skip to Main Content

রসনাবিলাস I পানশালা

দহনদিনে নগরবাসী চায় স্বাস্থ্যকর পানীয়। তেমন পসরা সাজিয়ে বসা পানশালার খোঁজ দিয়েছেন শিবলী আহমেদ

গনগনে দুপুরে বড় এক গ্লাস ঠান্ডা জুস কে না চায়? যদি তা মোটে একটি ফলের না হয়ে অনেক রসাল ফলের সমাহারে হয়, কী সুখে ভরে উঠতে পারে তৃষ্ণার্ত কোনো পথচারী?
নগরের বুকে ডেরা খুলেছে বুস্ট জুস। শুধু জুসই নয়, তৃষ্ণা মেটানো স্মুদি ও ক্র্যাশের বন্দোবস্ত রয়েছে বনানীর ১১ নম্বর রোডের এই পানশালায়। ঢাকাই বেভারেজ জগতে বুস্ট জুসই প্রথম আন্তর্জাতিক স্মুদি ব্র্যান্ড। অস্ট্রেলিয়ান ফ্র্যাঞ্চাইজি। সেখানে বুস্ট জুসের শুরুটা হয় ২০০০ সালে। বাংলাদেশে এর প্রবেশ যৌবনে পা রেখে, অর্থাৎ ঠিক ১৮ বছর পার করে ২০১৮ সালের ২০ জানুয়ারি, নির্ভাঞ্জা অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের হাত ধরে।
শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বের মোট ১৫টি দেশে ৫০০ শাখা রয়েছে বুস্ট জুস বারের। অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, নিউজিল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, সাউথ আফ্রিকা, ফিনল্যান্ড, ব্রুনেই, কম্বোডিয়া, চিলি, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান ও থাইল্যান্ডে ছড়িয়ে আছে এর শাখা-প্রশাখা। তবে বাংলাদেশে শাখা আপাতত একটিই।
এ জুস বারে মোট ২১ পদের পানীয় রয়েছে। ম্যাঙ্গো ম্যাজিক, ব্যানানা বাজ, অল বেরি ব্যাং, স্ট্রবেরি স্কুইজ, কিং উইলিয়াম চকলেট, কুকিজ এন ক্রিম, ব্রিকি টু গো-গো, জিম জাঙ্ক, প্রোটিন সুপ্রিম, ম্যাঙ্গো ট্যাঙ্গো ক্র্যাশ, বেরি ক্র্যাশ, সিট্রাস ক্র্যাশ, ওয়াটারমেলন ক্র্যাশ, মিন্ট কন্ডিশন, টু অ্যান্ড ফাইভ জুস, ভেজি গার্ডেন, ক্যারিবিয়ান গ্রিন, গ্রেপ স্কেপ ও পিওর ইডেন নামে বেশ কিছু জুস ও স্মুদি পাওয়া যায় এখানে। তবে শুধু একটি ফল দিয়েই এসব তৈরি হয়, তা কিন্তু নয়। প্রতিটি পানীয়ের মধ্যে আছে একাধিক ফলের মিশেল। বাংলাদেশে একমাত্র এই জুস বারই স্মুদিতে আইসক্রিমের বদলে ইয়োগার্ট ব্যবহার করে।
যেমন ধরুন তাদের সিগনেচার আইটেম বা বহুল জনপ্রিয় স্মুদি ম্যাংগো ম্যাজিক। নামে আম থাকায় সেটা যে শুধু আমেরই, তা নয়। এর মধ্যে আছে ব্যানানা, ম্যাঙ্গো নেকটার, ভ্যানিলা ইয়োগার্ট ও আইস। উপাদানের ঘনত্বের কারণে প্রথম চুমুকটা বেশ জোরেশোরেই দিতে হয়, নয়তো স্ট্র বেয়ে মুখে পৌঁছায় না। পরে অবশ্য পাতলা হয়ে আসে।
চাইলে একাধিক ফল না মিশিয়ে যেকোনো একটি ফলের স্মুদিও পান করতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে দামের কোনো হেরফের হবে না। তিন সাইজের প্লাস্টিকের কাপে মিলবে জুস বা স্মুদি। কাপগুলোও আমদানি করা, চীন থেকে। দেখতে সুন্দর। তাই অনেকে সঙ্গে করেও নিয়ে যায়। ৬১০, ৪৫০ ও ৩৫০ মিলিলিটার। প্রতিটির দাম সর্বনিম্ন ২৫০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৫২৫ টাকার মধ্যে। মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে অস্ট্রেলিয়া থেকেই। তাদের নিজস্ব একটা গাইডলাইন থাকায়, বাংলাদেশ ছাড়াও অন্য দেশের কেউ ইচ্ছা করলেই দাম কমিয়ে বা বাড়িয়ে ফেলতে পারেন না।
তবে এ মূল্যকে বাড়াবাড়ি ভাবছেন না প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশের ব্র্যান্ড ম্যানেজার মাহফুজা ফেরদৌসি সরওয়ার। তাঁর যুক্তি, এখানকার পানীয় যে কেবল তৃষ্ণাই দূর করে তা নয়, ক্ষুধাও নিবারণ হয়। বাড়ি থেকে ব্রেকফাস্ট না করে বের হওয়া অফিসগামীরা, এক কাপ স্মুদি খেয়েই দুপুর পর্যন্ত ক্ষুধা ভুলে থাকেন দিব্যি। গুণগত মান নষ্ট হওয়া এবং তাজা ফলের সজীবতা বিলীন হওয়ার আগেই ফলগুলো ব্যবহার করা হয়ে থাকে। মজার বিষয় হচ্ছে, এখানকার মেন্যুর ‘ফ্রেশ জুস বার’ নামের ক্যাটাগরির জুসগুলোতে পালংশাক ব্যবহার করা হয়। এবং জুস, স্মুদি বা ক্র্যাশে কোনো প্রকার চিনি ব্যবহার করা হয় না। আনারস, ডাব, শসা, পালংশাক, কলা ছাড়া বেশির ভাগ ফলই আসে অস্ট্রেলিয়া থেকে।
এই জুস বারে কোনো পানীয়ই আগে থেকে তৈরি করা থাকে না। অর্ডার করার পর তাদের গ্রাহকের সামনে প্রশিক্ষিত ১২ জন কর্মী তা তৈরি করে সরবরাহ করে থাকেন। চার মিনিটের মধ্যেই।
আরেকটি সুবিধা হচ্ছে, কোনো পানীয় অর্ডার করার পর প্রথম চুমুকে ভালো না লাগলে সেটা ফেরত নেবে বুস্ট জুস। সে ক্ষেত্রে কোনো মাশুল গুনতে হবে না। কোন জুস কেমন, সেটা টেস্ট করে দেখার সুবিধাও আছে। সে জন্য দুই মিলিলিটার মাপের কাপের ব্যবস্থা রয়েছে। এটিকে বলা হয় স্যাম্পল। তবে এ ব্যবস্থা সব সময় না-ও থাকতে পারে।
জুস, স্মুদি ও ক্র্যাশের বাইরে ডেজার্ট আইটেম হিসেবে আছে প্রোটিন বল ও ব্যানানা ব্রিট। এগুলো জুস বারের কমপ্লিমেন্টারি আইটেম। তবে বিনা মূল্যে নয়।
স্বাস্থ্যসম্মত, নতুন ব্র্যান্ড ও প্রতিনিয়ত বিভিন্ন অফার থাকায়, চাকরিজীবী থেকে শুরু করে নিয়মিত জিম যানেওয়ালাদের পছন্দের তালিকায় ঠাঁই পেয়েছে বুস্ট জুস। বিশেষ করে সেখানে শিশুদের উপস্থিতি লক্ষণীয়। সন্ধ্যায় বাংলাদেশে বসবাসরত বিদেশিদের আড্ডার জায়গা হয়ে ওঠে এটি।
শুক্র ও শনিবার ৬০০ বর্গফুটের এ জুস বারে পা ফেলার জায়গা থাকে না বললেই চলে। ছাত্র-ছাত্রী, প্রেমিক-প্রেমিকা, স্বামী-স্ত্রী কিংবা পরিবার-পরিজন- সবারই নিয়মিত আনাগোনা রয়েছে বুস্ট জুসে। কাস্টমারদের মধ্যে বেশির ভাগই হচ্ছে রিপিটেড। অর্থাৎ, একবার যিনি পান করে যাচ্ছেন, তিনিই বারবার ফিরে আসছেন। প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বেশ ভিড় দেখা যায়।
এই জুস বারের অভ্যন্তর সবুজ। কারণ, সবুজ সতেজতার প্রতীক। একসঙ্গে ২৫ জনের বসার ব্যবস্থা এখানে রয়েছে। কিছুটা জায়গা আলাদা করে ছেড়ে দেয়া হয়েছে ধূমপায়ীদের জন্য।
বিভিন্ন উৎসব পার্বণে বুস্ট জুস বিভিন্ন অফার দিয়ে থাকে। কাচে ঘেরা এ জুস বারের একটা বিশেষ দিক রয়েছে, যেটা না বললেই নয়। রাস্তার পাশে বলেই তাদের আউটলেটের সামনে মাঝেমধ্যেই পথশিশুদের ভিড় হয়। তাদের হাতে জুস বা স্মুদি তুলে দেয়া হয়। পরিমাণে তা কম; কিন্তু কখনোই তাদের তাড়িয়ে দেয়া হয় না।

ছবি: সৈয়দ অয়ন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top