডটিতে ঢোকার মুখে প্রতিবার অ্যানিটা স্মিথের ছবিটি দেখে তাঁকে আমি সালাম জানাই। সেখানে লেখা আছে, ‌`The mother of the motherless’. অ্যানিটা ওয়ার্ডটির মূল পৃষ্ঠপোষক, তিনি একজন ইউরোপিয়ান। তাঁর মতো অনেক স্বেচ্ছাসেবী এখানে কালো মানুষগুলোর জীবন উন্নয়নে বছরের পর বছর কাজ করে যাচ্ছেন। অনেকেই অ্যানার দেশের বা পাশের কোনো দেশের নাগরিক। অ্যানা ও অ্যানিটার নামে কত মিল— তাই না! অ্যানা কিছুটা কি লজ্জা পেল, বা বিব্রত হলো! আমি সেদিকে দৃষ্টি না দিয়ে কথা চালিয়ে গেলাম। গাম্বিয়াতে বিভিন্ন ধর্মের, সম্প্রদায়ের লোকের নিবিড় সম্প্রীতি, পাশাপাশি অবস্থান। ভিন্ন ধর্ম বা গোত্রের মধ্যে বিয়েও হয় হরহামেশা। কোনো একটি স্বতন্ত্র ধর্ম যদি সন্ত্রাসের কারণ হতো, প্রতিদিন পৃথিবীর আনাচে-কানাচে অমুসলিমদের ঘটানো সন্ত্রাসের দায় কার! একজন শিক্ষিত মানুষ ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসীদের ঘৃণা করে, কোনো বিশেষ ধর্মাবলম্বী মানুষকে নয়। দেখলাম এখানেও আমার সঙ্গে একমত অ্যানা! আফ্রিকার অনেক দেশের মতো গাম্বিয়াতেও গদি ধরে রাখার রাজনৈতিক পাঁয়তারা আছে, কিন্তু গত বছরের অভূতপূর্ব মার্বেল ভোটের মাধ্যমে গাম্বিয়ানরা গণতন্ত্রকে স্বাগত জানিয়েছে। সে দেশে প্রচলিত বহুবিবাহের সংস্কৃতি দেখে আমাদের মনে অনেক প্রশ্নের উদয় হয় ঠিকই, কিন্তু এই দেশটিতে একজন নারী গভীর রাতেও সম্পূর্ণ নিরাপদ। সংবাদপত্রের মাধ্যমে এবং আমার সহকর্মীদের বরাতে গত এগারো বছরে আমি একটিমাত্র ধর্ষণের ঘটনা শুনেছি, সেই কাপুরুষটিও গাম্বিয়ার বাইরের একটি দেশের পর্যটক! এখানে জনমানবহীন রাস্তায় কিছুক্ষণ পরপর চোখে পড়ে নারী পুলিশ, মাঠের ফসল ফলানোর কাজে ব্যস্ত কিশোরী-যুবতী, টোলের কাজেও অহরহ দেখা যায় নারীদের। এসব দেখে দীর্ঘশ্বাস চাপি— শিক্ষা, অর্থনীতি সবক্ষেত্রে আমাদের দেশের নারীরা এদের চেয়ে অনেক এগিয়ে, কিন্তু আমার দেশে ধু ধু মাঠে কেন, অপেক্ষাকৃত নিরিবিলি রাস্তায় একা একটি কিশোরী বা একটি কন্যাশিশুকে দেখলেও আমার বুক ধড়ফড় করে কেন! এটি শুধু আমার দেশের সমস্যা নয়, অপেক্ষাকৃত শিক্ষিত এবং উন্নত বলে দাবি করা অনেক দেশের একই চিত্র। শিক্ষা বা উন্নয়ন জিনিসটা আসলে কী? আমরা যারা নিজেকে শিক্ষিত হিসেবে দাবি করি, তাদের আচরণে যদি শিক্ষার অভাব প্রকাশ পায়, সেটা কী ধরনের শিক্ষা! এবার অ্যানার দৃষ্টিতে প্রশ্ন। সময় বলছে, অ্যানাকে আমার ছাড়া উচিত! এবার আমি পরোক্ষ ঘটনাবলিতে না গিয়ে সরাসরি বললাম, ‘একজন যাত্রী টিকিট কেটে যখন বিমানে ওঠে, একজন সেবাদাতার দৃষ্টিভঙ্গি হবে সব যাত্রীর জন্য একই রকম। আমি ইন্ডিয়ান হলে যে সেবা পাবার কথা, একজন আফ্রিকান বা আমেরিকান হলেও সেই একই সেবা আমার প্রাপ্য নয় কি?’ আমার কথা শেষ হবার পর অ্যানা আবারও বলল, ‘দুঃখিত।’ এই প্রথম তার মুখের শব্দটির সঙ্গে তার অন্তরের ছোঁয়া পেলাম!

লেখক: এপিডেমিওলজিস্ট; সেন্টার ফর ভ্যাকসিন ডেভেলপমেন্ট, স্কুল অব মেডিসিন, ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ড, বাল্টিমোর
ছবি: লেখক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top