skip to Main Content

সেলিব্রিটি স্টাইল I নাঈম-নাদিয়া

জ্যোতিষশাস্ত্র বলে, কন্যা রাশির জাতিকার সঙ্গে ধনু রাশির জাতকের মেল মোটামুটি অসম্ভব। প্রথমজন খাঁটি মাটির নিদর্শন, অন্যজন অগ্নির প্রতীক। স্বাধীনচেতা ধনুর মন সব সময় উড়ুউড়ু, কোনো কিছুতেই বেঁধে রাখা কঠিন। কন্যা তার ঠিক উল্টো। সব ব্যাপারে শতভাগ সিরিয়াস। এমনই দুই মেরুর দুই মানুষ আমাদের এবারের জুটি। জনপ্রিয় অভিনেতা এফ এস নাঈম পাক্কা ধনু। দারুণ প্রাণচঞ্চল, কথাবার্তায় পটু। অন্যদিকে দেশসেরা নৃত্যশিল্পী আর অভিনেত্রী নাদিয়ার ব্যক্তিত্বে স্পষ্ট কন্যার ছাপ। সম্প্রতি বিয়ের চার বছর পূর্ণ হয়েছে এ যুগলের। এর পেছনের রহস্য উদ্ঘাটনে তাদের আমন্ত্রণ জানানো হয় ক্যানভাস স্টুডিওতে। মিষ্টি মধুর খুনসুটিতে জমাটি আড্ডার পাশাপাশি তাদের অভিজ্ঞতার বিশেষ অংশগুলো তুলে ধরেছেন জাহেরা শিরীন

 

ওয়্যারড্রোব: ওটু ও বাটারফ্লাই বাই সাগুফতা

 প্রথম দেখা কোথায়? কীভাবে?
নাঈম: শুটিংয়ে।
নাদিয়া: একদমই ভুল! আমাদের প্রথম দেখা পিৎজা হাটে। আমি আমার কাজিনদের সঙ্গে ছিলাম। তখন জাস্ট হাই! কী খবর! এতটুকুই কথা হয়েছিল।
 প্রেমের প্রস্তাবটা প্রথম কার কাছ থেকে আসে? সে সময়ের কোনো কথা, যা এখনো মনে পড়ে?
নাঈম: অবশ্যই আমার থেকে। কিন্তু কী বলেছিলাম…সব কথা কি আর বলা যায় নাকি! হা… হা… হা…
নাদিয়া: প্রেমের নয়, প্রস্তাবটা ছিল সরাসরি বিয়ের। প্রথমেই নাঈম বলেছিল, ‘তোমাকে আমার ভীষণ ভালো আগে। আমার পরিবারের সবাই তোমাকে খুব পছন্দ করে। আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই।’ ব্যস! হা… হা… হা…
 প্রথম ঘুরতে যাওয়া?
নাদিয়া: বিয়ের জাস্ট দুই মাস পরে। আমেরিকায়। আমার বোনের গ্র্যাজুয়েশন উপলক্ষে।
নাঈম: না, এবার নাদিয়া ভুল করছে। হা… হা… হা…। চট্টগ্রামে গিয়েছিলাম আমরা প্রথম ঘুরতে।
 হানিমুনের মজার কোনো স্মৃতি?
নাঈম: পুরোটাই! শুরুটাই ছিল দারুণ ইন্টারেস্টিং। হানিমুনে যাওয়া সব ঠিকঠাক, তারপর দেখি আমার ভিসা নেই। হা… হা… হা…। আর আমরা অনেকটা পরিকল্পনা করেই থাইল্যান্ডকে হানিমুনের জন্য বেছে নিই। কারণ, নাদিয়ার আর আমার প্রথম কাজ ছিল সেখানে।
নাদিয়া: নাঈমকে থাইল্যান্ডের বিশেষজ্ঞ বলা যায়। বিয়ের আগে ৫২ বার সে সেখানে ঘুরতে গিয়েছে। তাই তার অভিজ্ঞতার বদৌলতে থাইল্যান্ডের দারুণ সব জায়গায় ঘোরার সৌভাগ্য হয়েছে আমার। হা… হা… হা…
 প্রেম করার সবচেয়ে বড় সুবিধা আর অসুবিধা…?
নাঈম: একটা মানুষের ভালো-মন্দ সবটাই জেনে নেওয়া যায়। এটা দারুণ সুবিধার ব্যাপার। কিন্তু অসুবিধাটা হচ্ছে, আমার খারাপ দিনগুলোও তো জেনে যায়!
নাদিয়া: আমি অসুবিধাটা দিয়ে শুরু করি। প্রেমের নয়, প্রেম করে বিয়ের। প্রেমের দিনগুলোতে হয়তো ঝগড়া-ঝামেলা হলে দু-তিন দিন দেখা না করলেও চলত। কিন্তু বিয়ে হয়ে গেলে তো পালাবার উপায় নেই। হা… হা… হা…। সেটাই অসুবিধা। আর সুবিধা তো অনেক! ইচ্ছেমতো ঘোরাঘুরির স্বাধীনতা, হাতে হাত রেখে চলা আর নিরাপদে বাসায় পৌঁছাবার নিশ্চয়তা। হা… হা… হা…
 ভালোবাসা, বিশ্বাস না বোঝাপড়া- দাম্পত্যে বেশি জরুরি কোনটা?
নাদিয়া: আমার মনে হয় বিশ্বাস এবং বোঝাপড়া থেকে ভালোবাসা আরও গাঢ় হয়। মজবুত হয়। সঙ্গে সততাটাও জরুরি।
নাঈম: আমারও একই কথা। না বুঝে, না বিশ্বাস করে আর সৎ না থেকে ভালোবাসা টেকানো যায় না। চলে যায়, নিজের কাছ থেকেও, অন্যজনের কাছ থেকেও।

ওয়্যারড্রোব: ওটু ও অদ্রিয়ানা এক্সক্লুসিভ

 ঝগড়াটা কে বেশি করে? আর রাগ ভাঙানোর দায়িত্ব কার?
নাঈম: নাদিয়া। আর রাগ ভাঙানোর জন্য আমিই আগে সারেন্ডার করি। অ্যান্ড আই লাভ টু ডু দ্যাট।
নাদিয়া: আমি একটু মুখে বেশি বলি। আর নাঈমেরটা সাইলেন্ট কিলার। হা… হা… হা…। কিন্তু এটা সত্য, ও খুব তাড়াতাড়ি সরি বলে। সে ক্ষেত্রে আমি একটু সময় নিই।
 সাইপ্রাইজ করা হয়?
নাঈম: এ ক্ষেত্রে আই অ্যাম দ্য ম্যান।
নাদিয়া: আমি একদমই সারপ্রাইজ করতে পারি না। এ ব্যাপারে নাঈম সেরা। বিয়ের পর প্রথম ফাল্গুনের কথা বলতেই হবে। রাতে একসঙ্গে ডিনারে গিয়েছিলাম আমরা রেস্টুরেন্টে। সেখানে আমার হাতে একটা পার্সেল এসে পৌঁছায়। ফুল, চকলেট, টেডি বিয়ার আরও অনেক কিছু দিয়ে করা উপহারটি ছিল নাঈমের অর্ডার করা। আমাকে প্রায়ই এভাবে চমকে দিতে পছন্দ করে ও।
 সম্পর্কের ভাঙন আজকালকার সহজ সত্য। সে ক্ষেত্রে দাম্পত্য টিকিয়ে রাখার ম্যাজিক ট্রিকটা কী?
নাঈম: কোনো ম্যাজিক ট্রিক নেই। বিয়ের ব্যাপারটা ম্যাজিক্যাল ভাবলেই বরং সমস্যা। সবার আগে একে অন্যের সবকিছু গ্রহণ করার মানসিকতা থাকতে হবে। সেটা না থাকলে দুজনের মধ্যে আলোচনার জায়গাটা কমে যায়। তাই ম্যাজিক্যাল কোনো মেথডের পেছনে না ছুটে পার্টনারের পেছনে সে সময়টা দেওয়া উচিত।
নাদিয়া: আমারও মনে হয় না কোনো ম্যাজিক ট্রিক আছে। সম্পর্ক সহজ রাখতে হবে, একে অন্যের কাছে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে। মনের মধ্যে কোনো কিছু নিয়ে বসে না থেকে খোলাখুলি বলে ফেলাটাই ভালো। আর একে অন্যকে মানুষ হিসেবে সম্মান দিতে হবে। ব্যস, এতটুকুই!
 প্রিয় পোশাক? একে অন্যকে কোন পোশাকে দেখতে ভালো লাগে?
নাদিয়া: শাড়ি। আর নাঈমকে স্যুট অথবা পাঞ্জাবিতেই বেশি মানায়।
নাঈম: স্যুট আর পাঞ্জাবি। আর নাদিয়াকে শাড়িতে দেখতেই আমার ভালো লাগে।
 একজন আরেকজনের পোশাক শেয়ার করা হয়?
নাদিয়া: মাঝেমধ্যে নাঈমের টি-শার্ট পরা হয় আমার।
নাঈম: ওর চাদর গায়ে জড়ানো হয়েছে অনেকবার।

ওয়্যারড্রোব: ওটু ও সিকোসো

 আপনাদের সম্পর্ককে কোনো ডেজার্টের সঙ্গে তুলনা করতে চাইলে?
নাঈম: রেড ভেলভেট।
নাদিয়া: ক্রিম চিজ কেক।
 কখন বুঝতে পারলেন, তিনিই সেই একজন?
নাঈম: প্লিজ নাদিয়া, আমি খুব জানতে চাই বিষয়টা। হা… হা… হা…
নাদিয়া: আমি না বুঝতেই পারিনি! হা… হা… হা…। আমাদের খুব দ্রুত বিয়ে হয়ে যায়। তাই হয়তো ওভাবে বোঝার সময় পাইনি। বিয়ের রেজিস্ট্রিতে সাইন করার পর মনে হয়েছিল, ‘আল্লাহ, বিয়ে হয়ে গেল!’ আমি জানি, নাঈমেরও তেমনটাই মনে হয়েছিল।
 একজন আরেকজনের থেকে কী শিখতে পেরেছেন?
নাদিয়া: এখনো কিছু শেখা হয়ে ওঠেনি। কিন্তু নাঈমের নিয়মিত সকালে ওঠার যে অভ্যাস, তা আয়ত্ত করার চেষ্টায় আছি।
নাঈম: জোরে কথা বলা শিখতে চাই নাদিয়ার কাছ থেকে। হা… হা… হা…
 যদি একে অন্যের কোন জিনিস নিতে চান?
নাঈম: রাগ। আমি রাগ করতে পারি না তো নাদিয়ার কাছ থেকে সেটা নিতে পারলে খুব সুবিধা হতো আমার।
নাদিয়া: কথাটা একদমই ভুল কিন্তু। হা… হা… হা…। যারা নাঈমকে ছোটবেলা থেকে চেনেন, তারা জানেন ব্যাপারটা। আর আমি আপাতত কিছুই নিতে চাচ্ছি না।
 একে অন্যের সেলিব্রিটি ক্রাশ কারা, জানেন?
নাইম: নাদিয়ার সারা জীবনের ক্রাশ সালমান খান। আমি না…সালমান খান…!
নাদিয়া: ওর তো সব ম্যানক্রাশ। হা… হা… হা…। ডেভিড বেকহাম, অ্যাস্টিন কুচার, ব্র্যাডলি কুপার, ব্র্যান্ড পিট আর আরিফিন শুভ।
 একজন আরেকজনকে একটা করে প্রশ্ন করেন।
নাদিয়া: নেক্সট আমরা কোথায় বেড়াতে যাচ্ছি নাঈম?
নাঈম: আমার সঙ্গে কবে ভালো ব্যবহার করবা নাদিয়া? হা… হা… হা…
 ক্যারিয়ারে মেমোরেবল মোমেন্ট?
নাঈম: ২০১০-এ। ব্যাংকক সিয়াম প্যারাগনের একটা অডিটরিয়ামে, যেখানে একসময় আইফা অ্যাওয়ার্ডের আসর বসত। সেই একই মঞ্চে আমি পারফর্ম করার সুযোগ পেয়েছিলাম। যেখানে দর্শকসারিতে ছিলেন প্রয়াত রাজ্জাক স্যার, পশ্চিমবঙ্গের অভিনেতা প্রসেনজিৎ, দেবসহ অনেকে। কলকাতা-বাংলাদেশ মিলে একটা ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড বাংলার আয়োজন ছিল সেটা। তখন মাত্র আমার প্রথম চলচ্চিত্র মুক্তি পেয়েছে। নমিনেশনও পেয়েছি। আমার জন্য সময়টা দারুণ ছিল।
নাদিয়া: দেশের বাইরে আমার রাষ্ট্রীয় সফরগুলো। কারণ, আমি আমার দেশ, আমার সংস্কৃতিকে ভিনদেশি মানুষদের সামনে তুলে ধরার সুযোগ পেয়েছি। তাদের প্রশংসা আমার জন্য খুব সম্মানের ছিল।

ওয়্যারড্রোব: ওটু ও সিকোসো

 পছন্দের একজন সেলিব্রিটি, যার সামনে এখনো নার্ভাস লাগে?
নাদিয়া: ফেরদৌসী মজুমদার, সুবর্ণা মুস্তাফা, প্রয়াত হুমায়ুন ফরীদি- যারা আমাদের অগ্রজ, যাদের দেখে কাজ শেখা, কাজ করতে আসা তাদের সামনে এখনো একটু নার্ভাসই লাগে।
নাঈম: আমি সব কাজেই নার্ভাস থাকি। এই যে আজকে ক্যানভাসের শুটে কাজ করলাম, নার্ভাসনেস নিয়েই। কারণ, প্রতিটা কাজ করার সময়ই আমার মনে হয়, এ সুযোগ আমি আর পাব না। আর আমার নার্ভাসনেস আসলে কাজের প্রতি সিরিয়াসনেস।
 ফ্যাশন আইকন?
নাঈম: এর উত্তর আমার জন্য একটু কঠিন। কারণ, ফ্যাশনের ক্ষেত্রে আমার মনে হয় একেকজনের সিগনেচার স্টেটমেন্ট একেক রকম। সে ক্ষেত্রে আমার পছন্দের পাঁচ সেলিব্রিটি ক্রাশই আমার আইকন। ইটজ আ ব্লেন্ড অব ফাইভ বিগ নেমস।
নাদিয়া: ফ্যাশনে আমার নিজস্ব একটা টাইপ আছে। এর থেকে বাইরে আমি সাধারণত বের হই না। তাই আলাদা করে কোনো ফ্যাশন আইকনকে ফলো করা হয় না।
 আপনাদের সৌন্দর্যের রহস্য কী?
নাদিয়া: নাঈমের সৌন্দর্যের রহস্য এই যে অনেক মিথ্যা। হা… হা… হা…। আর আমার সৌন্দর্যের রহস্য? ওই যে নাঈম বলল মেকআপ বক্স।
নাঈম: উফ্! আমি ভাবলাম, নাদিয়া বলবে তার সৌন্দর্যের রহস্য নাঈম। আর নাদিয়া তো ন্যাচারাল বিউটি। পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর একজন। সেই জন্যই তো তাকে বিয়ে করলাম। হা… হা… হা…
 প্রথম কাজ?
নাদিয়া: ১৯৮৫ সালে। বিটিভিতে। ২০০ টাকা পেয়েছিলাম নাচের পারফরম্যান্সের জন্য।
নাঈম: প্রথম নাটক ঈশিতা আপুর পরিচালনায়, এক নিঝুম অরণ্য, ২০০৭ সালে। দশ হাজার টাকা পেয়েছিলাম।
 ঢাকার সবচেয়ে পছন্দের ব্যাপার?
নাদিয়া: ঢাকা ইজ মাই সিটি। বিভিন্ন কারণে মাঝেমধ্যে বিরক্ত হলেও এই শহরের সব আমার পছন্দ। আমার পরিবারের বেশির ভাগ মানুষই দেশের বাইরে থাকে, কিন্তু ঢাকা ছেড়ে বেশি দিন এখন পর্যন্ত আমি থাকতে পারিনি।
নাঈম: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। পড়ার সুযোগ হয়নি। কিন্তু আড্ডা, গল্প, গান, রিকশায় ঘুরে বেড়িয়ে অনেক সুন্দর সময় কাটানো হয়েছে সেখানে।
 একটা মিথ্যা বলেন?
নাদিয়া: নাঈমের রাগ কম। হা… হা… হা…
নাঈম: আমার মিথ্যা বলার দরকার নেই।
 নিজেদের কীভাবে স্মরণীয় রাখতে চান?
নাদিয়া: নিজে আনন্দে থেকে, মানুষকে আনন্দে রেখে।
নাঈম: মানুষের যেকোনো ভালো সংবাদ আমাকে খুব আনন্দিত করে। তাই আমার আশপাশের মানুষরা তাদের যেকোনো ভালো খবর আমাকে দিতে পছন্দ করে। আর ঠিক এমন একজন মানুষ হিসেবেই আমি নিজেকে স্মরণীয় রাখতে চাই।

স্টাইলিং ও কনসেপ্ট: নুজহাত খান
মেকওভার: পারসোনা
আর্ট ডিরেকশন: দিদারুল দিপু
ছবি: সৈয়দ অয়ন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top