skip to Main Content

সেলুলয়েড I মান্টো

কাহিনি, চিত্রনাট্য, পরিচালনা : নন্দিতা দাস
প্রযোজনা: বিক্রান্ত বাত্রা, নম্রতা গোয়েল, অজিত আন্দাহারে ও নন্দিতা দাস
অভিনয়ে: নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি, রসিকা দুগাল, তাহির রাজ ভাসিন, রাজশ্রী দেশপান্ডে, ফেরয়ানা ওয়াজিহা, ভানু উদয়, পরেশ রাওয়াল, জাভেদ আখতার, ঋষি কাপুর প্রমুখ
চিত্রনাট্য: কার্তিক বিজয়। সম্পাদনা: শ্রীকর প্রসাদ
লিরিক: বাবলি হক। আবহসংগীত: জাকির হুসেইন।
কণ্ঠসংগীত: স্নেহা খানওয়ালকার ও রাফতার।
দৈর্ঘ্য: ১১৭ মিনিট। কস্টিউম: শীতল ইকবাল শর্মা।
মেকআপ: শ্রীকান্ত দেশাই। ভাষা: উর্দু ও হিন্দি।

উর্দু কথাসাহিত্যিক সাদত হাসান মান্টো ভারত-পাকিস্তান দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রেই সমানভাবে চর্চিত ও আলোচিত। তাঁর জীবনকাহিনি নিয়ে তৈরি চলচ্চিত্র ‘মান্টো’। সম্প্রতি ঢাকা লিট ফেস্টে ছবির পরিচালক নন্দিতা দাসের উপস্থিতিতে তা প্রদর্শিত হলো। কথাসাহিত্যিক ও চিত্রনাট্যকার সাদত হাসান মান্টোর বোম্বাইয়ের দিনযাপন, ব্রিটিশবিরোধী বাম আন্দোলনের সঙ্গে একজন সাহিত্যিক হিসেবে তাঁর সম্পৃক্ত হওয়া, বামপন্থী নারীবাদী উর্দু সাহিত্যিক ইসমত চুঘতাইয়ের সঙ্গে সখ্য, অভিনেতা-পরিচালক শ্যাম ও অশোক কুমারের সঙ্গে বন্ধুতা ইত্যাদি অনুষঙ্গ থেকে শুরু করে ১৯৪৭-এ দ্বিখন্ডিত ভারত- এ সবকিছু আছে এই ছবিতে।
জন্মসূত্রে মুসলিম কিন্তু যাপনে নন-প্র্যাকটিসিং এবং বামপন্থী সাহিত্যিক মান্টোকেও একদিন তাঁর নিকটবন্ধুর মুখে শুনতে হয়, ‘তোমাকে আমি খুনও করতে পারি…’! হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার পরিপ্রেক্ষিতে মান্টোকে বোম্বে ছেড়ে লাহোরে চলে যেতে হয়েছিল। এরপর স্ত্রী (সফিয়া মান্টো) আর তিন কন্যাসন্তান নিয়ে লাহোরে দিন গুজরান। সেখানেও রাষ্ট্রীয় জীবনে ক্রমাগত প্রান্ত থেকে তাঁর আরও প্রান্তিক হয়ে যাওয়া, মদের প্রতি মাত্রাতিরিক্ত আসক্তি, উন্মাদনা ও মানসিক হাসপাতালে দিনযাপন- সবকিছুই রয়েছে ছবিতে। রয়েছে মান্টোর দুটি গল্প ‘ঠান্ডা গোস্ত’ ও ‘টোবা টেক সিং’-এর প্রসঙ্গ।
‘ঠান্ডা গোস্ত’-এর বিরুদ্ধে পাকিস্তান সরকারের অশ্লীলতার অভিযোগে মামলা-মোকদ্দমা ছবির টার্নিং পয়েন্ট হয়ে যায়। নন্দিতা শিল্পীর স্বাধীনতার বিষয়টিতে আন্ডারলাইন করেন ‘ঠান্ডা গোস্ত’-এর মাধ্যমে। অন্যদিকে হিন্দুস্তান ও পাকিস্তানকে একপ্রকার মুর্দাবাদ জানিয়ে দুই রাষ্ট্রের সীমানার মাঝে ‘উন্মাদ’ বৃদ্ধ শিখ পাঞ্জাবি ভদ্রলোক নৈরাষ্ট্রের স্পেসে ‘টোবা টেক সিং’ হয়ে যায়। আর টপ ভিউ থেকে ক্যামেরায় ধরে রেখে ‘মান্টো’য় যবনিকা টানেন পরিচালক নন্দিতা। ছবির শেষের এইটুকু দারুণ।
কিন্তু এটা বাদ দিলে ছবিটি নিয়ে কিছু প্রশ্ন তোলা যায়। সাদাত হাসান মান্টোর গল্পগুলো ন্যারেটিভ হিসেবে, ন্যারেটিভের ল্যাংগুয়েজ হিসেবে, ইমেজের চলন হিসেবে, টাইম-স্পেসের এক্সপেরিমেন্ট হিসেবে এবং যাপনচিত্র হিসেবে যতটা পলিটিক্যাল এবং আর্ট, তার সিকিভাগও হয়ে উঠতে পারেনি এই বায়োপিক। সেলুলয়েডে মান্টোর জীবন রচনা হয়েছে, তা-ও তাঁর যন্ত্রণা-ঘাত-প্রতিঘাতের ভেতরে না ঢুকে বহিরাবরণে আহা-উহু ও লেখকের জীবনের ওপর সরল গবেষণার ফিকশন হয়েছে। না, খুব বেশি সিনেমা হয়ে উঠতে পারেনি। অ্যাসাইলামে মান্টোর জীবন খানিকটা ছুঁয়ে যাওয়া হয়েছে মাত্র। রাষ্ট্র ও বিপরীতে রাষ্ট্র নির্ণায়িত উন্মাদনা ও তার স্পেস ‘টোবা টেক সিং’ প্রসঙ্গ সামান্যই উঠে এসেছে ছবির একেবারে শেষে; কিন্তু অ্যাসাইলামে মান্টোর যন্ত্রণাবিদ্ধ দিনগুলোর ভেতরে ঢোকা হয়নি।
মনে হয়েছে, ইতিহাসকে ইতিহাসের বাইরে থেকে ভাসা-ভাসা দেখে এ ছবির চিত্রনাট্য রচনা করা হয়েছে। না, ইতিহাসের ভেতরে ঢুকতে পারেননি নন্দিতা। টোবা টেক সিংয়ের অংশটায় সিনেমাটোগ্রাফি যতটা কাব্যিক হয়েছে, গোটা ছবিতে তেমন কিছু দেখা যায়নি। এডিটিং, সাউন্ড, মিউজিক- এসব চলনসই।
তবে ছবির কস্টিউম ও মেকআপ ডিপার্টমেন্ট দারুণভাবে সফল। তৎকালীন বোম্বের এলিট ফিল্মি দুনিয়া, পাতিবুর্জোয়া বুদ্ধিজীবী পরিসর, সফল মান্টো ও ব্যর্থ পরাস্ত মান্টোর মেকআপ-কস্টিউম দারুণ। মান্টোর পাজামা-পাঞ্জাবি থেকে শুরু করে শ্যাম, অশোক কুমারদের ট্রপিক্যাল প্রিন্টের শার্ট, কোর্ট, বেল বটম প্যান্ট, ওয়েস্ট, সফিয়া কিংবা ইসমত চুঘতাইদের শাড়ি, সালোয়ার ইত্যাদি সহযোগে ছবিতে সময়ের চিহ্ন যথার্থভাবে ধরা হয়েছে। প্রত্যাশামতোই নওয়াজউদ্দিনের অভিনয় মানসম্মত। সফিয়া চরিত্রে রসিকা দুগাল দারুণ। বাকি চরিত্রগুলোর বেশির ভাগ থিয়েটারের অভিনেতা-অভিনেত্রী। তবে জাভেদ আখতার আর ঋষি কাপুরের উপস্থিতি বাড়তি আকর্ষণ। তাদের অভিনয় সফল। তারাই ছবিটিকে সাফল্য এনে দেবেন বলেই মনে হয়।

 অতনু সিংহ

কুইজ
১। মান্টোর স্ত্রীর নাম কী?
ক. নুসরাত খ। সফিয়া গ। নাদিয়া
২। মান্টো ভারতের কোন শহরে জীবনের অনেকটা সময় কাটিয়েছেন?
ক. বোম্বে খ। কলকাতা। গ। দিল্লি­
৩। ভারত থেকে পাকিস্তানের কোন শহরে চলে যান মান্টো?
ক. করাচি খ। পেশোয়ার গ। লাহোর

গত সংখ্যার বিজয়ী

১. লিজা আক্তার, ডিওএইচএস, ঢাকা।
২. রায়হান, উত্তরা, ঢাকা।
৩. সুস্মিতা চৌধুরী, ধানমন্ডি, ঢাকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top