skip to Main Content

সেলুলয়েড I আলফা

কাহিনি, চিত্রনাট্য ও পরিচালনা: নাসির উদ্দীন ইউসুফ
অভিনয়: আলমগীর কবির, দোয়েল ম্যাশ, এ টি এম শামসুজ্জামান, হীরা চৌধুরী, ইশরাত নিশাত, মোস্তাফিজ নূর ইমরান ও ভাস্কর রাসা
প্রযোজনা: ফরিদুর রেজা সাগর ও এশা ইউসুফ
চিত্রগ্রহণ: সমীরণ দত্ত
সম্পাদন: ক্যাথরিন মাসুদ
শব্দনকশা: শুভদীপ সেনগুপ্ত
আবহ সংগীত: অলোকানন্দা দাশগুপ্ত
পোশাক পরিকল্পনা: সামিউন জাহান দোলা
শিল্পনির্দেশনা: সামুরাই মারুফ
প্রান্তজনের নাম, ঠিকানা, ইতিহাস, ঐতিহ্য, বাস্তবতা— রাষ্ট্রের কাছে এগুলো অপ্রয়োজনীয়। তারা শুধু সংখ্যায় বাঁচে। তাদের যাপনের মধ্য দিয়েই সমাজের ইতিহাস, সংস্কৃতির চালচিত্র ও তার মিথিক্যাল জার্নিকে সেলুলয়েডের আখ্যানরূপে তৈরি করেছেন নাসির উদ্দীন ইউসুফ। ‘আলফা’ নামে।
ছবির মুখ্য চরিত্র একজন প্রান্তিক শিল্পী। সেই আলফা। কেননা আলফা কোনো নাম নয়, স্রেফ একটা সংখ্যার মতো। তার জীবিকা রিকশার পেইন্টিং। যদিও আগে সিনেমার হোর্ডিং বানাত। এ ছাড়া সে গ্লাস পেইন্টিং আর একান্ত শিল্পচর্চা চালিয়ে যায়। ঢাকার হাইরাইজ টাওয়ারের অদূরে গরিব বসতি ছাড়িয়ে ঝিলের ওপর বাঁশ আর তক্তার বাসা বেঁধে তার বসবাস। বস্তির মেয়ে গুলতেনূর তার দেখভাল করে। শিল্পীকে নানাভাবে সাহায্য করে কালী হিজড়া। নগরসভ্যতা, সমাজ— এসব বদলে যাওয়ার মধ্যেই মূলস্রোতের রাজনীতি এবং এর উত্থান-পতন, জ্বালাও-পোড়াও, হত্যা-সন্ত্রাস, নাগরিক বিপন্নতা ইত্যাদি যেন খুব দ্রুত ওই বস্তির মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করে। একদিন শিল্পী আবিষ্কার করে তার বাসার নিচে ভাসছে একটি মৃতদেহ। সেটিকে সে সরিয়ে দিতে চায়। কিন্তু লাশ আবার ওখানেই এসে ঠেকে। যেন শিল্পীকে মৃতদেহটি বলে— তাকে গুম-খুন করা হয়েছে। একেই কেন্দ্র করে এগোয় ছবির ভাঙা ভাঙা ন্যারেটিভ। লাশটি দাফন করা হয় না, পোড়ানো হয় না। বরং মৃত্যুর নৃত্যগীতে বিদায় জানিয়ে শিল্পী তাকে ছেড়ে আসে বহুদূর কোনো জলধারায়, কোনো নদীর গভীরে।
এ ছবিতে লাশ ও লাশের পূর্বতন জীবনের মতো শিল্পী চরিত্রটির চিত্রকলার অন্তর্জগৎ এই চলচ্চিত্রের অনেক অংশজুড়ে রয়েছে। চিত্রকলার বিষয়বস্তুতে ধরা থাকে সনাতনী, ইসলামি ও লোকায়ত মিথ। সেই সব মিথের সঙ্গে সমাজের ঘটনাক্রমের সম্পর্ককে কেন্দ্র করে বিদ্যমান ও হারিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের পলিটিক্যাল ও কালেক্টিভ আনকনশাসে ঢুকে পড়েছেন চলচ্চিত্রকার। ছবির মধ্যে সাব-অল্টার্নের জীবন উঠে এসেছে। দৃশ্যমান হয়েছে তৃতীয় লিঙ্গের প্রসঙ্গ। একই সঙ্গে পুরুষ ও প্রকৃতির মেলবন্ধনে অর্ধনারীশ্বর থেকে হর-গৌরী যুগলের লোকগাথা এসেছে চমৎকারভাবে। ছবিতে আবছায়া হয়ে মিশে আছে কোরআন, ওল্ড টেস্টামেন্টের মিথ। এ ছাড়া বাংলাদেশে প্রান্তিক সংস্কৃতি হতে থাকা মহররম থেকে শুরু করে পালাগান, গাজন কিংবা আদিবাসীদের লোক-উৎসবের খন্ডচিত্র ও কোলাজ ধারণ করেছে এই ছবি।
এই চলচ্চিত্রের আইডিয়া দারুণ। চিত্রনাট্য ভালোভাবেই এগিয়েছে। ক্যাথরিন মাসুদের সম্পাদনাও প্রশংসনীয়। মনে রাখা দরকার, দর্শন, রাজনীতি, শিল্পকলা, লোকসংস্কৃতি মিলিয়ে এ ছবির প্রেক্ষাপট বিশাল। সে কারণে দৃশ্যশ্রাব্যকে পোয়েটিক করে তোলা অবশ্যকর্তব্য ছিল। সেটা বাস্তবায়িত হলে এই ছবি বিশ্ব চলচ্চিত্রের মাস্টারপিস হয়ে উঠতো। কিন্তু সিনেমাটোগ্রাফি সে জায়গায় ছবিটিকে নিয়ে যেতে পারেনি। সাউন্ড ডিজাইন আশানুরূপ হয়নি। তারপরেও ন্যারেটিভের আইডিয়ায় এবং সামগ্রিক অর্থে ছবিটি দারুণ। প্রত্যেক অভিনয়শিল্পীর কাজ প্রশংসনীয়। বিশেষত আর্টিস্ট আলফার চরিত্রে আলমগীর কবির আর কালী হিজড়ার চরিত্রে মোস্তাফিজ নূর ইমরান চরিত্র রূপায়ণে বিশ্বস্ত থেকেছেন। গুলেনূরের চরিত্রে দোয়েল ম্যাশও ভালো। এ টি এম শামসুজ্জামানের অভিনয় যথারীতি প্রশংসনীয়। আর্ট ডিরেকশন ভালো। এই বিষয়গুলোতে পরিচালক ছবিটিকে আলোচনার যোগ্য করে তুলেছেন।
এ ছাড়া ছবির মেকআপ ও কস্টিউম স্থান-কাল ও চরিত্র বুননে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
সামিউন জাহান দোলার বক্তব্য, আলফা চরিত্রটির নিঃসঙ্গতা, গুমোট ভাব, আবার কল্পনার ব্যাপ্তি— এসবের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পোশাকে শেওলা, হালকা বাদামি, ছাই— এ রকম রঙগুলো বেছে নেওয়া হয়েছিল। তেমনি গুলেনূরের সবুজাভ ব্লাউজে-সোয়েটারে। যেহেতু তার মধ্যে আকাঙ্ক্ষা আর প্রেম। তার স্বামীর পোশাকে অনেক পকেট ছিল, সে একেক পকেট থেকে একেক জিনিস বের করে মাঝে মাঝে। এ টি এম শামসুজ্জামানের যে চরিত্র, তিনি প্রাজ্ঞ একজন মানুষ, তার টুপি-পোশাক সে রকমই রাখার চেষ্টা করেছি। কালী হিজড়ার পোশাকেও একটা গ্রিনিশ টোন ছিল।
চরিত্রগুলোকে আর্টিফিশিয়াল মনে হয়নি কোথাও। মনে হয়নি যে সুবিধাভোগী শহুরে অভিনয়শিল্পীদের প্রান্তবর্গের মানুষের চেহারা দেওয়া হয়েছে। এর জন্য কস্টিউম ডিজাইনার বাহবা পেতে পারেন।

 অতনু সিংহ

কুইজ
১. নাসির উদ্দীন ইউসুফ পরিচালিত আরেকটি ছবির নাম বলুন।
ক। মাটির ময়না খ। আন্ডার কনস্ট্রাকশন। গ। গেরিলা।
২. আলফা চরিত্রটির পরিচিতি কী?
ক। কবি। খ। চিত্রশিল্পী গ। সংগীতশিল্পী
৩. কালী হিজড়ার চরিত্রে কে অভিনয় করেছেন?
ক। মোস্তাফিজ নূর ইমরান গ। আলমগীর কবির
খ। এ টি এম শামসুজ্জামান
গত সংখ্যার বিজয়ী

১. আল আমিন, পশ্চিম দোলাইরপাড়, ঢাকা।
২. ফারহানা কাজী, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।
৩. জাহাঙ্গীর আলম, ধানমন্ডি, ঢাকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top