skip to Main Content
roshna-bilash-august-5

রসনাবিলাস I তা রু ণ্য ন ন্দি ত

চট্টগ্রামের ভোজনরসিকদের মন জয় করে রেস্তোরাঁটি এখন ঢাকায়। ব্যতিক্রমী। আন্তরিক

দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকতেই চোখে পড়বে ক্যাফের দেয়ালে নানা ধরনের লেখা। ইংরেজি লেখাগুলো একসঙ্গে মেলালে বাণীর মতো লাগবে। আবার আলাদাভাবে পড়লেও ভালো লাগবে। ‘মানুষ যদি তোমাকে জোর করে টেনে নিচে নামাতে চায়, তাহলে তোমার অবস্থান তাদের ওপরে!’ এমন একটি লেখাও চোখে পড়বে বারকোড ক্যাফের দেয়ালে। এ রকম আরও অনেক বাণী সাঁটানো! আছে ভালোবাসা নিয়ে নানা কথা, স্বপ্ন নিয়ে, তারুণ্য আর অনুপ্রেরণা নিয়ে। ক্যাফের বিভিন্ন দেয়ালে এমন সব চমৎকার বাণী আর শব্দের পাশাপাশি টাঙানো নানা ধরনের ছবি।
বারকোডের মূল জায়গা বাংলাদেশের বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম। তবে সে সীমানা ছাড়িয়ে বারকোড ক্যাফে কয়েক বছর ধরে ঢাকায় বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। শুরুতে গুলশান ১ এলাকায় চালু হলেও বর্তমানে সেটি বন্ধ করে বনানীতে নতুন শাখা চালু করা হয়। দোতলা বাসায় দুর্দান্ত ইন্টেরিয়র আর মজার মজার শব্দের খেলায় বারকোড তারুণ্যের একটি আড্ডার জায়গায় রূপ নিয়েছে।
বিশেষ ধরনের সস, মুরগি, কাজুবাদাম, টমেটো, ক্যাপসিকাম ও মধু দিয়ে তৈরি হানি চিকেন সালাদ। বারকোড ক্যাফের খাবারের এই পদ ভোজনরসিকদের কাছে জনপ্রিয়। দুই থেকে তিনজন অনায়াসেই খেতে পারে। হানি চিকেন সালাদের পাশাপাশি ক্যাফেতে আরও কয়েক পদের সালাদ পাওয়া যায়। তারুণ্যনির্ভর এই ক্যাফেতে কোনো খাবারই অর্ডারের সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশন করা হয় না। মোটামুটি আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে। তবে দামের ব্যাপারটা খুব সাধারণ। ভোজনরসিকদের সাধ্যের মধ্যে রাখা হয়েছে। বারকোড ক্যাফে মূলত ইতালিয়ান ও আমেরিকান খাবারের রেস্তোরাঁ।
এই ক্যাফের পরিকল্পনা করেন বারকোড রেস্টুরেন্ট গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা মঞ্জুরুল হক। শুধু এটা নয়, তাদের আরও অনেক রেস্টুরেন্ট ও ক্যাফে আছে, তবে সেগুলো চট্টগ্রামকেন্দ্রিক। তিনি জানান, চট্টগ্রামের মানুষ ঢাকার মানুষের কাছে খুব গর্ব করে বলতো, আমাদের বারকোড ক্যাফে আছে, তোমার কী আছে? এখন সেটা আর বলতে পারে না! কারণ, ঢাকা ও চট্টগ্রামে আমাদের একই রকম অপারেশন চলে। খাবারের মানও মোটামুটি একই। এ ছাড়া চট্টগ্রামের বারকোড ক্যাফের আদলেই সাজানো হয়েছে ঢাকার বারকোড।
মঞ্জুরুল হকের চিন্তার প্রতিফলন এই ক্যাফের দেয়ালজুড়ে। ভেতরে দেয়ালজুড়ে চোখে পড়বে নানা ধরনের গ্রাফিতি। বিশ্বের বিভিন্ন মনীষীর জীবনমুখী উৎসাহব্যঞ্জক বাণী দিয়ে সাজানো দেয়াল। খেতে খেতে এসব বাণী পড়ে হয়তো অনুপ্রাণিত হতে পারেন অনেকেই।
২০১৩ সালের কথা। ছোট্ট পরিসরে চট্টগ্রামে শুরু হয় বারকোড ক্যাফের পথচলা। তখন মাত্র ৫০ জনের বসার ব্যবস্থা ছিল। তবে খাবারের স্বাদ, মান এবং পরিবেশনের আন্তরিকতার কারণে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি এই রেস্টুরেন্টকে। এখন এর ৬টি শাখা রয়েছে, যার ৫টিই চট্টগ্রামে। আর একটি ঢাকার বনানীতে। একটি দোতলা ভবনে মোট ৬০ আসনবিশিষ্ট এই ক্যাফে তিন স্তরে সাজানো। সিঙ্গেল, পরিবার আর করপোরেট- সব ধরনের আসনের ব্যবস্থা আছে এই ক্যাফেতে। ফুডের দাম সর্বনিম্ন ২০০ থেকে ৯০০ টাকা। আর মেনুতে রয়েছে শখানেক আইটেম। রয়েছে সেট মেনু এবং আলা কার্তে খাবার।
ঢাকার বারকোড সম্পর্কে মঞ্জুরুল হক জানান, চট্টগ্রাম থেকে পাওয়া সুনাম এবং সাধারণ মানুষের আস্থাকে সঙ্গে নিয়েই বারকোড ক্যাফে ঢাকায় জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। প্রচুর মানুষ প্রতিদিন আসে খাবারের স্বাদ নিতে। এবার পালা চট্টগ্রামের মতো এখানকার ভোজনরসিকদেরও আস্থাভাজন হওয়ার। এ ছাড়া ঢাকার বারকোড ক্যাফে সাজানো হয়েছে একেবারে চট্টগ্রামের বারকোড ক্যাফের আদলেই। একই রকম চেয়ার, টেবিলের পাশাপাশি চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলোর ছবি দেয়ালে দেয়ালে শোভা পাচ্ছে একইভাবে।
ক্যাফের নাম বারকোড রাখার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘বারকোড হচ্ছে নিজস্ব পরিচয়। বারকোড ক্যাফে সব সময় চায় তাদের স্বতন্ত্র পরিচয় ধরে রাখতে।’ আর ফ্রেশ ও উন্নত মানের খাবার সাশ্রয়ী দামে পরিবেশন করাই এই ক্যাফের বিশেষত্ব।
ইতালিয়ান ও আমেরিকান খাবারকে প্রাধান্য দিয়েই সাজানো বারকোড ক্যাফের মেনু। এখানকার মিন্ট লেমন, আভেন বেকড পাস্তা, হানি চিকেন সালাদ, চিটাগাং পিৎজাসহ বিভিন্ন আইটেম সুনাম কুড়িয়েছে ভোজনরসিকদের কাছে। মনকাড়া বিভিন্ন অফার দিয়ে ক্রেতাদের আসতে বাধ্য করতে আগ্রহী নয় বারকোড ক্যাফে। খাবারের মান, স্বাদ এবং হাতের নাগালে থাকা দামের কারণেই ক্রেতারা বারবার এখানে ফিরে আসেন। বারকোড ক্যাফেতে পরিবার-পরিজন নিয়ে ডিনার কিংবা লাঞ্চ করা যায়, দেওয়া যায় বন্ধুদের নিয়ে নির্ভেজাল আড্ডা। পুরো রেস্টুরেন্টের পরিবেশ সাজানো হয়েছে এটা মাথায় রেখেই।
রেস্টুরেন্টের মেনুতে স্টার্টারে রয়েছে গ্রিলড বাটার কাট কিং প্রন, হানি প্রন, ফ্রেশ লাইম প্রন, গার্লিক প্রন পটেটো অ্যান্ড টমেটো, কালামারি রিং, গ্রিলড কালামারি, বাফেলো চিকেন উইংস, গার্লিক ব্রেড উইথ চিজ, স্পাইসি মাশরুম, হট ক্র্যাব মাসাল্লা, গ্রিলড ক্র্যাব, মিক্সড সিফুড প্লাটার। রয়েছে স্যুপের নানা পদ: সি ফুড স্যুপ, থাই স্যুপ, থাই ক্লিয়ার স্যুপ, ক্রিম মাশরুম স্যুপ। আরও রয়েছে সালাদের নানা পদ- হানি চিকেন সালাদ, বারবিকিউ চিকেন সালাদ, ফ্রেশ চিকেন সালাদ। চিকেনের নানা পদ দিয়ে সাজানো হয়েছে মেনুর একটি অংশ। যাতে আছে ইংলিশ রোস্ট চিকেন মিল, চিকেন চিলি মিল, লেমন বাটার চিকেন মিল, চিকেন স্টেক মিল। বিফেরও বেশ কয়েকটি আইটেম আছে। টি-বেন স্টেক, বিফ চিলি মিল, ওয়েস্টার্ন চিলি বিফ, স্পাইসি বিফ উইথ নাট, বিফ পিপার স্টেক। সি ফুডের নানা ধরনের পদ আছে। রয়েছে পিজ্জা, পাস্তা, বারকোড স্পেশাল মেনু, বার্গার, শর্মা, ফালুদা, মোহিতো, কোল্ড বেভারেজ, হট বেভারেজসহ নানা ধরনের খাবার।
ক্যাফেতে কথা হয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসা এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘প্রায় সময় বন্ধুরা মিলে এখানে আসি। খাওয়া আর গল্প করার পাশাপাশি পড়াশোনার বিষয়েও আলাপ করি। অনেকক্ষণ আড্ডা দেওয়া যায় এখানে। বলা যায় তারুণ্যের একটি সমাগমস্থলে পরিণত হয়েছে বারকোড। কেন জানি না সবাই পছন্দ করে। আবার খাবারের মান ভালো বলে সবাই আমরা আসি এখানে।’
বারকোড ফেসবুক ঠিকানা : https://www.facebook.com/barcodecafebanani/

 নাজমুল হক ইমন
ছবি: বারকোড

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top