skip to Main Content

স্টাইল আইকন I স্টাইলিশ বব ফ্যাশনেবল বাপ্পী

একজন পাশ্চাত্যের, অন্যজন প্রাচ্যের। কিন্তু উভয়েই নিজ নিজ সংগীত আর লুক নিয়ে নিজস্ব ও আলাদা। প্রভাব ফেলেছেন সমকালীন প্রজন্মের ওপর

ফ্যাশন ও মিউজিক ঠিক কবে থেকে মিলেমিশে গেছে, তার দিনক্ষণ হয়তো বলা যাবে না, তবে আজকাল একটি ছাড়া আরেকটি যেন ভাবাই যায় না। সংগীত বিশ্বে কয়েকজন রয়েছেন, যারা শুধু মিউজিক লিজেন্ডই নন, ফ্যাশন জগতেও তারা আইকন। পাশ্চাত্যের বব ডিলান আর প্রাচ্যের বাপ্পী লাহিড়ী তেমনই দুজন। তারা যেমন গানে শ্রোতাদের মোহিত করেছেন, তেমনি ফ্যাশনিস্তাদের মধ্যেও বেশ প্রভাব ফেলেছেন।
নোবেলজয়ী বব ডিলান শুধু সংগীতেই অনুকরণীয় নন; দর্শক-শ্রোতার সামনে কেমন লুক নিয়ে হাজির হতে হয়, তা দেখিয়েছেন। ফ্যাশনে তার প্রভাবও ব্যাপক। তিনি বলেছিলেন, আমি সব হতে পারি- সে যা-ই হোক না কেন। এই কথার প্রমাণ তিনি দিয়েছিলেন। বোল্ড ফ্যাশন চয়েসের জন্য ব্রাও তুলেছিলেন, তখন এমনটি ভাবা যেত না। তবে ডিলান সব সময় দেখাতে চেয়েছেন, রকস্টার স্টাইল কতটা বৈচিত্র্যময় হতে পারে। হ্যারি স্টাইলস এবং মার্ক রনসনের মতো শিল্পীদের দিকে তাকালে তার প্রভাব আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
তরুণ ডিলান তার অ্যালবাম প্রকাশের জন্য শুটের সময় আনবাটনড স্ট্রাইপের অক্সফোর্ড শার্টের সঙ্গে স্ট্রেইট-কাট ওয়াশড জিনস পরে নিয়েছিলেন। সঙ্গে বাকলড লেদার বেল্ট। অগোছালো শার্টের ভাঁজ তার উদাসীন, নির্বিকার চেহারাকে পূর্ণতা দিয়েছিল। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে ডিলানের ঝাঁকড়া-কুঁচকানো চুল পরবর্তীকালে তার স্টাইলের সমার্থক হয়ে ওঠে। ইনডোরে সানগ্লাস পরাটা যেকোনো পোশাকেই যে স্টার কোয়ালিটি যোগ করতে পারে, সেটি ডিলান তার ব্লেজার ও টি-শার্ট কম্বো দিয়ে দেখিয়েছেন। এই পোশাকে প্রথম দেখায় মনে হতে পারে, তিনি তরুণ মার্ক রনসন। এ থেকে বোঝা যায়, এখনো ফ্যাশন ও মিউজিকে তার প্রভাব কতটুকু।
ডিলান দেখিয়েছিলেন, কীভাবে লেয়ারিংয়ের কাজ করা যায়। পোশাকের লেভেল সাবধানে নির্বাচন করে নিলে সহজেই স্টাইল স্কেলের উপরের দিকে স্থান করে নেওয়া সম্ভব। বিশেষ করে এই লুকে ফোকাসের মূল বিষয়টি হলো ক্ল্যাসিক ১৯৭০-এর কলার। রিফাইন্ড লেদারের উপর টানা চেক ডিজাইনের সঙ্গে লাইট ডেনিম-ওয়াশ জিনস তাকে ক্যাজুয়াল ও কেয়ারফ্রি লুকে উপস্থাপন করেছে। একটা সময় ফ্যাশন সত্যিই বুনো হয়ে উঠতে শুরু করেছিল। এমন কোনো জায়গা ছিল না যেখানে মিউজিশিয়ানরা সাধারণ একটি ট্যাপার্ড, ব্রাউন রিংলেট, হলোর উপর স্ট্রাইপড স্যুট পরে নিতেন না। লুকটি খুব স্বাভাবিক হয়ে উঠেছিল।
ডিলানকে নিয়ে আলোচনার সময় খেয়াল রাখতে হবে, এক ডজন বা এই রকম বিভিন্ন চরিত্র নিয়ে কথা হচ্ছে। চমৎকার সব শেপ তার লুকে পরিবর্তন এনেছিল, যেমনটা তার সাউন্ডে হয়ে থাকে। আশির দশকে ডিলানের মাথাভর্তি কার্লি চুল বেশ ট্রেন্ডি ছিল। তার ক্যারিয়ারের দিকে তাকালে দেখা যাবে, সবচেয়ে জনপ্রিয় লুকটি ছিল মেসড-আপ হেয়ার, এক জোড়া ক্ল্যাসিক রে-ব্যান, লেদার জ্যাকেট ও টার্টলনেক- এই ফ্যাশন সেন্স ছিল স্বচ্ছন্দ ও দুর্দান্ত।
ডিলানের ধ্রুব ফ্যাশন বিবর্তন আজও অব্যাহত। তার মিউজিকে যেমন পরিবর্তন থামেনি, তেমনি লুকেও। তিনি যা পরতেন, তা-ই ট্রেন্ড হয়ে যেত।
প্রাচ্যে সংগীত তারকাদের ফ্যাশন আইকন হয়ে ওঠার ধারায় যে কজনের নাম উল্লেখ করার মতো, তাদের একজন বাপ্পী লাহিড়ী। যার নাম নিলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে ঝলমলে আর বৈচিত্র্যময় ডিজাইনের সোনার গয়না পরিহিত একজন গোলগাল মানুষ। তার সংগীত হাজারো মানুষকে মোহিত করেছে, একই সঙ্গে তার ব্যতিক্রমী ফ্যাশন সেন্স একটি নতুন ধারার আবির্ভাব ঘটিয়েছে। বিচিত্র অলংকারের সঙ্গে বাপ্পীর কান আড়াল করা হেয়ারস্টাইল, সাদা জুতা এবং উজ্জ্বল রঙের পোশাক-আশাকও সমকালীন প্রজন্মের কাছে অনুকরণীয় হয়ে উঠেছিল।
ভারতীয় এই সংগীতশিল্পীর সোনার গয়নার প্রতি রয়েছে তীব্র আকর্ষণ। এটিই তাকে ফ্যাশনে একটি আলাদা জায়গা করে দিয়েছে। কেননা কোনো গয়না ছাড়া এই শিল্পীর দেখা পাওয়া যেন এক অবাক করা ব্যাপার। যদিও কিছুদিন আগে একটি গানের প্রয়োজনে তিনি গয়না ছাড়া উপস্থিত হয়েছিলেন। ওয়াল্ট ডিজনির ‘মোয়ানা’ সিনেমায়ও তার এই স্বর্ণপ্রীতি দেখানো হয়েছে। ঘটনাটি মজার। সিনেমায় সমুদ্রের নিচে এক বিশালদেহী কাঁকড়ার উপস্থিতি রয়েছে। নাম টামোটায়া। নিজেকে যে স্বর্ণে মুড়িয়ে রাখে। তার পাশে ছড়িয়ে থাকে রাশি রাশি সোনার উপকরণ। এমন স্বর্ণপাগল চরিত্রের জন্য যে বাপ্পী লাহিড়ী এক্কেবারে জুতসই, হলিউড তা বুঝেছিল। তাই তার ডাক পড়ল টামোটায়া চরিত্রে কণ্ঠ দেওয়ার জন্য।
বাপ্পীর এই স্বর্ণপ্রীতি নিয়ে এই গায়ক বলেছেন, ‘সোনা আমার জন্য লাকি।’ প্রেরণায় আছেন এলভিস প্রিসলি। এলভিস গলায় সোনার চেইন পরতেন। বাপ্পী লাহিড়ী তাকে ভালোবাসতেন। তাই ঠিক করেছিলেন, যখন সাফল্য অর্জন করতে পারবেন, তিনি সেটি উদ্যাপন করবেন আলাদা লুকে। এরপরে সোনার তৈরি অনেক গয়না পরার সামর্থ্য হয়েছে তার। অসংখ্য ভারী চেইন। হাতের প্রায় সব আঙুলেই আংটি। অলংকারের প্রতি এই ভালোবাসা দেখে অনেকে ঠাট্টা করলেও গানের মতো তার এই স্টাইলের অসংখ্য ভক্তও রয়েছে। তার গয়নাগুলো গতানুগতিক ডিজাইনের নয়। সোনা, রুপা মিলিয়ে বৈচিত্র্যময় নকশার সব কালেকশন রয়েছে বাপ্পীর। এই গয়নাপ্রীতি তৈরি করেছে তার আলাদা এক ফ্যাশন স্টেটমেন্ট, যা ভক্তদেরও প্রভাবিত করেছে।
 আহমেদ বুবলি
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top