skip to Main Content

বিশেষ ফিচার I রণাঙ্গন থেকে বিবাহে

সৈনিকদের সময়-বাঁচোয়া খাবার থেকে এর উত্তরণ। আজকের বিয়ের উৎসবে। স্থানকাল ও পাত্রবদলের পথে পথে এই যোগ-বিয়োগের খেলা। কিন্তু কখনো ভাটা পড়েনি জিভের আকর্ষণে। লিখেছেন সামীউর রহমান

রুমালে মুখ ঢাকা বর আর কুমকুমের নকশা আঁকা ঘোমটা ঢাকা লাজুক বধূর দিন গেছে কবে! এখন তো প্রি-ওয়েডিং, পোস্ট ওয়েডিংয়ের দিন ফুরিয়ে নতুন সেনসেশন ‘ডেস্টিনেশন ওয়েডিং’; যেখানে বালি দ্বীপের সৈকতে কিংবা ফুকেটের কোনো রিসোর্টে আপন বাহুডোরে বাঁধা পড়েন নবদম্পতি। এত এত সব নতুনের ভিড়েও কিছু থেকে যায় চিরন্তন কিছু। যার আমেজ কখনো ফুরায় না। বাংলাদেশে মুসলিম সমাজেও বিয়ের অনুষ্ঠানে যত আধুনিকতাই যোগ হোক না কেন, লাল বেনারসি আর কাচ্চি বিরিয়ানি কখনোই পুরোনো হবার নয়। আজকাল যদিও বিয়ের আসরে ফটোগ্রাফার কে, সেটাই হয়ে উঠেছে মুখ্য; তবে একসময় বিয়ের রান্না কোন বাবুর্চি করবেন, সেটাই ছিল মূল আকর্ষণ। কাঠ কয়লার আঁচে দমে বসানো কাচ্চি বিরিয়ানির হাঁড়ির আটার লেই দিয়ে সিল করে রাখা ঢাকনাটা খুললেই যে মোহনীয় সুবাস, তার কাছে গোলাপ-চন্দন সবই যে হার মানে! অথচ অবাক করা বিষয়, বিরিয়ানি মোটেও উৎসবের ভোজের খাবার ছিল না। যুদ্ধক্ষেত্রে সৈনিকদের অথবা কর্মরত শ্রমিকদের খাওয়ানোর জন্যই চাল, মাংস আর মসলা- সব মিশিয়ে এক হাঁড়িতে চাপিয়ে রান্না করা খাবারই হলো বিরিয়ানি। সময়ের পরিক্রমায় সেই বিরিয়ানিই আজ আমাদের উৎসব আনন্দের প্রধানতম পদ।
বিরিয়ানি কথাটা এসেছে ফারসি শব্দ বিরিঞ্জ থেকে। বিরিঞ্জ অর্থ ভাত। আরেকটা উৎস হতে পারে ফারসি শব্দ বিরিয়ান বা বেরিয়ান, যার অর্থ ভাজা। ফারসি থেকে উর্দু ভাষায় রূপান্তর হতে হতে উচ্চারণ যেমন খানিকটা বদলেছে, তেমনি মধ্য এশিয়া থেকে এই ভারতীয় উপমহাদেশে আসতে আসতে এর রূপ, রস, রঙ বদলেছে নানান বাঁকে। একেক শাসকের রসুইখানার বাবুর্চিদের হাতের নানান পরীক্ষা-নিরীক্ষায়, নানান আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে উপাদান আর মসলায় পরিবর্তন এলেও মূল রন্ধনশৈলী অবশ্য অবিকল রয়ে গেছে। সেটা হচ্ছে চাল, মাংস আর মসলা একসঙ্গে একটা হাঁড়িতে মিশিয়ে কয়লার আঁচে দমে রাখা। আটার লেই দিয়ে ঢাকনা আটকে দেওয়া তামার পাত্রে উপরে নিচে রাখা অঙ্গারের আঁচ হাঁড়ির ভেতরে তৈরি করে মাংস আর মসলার এক অসাধারণ নির্যাস, যা শুষে নিত লম্বা দানার ঝরঝরে চাল। নির্ধারিত সময় পর নামিয়ে নিলেই বিরিয়ানি হাজির!
বিরিয়ানি কী করে ভারতবর্ষে এলো, তা নিয়ে নানা মুনির নানা মত। কারও কারও মতে, মালাবার বন্দরে বাণিজ্য করতে আসা আরব বণিকদের সঙ্গেই বিরিয়ানির আগমন। কেউ বলেন, তৈমুর লং যখন ভারত আক্রমণ করেছিলেন, তখন তার সেনাবাহিনীর খাবার ছিল এই বিরিয়ানি। যুদ্ধক্ষেত্রে সৈনিকদের তো আর পঞ্চব্যঞ্জন সাজিয়ে খাওয়ানোর উপায় ছিল না, তাই এক হাঁড়িতে চাল, মাংস আর মসলার মিশ্রণে বানানো খাবারই ছিল বিরিয়ানির পূর্বপুরুষ। তবে সবচেয়ে জনপ্রিয় তথ্য হচ্ছে মোগল শাসকদের হাত ধরেই বিরিয়ানির আগমন। আর মোগলরা যেহেতু মধ্য এশিয়ার ঘোড়সওয়ার তুর্ক-মোঙ্গল জনগোষ্ঠীরই একটি ধারা, তাতে তৈমুর লংয়ের সেনাবাহিনীতে চাল ও মাংস মিশিয়ে খাদ্য পরিবেশনের সম্ভাবনাটা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তবে এর সঙ্গে বিরিয়ানির চেহারার তফাত হয়তো ততোটাই- যতটা মানুষে আর বানরে! ব্রিটিশ ইতিহাসবিদ লিজি কলিংহ্যাম ভারতীয় খাদ্যসংস্কৃতি নিয়ে একখানা বই লিখেছেন, ‘কারি; আ টেল অব কুকস অ্যান্ড কনকারারস’। ইংরেজের খাদ্যরুচি সম্পর্কে মুজতবা আলী যা লিখে গেছেন, আর বিলেতে বেশির ভাগ সিলেটি মালিকানাধীন ‘ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট’গুলোতে হান্ডি, কড়াই বালতি নামে যেসব বিকোচ্ছে, তাতে বিলাতি মেমের মুখ ঝাল (পড়ুন বিরিয়ানি) খেয়ে ঠিকুজি-কুষ্ঠির হদিস না করাই বোধ হয় ভালো। তবু একবার জেনে নেওয়া যাক ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপকের অনুসন্ধানে বিরিয়ানির জš§রহস্য। তাঁর মতে, বিরিয়ানির এখন যে চেহারাটা আমরা দেখি, তার উৎপত্তি মোগল সম্রাটদের হেঁসেলে, স্থানীয় মসলাদারের ভাতজাতীয় খাবারের সঙ্গে পারস্যের পিলাফ বা পোলাওয়ের সংমিশ্রণে।
ভাষা যেমন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও সমৃদ্ধ হয় নতুন নতুন শব্দে, তেমনি সিল্ক রুট ধরে ভারতবর্ষে এসে, দিল্লি থেকে এই সুবা বাংলা পর্যন্ত আসতে আসতে বিরিয়ানিতেও ঘটেছে নানান সংযোজন ও বিয়োজন। হায়দরাবাদি বিরিয়ানি, সিন্ধি বিরিয়ানি, মেমনি বিরিয়ানি, লক্ষেèৗ বিরিয়ানি থেকে শুরু করে আমাদের ঢাকাই বিরিয়ানিও স্বাদে ও উপাদানে অনন্য। ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে অনেক স্থানিক বৈশিষ্ট্য যোগ হয়েছে বিরিয়ানিতে। আর এই পার্থক্য ঘটেছে মূলত মসলার ব্যবহারের ওপর ভিত্তি করে। তবে রন্ধন প্রক্রিয়ার দিক থেকে মোটা দাগে দুই ভাগে একে ভাগ করা যায়- কাচ্চি আর পাক্কি। কাচ্চি বিরিয়ানিতে কাঁচা মাংসকে টক দই, কাঁচা পেঁপে বাটা মাখিয়ে রেখে নরম করে তারপর তলাচ্যাপ্টা হাঁড়িতে আধাসেদ্ধ চাল, মাংস আর মসলার এক একটা স্তর করে করে বিছিয়ে দিয়ে সবশেষে দুধে গোলানো জাফরান ঢেলে তারপর ঢাকনা এঁটে আটার লেইয়ের সিল লাগিয়ে কয়লার আঁচে দমে বসিয়ে দিতে হয়। শুরুতে কিছুক্ষণ চড়া আঁচে, এরপর ঢাকনার উপর খানিকটা অঙ্গার দিয়ে ঢিমে আঁচে বসিয়ে রাখতে হবে। এরপর আন্দাজমতো সময়ে নামিয়ে নিলেই তৈরি কাচ্চি বিরিয়ানি। পাক্কি বিরিয়ানিতে মাংস আর ভাত আলাদা রান্না করে পরে কাচ্চির প্রক্রিয়া পরতে পরতে সাজিয়ে দমে বসাতে হয়। অবশ্যই দুটো বিরিয়ানির স্বাদ দুই রকম। কোনটা ভালো কোনটা কম ভালো, সেই তর্ক থাক। কারণ, বেশির ভাগ মানুষের কাছেই তো বিরিয়ানি মানেই জিভে জল!
বিরিয়ানির তীর্থভূমি হলো হায়দরাবাদ। সেখানকার একজন বিশিষ্ট খাদ্যরসিক, তাজ হোটেল গ্রুপের পরামর্শক, রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী ও খাদ্য ইতিহাস অনুসন্ধানী হলেন মেহবুব আলম খান। একটি টিভি চ্যানেলে তিনি রান্না করে দেখিয়েছেন মায়ের কাছে শেখা হায়দরাবাদি বিরিয়ানি। তাতে খানিকটা হাড়, চর্বিসহ বড় বড় করে কেটে নেওয়া খাসির মাংসে তিনি মিশিয়েছেন কাঁচা পেপে বাটা, লেবুর রস, আদা-রসুনের পেস্ট, হলুদ ও মরিচের গুঁড়া, খানিকটা গোটা গরমমসলা ও অনেকখানি ভাজা পেঁয়াজ। সঙ্গে দিয়েছেন ধনে পাতা কুচি ও পুদিনা পাতা কুচি। তারপর চ্যাপ্টা তলার তামার হাঁড়িতে কাঁচা মাংসের উপর বিছিয়ে দিয়েছেন একবার জলে ফুটিয়ে নেওয়া বাসমতী চাল। সেই চাল সেদ্ধ করা জলেই খানিকটা ঘি মিশিয়ে ঢেলে দিয়েছেন হাঁড়িতে। এরপর দুধে জাফরান গুলে সেই দুধ হাঁড়িতে ঢেলে দিয়ে ঢাকনা লাগিয়ে বসিয়ে দিয়েছেন কয়লার আঁচে। রান্নার প্রক্রিয়াটা কাছাকাছি হলেও মেহবুব আলমের হায়দরাবাদি বিরিয়ানির সঙ্গে ঢাকাই বাবুর্চিদের বিয়েবাড়ির কাচ্চি বিরিয়ানির রয়েছে সূক্ষ্ম একটা তফাত। ঢাকাই বিরিয়ানিতে ধনে পাতা ও পুদিনা পাতা দেওয়ার রেওয়াজ নেই। আর মাংসের টুকরোর সঙ্গে যেটা পাতে না পড়লে অনেকের মনটাই খারাপ হয়ে যায়, সেই আলুই যে অনুপস্থিত হায়দরাবাদি বিরিয়ানিতে! তাহলে প্রশ্ন আসতেই পারে, আলুর দোষ কবে হলো বিরিয়ানির?
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আমাদের ফিরে যেতে হবে ব্রিটিশ ভারতের প্রথম স্বাধীনতাসংগ্রামে। ১৮৫৭ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে সিপাহি বিদ্রোহের সময় এদেশীয় সৈনিকেরা স¤্রাট দ্বিতীয় বাহাদুর শাহকে দিল্লির সিংহাসনে বসায়। অন্যদিকে অযোধ্যার শেষ নবাব ওয়াহেদ আলি শাহর এক পুত্রকেও নবাব হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। কিন্তু সেই বিদ্রোহ ইতি টানতে পারেনি ইংরেজ শাসনের, কোম্পানির হাত থেকে ভারতের শাসনভার চলে যায় খোদ ব্রিটিশ সরকারের হাতে। ওয়াজেদ আলি শাহকে প্রথমে বন্দি করা হয়েছিল ফোর্ট উইলিয়ামে। পরে কলকাতায় মেটিয়া বুরুজে তার থাকার জন্য একটা বাড়ি বরাদ্দ করে ব্রিটিশ সরকার। দেওয়া হতো মাসোহারা। নবাবের খরচের লম্বা হাতে তাই টান পড়লো। বিরিয়ানিতে মাংসের বদলে এলো আলু। অবশ্য আলু তখন উচ্চাঙ্গেরই সবজি! পর্তুগিজরা এ দেশে নিয়ে এসেছে, সাধারণ মানুষের কাছে তখনো এতটা সহজলভ্য হয়ে ওঠেনি। তাই নবাবের পাতে মাংসের সঙ্গে আলু। সেই থেকে কলকাতার বিরিয়ানি ‘আইকন’ হয়ে উঠলো আলু, তাই বাংলাদেশের বিরিয়ানিতে লেগে গেল ‘আলুর দোষ’।
শুধু ওয়াজেদ আলি শাহই নন, অনেকের মতে বিরিয়ানিতে আলুর প্রচলন করেছিলেন বেগম মুমতাজ জাহান! যার জন্য শাহজাহান গড়েছিলেন তাজমহল, সেই মুমতাজ নাকি সৈন্যদের ভগ্নস্বাস্থ্য দেখে নির্দেশ দিয়েছিলেন পুষ্টিকর খাবার পরিবেশনের। বাবুর্চিখানা থেকে এরপর গিয়েছিল বিরিয়ানি। শুরুর দিকে দুই টুকরো মাংস, পরে এক টুকরো মাংস ও এক টুকরো আলু, এভাবেই পরিবেশিত হতো খাবার। তাজমহল গড়তে গিয়ে বোধ হয় ভাঁড়ারে টান পড়েছিল! তবে ওয়াজেদ আলি শাহ কিংবা মুমতাজ জাহান, কাজটা যে-ই করেছিলেন, তাকে বাহবা দিতেই হয়। না হলে বিরিয়ানির ভেতর অমন তুলতুলে রত্নখ-ের সন্ধানটা তো অধরাই থেকে যেত!
ঢাকাই বিরিয়ানির ভুবনে সবচেয়ে বিখ্যাত নাম খুব সম্ভবত ফখরুদ্দিন বাবুর্চি। দেশ-বিদেশের অতিথিরা মুগ্ধ হয়েছেন তার রান্নায়। ফখরুদ্দিনের জš§ পাটনায়, ১৯৬৫ সালে তিনি বাংলাদেশে আসেন এবং ভিকারুননিসা স্কুলের নৈশপ্রহরীর চাকরি নেন। পরবর্তীকালে স্কুলের ক্যানটিন পরিচালনার কাজ নেন; এরপর তার সুস্বাদু রান্নার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। এই গল্প অনেকেরই জানা। তবে এটাও মনে রাখতে হবে, বিহারের রাজধানী পাটনার সঙ্গে পূর্ব ভারতের সবচেয়ে বড় শহর কলকাতার সম্পর্ক পুরোনো। কাজের সন্ধানে ঢাকা আসার আগে ফখরুদ্দিন যে কলকাতা যাননি, বা খাস কলকাত্তাইয়া কোনো ওস্তাদ বাবুর্চির রসুইঘরে তালিম নেননি, সে কথাই-বা বলি কী করে! তাই ধরে নেওয়া যায়, ফখরুদ্দিনের হাত ধরেই কলকাতা ঘরানার আলু দেওয়া কাচ্চি বিরিয়ানি জনপ্রিয় হতে শুরু করে বাঙালি মুসলমান পরিবারের বিয়েবাড়ির ভোজে।
হায়দরাবাদি ও ঢাকাই বিরিয়ানির মধ্যে মৌলিক পার্থক্য পরিবেশনেও। হায়দরাবাদি বিরিয়ানির সঙ্গে বেশির ভাগ সময়েই পরিবেশন করা হয় ‘মিরচি কা সালন’; মরিচের সঙ্গে বাদামবাটা, কোরা নারকেল ও আদা-রসুন বাটা দিয়ে বানানো ঝাল একটা ক্বাথ বা ঘন সুরুয়া। কখনো থাকে দই চাটনি; ফেটা টক দইয়ের সঙ্গে পেঁয়াজ পুদিনা পাতা কুচি আর অন্যান্য উপাদান দিয়ে বানানো। ঢাকাই কাচ্চির সঙ্গে আলুবোখারার চাটনি না থাকাটা শচীন টেন্ডুলকারকে বাদ দিয়ে সর্বকালের সেরা ক্রিকেট দল বানানোর মতোই! এখানেও আলুর দোষ, যদিও আলু আর আলুবোখারায় ততটাই তফাত, যতটা আম আর আমড়ায়, জল আর জলপাইয়ে! কালচে, ঘন, চ্যাটচ্যাটে আলুবোখারা চাটনিটা থাকবে পাতের কোণে, আলুটা ভেঙে চটকে তার সঙ্গে বিরিয়ানির রাইস আর মাংস মেখে মুখে তুলে চিবিয়ে গেলার পর এক চুমুক বোরহানি! তবেই না সার্থক হবে এত সেজেগুজে উপহার নিয়ে বিয়েবাড়িতে আসাটা।
বিরিয়ানি ঢাকার বা পূর্ববঙ্গের পদ নয়। তবে এ ক্ষেত্রে কেরামতি আছে বৈকি! এই যেমন কাচ্চিতে গরুর মাংস। মোগল রসুইয়ে কস্মিনকালেও গরুর মাংস দিয়ে কাচ্চি হয়নি। বরং খাসি ছাড়া ভাবাই যেত না। কিন্তু আমাদের ঢাকার বাবুর্চিরাই গরুর মাংস দিয়ে কাচ্চি রেঁধে মাত করে দিলেন সেই মোগলদেরই। তা খেয়ে সুবেদার ইসলাম খাঁ ও তার পারিষদ বাহবা দিলেন। আর যত দূর জানা যায় বিরিয়ানিতে বোরহানি সংযোজনের কৃতিত্বও আমাদের ঢাকাইয়া বাবুর্চিদের।
কার্ল উইলহেম শিলে না জোসেফ প্রিস্টলি- অক্সিজেন কে আবিষ্কার করেছিলেন, বিজ্ঞানীদের ভেতর তা নিয়ে মতভেদ আছে। কেউ বলেন, শিলে আগে আবিষ্কার করেছেন, কেউ বলেন প্রিস্টলির কাজ আগে প্রকাশিত হয়েছে। সেসব না জেনেও বহুলোকে দিব্যি শ্বাস নিয়ে যাচ্ছেন, দিব্যি বেঁচে আছেন। তাই বিরিয়ানির আবিষ্কার তুঘলক খাঁ না বেগমজান, সেসব জানা আর না জানায় কিচ্ছু আসে যায় না। হীরকের রাজা যেমন বলে গেছেন, ‘জানার কোনো শেষ নাই, জানার চেষ্টা বৃথা তাই’! তার চাইতে কোন জায়গায় ভালো বিরিয়ানি পাওয়া যায়, সেই হদিস বের করুন। ইচ্ছে হলে এই অধম লেখককেও সঙ্গে নিয়ে যান। একজন সঙ্গী হলে খাওয়াটা জমে ভালো। আর বিরিয়ানির উৎপত্তি রণাঙ্গনে হলেও সেটা বিয়ের ভোজ হিসেবে কী করে চালু হয়ে গেল, সেই চিন্তাও মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলুন। কোনো একজন মহান মনীষী তো বলেই গেছেন, বিয়ে আর যুদ্ধে তফাত সামান্যই। একটিতে শত্রুর সঙ্গে এক ছাদের নিচে থাকতে হয়, অন্যটিতে দুই তরফের তাঁবুটা আলাদা!

লেখক: রসিক ভোজন লিখিয়ে, সাংবাদিক, দৈনিক কালের কণ্ঠ
ছবি: ক্যানভাস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top