skip to Main Content

ফিচার I আইস গ্লোব

স্পা প্রাণিত ফিউচারিস্টিক লুকিং বিউটি টুল। রয়েছে তারকাদেরও পছন্দের তালিকায়। অ্যাট হোম ফেশিয়ালে এর সংযোজন পাল্টে দিতে পারে নিয়মিত রূপচর্চার অভিজ্ঞতা

মূলত একধরনের কুলিং ওয়ান্ড, যা তৈরি করা হয় কাচ অথবা মেটাল ব্যবহার করে। গ্লোবের মাঝে থাকে তরল। আইস গ্লোবের মূল এই তরলই। নন-টক্সিক অ্যান্টিফ্রিজ লিকুইড ব্যবহার করা হয় আইস গ্লোবে। যা ব্যবহারের আগে রেফ্রিজারেটরে রেখে ঠান্ডা করে নেওয়ার নিয়ম।
ইদানীং প্রসাধনের পাশাপাশি বিউটি টুলস ব্যবহারের মাধ্যমে ত্বকের যত্ন নেওয়ার অভ্যাস মানুষের মাঝে দারুণ জনপ্রিয়। এরই ধারাবাহিকতায় অ্যাট হোম টুল হিসেবে আইস গ্লোবের ব্যবহার বেড়েছে সৌন্দর্যসচেতনদের মাঝে। বরফ দিয়ে ত্বকের যত্ন নেওয়ায় মানুষ অনেক আগে থেকেই অভ্যস্ত। একসময় স্টিলে তৈরি চামচ বরফে স্পর্শ করিয়ে তা দিয়েও চলেছে রূপের চর্চা। আইস গ্লোব এই ধারণার একটি আধুনিক সমাধান। একই সঙ্গে এর কার্যকারিতা বেশি।
আইস গ্লোব ব্যবহার করা হয় মুখ ও গলার অংশে। এই অংশের রক্ত চলাচল বাড়িয়ে তোলা এবং অক্সিজেনের আসা যাওয়া বৃদ্ধি করা আইস গ্লোবের প্রধান কাজ। ত্বক থেকে টক্সিন এবং কার্বন ডাই-অক্সাইডকে সরিয়ে দেয় আইস গ্লোব।
আইস গ্লোবের স্পর্শে ত্বকের প্রদাহ দূর হয়, পাফিনেস কমে আসে। সাইনাসের সমস্যা কমিয়ে আনার ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখে এই টুল। ত্বকের রেডনেস দূর করে, পোরসের সাইজ কমিয়ে আনে। আইস গ্লোব ব্যবহারে রক্ত চলাচলের গতি বাড়ে, যা ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে তোলে। ত্বকের রক্তনালি সংকুচিত করে ত্বক টানটান রাখতে সাহায্য করে। ফেস টোনড রাখতে সহায়তা করে বলে চামড়া শিথিল হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয় না।
তাপপ্রবাহ ত্বকের রক্তনালি প্রসারিত করে। ত্বকে ঘামের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। তৈরি হয় অ্যাকনে। ত্বকে শিথিলতা নষ্ট করে। আইস গ্লোব ব্যবহারের মাধ্যমে মুখের মাংসপেশিতে মৃদু ম্যাসাজের মাধ্যমে শ্রান্তি দূর করা যায়। ত্বকের ব্যায়ামও হয়। নার্ভগুলো সচল হয়ে ওঠে। ত্বক টানটান হয়। অনাকাঙ্ক্ষিত ভাঁজ দূর হয়। দূর হয় মলিনতা। প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা ফিরে আসে। কোমলতা বজায় থাকে। আর ময়শ্চারাইজড থাকে বলে ত্বকে বয়সের ভাঁজ তৈরির প্রক্রিয়া মন্থর হয়।
ত্বকের যত্নে শীতল বরফের ব্যবহার বেশ পুরোনো। উদাহরণ হিসেবে রয়েছে স্কিন আইসিং, ফ্রোজেন কিউ কাম্বার, রাইস ওয়াটার, ফ্রোজেন বিউটি ব্লেন্ডারের মতো টেকনিকগুলো। কসমেটিকস সার্জারিতেও জনপ্রিয় ফ্যাট ফ্রিজিং। আইস গ্লোব জনপ্রিয়তা পাওয়ার পেছনে ঠান্ডা ত্বক চর্যার প্রতি আগ্রহ বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। বরফের মাধ্যমে পরিচর্যার কাজকে আরও সহজ করে তুলেছে। এটি ব্যবহারে আলাদা করে কোনো প্রকার প্রস্তুতির দরকার হয় না। শুধু তরলে ভরপুর গ্লোব দুটিকে রেফ্রিজারেটরে রেখে দিলেই হয়। ৩০ থেকে ৪০ মিনিটেই ঠান্ডা হয়ে যায় তরলটি। এরপরে হ্যান্ডি এই টুল ব্যবহার করা যায় নিজের প্রয়োজন অনুসারে।
ত্বকে যে শুধু ধুলোবালি, রোদ নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, তা কিন্তু নয়। মানসিক অবসাদেও ত্বকের স্বাস্থ্যে খারাপ প্রভাব পড়ে। দেখা যায় অনাকাঙ্ক্ষিত ভাঁজ। আইস গ্লোব ত্বকের মাংসপেশি এবং স্নায়ুতন্ত্রগুলোকে স্বস্তি দেয়। মাথাব্যথা, সাইনাস, মাসল টেনশনের তীব্রতা কমিয়ে আনতে সাহায্য করে।
সকালে ত্বককে প্রস্তুত করার জন্য সাহায্য নেওয়া যেতে পারে আইস গ্লোবের। এতে সকাল থেকেই ত্বক সক্রিয় থাকবে। তেমনি মেকআপে সেজে ওঠার জন্যও প্রস্তুত হয়ে উঠবে। দিন শেষেও এর ব্যবহার থেরাপির চেয়ে কোনো অংশে কম নয়।
আইস গ্লোবের সাহায্যে ফেস স্কিন আপ লিফটিং ম্যাসাজ নেওয়া যেতে পারে ঘরে বসেই। এখন প্রসাধনের প্রভাব থেকে বেরিয়ে ত্বকের যত্নের বিষয়ে সচেতনতা বাড়ছে সৌন্দর্যপ্রেমীদের মাঝে। আইস গ্লোব এই আধুনিকায়নেরই একটি সৃষ্টি। বাড়তি প্রসাধনে আগ্রহ এখন কম, বরং ত্বকের ভেতর থেকে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল করে তোলার ক্ষেত্রে জোর দেওয়া হয় বেশি। ফেস ইয়োগা, ফেস ম্যাসাজ তাই দিন দিন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।
ত্বকে আইস গ্লোব ব্যবহারের ক্ষেত্রে ধৈর্যশীল হতে হবে। ধীরে ধীরে মুখের সম্পূর্ণ জায়গাজুড়ে ব্যবহার করতে হবে এটি। তবে সাবধানী হাতে। বেশি চাপাচাপি করে নয়, হালকাভাবে সম্পূর্ণ করতে হবে ম্যাসাজ।
আইস গ্লোব নিত্যদিন ব্যবহার করা যায়। এটির ব্যবহারের মাধ্যমে ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। মুখ পরিষ্কারের পর যত্নের প্রথম ধাপ হিসেবে আইস গ্লোবের ম্যাসাজ নেওয়া যেতে পারে। তা ছাড়া ত্বকে ক্রিম মাখার জন্যও ব্যবহৃত হতে পারে। প্রতিদিনের ত্বকে ৫ থেকে ১০ মিনিট আইস গ্লোবের ব্যবহার ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নতিতে যথেষ্ট। ত্বকের যত্নের জন্য তো বটেই, ডাবল চিন সমস্যা সারাইয়েও সাহায্য করে আইস গ্লোব। চিন থেকে কান পর্যন্ত এর আপ ওয়ার্ডস ম্যাসাজ ডাবল চিন থেকে মুক্তি দিতে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
দিনের যেকোনো সময়েই আইস গ্লোব ব্যবহার করা সম্ভব। তবে এ ক্ষেত্রে মোক্ষম দুটি সময় রয়েছে। দিনের শুরুতে এবং শেষে। দিনের শুরুতে আইস গ্লোবের ব্যবহারে প্রসাধন ধরে রাখার জন্য তৈরি হবে ত্বক। আর সারা দিনের ক্লান্তি শেষে ঘরে ফিরে আইস গ্লোবের ম্যাসাজ ত্বককে করে তুলবে প্রশান্ত।

 সারাহ্ দীনা
মডেল: প্রিয়া
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: জিয়া উদ্দীন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top