skip to Main Content

বিশেষ ফিচার I স্যুট-আপ

স্যুটের ধরন বিচিত্র। কিন্তু কোন অনুষ্ঠানের জন্য কোনটি পরতে হয়? লিখেছেন শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজির ফ্যাশন ডিজাইন অ্যান্ড টেকনোলজি ডিপার্টমেন্টের প্রধান সাবরিনা ইজদীহার

বিজনেস স্যুট

ফ্যাশনমনস্ক শহুরে পুরুষের ওয়্যারড্রোবে স্যুট থাকবেই। তবে সব সময় সব জায়গায় একই স্যুট পরা যায় না। তবে এটি পরা যায় ব্যক্তিগত সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক কোনো উপলক্ষ বা অনুষ্ঠানে। যেমন বিয়ে, ফরমাল ইভেন্ট বা পার্টি, ডিনার এবং বিজনেস মিটিংয়ে। বিভিন্ন স্টাইল এবং ম্যাটেরিয়ালের স্যুটকে দুটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়। তা হয়ে থাকে শার্ট, প্যান্ট, টাই, কাফ লিঙ্ক, ওয়েস্ট কভারিং ইত্যাদির ভিত্তিতে। এ ছাড়া ক্ল্যাসিক ফিট, মডার্ন ফিট এবং স্লিম ফিটের স্যুটও দেখা যায়।
টাক্সেডো

ডাবল ব্রেস্টেড স্যুট জ্যাকেট

টাক্সেডো হচ্ছে ব্ল্যাক টাই ইভেন্ট স্যুট। সান্ধ্য অনুষ্ঠানে বেশি পরা হয়ে থাকে। বস্তুত বিশেষ উপলক্ষের বার্তা বহন করে। টাক্সেডো পরা মানে স্যুট পরে সুন্দর দেখানো নয়, বরং উপলক্ষটা যে বিশেষ সেটা প্রতীয়মান করাও। বিয়ের স্যুট হিসেবে টাক্সেডো পরা হলেও সেটা খুবই ফরমাল পোশাক। এই স্যুট যেকোনো হালকা কাপড় দিয়ে তৈরি হতে পারে; এমনকি ক্যাজুয়াল কাপড় দিয়েও হতে পারে। বেশির ভাগ টাক্সেডো কালো এবং মিড নাইট ব্লু হয়ে থাকে। তবে কালো রং ক্লাস এবং কালচার নির্দেশক হিসেবে খুবই বোল্ড স্টেটমেন্ট বহন করে। সলিড সাদা বাটন আপ শার্টের সঙ্গে পরতে হয় টাক্সেডো। এর ল্যাপেল খুব আকর্ষণীয় হয়ে থাকে। সাধারণত স্যাটিন কাপড় বা উঁচু মানের সিল্ক দিয়ে তৈরি হয়। টাক্সেডোর সঙ্গে পরতে হয় বো টাই আর বেল্টের পরিবর্তে ওয়েস্ট কভারিং এবং ওয়েস্ট কোট।
ওয়েডিং স্যুট
আমাদের দেশে বিয়ের ট্র্যাডিশনাল পোশাক হিসেবে শেরওয়ানি পরা হলেও ওয়েডিং স্যুটও সমানভাবে জনপ্রিয়। বিশেষ করে ওয়েডিং রিসেপশন, বউভাত বা অন্যান্য অনুষ্ঠানে। ওয়েডিং স্যুট বিভিন্ন রঙের এবং কাপড়ের হতে পারে; তবে কালো বা গাঢ় ধূসর রঙের সিঙ্গেল ব্রেস্টেড জ্যাকেটের কাটতি সবচেয়ে বেশি। সিজনের উপর ভিত্তি করে কাপড় হতে পারে সিল্ক থেকে উল। সাধারণত ওয়েডিং স্যুট সাদা শার্ট এবং ফ্রেঞ্চ কাফের গোল্ড বা সিলভারের স্টেটমেন্ট কাফলিংকের সঙ্গে পরা হয়ে থাকে। সঙ্গের প্যান্ট হয় সমান এবং সরু পাট করা। এ উপমহাদেশে, বরেরা খুব জমকালো কাপড়ের যেমন জরি দিয়ে ফিউশন করে স্যুট বানিয়ে থাকেন। যা ওয়েডিং রিসেপশন পার্টি বা নাচের প্রোগ্রামের জন্য দারুণ সংযোজন।
ফরমাল বিজনেস স্যুট
পেশাজীবিদের ওয়্যারড্রোবে একটা বিজনেস স্যুট থাকবেই। কাটে ক্ল্যাসিক এসব স্যুটের মূলত দুটি ধরন—সিঙ্গেল ব্রেস্টেড এবং ডাবল ব্রেস্টেড স্যুট জ্যাকেট। সিঙ্গেল ব্রেস্টেড জ্যাকেট ক্ল্যাসিক স্যুটের জনপ্রিয় সংস্করণ, যার এক সারিতে ১ থেকে ৪টি পর্যন্ত বোতাম থাকে। থাকে নচ বা ল্যাপেল। ডাবল ব্রেস্টেড জ্যাকেট একদম অন্য রকম স্টাইলের। এর দুই সারি মিলে ৪ থেকে ৬টি বোতাম থাকে। জ্যাকেটে এক সাইড থেকে অন্য সাইডে র‌্যাপ করে বোতাম লাগানো হয়। ডাবল ব্রেস্টেড স্যুটের থেকে সিঙ্গেল ব্রেস্টেড স্যুট বেশি জনপ্রিয়। কারণ, ডাবল ব্রেস্টেড স্যুটের স্টাইলিং একটু কঠিন বা ঝামেলাপূর্ণ। সাধারণত ড্রেস শার্টের সঙ্গে বিজনেস স্যুট পরা হয়ে থাকে। সঙ্গে সিল্ক টাই সবচেয়ে বেশি মানানসই।
সাধারণ এবং ক্যাজুয়াল স্যুট

ওয়েডিং স্যুট

এই স্যুটে জ্যাকেট ও প্যান্ট একই ফেব্রিকের হয়ে থাকে। ফলে ড্রেস আপ বা ডাউন করার অনেক অপশন থাকে। ফরমাল বিজনেস স্যুটের পাশাপাশি আছে লেজার স্যুট ও ক্যাজুয়াল স্যুট। স্যুট দিনের যেকোনো সময় পরা যায়। ফলে স্যুটকে ক্যাজুয়াল ড্রেস হিসেবেও ধরা যায়, যদি টাই ছাড়া পরা হয় এবং লিনেনের মতো হালকা ম্যাটেরিয়ালে বানানো হয়। স্যুট হালকা রঙের ক্যাজুয়াল ফেব্রিক দিয়ে বানানো যেতে পারে। ডেনিমেরও স্যুট হয়; তবে তা ফরমাল লুকের জন্য নয়। ক্যাজুয়াল স্যুট যেকোনো ফেব্রিকের হতে পারে, যদি সেই কাপড়ে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ হয়। একটি হাই কোয়ালিটি কাপড়ের তৈরি বেঢপ স্যুটের চেয়ে একটি কম দামি লো কোয়ালিটি ফেব্রিকের ভালো ফিটিং স্যুট অনেক বেশি ফ্যাশনেবল দেখায়। ক্যাজুয়াল বা বিজনেস স্যুট—যেটাই হোক না কেন, হতে হবে ফিটফাট এবং পরিচ্ছন্ন।
সামার স্যুট

টাক্সেডো

গ্রীষ্মের সময় স্যুটের কাপড় হতে পারে হালকা ফেব্রিকের, যার ভেতর দিয়ে সহজেই বাতাস চলাচল করতে পারে। এ ধরনের স্যুট শরীরকে ভেতর থেকে ঠান্ডা রাখে লুকের কোনো পরিবর্তন না করেই। দিনের বেলায় সামার স্যুট বেশি নজর কাড়ে। কারণ, এই স্যুট সাধারণত সাদা, ঘিয়ে, তামাটে, ধূসর, হালকা নীল (অনেকটা আকাশি) এবং খাকি রঙের হয়ে থাকে। ফেব্রিকের ভিত্তিতে এ স্যুটের অনেক ধরন রয়েছে। যেমন লিনেন স্যুট, কটন স্যুট, চ্যাম্বেরি স্যুট, ফ্রেস্কো স্যুট ইত্যাদি।
লাউঞ্জ স্যুট
বর্তমান ফ্যাশন বিশ্বের জন্য বেশ উপযুক্ত। বিজনেস লাঞ্চ বা করপোরেট ইভেন্টের জন্য লাউঞ্জ স্যুট খুব মানানসই। রাতের বা বেশি ফরমাল ইভেন্টের জন্য জ্যাকেটের রঙ গাঢ় হতে পারে। দিনের বেলায় গরমের সময় যদি ইভেন্ট হয়ে থাকে, তাহলে জ্যাকেটের রঙ হালকা হওয়া ভালো। লাউঞ্জ স্যুটের সবচেয়ে বড় সুবিধা, এটি ফরমাল বা ক্যাজুয়াল—দুই লুকের জন্যই পারফেক্ট। স্মার্ট ক্যাজুয়াল বা ডাউন ড্রেসের সময় লাউঞ্জ স্যুট কলারসমেত পোলো টি-শার্ট অথবা চ্যাম্ব্রেই শার্টের সঙ্গে মানানসই। লিনেনের পকেট স্কয়ারের সঙ্গে পরলে তৈরি হয় দারুণ লুক। প্রতিদিনের ক্যাজুয়াল লুকের জন্য দারুণ।
ককটেল স্যুট
এটি ফরমাল এবং নিজস্ব স্টাইলের ফ্যাশনেবল মিশ্রণ। তবে সৃজনশীলতা ও নিজস্বতা প্রকাশে অসাধারণ। ড্রেস কোড খুব একটা কঠোর না হলে বারগেন্ডি, জলপাই সবুজ বা খাকি রঙের মিক্স এবং ম্যাচ জ্যাকেট ও ট্রাউজার পরা যেতে পারে এ ক্ষেত্রে। প্যাটার্ন পরতে চাইলে মিনিমাল, ছোট চেক বা পিনস্ট্রাইপের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা উচিত। প্রিন্টের উপর ভরসা না থাকলে কাপড়ের টেক্সচারে নজর দেওয়া চাই।
ব্লেজার জ্যাকেট

ব্লেজার জ্যাকেট

এটা স্যুট জ্যাকেটের মতো ফরমাল নয়। আবার স্পোর্টস জ্যাকেটের মতো ক্যাজুয়ালও নয়। বরং এই দুয়ের হাইব্রিড সংস্করণ। স্যুটের মতো ব্লেজার প্যান্টের সঙ্গে ম্যাচ করে পরা হয় না। অনেক বেশী স্ট্রাকচারড নয় বরং অন্যান্য স্যুটের তুলনায় একটু লুজ ফিটিংয়ের হয়। স্যুট না পরেও পরিপাটি লুকের জন্য ব্লেজার জুতসই অপশন। খুবই ইউনিক একটি স্টাইল বহন করে। এক রঙা ছাড়াও ফ্লোরাল, প্রিন্ট বা নানা ডিজাইনের এমব্রয়ডারি করা ব্লেজার এখন পছন্দ করেন অনেক ফ্যাশনসচেতন মানুষ।
স্পোর্টস জ্যাকেট
স্পোর্টস জ্যাকেট সব সময় ঠিক ততটুকুই ফিট হয়, যতটুকুতে এর নিচে লেয়ারিং করা যায়। এতে থাকে প্লিট, আর্ম প্যাচ এবং ক্যাজুয়াল পকেট, যা বিভিন্ন কাজে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে তৈরি। সব ধরনের জ্যাকেটের মধ্যে স্পোর্টস জ্যাকেটই বেশি ক্যাজুয়াল। তাই ফরমাল স্যুট পরতে হয় এমন কোথাও কোনোভাবেই স্পোর্টস জ্যাকেট পরা যাবে না। তবে ক্যাজুয়াল হলেও যেকোনো আনুষ্ঠানিকতায় অনায়াসে পরা যেতে পারে।

ভাষান্তর: ফাহমিদা শিকদার
মডেল: অর্ক ও নাহিদ
ওয়্যারড্রোব: ফিট এলিগ্যান্স
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: সৈয়দ অয়ন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top