skip to Main Content

সেলুলয়েড I অরোরা

চিত্রনাট্য ও পরিচালনা: ক্রিস্টি পুইয়ো
চিত্রগ্রহণ: ভায়োরেল সের্গোভিচি
সম্পাদনা: ইয়োন ইয়োয়াসিম স্ট্রো
অভিনয়: ক্রিস্টি পুইয়ো, ক্লারা ভডা, ভ্যালেরিয়া সেচিয়ু
ব্যাপ্তি: ১৮১ মিনিট
ভাষা: রোমানিয়ান
দেশ: রোমানিয়া
মুক্তি: ১৪ মে ২০১০

অনেক স্বপ্ন নিয়ে সাজিয়ে তোলা সংসার ভেঙে যাওয়ার যন্ত্রণা সহ্য করতে পারেনি মধ্যবয়সী লোকটা। ফুটফুটে দুটি কন্যার স্মৃতি তাকে তাড়িত করে বারবার। কাজে মন নেই। উধাও রাতের ঘুম। বারবার ছুটে যায় শ্বশুরবাড়ির কাছে, যেখানে তার কন্যাদের নিয়ে স্ত্রীর বসবাস। নিজেকে রাখে আড়াল। ভোরবেলা দূর থেকে দেখে কন্যাদের স্কুলে যাওয়া। কী করবে মানসিক যন্ত্রণায় বিধ্বস্ত এই মানুষ? ভয়ানক এক পরিকল্পনা উঁকি দিতে থাকে তার মনে। আর ধীরে ধীরে সে সেটি বাস্তবায়নের দিকেই দেয় হাঁটা। নিজেকে করে প্রস্তুত—খুনি হওয়ার। প্রথমে খুন করে সেই উকিলকে, যে তাদের বিবাহবিচ্ছেদে তার স্ত্রীর পক্ষের আইনজীবী ছিল। অবশ্য একটি আবাসিক হোটেলের বেজমেন্টে গুলি করে প্রথম খুনটি করার সময় ঘটনাচক্রে ওই আইনজীবীর সঙ্গে থাকা অজ্ঞাত এক নারীকেও মেরে ফেলে সে। আর সবশেষে খুন করে নিজের শ্বশুর-শাশুড়িকে। তারপর পুলিশের কাছে গিয়ে নিজেই ধরা দেয়।
‘রোমানিয়ান নিউ ওয়েভ’ চলচ্চিত্র আন্দোলনের অন্যতম প্রবর্তক এবং বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবের সর্বোচ্চ পদক ‘গোল্ডেন বিয়ার’জয়ী চলচ্চিত্রকার ক্রিস্টি পুইয়োর ‘অরোরা’ চলচ্চিত্রের প্লট এটুকুই। বিবাহবিচ্ছেদের প্রতিক্রিয়ায় কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়া কেন্দ্রীয় চরিত্রটির জীবনের মাত্র কয়েক ঘণ্টার। আর সেই ছোট্ট প্লটকে বেলা তার, নুরি বিলগে জিলান, আকি কাউরিসমাকি প্রমুখ প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকারের মতো করে প্রলম্বিত ভঙ্গিমায় দীর্ঘ ৩ ঘণ্টার বেশি সময়ব্যাপ্তিতে দেখিয়েছেন পুইয়ো। তাই চলচ্চিত্রটির পরতে পরতে ছড়িয়ে রয়েছে একের পর এক সুদীর্ঘ শর্ট, দৃষ্টিনন্দন ল্যান্ডস্কেপ, উৎপীড়নবোধ-জাগানিয়া মুহূর্ত। তাতে চলচ্চিত্রকার হিসেবে পুইয়োর নিজস্ব চলচ্চিত্র-ভাষার রয়েছে গুরুত্ববহ সাক্ষ্য।
‘অরোরা’য় আরও বেশ কিছু খেলাও খেলেছেন রোমানিয়ান এই চলচ্চিত্রকার। যার সঙ্গে বিচ্ছেদের কারণে কেন্দ্রীয় চরিত্রটির এমন জীবনবিনাশী পদচারণ, সেই স্ত্রী চরিত্রটিকে একবারও দেখাননি তিনি। তা ছাড়া, কেন্দ্রীয় চরিত্রটি যত কাণ্ড ঘটাতে থাকে, খুনি হয়ে ওঠার পথে তার যত প্রস্তুতি, সেগুলোকে সরাসরি না দেখিয়ে, ওর কাণ্ড ঘটানোর আগমুহূর্তেই ‘কাট’ করেছেন শট। সংসার ভাঙার কারণ কী, তা-ও রেখেছেন ঊহ্য। এভাবেই দর্শকের মনে কল্পনার বিস্তার ঘটানোর সুযোগ রেখেছেন পুইয়ো। অন্যদিকে, তিনি শুধু ‘অরোরা’ নির্মাণই করেননি, এর কেন্দ্রীয় চরিত্রেও করেছেন দুর্দান্ত অভিনয়। এ প্রসঙ্গে অবশ্য জানা যায়, অভিনয়ের ইচ্ছে তার ছিল না। কেন্দ্রীয় চরিত্রে মানানসই—দীর্ঘ পাঁচ মাস এমন অভিনেতার সন্ধান চালিয়েও না পাওয়ায় অবশেষে নিজেই দাঁড়িয়ে গেছেন ক্যামেরার সামনে। আর তা পরিণামে সুফলই বনে এনেছে, সে কথা বলা বাহুল্য। ‘অরোরা’ হয়ে আছে রোমানিয়ান নিউ ওয়েভের এক দুর্দান্ত উদাহরণ।

 আরিফুল ইসলাম

কুইজ
১। কোন চলচ্চিত্র উৎসবের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার পেয়েছেন ক্রিস্টি পুইয়ো?
[ক] বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসব
[খ] ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসব
[গ] কান চলচ্চিত্র উৎসব
[ঘ] লোকার্নো চলচ্চিত্র উৎসব

২। তিনি কোন চলচ্চিত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি?
[ক] ফ্রেঞ্চ নিউ ওয়েভ
[খ] চেক নিউ ওয়েভ
[গ] ইরানিয়ান নিউ ওয়েভ
[ঘ] রোমানিয়ান নিউ ওয়েভ

৩। ‘অরোরা’র কেন্দ্রীয় চরিত্র অভিনয় করেছেন কে?
[ক] পরিচালক নিজে
[খ] সম্পাদক নিজে
[গ] সিনেমাটোগ্রাফার নিজে
[ঘ] পেশাদার কোনো অভিনেতা

গত পর্বের বিজয়ী

১. মুক্তা আক্তার, বিজয়নগর, ঢাকা
২.নাজমুল হুদা, বিএল কলেজ, খুলনা
৩. ফারজানা ইয়াসমিন, ধানমন্ডি, ঢাকা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top