skip to Main Content

বহুরূপী I তেল তল্লাশি

রান্নায় চাই তেল। ভোজ্যতেল হয়ে থাকে বিভিন্ন ধরনের। বর্তমানে সয়াবিন, সরিষা, সানফ্লাওয়ার, রাইস ব্র্যান, জলপাই ইত্যাদি তেল ব্যবহৃত হয় রান্নায়। দক্ষিণ ভারতে একসময় রান্নায় নারকেল তেল বেশি ব্যবহৃত হতো। এসব তেলের আছে ভালো ও মন্দ দিক। সবার স্বাস্থ্যের জন্য সব তেল উপযোগী না-ও হতে পারে। তাই তেল খাওয়ার ক্ষেত্রে বাছবিচার জরুরি।
বাংলাদেশি রান্নায় সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় সয়াবিন তেল। এতে স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে ৩৫ শতাংশের নিচে। তা ছাড়া আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট ৫০ শতাংশের ওপরে। সয়াবিন তেলের স্মোক পয়েন্টও বেশি; প্রায় ২৫৬ ডিগ্রি। এ তেলে ভিটামিন বি ছাড়াও মেলে থায়ামিন, নিয়াসিন, ফলিক অ্যাসিড ও রিবোফ্লাবিন। হার্ট ও লিভারের রোগীদের জন্য এ তেল ভালো। সয়াবিন তেলে ফ্যাটের পরিমাণ কম। ভিটামিন ই ও লেসিথিন জাতীয় অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকায় এ তেল খেলে বুড়িয়ে যাওয়া প্রতিরোধ হয়। তা ছাড়া রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ে। হাড় ও দাঁতের জন্যও উপকারী। স্তন ও প্রস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি কমে। তবে এ তেলের কিছু মন্দ দিক রয়েছে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, সয়াবিন তেল স্থূলতা, ডায়াবেটিস, স্নায়ুজনিত রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
শহরে খুব একটা প্রচলন না থাকলেও গ্রামবাংলায় সরিষার তেলে রান্নার চল এখনো চোখে পড়ে। এতে মনো-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে প্রায় ৬০ শতাংশ। সরিষার তেল মন্দ কোলেস্টেরল কমায়। পেটের সমস্যা দূর করে হজমশক্তি বাড়ায়। লিভারের উন্নতিও সাধন করে। রক্তে চর্বির পরিমাণ কমায়। সরিষার তেলে ক্যানসারবিরোধী বৈশিষ্ট্য আছে। এ তেল খেলে কলোরেক্টাল ও গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ক্যানসারের ঝুঁকি কমে। তবে সরিষার তেলও শতভাগ নিরাপদ নয়। এতে ইউরিক অ্যাসিড বেশি থাকে। অনেক ক্ষেত্রে লাং ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। হৃদপিণ্ডেও কিছু ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে। অনেক সময় গর্ভবতীদের সরিষার তেল এড়িয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
প্রচুর পলি-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটসমৃদ্ধ সূর্যমুখী তেল। এটিকে অনেকে রান্নার কাজে ব্যবহার করে থাকেন। এতে ওমেগা-৩ ও ওমেগা-৬ আছে, যা রক্তের মন্দ কোলেস্টেরলের পাশাপাশি হৃদ্রোগ, অ্যাজমা ও ক্যানসারের ঝুঁকিও কমায়। প্রচুর পরিমাণে খাদ্যশক্তি থাকায় সূর্যমুখী তেল নিয়মিত খেলে শারীরিক দুর্বলতা কাটে। মানসিক চাপও কমতে পারে। কাজটি করে সূর্যমুখী তেলে থাকা ম্যাগনেশিয়াম। যারা ওজন কমাতে চান, তারা রান্নায় বেছে নিতে পারেন এই তেল। তবে সূর্যমুখী তেলেরও কিছু ক্ষতিকর দিক রয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত ভাজাপোড়া জাতীয় খাবারে এই তেল এলডিহাইড উপাদান তৈরি করে, যা ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়।
নানান গুণে গুণান্বিত হওয়ায় অনেকেই রান্নায় ব্যবহার করেন জলপাই তেল। অন্যান্য তেলের তুলনায় এর দাম বেশি। তেলটি শর্করা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে বলে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বেশ উপযোগী। এতে ‘অলেরোপিয়ান’ নামক প্রাকৃতিক উপাদান আছে, যা স্তন ক্যানসার রোধে ভূমিকা রাখতে সক্ষম। জলপাই তেল খেলে শরীরে অস্টিওক্যালসিন প্রবেশ করে। এই উপাদান হাড় শক্ত করে। ওজন কমানো ছাড়াও বিষণ্নতা দূর করতে পারে জলপাই তেল। এ তেলের ক্ষতিকর কিছু দিক রয়েছে। খালি পেটে এটি খেতে নিষেধ করা হয়। অনেক সময় জলপাই তেল রক্তচাপ কমিয়ে দিতে পারে। তা ছাড়া ভাজাপোড়া জাতীয় খাবারে এই তেল ব্যবহার না করাই উত্তম।
ব্লাডপ্রেশার কম থাকলে রাইস ব্র্যান তেল ব্যবহার করাও ঠিক হবে না। তবে অনেকেই এ তেল রান্নার কাজে ব্যবহার করেন। রাইস ব্র্যান তেল অবশ্য রক্তের কোলেস্টেরল কমায়। তা ছাড়া টাইপ টু ডায়াবেটিসে ব্লাড সুগারের মাত্রাও কমায়। তবে রান্নায় যেকোনো তেল ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিজের শরীর-স্বাস্থ্য বুঝে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই ভালো।

 ফুড ডেস্ক
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top