skip to Main Content
লস্ট ইন ট্রানজিশন

‘আমার ছবিই আমার অস্তিত্বের একমাত্র প্রমাণ। আমি আঁকি, কারণ এই কাজে নিজেকে কখনো জোর করতে হয় না। শিল্প আমাকে অভিভূত করে এবং ভাসমান আবেগ ও আমার অস্তিত্বহীন ভাবনার সমাধিতে নিজেকে হারিয়ে ফেলি। সময়ের উপলব্ধি আমার কাছে অস্পষ্ট, কিন্তু সুখ পাই এই ভেবে যে আমার বর্ণগুলো মনে ধরে আছে’ কথাগুলো তরুণ শিল্পী আফ্রিদা তানজিম মাহির। নিজের প্রথম একক প্রদর্শনী ‘লস্ট ইন ট্রানজিশন’-এর শুরুর দিন এভাবেই নিজের শিল্পভুবন ও শিল্পকর্ম নিয়ে কথা বলেন তিনি। মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোডের কলাকেন্দ্রে গত ১২ জানুয়ারি শুরু হয় এই প্রদর্শনী।
মাহির আঁকার বিষয় ছিল পরিবর্তনশীল আকৃতি। তিনি পছন্দ করতেন তাতে তীব্র উত্তেজনা প্রকটভাবে প্রকাশ করতে। মনে করতেন, সব রঙই ছুঁয়েছেন তিনি, কিন্তু কিছুই আঁকা হয়নি। তার রঙগুলো রাখা হতো জুতা রাখার জায়গার পাশেই। যেখানে শূন্য ক্যানভাসগুলো থাকত। প্রদর্শনী শুরুর ঠিক চার দিনের মাথায় ১৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় তিনি জীবনের সমাপ্তি ঘটান।
৯ ফেব্রুয়ারি কলাকেন্দ্রে শিল্পী আফ্রিদা তানজিম মাহির শিল্পভাবনা ও শিল্পকর্ম নিয়ে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। যেখানে উপস্থিত ছিলেন আনু মুহাম্মদ, মানস চৌধুরী, চঞ্চল আশরাফ, ফারুক ওয়াসিফ, সন্দীপ চৌধুরী, আলোকচিত্রী লতিফ হোসেন, প্রদর্শনীর কিউরেটর ওয়াকিলুর রহমান, শিল্পীর মা রহিমা আফরোজ মুন্নী। অনুষ্ঠানে কিউরেটর ওয়াকিলুর রহমান বলেন, মাহি নিজেকে অবজেক্ট হিসেবে গ্রহণ করেছেন এবং ছবি এঁকে তা ফিরিয়ে দিয়েছেন। আপোসকামিতা, ঐতিহ্যগত পরম্পরায় আচ্ছাদিত সামাজিক আচার, বিশ্বাস অস্বীকার করে তা সরাসরি প্রকাশ করেছেন। ‘লস্ট ইন ট্রানজিশন’ শিরোনামে মাহির প্রদর্শনী অনেকটাই আত্মজৈবনিক এবং আত্মনিবেদনমূলক। আমি যা একটি বিশেষ সময়ের, প্রজন্মের প্রতিনিধিত্বমূলক হিসেবে দেখেছিলাম। প্রদর্শনী শুরু করে দিয়ে মাহি এভাবে নিজেকে হারিয়ে নেবে ভাবতে পারিনি। আলোচক চঞ্চল আশরাফ বলেন, ব্যক্তির বিপন্নতা, বিচ্ছিন্নতাবোধ, অভিযোজনের সমস্যাজনিত যন্ত্রণা তার ছবিতে উঠে এসেছে।
প্রদর্শনীতে সাতটি পৃথক অংশে সাজানো হয়েছে আফ্রিদার চিত্রকর্মগুলো। যে চিত্রকর্মগুলোর ভাষা শিল্পীর স্বেচ্ছামৃত্যুর মধ্য দিয়ে হয়তো অনেকের কাছেই বদলে গেছে। আত্মপ্রতিকৃতি থেকে শুরু করে বিচিত্র কোলাজ কিংবা অ্যাক্রিলিকে আঁকা রাজধানী ঢাকার জীবনচিত্র; এমনকি তার ড্রইংগুলোতেও আমাদের সমাজযন্ত্রণার ছবি স্পষ্ট হয়ে আছে। বিদ্বেষ, ক্রোধ, লিপ্সা ও বর্তমান পৃথিবীর অসহায়তার নানা অভিব্যক্তিই যেন মাহির চিত্রকর্মে ধরা পড়ে। আনুষ্ঠানিকভাবে ৯ ফেব্রুয়ারি প্রদর্শনীর সমাপনী দিন হলেও আয়োজকেরা জানান, কলাকেন্দ্রে আরও কিছুদিন প্রদর্শিত হবে প্রয়াত তরুণ শিল্পী আফ্রিদা তানজিম মাহির শিল্পকর্মগুলো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top