skip to Main Content

হেঁশেলসূত্র I দশের ১০ শেফ সমাচার

কীভাবে রন্ধনশিল্পী হলাম- এ প্রশ্ন অসংখ্যবার আমাকে শুনতে হয়েছে। সত্যি বলতে কি, এর উত্তর আমার জানা নেই। খাদ্য মানুষের জীবনের অপরিহার্য অংশ। আমি ভালো খাবারকে বরাবরই উৎসাহিত করি। হতে পারে সেটা সিঙ্গাপুরের পথের ধারের কোনো হকারের চিকেন অ্যান্ড রাইস, কিংবা মিশেলিন স্টার রেস্তোরাঁর যথাযথ পদ। আমি পেশাদার রসনালিখিয়ে নই। মাঝেমধ্যে রেস্তোরাঁ পর্যালোচনা করে থাকি আমার মতো করে। এর চেয়ে আমি আগ্রহী কোনো পদের উৎস অনুসন্ধানে আর সে দেশের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে। কারণ, কোনো দেশের ঐতিহ্যবাহী পদ প্রভাবিত হয়ে থাকে নানা দেশের সংস্কৃতিতে। এ জন্যই আমি মনে করি, কোনো দেশ ও তার সংস্কৃতি সম্পর্কে জানার সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে সেই দেশের খাবার সম্পর্কে ধারণা থাকা। সুস্বাদু পদ চাখতে চাখতে বন্ধুত্বও হয়। এই বন্ধুত্বেও আগ্রহী। খাওয়া, খাবার সম্পর্কে জানা আর দেশ দেখা আমার কাছে একসূত্রে জানা।

কোরবানির ঈদের সঙ্গে মাংসের সম্পর্ক ওতপ্রোত। আমাদেরও সেই প্রয়াস ষোলো আনা। এবার তাই দেওয়া হলো ১০ দেশের ১০টি জনপ্রিয়তম পদ। এই পদ বাছাইয়ের কাজটি সাগ্রহে করে দিয়েছেন তারকা শেফ শুভব্রত মৈত্র। পদগুলোতে আমরা সচেতনভাবে মাথায় রেখেছি স্বাস্থ্যের বিষয়টি। এজন্যই প্রতিটি পদই স্বাস্থ্যসম্মত। প্রত্যাশা এই পদের আয়োজনে জমে উঠুক ঈদ, প্রগাঢ় হোক বন্ধুত্ব।

ছবি: শুভব্রত মৈত্র

ইন্দোনেশিয়া

১৩ হাজারের বেশি দ্বীপের সমাহার ইন্দোনেশিয়ায়। একসময় এটা বৃহত্তর ভারত ভূখ-ের অংশ ছিল। তখন একে বলা হতো সুমাত্রা ও জাভা। এই দেশের রয়েছে দারুণ কিছু পদ। সারা বিশ্বের মানুষ বেশ পছন্দও করে। যেমন ‘বিফ রেনডাং’। সাধারণত মালয়েশিয়ান কারি হিসেবে সুপরিচিত হলেও, এটা আসলে পশ্চিম সুমাত্রার পদ। ভীষণই ভারী। তবে উপাদেয়। রান্না ঝক্কির নয়। কিন্তু সময়সাপেক্ষ। এ জন্য ধৈর্য থাকতে হবে। আসলে এটা রান্না হয় স্লো কুকিং পদ্ধতিতে। এই পদে গরুর মাংস ঝোলের মধ্যে সাঁতার কাটবে না। তবে এর গায়ে লেগে থাকবে মাখো মাখো গাঢ় ঝোল। আর মাংসে হাত দিলেও তা খুলে আসবে।

বিফ রেনডাং

উপকরণ : গরুর মাংস ১ কেজি, কোকোনাট ক্রিম ৬০০ মিলিগ্রাম, ভেজিটেবল অয়েল ১০০ মিলিগ্রাম।
ব্লেন্ড করার: কাজুবাদাম কিংবা ক্যান্ডেলনাট ৫০ গ্রাম, ১২টি বড় সাইজের রসুন কুচি, মরিচ ৩০০ গ্রাম, পেঁয়াজ ২৫০ গ্রাম, আদা ৫০ গ্রাম, গ্যালানগাল ৫০ গ্রাম, হলুদ ৫০ গ্রাম, ধনেপাতা দেড় চা চামচ, লবণ ১ টেবিল চামচ, এলাচি ৪টি, জিরা দেড় চা চামচ, লবঙ্গ ১০টি।
মসলা ও সিজনিং: লেমনগ্রাস ৪টি, কাফির লেবুপাতা ৩টি, অ্যাসাম কেপিং (এটি ইন্দোনেশিয়ার একটি ফল) ১টি। এটি না পাওয়া গেলে এর বদলে এক টেবিল চামচ হলুদ বাটা ব্যবহার করতে পারেন।
প্রণালি: ৪ সেন্টিমিটার চৌকো করে মাংস কেটে নিন। মাংস আধা সেন্টিমিটার পুরু হওয়া চাই। তবে এতো চিকন করে কাটা যাবে না যাতে রান্নার সময় মাংসের টুকরাগুলো ভেঙে যায়। ব্লেন্ড করার জন্য রাখা উপকরণগুলো ব্লেন্ড করে নিন। লেমনগ্রাসের সবুজ অংশ ফেলে দিয়ে শুধু সাদা অংশ নিয়ে সেগুলো থেঁতলে নিন, যাতে সুবাস ছড়ায়। একটি কড়াইয়ে ভেজিটেবল অয়েল গরম করে নিন। তার সঙ্গে ব্লেন্ড করা উপকরণগুলো ধীরে আঁচে কষান, যতক্ষণ না সুবাস ছড়ায়। তারপর এগুলোর সঙ্গে কোকোনাট ক্রিম, হলুদের পাতা, লেবুপাতা অ্যাসাম কেপিং অথবা হলুদ বাটা দিন। এবার তাতে মাংস ঢেলে দিয়ে মাঝারি আঁচে রান্না করুন। আস্তে আস্তে ঝোল ফুটতে দিন। কড়াইতে সব উপকরণ যখন ফুটতে শুরু করবে, তখন আগুনের আঁচ কমিয়ে দিন। ধীরে ধীরে কড়াইয়ের ঝোল যখন শুকিয়ে আসবে তখন অল্প অল্প পানি যোগ করতে থাকুন। চুলায় বসানো মাংস যতক্ষণ না সুবাস ছড়ায় এবং গাঢ় বাদামি রঙ ধারণ না করে, ততক্ষণ রান্না করতে থাকুন। রান্না হতে কমপক্ষে তিন ঘণ্টা সময় লাগবে। রান্না হয়ে গেলে নামিয়ে নিন। ভাত অথবা রুটির সঙ্গে পরিবেশন করুন।

পাকিস্তান

পাকিস্তানি পদগুলো ষোড়শ শতাব্দীর মোগল হেঁশেলে উৎপন্ন। চিকেন মালাই কাবাব তেমনই একটি সুস্বাদু ও রসাল পদ। ক্রিম আর মসলায় মেরিনেট করে গ্রিল বা বেক করা হয়। সবুজ চাটনি বা সস সহযোগে পরিবেশন করা হয়। এটি বিশ্বের যে কাউকেই প্রলুব্ধ করার জন্য যথেষ্ট।

চিকেন মালাই কাবাব

উপকরণ: চিকেন ব্রেস্ট ৫০০ গ্রাম, টক দই ৩ টেবিল চামচ, ক্রিম ৩ টেবিল চামচ, এলাচি গুঁড়া আধা চা চামচ, লেবুর রস ১ চা চামচ, মরিচ গুঁড়া দেড় চা চামচ, কাঁচা মরিচ কুচানো ২টি, রসুন বাটা ১ টেবিল চামচ, ধনেপাতা কুচানো কোয়ার্টার কাপ, বাটার অথবা ঘি ২/৩ টেবিল চামচ, জাফরানগোলা ২ টেবিল চামচ। (কিছু জাফরান ৫ মিনিট পানিতে ভিজিয়ে রাখুন)। লবণ পরিমাণমতো।
প্রণালি: মুরগির টুকরাগুলোয় লবণ মাখিয়ে ভিজিয়ে রাখুন। তারপর চার-পাঁচ ঘণ্টা ফ্রিজে রেখে দিন। এবার মুরগির মাংসকে অন্য সব উপাদানের সঙ্গে মিশিয়ে নিন। মেরিনেশনের পর মুরগির টুকরোগুলোতে কাঠি গেঁথে তন্দুর বা ইলেকট্রিক আভেনে গ্রিল করুন। গ্রিল করার সময় অন্তত দুবার মুরগির টুকরাগুলোয় বাটার অথবা ঘি মাখিয়ে নিতে হবে। গ্রিল করা হয়ে গেলে মুরগির টুকরাগুলোর উপর ধনেপাতা কুচি ছড়িয়ে দিয়ে তন্দুরি রুটি ও চাটনির সঙ্গে পরিবেশন করুন।

সৌদি আরব

সৌদি আরবের সংস্কৃতি শতবর্ষের আরব সভ্যতা থেকে উদ্ভূত। সৌদি আরবের রন্ধনশৈলী আরব উপদ্বীপের দেশগুলো এবং তুরস্ক, ভারত, ইরান ও আফ্রিকার খাবারে প্রভাবিত।

আল কাবসা
সৌদি আরবের জাতীয় খাবারের বিবেচনায় মসলাদার এই মুরগি ও ভাতের ডিনার অতুলনীয়। এটি ভাজা কাজুবাদাম, কিশমিশ, পার্সলে পাতা এবং টক দইয়ের সস দিয়ে পরিবেশন করা হয়ে থাকে।

উপকরণ: মুরগির মাংস ১ কেজি (৮ টুকরা করে নিতে হবে), মাখন ১/৪ কাপ, ছোট ছোট কুচি করা একটি বড় পেঁয়াজ, আধা বাটা রসুন ৬ কোয়া, টমেটো পিউরি ১/৪ কাপ, কুচি করা টমেটো ৪০০ আউন্স, মাঝারি আকৃতির কুচি করা গাজর ৩টি, জায়ফল গুঁড়া এক চিমটি, লবণ ও কালো গোলমরিচ গুঁড়া পরিমাণমতো, গরম পানি ৪ কাপ, বাসমতী চাল ১/৪ কাপ (ধোয়া বা ভেজা চাল নেওয়া যাবে না), কিশমিশ ১/৪ কাপ, ছেলা আমন্ড ভাজা ১/৪ কাপ, কাবসা মসলা মিক্স পরিমাণমতো, জাফরান ১/২ চা চামচ, সবুজ এলাচির গুঁড়া ১/৪ চা চামচ, দারুচিনি গুঁড়া ১/২ চা চামচ, অলস্পাইস গুঁড়া ১/২ চা চামচ, সাদা গোলমরিচ গুঁড়া ১/৪ চা চামচ, শুকনা লেবু গুঁড়া ১/২ চা চামচ।
প্রণালি: বড় একটি স্টক পাত্রে ভাপে অথবা আভেনে মাখন গলিয়ে নিন। মুরগির মাংসের টুকরা, পেঁয়াজ ও রসুন যোগ করুন। পেঁয়াজ নরম না হওয়া পর্যন্ত অল্প আঁচে কষিয়ে নিন। টমেটোর পিউরি যোগ করে নাড়ুন এবং অল্প আঁচে দুই মিনিট ধরে রান্না করুন। এবার টমেটো, গাজর, লবঙ্গ, লবণ, গোলমরিচসহ অন্যান্য উপাদান মিশিয়ে নিন। দুই মিনিট ধরে রান্না করুন এবং পানি দিন। সেদ্ধ হয়ে যাওয়ার পর চুলার আঁচ কমিয়ে দিয়ে ঢেকে দিন। এবার অল্প আঁচে ৩০ মিনিট ধরে রান্না করুন। পাত্রে চাল দিন এবং খুব সাবধানে নাড়ুন। আবারও ঢেকে দিন এবং ৩০ থেকে ৪০ মিনিট ধরে অল্প আঁচে রান্না করুন। নামিয়ে আনার দুই মিনিট আগে কিংবা চাল সেদ্ধ হবার পর কিশমিশ যোগ করুন। সার্ভিং ডিশে ভাত বাড়ুন। উপরে মুরগি ও কাজুবাদাম দিয়ে গার্নিশ করে নিন। মিক্স স্যালাড সহযোগে পরিবেশন করুন।

মিসর

ফারাওদের দেশ মিসর। এরা যেসব পদ নিয়ে গর্ব করে, তার মধ্যে একটি মিটবল। রান্না করা হয় টমেটো সস আর রসনা উসকানো মসলায়। যার মধ্যে রয়েছে অ্যালেপ্পো পেপার, হলুদ ও স্টার অ্যানিস। শেষেরটি দেওয়া হয় একটু মিষ্টি স্বাদ আনার জন্য। সাঁতলানো রসুন আর বাঁধাকপির পাতা মিটবলের উপর দিয়ে পরিবেশন করা হয়। মুখে দিলেই মিলবে অনির্বচনীয় আস্বাদ।

মিটবল

উপকরণ: গরুর মাংসের কিমা ৮০০ গ্রাম, ১টি পেঁয়াজ কুচি, চার কোয়া থেঁতলানো রসুন, কুচি করা পার্সলে পাতা ২ টেবিল চামচ, লবণ পরিমাণমতো, গোলমরিচ পরিমাণমতো, আনসল্টেড বাটার ৩০ গ্রাম, ময়দা ২ টেবিল চামচ, অরেগানো পাতা কুচানো ২ টেবিল চামচ, পারমেজান পনির আধা কাপ, টমেটো কুচি ৪০০ গ্রাম, বিফ স্টক ১ কাপ, জায়ফল আধা টেবিল চামচ।
প্রণালি: একটি পাত্রে কুচি করা মাংসের সঙ্গে পারমেজান চিজ, পেঁয়াজ, জায়ফল, পার্সলে, অর্ধেক রসুন মিশিয়ে নিন। এর সঙ্গে এক চিমটি লবণ ও গোলমরিচ মিশিয়ে ১৫টি মিটবল তৈরি করে নিন। মিটবলগুলোতে ময়দা মেখে নিন। তারপর মিটবলগুলো থেকে অতিরিক্ত ময়দা ঝেড়ে ফেলে আরেকটি পাত্রে নিন। একটি কড়াই আগেই বেশি তাপে চুলায় দিন। তেতে উঠলে তাতে মাখন দিন। গলে গিয়ে মাখন থেকে বুদ্বুদ উঠলে তাতে মিটবলগুলো দিন। ৮ মিনিট ধরে ভাজুন যাতে মিটবলগুলো বাদামি রঙ ধারণ করে। ভাজা হয়ে গেলে মিটবলগুলো তুলে আলাদা প্লেটে নিয়ে ঢেকে রাখুন। ওই কড়াইতে বাকি রসুন দিয়ে ১ মিনিট ধরে ভাজুন; এরপর তাতে টমেটো, অরেগানো ও স্টকের সঙ্গে লবণ ও গোলমরিচ দিয়ে ৬ মিনিট ধরে রাঁধুন। এবার আবারও মিটবলগুলো কড়াইতে ছেড়ে আরও ৮ মিনিট রাঁধুন। অন্য পাত্রে এক টেবিল চামচ তেল দিন। হালকা গরম হলে তাতে রসুন ও বাঁধাকপির পাতা দিয়ে সাঁতলে নিন। এবার একটি পাত্রে মিটবল নিয়ে তার উপর সাঁতলাতো বাঁধাকপির পাতা দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করুন।

ইরান

পৃথিবীর প্রাচীনতম সভ্যতা হলো পারস্য সভ্যতা। এই পারস্যই বর্তমানের ইরান। এর নানা গোত্র আর প্রতিবেশী দেশগুলোর সাংস্কৃতিক প্রভাবে ইরানের রসনাও বৈচিত্র্যময়। ইরানি রান্নায় হরহামেশাই দেখা যায় হার্বের ব্যবহার। এ ছাড়া অ্যাপ্রিকট, বেদানা, পাম, প্রুনসহ নানা ফলের ব্যবহারও উল্লেখযোগ্য।

পার্সিয়ান ল্যাম্ব চপ

ইরানিরা ল্যাম্ব চপ তৈরি করতে টক দই, লেবু, বাটার ও জাফরান ব্যবহার করে থাকে।
উপকরণ: ল্যাম্ব চপ ৮ টুকরা, ছোট করে কাটা মিষ্টি পেঁয়াজ ১টি, পার্সলে পাতা ৮টি, গরম পানি ১ টেবিল চামচ, টক দই ২ কাপ, মাঝারি করে কাটা পেঁয়াজ ২টি, রসুনের কোয়া ২টি, কমলা ২ ফালি, লেবুর রস আধা কাপ, লবণ ২ চা চামচ, জাফরান আধা চা চামচ, গলিয়ে নেওয়া সল্টেড বাটার ৮ টেবিল চামচ, কালো গোলমরিচ আধা চা চামচ।
প্রণালি: মেরিনেট করার জন্য: জাফরান আঙুল দিয়ে টুকরা করে নিয়ে একটি ছোট পাত্রে গরম পানিতে ১০ মিনিটের মতো ভিজিয়ে রাখতে হবে। এরপর একটি পাত্রে টক দই নিয়ে তাতে জাফরান দিয়ে নাড়তে হবে। এর সঙ্গে অন্যান্য উপাদান মিশিয়ে নাড়তে হবে।
ল্যাম্ব চপের জন্য: একটি বেকিং ডিশে চপগুলো রেখে তার উপর মসলা ও জাফরান মেশানো দই ঢালুন। এবার চপগুলোকে স্বচ্ছ পলিথিন পেপারে মুড়ে ১২ থেকে ২৪ ঘণ্টা ফ্রিজে রেখে মেরিনেট হতে দিন। যত বেশিক্ষণ মেরিনেট করা হবে ততই এর স্বাদ বাড়বে। আভেনকে ২৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় প্রিহিট করে নিন। গ্রিল গ্রেটে তেল মাখিয়ে নিন। গ্রিল হয়ে গেলে গরম গরম পরিবেশন করুন। চপগুলো মেরিনেট থেকে উঠিয়ে ভালো করে মিশ্রণ ঝরিয়ে গ্রিলে রাখুন। এক পিঠ চার মিনিট গ্রিল করুন। মাঝে মাঝে মাখন মাখিয়ে নিন। হয়ে গেলে চপগুলো প্লেটে রেখে তার উপর স্লাইস করে কাটা পেঁয়াজ আর পার্সলে দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করুন।

কুয়েত

কুয়েত পশ্চিম এশিয়ার একটি দেশ। পূর্ব আরবের পারস্য উপসাগরের উত্তর প্রান্তে এর অবস্থান। আমার কাছে যেটা ভালো লাগে সেটা হচ্ছে, কুয়েত ওই অঞ্চলে নারীর ক্ষমতায়নে বিশেষ উদারতা দেখিয়েছে। সেখানে নারীকর্মীর সংখ্যা পুরুষের তুলনায় বেশি।

লাহাম ম্যাসবুস

ম্যাচবুস তিনটি অংশে তৈরি হয়। মাংস (ঐতিহ্যগতভাবে ভেড়া বা মুরগি দিয়ে) খুব ভালোভাবে রান্না করা হয়, যাতে খুব নরম হয়। এরপর ভাতটা রান্না করা হয় মিট স্টকে। আর যেটাকে পুর বলা হচ্ছে সেটা আদতে পুর নয়, বরং মটরশুঁটি, কিশমিশ ও পেঁয়াজ।
উপকরণ: মাংসের জন্য : ল্যাম্ব ১ কেজি, পানি আড়াই লিটার, ছোট পেঁয়াজ ১টি, দারুচিনি ১টি, গোলমরিচ ১ চা চামচ, এলাচি ১ চা চামচ, লবঙ্গ ৫টি, তেজপাতা ২টি, লবণ ১ টেবিল চামচ, দারুচিনি গুঁড়া ১/৪ চা চামচ, হলুদ গুঁড়া ১/৪ চা চামচ, আদার গুঁড়া ১ চিমটি, জিরা গুঁড়া ১/৪ চা চামচ, লবণ পরিমাণমতো, গোলমরিচ পরিমাণমতো, জাফরান গুঁড়া ১/৪ চা চামচ, লেবুর রস ২ টেবিল চামচ, তেল ১ টেবিল চামচ।
চালের জন্য: বাসমতী চাল ১ কেজি, পেঁয়াজ ২টি, ছোলার ডাল ৭৫ গ্রাম, কিশমিশ ৭৫ গ্রাম, তেল ১ টেবিল চামচ, দারুচিনির গুঁড়া ১ চিমটি, লবণ ১/২ চা চামচ, চিনি ১/২ চা চামচ, লবঙ্গের গুঁড়া পরিমাণমতো, গোলমরিচ পরিমাণমতো।
প্রণালি: কিশমিশগুলো পানিতে ভিজিয়ে নিন। ২০০ ডিগ্রি তাপে আভেন প্রিহিট করুন। ভেড়ার মাংস কিউব করে কেটে নিন। একটা বড় পাত্রে পানির সঙ্গে মাংস, সমস্ত মসলা, লবণ ও পেঁয়াজ ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। সেদ্ধ করুন। পানি যখন ফুটে আসবে তখন উপরে ফেনা দেখতে পাবেন, সেই ফেনা ফেলে দিন। এবার ঢেকে দিয়ে মাঝারি কিংবা ধীমে আঁচে ৯০ মিনিট ধরে রান্না করুন। রান্নার ফাঁকে পুর তৈরি করে নিন। একটি সসপ্যানে ছোলার ডাল নিয়ে তাতে পানি ও লবণ মিশিয়ে ঢেকে দিন। মাঝারি আঁচে সেদ্ধ করুন। এবার তাপ কমিয়ে দিয়ে ডাল যতক্ষণ না সেদ্ধ হচ্ছে ততক্ষণ সেদ্ধ করুন। পানি ঝরিয়ে ডাল আলাদা পাত্রে নিন। পেঁয়াজগুলো কুচি করে নিন এবং অল্প তেলে ভেজে নিন, যতক্ষণ না পেঁয়াজ বাদামি রঙ ধারণ করে। এবার তাপ কমিয়ে মাঝারি আঁচে নামিয়ে এনে তাতে ডাল ও কিশমিশ মিশিয়ে নিন। এ ছাড়া দারুচিনি, লবঙ্গ, লবণ, চিনি ও গোলমরিচ যোগ করুন। সব উপাদান একসঙ্গে মিশে না যাওয়া পর্যন্ত রান্না করতে থাকুন। এরপর চুলা থেকে নামিয়ে এক পাশে রাখুন। ৯০ মিনিট পর বড় পাত্রে রাখা মাংস থেকে ছাঁকনি দিয়ে পানি ঝরিয়ে নিন। স্টক রেখে দিয়ে মসলাগুলো ফেলে দিন। গুঁড়া করা সব মসলা একসঙ্গে মিশিয়ে নিন (মাংস চেখে দেখুন, প্রয়োজন হলে আরও লবণ দিন)। শুকনো উপাদানগুলো মাংসের সঙ্গে কচলে নিন। মাংসগুলো একটি প্যানে সাজিয়ে নিন। ১ টেবিল চামচ জাফরান, ২ টেবিল চামচ লেবুর রস, ১ টেবিল চামচ তেল এবং ১ টেবিল চামচ মিট স্টক মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি মাংসের উপর ছিটিয়ে দিন। এবার প্যানটি অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল দিয়ে ঢাকুন এবং ১৫ মিনিট আভেনে রেখে দিন। এই ফাঁকে ভাত রান্না করে নিন। চাল কয়েকবার ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন, যতক্ষণ না সব পানি চাল থেকে ঝরে যায়। এবার এক চা চামচ লবণ পানিতে মিশিয়ে তাতে চাল দিয়ে ঢেকে রাখুন। এবার আবার চাল থেকে পানি ঝরিয়ে নিন। একটি মাঝারি আকারের ননস্টিক প্যানে চাল রাখুন। দুই কাপ মিট স্টক ঢেলে চালকে ডুবিয়ে দিন। উচ্চ তাপে সেদ্ধ করে নিন। ঢেকে দিন এবং মাঝারি আঁচে আবারও রান্না করুন। ১৫ থেকে ২০ মিনিট ধরে রান্না করতে থাকুন, যতক্ষণ পর্যন্ত না পানি শুকিয়ে যায়। পরিবেশনের সময় হয়ে গেলে মাংস ও পুর মুড়ে ভাত সাজিয়ে দিন। জাফরানের পানি ছিটিয়ে দিন। শুকনো বাদাম ও বেরেস্তা করা পেঁয়াজ দিয়ে পরিবেশন করুন।

মরক্কো

মরক্কো। কাগজে-কলমে কিংডম অব মরক্কো। উত্তর-পশ্চিম আফ্রিকায় অবস্থিত এটি একটি সার্বভৌম একটি রাষ্ট্র। মরক্কোর জনপ্রিয় একটি খাবার তাজিন। আসলে এটা একটা রন্ধনপদ্ধতি। মাংস, মাছ কিংবা শাকসবজি দিয়েও তৈরি হতে পারে এই পদ। তবে যেটা দিয়েই তৈরি করা হোক, তাজিন রাঁধতে হয় ধীমে আঁচে। এর রয়েছে অনন্য টক-মিষ্টি স্বাদ। এখানে দেওয়া হলো ল্যাম্ব তাজিনের রেসিপি।

তাজিন
উপকরণ: চর্বি ছাড়া হাড়সহ ল্যাম্বের কাঁধের মাংস দেড় কেজি, চিকন করে কুচি করা পেঁয়াজ ২টি, আধা বাটা রসুন ৪ কোয়া, গুঁড়া মরিচ ১ টেবিল চামচ, জিরার গুঁড়া ১ টেবিল চামচ, দারুচিনির গুঁড়া ১ টেবিল চামচ, আদা বাটা ১ টেবিল চামচ, লাল মরিচের গুঁড়া ১/২ চা চামচ, সম্ভব হলে খুসখুস নিতে পারেন। জলপাই ১/৩ কাপ, কুচি করে কাটা ধনেপাতা ১/৩ কাপ, লেবুর আচার কিংবা শুকিয়ে নেওয়া লেবু পরিমাণমতো, হারিসা (মরিচ বাটা) পরিমাণমতো, হারিসা না থাকলে তার বদলে লাল ক্যাপসিকাম ব্যবহার করতে পারেন।
প্রণালি: মাংসগুলো ১১/২ ইঞ্চি মাপে কেটে নিন। একটি কড়াইতে পেঁয়াজ ও রসুন মিশিয়ে নিয়ে অল্প আঁচে চুলায় বসিয়ে দিন। পেঁয়াজ ও রসুনের মিশ্রণ নরম হয়ে না আসা পর্যন্ত তিন থেকে পাঁচ মিনিট ধরে নেড়ে ভাজুন। এরপর মরিচ গুঁড়া, জিরা, হলুদ, আদা, দারুচিনি, এলাচি, লাল মরিচের গুঁড়া একসঙ্গে মিশিয়ে নিয়ে সুগন্ধ না বের হওয়া পর্যন্ত ৩০ সেকেন্ড ধরে নাড়ুন। স্টক, টমেটো ও টমেটো পেস্ট মিশিয়ে নিন। চড়া আঁচে সেদ্ধ করে নিন। এবার আঁচ কমিয়ে দিয়ে ঢেকে দিন। তারপর এক ঘণ্টা ধরে রান্না করুন। মাঝেমধ্যে নেড়ে দিন, যাতে মাংস নরম হয়ে আসে। রান্নার উপর সর পড়লে কিংবা অতিরিক্ত চর্বি থাকলে তা অপসারণ করে নিন। স্বাদ বৃদ্ধির জন্য লবণ ও মরিচ যোগ করুন। একটি ডিনার প্লেটে অথবা একটি ছড়ানো প্লাটারে খুসখুস নিন। খুসখুস না থাকলে সুজি কিংবা ভাত নিতে পারেন। তবে যেটাই নিন, সেটা আগে থেকে একটু লবণ দিয়ে সেদ্ধ করে নিতে হবে। একটি ছিদ্রযুক্ত চামচ দিয়ে ল্যাম্ব ও সবজিগুলো তুলে নিন। কড়াইয়ে থাকা ঝোলটুকু মেপে দেখুন, যদি ৩ কাপের কম হয়, তাহলে পানি যোগ করে তিন কাপ পূর্ণ করে নিন। তারপর উচ্চ তাপমাত্রায় আবারও চুলায় বসিয়ে দিন। স্বাদ বৃদ্ধির জন্য লবণ যোগ করুন। ডিশের উপর খুসখুস বা ভাত অথবা সুজির উপর জুস ঢেলে নিন। গার্নিশ করার জন্য জলপাই ও ধনেপাতা ছড়িয়ে দিয়ে পরিবেশন করুন।

আফগানিস্তান

নানা উপজাতির সমাহার এই দেশে। আবার তাদের প্রত্যেকেরই রয়েছে উপসংস্কৃতি। সে দেশের প্রধান শস্য হলো গম, ধান, ভুট্টা আর বার্লি। এগুলোর উপরেই নির্ভর করেই তৈরি হয় তাদের পদ। এসব খাবারের সঙ্গী হয় স্থানীয় ফলমূল, শাকসবজি, দুধ, দই আর ঘোল।

মান্টু

এটা সম্ভবত আফগানিস্তানের সবচেয়ে জনপ্রিয় পদ। মাংসের পুর ভরা ডাম্পলিং। কয়েক স্তরবিশিষ্ট স্টিমারে ভাপে তৈরি হয়। বিশেষ কোনো উৎসব বা অনুষ্ঠান কিংবা বৃহৎ সমাবেশেই এই মান্টু পরিবেশিত হয়। অবশ্য রান্না করা মান্টু প্রায়শই সেখানকার বাজার বা শপিং এরিয়ার হোটেল কিংবা হট ডগ স্ট্যান্ডেও পাওয়া যায়। কখনো এটা মেইন ডিশ হিসেবে কখনোবা সাইড ডিশ হিসেবে পরিবেশন করা হয়।
উপকরণ: পুরের জন্য: পেঁয়াজ ২ কাপ, গরুর মাংসের কিমা ৫০০ গ্রাম, রসুন ১/২ চা চামচ, ধনে গুঁড়া ২ চা চামচ, লবণ ১/২ চা চামচ, গোলমরিচের গুঁড়া ১/২ চা চামচ (ভালো করে মিহি করতে হবে)।
টপিংয়ের জন্য: ছোলার ডাল ১ কাপ, গরুর মাংসের কিমা ২৫০ গ্রাম, কুচি করে কাটা পেঁয়াজ ১টি, রসুন ১/২ চা চামচ, লবণ ১/২ চা চামচ, গোলমরিচের গুঁড়া ১/২ চা চামচ, টমেটো পেস্ট ২ চা চামচ, তেল ৩০ মিলিলিটার।
ইয়োগার্ট ডিপের জন্য: শুকনা পুদিনা পাতার গুঁড়া ১ চা চামচ, রসুন ১/২ চা চামচ, প্লেইন ইয়োগার্ট ৫০০ মিলিলিটার।
প্রণালি: গরুর মাংসের কিমা, রসুন, লবণ ও ধনে গুঁড়া একসঙ্গে একটি প্যানে নিয়ে মাঝারি আঁচে কষিয়ে নিন। ১৫ থেকে ২০ মিনিট ধরে কষান, যাতে মাংসগুলো আধা সেদ্ধ হয়। এরপর গোলমরিচ দিয়ে চুলা থেকে নামিয়ে নিন। মাংসের সঙ্গে এক কাপ কুচি করা পেঁয়াজ মিশিয়ে ঠান্ডা করে নিন, যতক্ষণ না মাংস ঘরের তাপমাত্রায় আসে।
সস টপিং: ছোলার ডাল ২ থেকে ৩ ঘণ্টা কিংবা সারা রাত পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। একটি ফ্রায়িং প্যানে তেল গরম করে নিন, তাতে পেঁয়াজ ও রসুন ভেজে নিন যতক্ষণ পর্যন্ত না বাদামি রঙ ধারণ করে।
টমেটো, টমেটো পেস্ট, ছোলার ডাল এবং ৩/৪ কাপ পানি যোগ করুন। সেগুলো ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট ধরে রান্না করুন যতক্ষণ না উপাদানগুলো নরম হয়ে আসে। লবণ ও গোলমরিচ দিয়ে সিজন করে এক পাশে রাখুন।
ইয়োগার্ট ডিপ: একটি পাত্রে ইয়োগার্ট ডিপ তৈরি করার সব উপাদান ভালোভাবে মিশিয়ে নিন।
পেস্ট্রি তৈরি: একটি বড় পাত্রে আটা নিন। তাতে আস্তে আস্তে পানি ঢেলে মাখতে থাকুন খামির তৈরির জন্য। এরপর ১৫ থেকে ২০ মিনিট রেখে দিন। হাত দিয়ে খামির থেকে ছোট ছোট লেচি করে নিন এবং বলের মতো গোল করে নিন। কিছু আটা আটার বলগুলোর উপর ছিটিয়ে দিন এবং গোল করে বেলে নিন।
মান্টু তৈরি: আটার বলগুলো ১/৬ ইঞ্চি পাতলা করে রুটি বেলে নিন। দুই ইঞ্চি চৌকো করে রুটিগুলো কেটে নিন। প্রতিটি টুকরার ভেতর এক টেবিল চামচ করে কষানো গরুর মাংসের কিমা ও পেঁয়াজ দিন। প্রতিটি টুকরার প্রান্ত পানি দিয়ে ভিজিয়ে নিন। এ ক্ষেত্রে আঙুল কিংবা ব্রাশ ব্যবহার করতে পারেন। ভালো করে বন্ধ করে দিন, যাতে একটি অন্যটির সঙ্গে লেগে যায়।
রন্ধন: স্টিমার থেকে ডিশ বের করে নিয়ে তাতে পানি ঢেলে ফুটতে দিন। এবার স্টিমারের উপর তেল মাখিয়ে তার উপর পেস্ট্রিগুলো রাখুন, যাতে লেগে না যায়। এবার ঢেকে দিয়ে ৪০ মিনিট ধরে রান্না করুন। এবার একটি বড় পরিবেশন পাত্র নিয়ে তাতে পাতলা করে দইয়ের মিশ্রণ ঢালুন। তার উপর ডাম্পলিংগুলো সাজিয়ে দিন। এরপর দইয়ের মিশ্রণ ডাম্পলিংগুলোর উপর ঢালুন। পুদিনা পাতা ও গোলমরিচের গুঁড়া দিয়ে পরিবেশন করুন।

তুরস্ক

রসনার জন্য তুরস্কের খ্যাতি বিশ্ববিদিত। কাবাব, পোলাও আর পুরভরা নানা পদ ছড়িয়েছে নানা দেশে। আমাদের দেশেও এসেছে। তুরস্কের ঐতিহ্য পদগুলো স্বাদে-গন্ধে অতুল্য। তুরস্কের ল্যাম্ব স্টু তাভা নামেই পরিচিত। রান্না করাও বেশ সহজ। সহজ আর উপাদেয় এই পদটির উৎপত্তি সেনাছাউনিতে।

তাভা

উপকরণ: টমেটো ১০টি (রোদে শুকানো টমেটো পাওয়া না গেলে টমেটো দুই টুকরো করে কেটে ইলেকট্রিক আভেন কিংবা সূর্যের আলোতে শুকিয়ে নিতে হবে)। ল্যাম্ব স্ট্রিপ ১৫০ গ্রাম, পেঁয়াজ ১টি, কাঁচা মরিচ ১টি, অলিভ অয়েল ২ টেবিল চামচ, ড্রাই থাইম আধা চা চামচ, কালো গোলমরিচ আধা চা চামচ, লবণ আধা চা চামচ, পেঁয়াজ পাতা একমুঠো, পার্সলে একমুঠো ও লেবু একটি এবং ছোট আলু ১০-১৫টি।
প্রণালি: টমেটোগুলো একটি পাত্রে নিয়ে তাতে পানি দিয়ে চুলায় বসিয়ে দিন। ১০ মিনিট ধরে সেদ্ধ করুন। এরপর নামিয়ে চিকন করে ফালি করে নিন। পেঁয়াজের খোসা ছাড়িয়ে কুচি করে নিতে হবে। মরিচগুলোও টুকরা করে নিন। একটি পাত্র নিয়ে তাতে অলিভ অয়েল দিন। গরম হলে পেঁয়াজ কুচি ও ল্যাম্ব কিউব ও ছোট আলু যোগ করুন। এগুলো অল্প তেলে ৫ মিনিট ভেজে নিন। তাতে কাঁচা মরিচ যোগ করে দুই মিনিট নাড়ুন। টমেটো, থাইম, লবণ ও কালো গোলমরিচ মিশিয়ে নিন। তাতে পানি ঢালুন, যাতে মাংসগুলো ডুবে যায়। নেড়ে রাঁধুন ১০ মিনিট ধরে। এরপর তাতে লেবুর রস, কুচানো পেঁয়াজের অর্ধেকটা ও পার্সলে মিশিয়ে নিন। এবার অল্প নেড়ে ২০ মিনিট রাঁধুন। উপরে কিছু পেঁয়াজ পাতা ও পার্সলে ছড়িয়ে পরিবেশন করুন।

চীন

প্রাচীন ঐশ্বর্য আর আধুনিক সমৃদ্ধির মেলবন্ধনে ঋদ্ধ চীনের সংস্কৃতি এবং ইতিহাসের ব্যাপ্তি পাঁচ হাজার বছরের। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, চিত্তাকর্ষক ঐতিহ্য, জিভ তাতানো রসনা দেশটিকে একটি অভূতপূর্ব আকর্ষণে পরিণত করেছে।
চীনের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত সবচেয়ে বড় শহর শিয়ান। এটাই সিল্ক রোডের পুবের সর্বশেষ প্রান্ত। মুসলমানদের ঘনবসতি আছে এখানে। বহু শতক ধরে এখানে তুরস্ক ও আফগান অভিবাসীদের বাস।

জি রান নিউ রো

গরুর মাংসের সঙ্গে জিরার ব্যবহার মূলত উত্তর চীনের মুসলমানদের কাছ থেকে এসেছে। পরে দক্ষিণে জনপ্রিয় হয়েছে। চীনে মূলত পথখাবার হিসেবে এটি বিক্রি হয়। চীনের সর্বত্রই এখন এই জি রান নিউ রো পাওয়া যায়। এর স্বাদ ও গন্ধ আমাকে লোভাতুর করে তোলে।
উপকরণ: বিফ ফিলে স্টেক ৪০০ গ্রাম, পেঁয়াজ পাতা ৫টি, বুড়ো আঙুলের সমান ১ টুকরা আদা ভালো করে কুচি করা, রসুনের ১টি বড় কোয়া ভালো করে কুচি করা, মাঝারি আকারের মরিচ ৩টি, জিরা ২১/২ চা চামচ, চিলি ফ্লেক্স ৩ চা চামচ, সিসেমি অয়েল ১ চা চামচ, বাদাম তেল অথবা ভেজিটেবল অয়েল ৪০০ মিলিলিটার, লবণ পরিমাণমতো।
মেরিনেট করার জন্য: কর্নফ্লাওয়ার ১ টেবিল চামচ, লবণ পরিমাণমতো, লাইট সয়া সস ১ টেবিল চামচ, ডার্ক সয়া সস ১ টেবিল চামচ, রাইস ওয়াইন ভিনেগার ১ টেবিল চামচ (সাধারণ ভিনেগারেও চলবে)।
প্রণালি: পেঁয়াজ পাতা, আদা ও রসুন ভালোভাবে কুচি করে এক পাশে রাখুন। মরিচ থেকে বোঁটা ও বীজ ফেলে দিন। তারপর ভালো করে কুচি করে নিন। পাতলা করে গরুর মাংসের স্লাইস করে নিন। মাপ হবে ৪ সেমি বাই ৩ সেমি। এতে করে মাংস ভালোভাবে সেদ্ধ ও নরম হবে। আমি ফিলে স্টেক ব্যবহার করেছি কিন্তু অন্যান্য কাটও চলবে। মাংসের কাট তেমন প্রভাব ফেলে না। অধিক তাপে তেল গরম করে নিন, তারপর গরুর মাংস দিয়ে নাড়ুন। জুসি হওয়া পর্যন্ত কষিয়ে নিন, হয়ে গেলে তেল আলাদা করে মাংস এক পাশে রাখুন। ৩ টেবিল চামচ সিসেমি অয়েল নিন এবং অধিক তাপে গরম করে তাতে আদা, রসুন, মরিচ, চিলি ফ্লেক্স ও জিরা মিশিয়ে নিন এবং অল্প অল্প নাড়ুন। মাংস যোগ করুন এবং তার উপর লবণ ছিটিয়ে মাঝেমধ্যে নেড়ে দিন। তারপর কুচি করে কাটা পেঁয়াজ পাতা ছড়িয়ে দিন। ভালোভাবে মিশিয়ে ভুনা করুন ঝরঝরে হয়ে আসা পর্যন্ত। এরপর সিসেমি অয়েল ছড়িয়ে পরিবেশন করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top