skip to Main Content

যাপনচিত্র I গথিক ঘরানায়

জেফার রহমান। এ প্রজন্মের গায়িকা, ইউটিউবার ও প্রডিউসার। ২০১১ সালে ইউটিউব মিউজিশিয়ান হিসেবে লাইমলাইটে আসেন। স্টাইলের কারণেও অসংখ্য ফলোয়ার তার

একমুখ হাসি ও লম্বা ঘুম যেকোনো কিছুর সেরা নিরাময়—জেফারের বেলায় কথাটি একদম মিলে যায়। কাজ না থাকলে সাধারণত একটু দেরিতে ঘুম ভাঙে তার, ১১-১২টায়। তবে কাজ থাকলে ভোর পাঁচটায় উঠতেও দ্বিধা করেন না। প্রস্তুতি নিয়েই শুরু করেন কর্মব্যস্ত দিন। সকাল ও দুপুরের খাওয়া সাধারণত একসঙ্গেই সারেন। মেনুতে থাকে ডিম, টোস্ট, পাউরুটি অথবা লাল আটার রুটি। খাদ্যতালিকা দেখেই আঁচ করা যায়, জেফার বেশ স্বাস্থ্যসচেতন। তবে ওয়ার্ক আউটের ব্যাপারে কিছুটা অনিয়মিত। যখন করেন, বেশ ভালোভাবেই শারীরিক কসরত করেন; আবার ছেড়ে দিলে একেবারেই ছেড়ে দেন। জিমে কখনো যাননি অবশ্য। বাসাতেই নানা ধরনের কার্ডিও বেসড ওয়ার্ক আউট করেন তিনি।
সবকিছুতেই নিজেকে ভাঙতে চান জেফার, হোক সেটা কাজ অথবা স্টাইল। এই গায়িকাই এক্সিকিউটিভ প্রডিউসার হিসেবে কাজ করেছেন ‘ন ডরাই’ সিনেমায়। মিউজিক্যাল স্টাইলে ভিন্নতা আনতে তার ভালো লাগে। ওই সিনেমায় ‘হারবো না’ গানটি বাংলাদেশে গথিক ঘরানার গুটিকয়েক গানের একটি।
মিউজিক বাদেও জেফারের সবচেয়ে আকর্ষণীয় পার্ট তার চুল। এককালে এই চুলের স্টাইল নিয়ে প্রচুর হাসাহাসি শুনলেও এখন সেটাই আবেদনময়ী ফ্যাশন। অনেক ক্ষেত্রে তার চুলের স্টাইল মিউজিকের চেয়েও বেশি আলোচনায় থাকে। জেফার জানালেন, মিউজিকে আসার অনেক আগে, স্কুলে পড়া অবস্থাতে চুলের এই স্টাইল শুরু করেন তিনি। স্টাইল, ফ্যাশন—এসব ব্যাপারে কাউকে অনুসরণ না করে নিজেই ইউনিক কিছু করার চেষ্টা থাকে তার।
ক্যাজুয়ালি ওয়েস্টার্ন পোশাক বেশি পরেন জেফার। তবে যেকোনো ধরনের ফিউশন, এমনকি শাড়িতেও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। পারফিউমও বেশ পছন্দ। সে ক্ষেত্রে নামীদামি ব্র্যান্ডগুলোর দিকেই রাখেন নজর। সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করেন ডলশে অ্যান্ড গ্যাবানার লাইট ব্লু। স্টাইল ও মিউজিক আইকন হিসেবে তার সবচেয়ে প্রিয় রিয়ানা।
ব্যক্তি জেফার বেশ অন্তর্মুখী। ছোটবেলা থেকেই একা থাকতে পছন্দ করেন। পরিবারে নিজের একমাত্র ভাই নাফিজ প্রাণের কাছ থেকে পেয়েছেন অনেক সহায়তা। ইউটিউবের খুঁটিনাটি যেমন রেকর্ডিং সফটওয়্যার থেকে শুরু করে সবকিছু শিখেছেন ভাইয়ের কাছ থেকে। প্রথম দিকে তার ভিডিও আর ফটোশুটও করে দিয়েছেন ওই ভাই।
পরিবারের বাইরে তার খুব কাছের বন্ধু পূর্ণা। সেই বন্ধুর পরিবারই জেফারের দ্বিতীয় পরিবার। পরবর্তীকালে মিডিয়াতে কাজ করতে করতে শেহতাজ, প্রীতম হাসান, সুনেহ্রা, সালমানসহ অনেকের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে। সময় পেলে আড্ডাবাজিটা মূলত এদের সঙ্গেই করেন।
শোর আউটফিট নিয়ে জেফার সম্ভবত একটু বেশিই সচেতন! প্রতিটি শোর আগে তা নিয়ে রীতিমতো গবেষণা করে ভিন্নতা আনার চেষ্টা চালান। দিনে দিনে ফ্যাশন ও স্টাইলে বেশ বৈচিত্র্য এসেছে তার। আগে মূলত একটু গথিক ঘরানায় উপস্থাপন করতেন নিজেকে; ফলে কালো ও ধূসর রঙের আধিক্য থাকত। গত দু বছরে নতুন নতুন রং নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করেছেন। হয়েছেন অনেকটা ‘ফেমিনিন’! যোগ হয়েছে লিপস্টিক ও নেইলপলিশ দেওয়ার মতো ব্যাপার। তিনি মনে করেন, স্টাইলে মূলত প্রতিফলিত হয় তার ব্যক্তিত্ব। আগের মতো সেপটাম রিং পরেন না এখন; যদিও সেটি তার সিগনেচার স্টাইলের অংশ ছিল। বর্তমানে স্বর্ণের সিম্পল জুয়েলারিতেই স্বাচ্ছন্দ্য।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ সরব এই গায়িকা। আকর্ষণীয় ছবি দিয়ে ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে বিপুল অনুরাগীর নজর কেড়ে নেন। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের ছবিতে দেখা গেছে তাকে। কখনো কখনো বোল্ড অবতারেও হাজির হয়েছেন। জেফার অবশ্য জানালেন, পাবলিক ফিগার হওয়ার কারণে বাধ্য হয়েই সোশ্যাল মিডিয়ায় অ্যাকটিভ থাকেন। অন্যথায় সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং তার খুব একটা পছন্দ নয়!
জেফার বেশ ভ্রমণপিপাসু। ‘ভ্রমণ প্রথমে তোমাকে নির্বাক করে দেবে, তারপর বাধ্য করবে গল্প শোনাতে,’—ইবনে বতুতার এই উক্তির সঙ্গে সহমত তিনি। ভারত, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ডসহ ঘুরে বেড়িয়েছেন নানান দেশে। গত মে মাসে ঘুরে এসেছেন নেপাল থেকে। সুযোগ পেলে ঘুরে দেখতে চান ইউরোপ, আমেরিকাসহ সারা বিশ্ব। জেফারের জীবনের একটি বড় অংশজুড়ে রয়েছে তার পোষা কুকুর কারলো। সম্ভব হলে এই পোষ্যকে ভ্রমণসঙ্গী করেন।
অবসর পেলে গান শুনে আর তা নিয়ে গবেষণা করে সময় কাটাতে ভালো লাগে এই গায়িকার। মেইনস্ট্রিমের পাশাপাশি ব্যতিক্রমধর্মী গান খুঁজে বের করা তার একধরনের নেশা। শুরুর দিকে ছিলেন ইভানেসেন্স, উইদিন টেম্পটেশনের মতো ব্যান্ডের ফ্যান। বিশেষ করে ইভানেসেন্সের ভোকাল অ্যামি লি তার প্রিয় শিল্পীদের একজন। বর্তমানে ভালো লাগে দ্য উইকেন্ড, দোজা ক্যাট, রোজালিয়ার মতো শিল্পীদের। গথিক, হিপহপ, ফোক, রক, পপ—সব জনরাই পছন্দ। সময় পেলে নেটফ্লিক্সে নানান ধরনের সাসপেন্স ও থ্রিলারধর্মী সিনেমা ও টিভি সিরিজ দেখেন। খুব পছন্দের টিভি সিরিজ ‘স্ট্রেঞ্জার থিংস’।
রাতের খাওয়া বেশ দেরিতেই সারেন জেফার। চেষ্টা করেন বিকেল-সন্ধ্যার স্ন্যাকস এড়িয়ে যাওয়ার। রাতের পাতে থাকে চিকেনের যেকোনো আইটেম। চেষ্টা করেন কার্ব কম রাখার। মিষ্টিজাতীয় খাবার এমনিতেও তার খুব একটা পছন্দ নয়।

i ফুয়াদ রূহানী খান
ছবি: সাজ্জাদ হোসেন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top