skip to Main Content
paturi-april-1

রসনাবিলাস I ছাদের নিচে বঙ্গব্যঞ্জন

ফেলে আসা গ্রামবাংলার খাবার এখানে মিলছে। পরিবেশন, আবহ- সবই ব্যতিক্রমী
পাতার ভাঁজে মাছের স্বাদ। সব পাতায় নয়, কলাপাতায়। ভাঁজ খুললে শুধু মাছ নয়, উন্মুক্ত হবে বাঙালির খাদ্যাভ্যাসের পরম্পরাও। গরম ধোঁয়ায় ভর করে নাকে আসবে পূর্বসূরিদের রেসিপির ঝাঁজ।
‘পাতুরি’র কথাই বলা হচ্ছে। তাতে গুরুত্ব দিয়ে ‘পাতুরি বাংলাদেশ’ রেস্তোরাঁর পথচলা। গত বছরের জুনের মাঝামাঝি।
নিভৃত পল্লিতে ফেলে আসা খাবারের প্রতি নগরবাসীর আকর্ষণকে লগ্নি করেই পাতুরি বাংলাদেশের মেন্যু তৈরি করা হয়েছে। অধিকন্তু, করপোরেট অফিসের বড় বড় পার্টিতে উপস্থিত হওয়া বিদেশিদের পছন্দের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে এ রেস্তোরাঁ। বিদেশিদের কাছে বাংলা খাবারের একটা আলাদা পরিচিতি তুলে ধরা পাতুরি রেস্তোরাঁর সামগ্রিক প্রচেষ্টারই একটা অংশ। কেননা, এর ৬০ শতাংশের বেশি অতিথিই বিদেশি। তাই ‘পাতুরি’ নামের সঙ্গে ‘বাংলাদেশ’ জুড়ে রেস্তোরাঁর নামকরণ হয়েছে ‘পাতুরি বাংলাদেশ’। বিদেশিরা যদি বাংলাদেশে এসে বাংলা খাবার চেখে দেখতে চান, তাহলে যেতে হবে সেখানেই।
ক্ল্যাসিক বাংলাদেশি কুজিন ধরে চলছে এখানকার কর্মকাণ্ড। রেসিপিতে তাই বাংলা খাবারের একটা ফ্লেভার রয়েছে এখানে। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যেসব জনপ্রিয় ও মুখরোচক খাবার আছে, সেগুলোর উপস্থাপনই পাতুরি বাংলাদেশের মূল চেষ্টা।
যেহেতু এর শুরু বেশি দিনের নয়, তাই মেন্যু এখনো শতভাগ পরিপূর্ণ নয়। তবে তা নেহাত কম নয়। পাতুরি পাওয়া যাবে চিংড়ির ও ভেটকি মাছের। মাছের অন্য পদগুলোর মধ্যে সর্ষে ইলিশ, ইলিশ কারি, চিতল কোফতা, আইড় মাছের ঝাঁকা, চিংড়ি দোপেঁয়াজা, কাচকি চর্চরি, মাছ আলু পটোল, শুঁটকি ভুনা, শুঁটকি বেগুন ভুনা ছাড়াও বেশ কিছু মাছের কারি এখানে মেলে। ভর্তা-ভাজিরও সমারোহ আছে। লাবড়া, বেগুন ভাজি, করলা ভাজি তো আছেই। ভর্তার মধ্যে ডাল, আলু, শুঁটকি, তিল, কালিজিরা, সর্ষে, শুকনা মরিচ, কাঁঠালের বিচি, লাউ পাতা ও কচু ভর্তাও আছে। মাংসের মধ্যে চিকেন আচারি, চিকেন ঝাল ফ্রাই, মাটন বুটের ডাল, রেজালা, শিক কাবাব, কলিজা ও মগজ ভুনা, বিফ চাপ ছাড়াও কিছু মুখরোচক পদের সম্ভার রয়েছে। ভাত ও রুটির আইটেমে মিলবে ভুনা খিচুড়ি, লাল আটার রুটি, চাপড়িসহ প্লেন রাইস। ডেজার্ট আছে পাঁচটি। ফিরনি, মিষ্টি দই, পাক্কন পিঠা, পাটিসাপটা ও নারকেল পিঠা। চা কিংবা কফিতে চুমুক দিতে চাইলে পাতুরিতে মিলবে মসলা চা, রোজ চা ও রোস্টেড কফি। সব পদের দামই সাধ্যের মধ্যে।
পাতুরি রেস্তোরাঁ মূলত সিজনাল আইটেমগুলো এড়িয়ে চলতে চেষ্টা করে। যেসব ফল বা সবজি বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে পাওয়া যায়, সেসব পদ রাখে না। এর কারণ হচ্ছে অতিথিদের সব সময় তাজা খাবার দেওয়ার চেষ্টা। তাই বারো মাসে পাওয়া যায় এমন সবজি বা ফল দিয়েই চলে এখানকার অতিথিদের আপ্যায়ন।
এ রেস্তোরাঁয় যেসব পদ পাওয়া যায়, সেগুলোর মধ্যে কিছু খাবার মোগল থেকে বাংলায় প্রবেশ করেছে। কিছু আবার পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও পাওয়া যায়। মূলত যেসব খাবার বাংলাদেশিরা বংশপরম্পরায় খেয়ে আসছে, সেসবই মেলে পাতুরিতে। তা ছাড়া বাংলাদেশ খুব ছোট একটি ভূখণ্ড বলে এখানকার মৌলিক রেসিপি ফুটিয়ে তোলা অনেকটাই দুঃসাধ্য। তাই এই রেস্তোরাঁর কর্তারা তাদের কুজিনকে বাংলা কুজিন না বলে ক্ল্যাসিক বাংলা কুজিন বলে থাকেন। তবে যেগুলো নিতান্তই বাংলাদেশি খাবার, সেগুলোও তুলে আনার জন্য সদা সচেষ্ট তারা। এ বিষয়ে চলছে তাদের গবেষণাও।
অনেক খাবার আছে যেগুলো আমরা বাসায় রান্না করি, কিন্তু সেগুলোর ব্যবসায়িক দিক নিয়ে ভাবি না। পাতুরি বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। যেমন- রুই মাছের কোফতা, পাটের শাক, টেলকা, সেদল- এগুলো নিয়ে আসার চেষ্টা করছে রেস্তোরাঁটি। এ ছাড়া গরুর মাংস দিয়ে পালংশাক, পাতাকপি দিয়ে গরুর মাংস- এগুলো কোনো রেস্তোরাঁয় পাওয়া যায় না। এই রেসিপিগুলো অচিরেই নিয়ে আসবে পাতুরি।
বাংলা খাবার নিয়ে এই রেস্তোরাঁর প্রচেষ্টা একটু বেশিই। ফলে বিশেষ কোনো বাংলা দিবসে একটা দায়িত্ব বর্তায় বৈকি। এবারের পয়লা বৈশাখে এটি এমন কোনো পদের সঙ্গে মানুষের পরিচয় করিয়ে দিতে চায়, যার মাধ্যমে তারা এই দিনটিকে অনুভব করতে পারবেন। সেদিন ঘটা করে কোনো ইভেন্ট করা না-ও হতে পারে, তবে কিছু বৈচিত্র্য আসবে পাতুরিতে।
বনানী ১০-এর বি নম্বর রোডের এইচ ব্লকের ৩ নম্বর বাড়িতে অবস্থিত এ রেস্তোরাঁর অন্দরসাজও নয়নাভিরাম। প্রবেশপথের দেয়ালে দেয়ালে টেরাকোটা, নিচতলায় স্মোকিং জোনে ছোট চৌবাচ্চায় বর্ণিল মাছের ছোটাছুটি। দেখলে চোখের আরাম হয়। পরিবেশনে ষোলো আনা বাঙালিয়ানা না থাকলেও বাংলার ছাপ আছে। চেয়ার-টেবিল জমিদারসুলভ। মৃৎপাত্র অর্থাৎ মাটির থালা ও গ্লাস ব্যবহার করা হয়। তবে আমরা সাধারণত যে মাটির পাত্র দেখতে অভ্যস্ত, পাতুরির থালা ও গ্লাস সে রকম নয়। বিশেষ প্রক্রিয়ায় তৈরি। তবে মাটিরই। মৃৎশিল্পীদের দিয়ে বিশেষভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে এগুলো। তা ছাড়া দেয়ালের কুঠুরিতে রাখা সলতে, হামানদিস্তা- সবকিছু মিলিয়ে পাতুরির পরিবেশ বাঙালি খাবারের পাশাপাশি একটা নান্দনিক আবহ উপস্থাপন করে।
জানা গেল, পাতুরি বাংলাদেশ রেস্তোরাঁর অন্য কোনো শাখা নেই।

 শিবলী আহমেদ
ছবি: বেঙ্গল এক্সপ্রেস লি:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top