skip to Main Content

সঙ্গানুষঙ্গ I স্টাইলিং স্ক্রাঞ্চি

দ্রুতই ফিরে এলো এই হেয়ার ব্যান্ড। কারণ, কোমল আচরণ আর কেশসজ্জার স্বাধীনতা। সেলিব্রিটিদের মধ্যেও জাগিয়েছে সাড়া

১৯৮৬ সাল। আমেরিকান নাইট ক্লাবের শিল্পী এবং পিয়ানিস্ট রমি রেভসন প্লাস্টিক ও ধাতব হেয়ার ব্যান্ডের বিকল্প খুঁজছিলেন। এমন এক ব্যান্ড, চুলের কোনো ক্ষতি করবে না। কিন্তু সেই সময় কোথাও এ ধরনের হেয়ার ব্যান্ড পাওয়া যেত না। উপায় না দেখে নিজেই নেমে গেলেন কিছু একটা করার। নিজের প্যান্টের কোমরের ইলাস্টিক দিয়ে বানিয়ে ফেলেন এক নতুন ধরনের হেয়ার ব্যান্ড। একটি ইলাস্টিককে ফ্যাব্রিকে মুড়ে বানানো হয় এটি। নিজের পোষা পুডল কুকুরের নামে এর নাম রাখেন ‘স্কুঞ্চি’। যা পরিবর্তিত হয়ে দাঁড়ায় ‘স্ক্রাঞ্চি’। কারণ, এই ব্যান্ডের ইলাস্টিকের পাশে ফ্যাব্রিকগুলো ‘স্ক্রাঞ্চড আপ’ অর্থাৎ কুঁচকে থাকে। ১৯৮৭ সালে নিজের নামে স্ক্রাঞ্চি প্যাটেন্ট করার পর ধীরে ধীরে এর পরিচিতি বেড়ে যায়। ফান ফ্যাক্ট- রেভসনের বানানো প্রথম প্রোটোটাইপ স্ক্রাঞ্চি তৈরিতে যে সেলাই মেশিন ব্যবহার করা হয়, সেগুলো বর্তমানে স্মিথসোনিয়ান মিউজিয়ামে সংরক্ষিত আছে।
আশি ও নব্বইয়ের দশকে চুলের প্রতি ‘কোমল আচরণের’ জন্য এর জনপ্রিয়তা ক্রমেই বাড়তে থাকে। সেই সময়ের বিখ্যাত সব সেলিব্রিটি, যেমন- ম্যাডোনা, পাউলা, ডেমি মুর, জ্যানেট জ্যাকসন- এদের ‘গো টু’ হেয়ার অ্যাকসেসরিজ ছিল স্ক্রাঞ্চি। ‘ফুল হাউস’, ‘ফ্রেন্ডস’-এর মতো সিটকম, ‘হেদার’-এর মতো আরও কামিং অব এজ মুভি থেকে শুরু করে সবখানে ছিল স্ক্রাঞ্চির ছড়াছড়ি। এমনকি অলিম্পিকের অ্যাথলেট, বিশেষ করে জিমন্যাস্ট ও ফিগার স্কেটারদের পছন্দের একমাত্র হেয়ার অ্যাকসেসরিজ এটি। তবে ‘ওয়াই টু কে’ (ইয়ার অব টু থাউজেন্ড)-এর মাঝামাঝি এসে এটির জনপ্রিয়তা কমে আসে। এ জন্য অবশ্য দায়ী ক্যারি ব্র্যাডশো! ‘সেক্স অ্যান্ড দ্য সিটি’র প্রধান চরিত্র ব্র্যাডশো একটি এপিসোডে স্ক্রাঞ্চি নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেন। এ জন্যই ফ্যাশন থেকে হারিয়ে যায় রেভসনের এই উপকরণ।
সাময়িক বিরতি দিয়ে অ্যাকসেসরিজ ট্রেন্ডে ফিরে এসেছে স্ক্রাঞ্চি, অন্য সব সময়ের চেয়ে আরও বেশি জনপ্রিয়তা নিয়ে। সাধারণত ফ্যাশনে একটি ট্রেন্ডের পুনরাবৃত্তি ঘটতে দুই দশকের মতো সময় লাগে। কিন্তু এটি মাত্র এক যুগের ব্যবধানে ফিরে এলো। পিন্টারেস্টের একটি প্রতিবেদনে সম্প্রতি বলা হয়েছে, ২০২০ সালে সব ট্রেন্ডের ভেতর শীর্ষ স্থানে এখন স্ক্রাঞ্চি। এই ট্রেন্ডসেটার ওয়েবসাইটে এর খোঁজ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৩০৯ শতাংশ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে #স্ক্রাঞ্চিআরব্যাক নিয়ে প্রায় পঁচাত্তর হাজারের বেশি পোস্ট আপলোড হয়েছে। হালের টিন ফ্যাশন ম্যানিয়াক ভিস্কো গার্লের পাশাপাশি এটি এখন হেইলি বিবার, বেলা হাদিদ, কাইলি জেনার, সেলেনা গোমেজের মতো সেলিব্রিটিদের সবচেয়ে পছন্দের হেয়ার অ্যাকসেসরিজ। যতই দিন যাচ্ছে, এর জনপ্রিয়তা কেবল বেড়েই চলেছে। অতিমারির এই সময়ে কোয়ারেন্টিন হেয়ারস্টাইল ট্রেন্ডও স্ক্রাঞ্চির দখলে।
ফ্যাশন সমালোচকদের মতে, এই জনপ্রিয়তার রহস্য এর কোমলতা এবং নানা রকম স্টাইলিংয়ের সুযোগ। প্লাস্টিক রাবার ব্যান্ড চুলের ড্যামেজের জন্য দায়ী। কিন্তু স্ক্রাঞ্চিতে চুলের কোনো ক্ষতি হয় না। এ জন্য অনেক হেয়ার এক্সপার্ট এটি দিয়ে চুল বেঁধে ঘুমানোর পরামর্শ দেন।
সাধারণ একটি সাজকে অনায়াসে স্পাইস আপ করতে পারে এটি। ম্যাচিং অথবা মিক্সিং- যেকোনোভাবেই স্ক্রাঞ্চি পরা যেতে পারে ভিন্ন ভিন্ন পোশাকের সঙ্গে। ওয়েস্টার্ন টু এথনিক- সব ধরনের লুকের সঙ্গে সহজেই মানিয়ে যায় এটি। শুধু স্ক্রাঞ্চি পরেও অনেকগুলো লুক তৈরি করা যায়। স্লিক হাই পনিটেইল, লো পনিটেইল, হাফ বান, সাইড পনিটেইল মেসি বান, স্পেস বান- সব রকমের হেয়ারস্টাইল করা যাবে এটি দিয়ে। পোশাকের পাশাপাশি জুতা, বেল্ট, ব্যাগ এমনকি লিপস্টিকের সঙ্গেও ম্যাচিং করে পরা যেতে পারে। এখন অবশ্য মাস্কের সঙ্গেও ম্যাচ করে অনেকে এটি পরছে। কোয়ার্কি লুক আনতে চাইলে ম্যাচিং না করে যেকোনো রঙ ও ঢঙের স্ক্রাঞ্চি বেছে নেওয়া যায়।
কয়েক বছর আগে ভেলভেট ফ্যাব্রিকের কালো, সাদা, বেগুনি ও লাল রঙের মতো ক্ল্যাসিক কালারের স্ক্রাঞ্চি দিয়ে এই ট্রেন্ডের রিভাইভ হয়। এখন প্যাটার্ন ও ফ্যাব্রিকের বেশ পরিবর্তন হয়েছে। নামজাদা সব ফ্যাশন ব্র্যান্ডও নানা ধাঁচের আর ঢঙের স্ক্রাঞ্চি বানাচ্ছে। প্যাটার্নে এসেছে ফ্যাশনেবল ফ্লোরাল, ফ্রুট এবং অ্যানিমেল প্রিন্ট। বাদ যায়নি চেক ও পোলকা ডট। একরঙা ডিপ কালার শেড যেমন আছে, তেমনি পাওয়া যাচ্ছে লাইট কালার শেডেও। কটন, সিল্ক, স্যাটিন, অরগ্যাঞ্জা, জর্জেট, জ্যাকারড, চারমিউস, সফট লেদারের স্ক্রাঞ্চি পাওয়া যাচ্ছে। সাধারণ এটির পাশাপাশি শর্ট বো এবং লং বো স্টাইলের জয়জয়কার এখন সবখানেই। টুইগি এবং জাম্বো সাইজ স্ক্রাঞ্চির ব্যবহারও বেশ লক্ষণীয়।
এটি শুধু হেয়ার অ্যাকসেসরিজ নয়, হ্যান্ড ব্রেসলেট হিসেবেও বেশ নাম করেছে। ২০১৯ সালের অস্কার অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানের রেড কার্পেটে ‘অ্যাকুয়াম্যান’ খ্যাত জেসন মোমোয়া ফেন্দি কোটের সঙ্গে ম্যাচ করে হাতে একটি টুইগি স্ক্রাঞ্চি পরেছিলেন। এরপর থেকে লম্বা চুলের ছেলেরাও এতে মজেছে।

 ফাহমিদা শিকদার
মডেল: আনিকা ও নাজিয়া
মেকওভার: পারসোনা
স্ক্রাঞ্চি: ব্লিসফুল ফ্লেয়ার
ছবি: জিয়া উদ্দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top