skip to Main Content

মনোজাল I মুক্তা মানস

মূল্যবান রত্ন। শুধু সৌন্দর্য বাড়াতেই নয়, ব্যবহারকারীর মনোজগতেও রাখে ইতিবাচক প্রভাব

প্রাচীন মিসরে এক জেলে একদিন মাছ ধরতে গিয়ে পড়লেন বিড়ম্বনায়। তার জালে কোনো মাছ নেই; বরং ভারী জালে আটকে আছে প্রচুর ঝিনুক। প্রথম দিকে হতাশ হলেও কৌতূহলবশত ঝিনুকগুলো খুলতে শুরু করলেন তিনি। প্রতিটি ঝিনুকে জ্বলজ্বল করছে মুক্তা! সবাই ভাবল, মুক্তা বিক্রির অর্থ দিয়েই জেলে এবার তার কপাল ফেরাবেন। কিন্তু মুক্তাগুলোর অসাধারণ সৌন্দর্য জেলেকে এতই মুগ্ধ করল, বিক্রির কথা ভাবতে পারলেন না। ভালোবাসার উপহার হিসেবে তিনি বরং বউকে বানিয়ে দিলেন মনোরম এক মুক্তার মালা। সেই মালা পরে বউ যখন সামনে এলেন, তার স্নিগ্ধ রূপ দেখে প্রশান্তি আর তৃপ্তিতে ভরে গেল জেলের মন। সেদিন থেকে তাদের ভালোবাসা বেড়ে গেল। সংসারে ভর করল অন্য রকম এক প্রশান্তি। ক্রমে আর্থিক ও মানসিক প্রশান্তিতে কাটতে লাগল তার জীবন। এ সবকিছুই হলো মুক্তার কল্যাণে। অন্তত মিসরের এই প্রাচীন উপকথায় সারকথা হিসেবে মুক্তার মহিমাই বোঝানো হয়েছে।
প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ বিশ্বাস করতেন, মুক্তা মানসিক প্রশান্তি বয়ে আনতে পারে। মুক্তা পরার ফলে চারপাশে যে আধ্যাত্মিক আবেশ সৃষ্টি হয়, তাতে কেটে যায় যেকোনো সংকট। সেই বিশ্বাসের খুব একটা পরিবর্তন অবশ্য হয়নি। এখনো অনেকেই বিশ্বাস করেন, মুক্তা ভাগ্য পরিবর্তনে সহায়ক; এর ব্যবহারে মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত হয়।
আমাদের পূর্বপুরুষেরা মুক্তার বিশাল উপকারিতা সম্পর্কে জানতেন। তাই প্রায় সব ভাষার পুঁথিপত্রেই এর গুণের কথা নানাভাবে বর্ণিত আছে। কিন্তু বর্তমান বিজ্ঞান কী বলে? জোতিষশাস্ত্রকে যদি বিজ্ঞান ধরা হয়, তাহলে মজার ব্যাপার হচ্ছে, মিসরের সেই জেলের মতো বিজ্ঞানও বিশ্বাস করে, মুক্তাবিষয়ক প্রাচীন জ্ঞান ব্যবহার এবং তা জীবনে প্রয়োগ করে আসলেই মানসিক ও শারীরিক স্থিতি আনা সম্ভব। বিশেষ করে বর্তমান পৃথিবীতে প্রতিনিয়ত যে মানসিক চাপে আমরা জর্জরিত থাকি, জোতিষশাস্ত্রের মতে মুক্তার ব্যবহারে তা অনেকটাই দূর করা সম্ভব। সে কারণে এর আরেক নাম প্রশান্তিকারী রত্ন। অন্যান্য রত্নপাথরের মতো খনিজ থেকে উৎপন্ন না হয়ে বরং একটি জীবিত ঝিনুকের অভ্যন্তরে অনন্য জৈব গঠনে তৈরি হয় বলে মুক্তাকে দীর্ঘকাল ধরে সবচেয়ে মূল্যবান রত্ন হিসেবে বিবেচনা করা হতো। বিশ্বাস করা হতো, এর মধ্যে যেসব গুণ বিদ্যমান, তা অন্যান্য পাথর এবং স্ফটিকগুলোতে থাকে না। তাই সম্পদ ও ক্ষমতার প্রতীক হিসেবেই শুধু নয়, মুক্তাকে রীতিমতো দেবতাজ্ঞান করে পূজা করা হতো।
প্রশ্ন হচ্ছে, এ কি পুরোটাই অন্ধবিশ্বাস, নাকি আমাদের আধুনিক জীবনে মুক্তা আসলেই স্ট্রেস রিলিফ হিসেবে কাজ করতে পারে? হীরা, জহরত, পান্না প্রভৃতি নানা মূল্যবান পাথরের ভিড়েও মুক্তার জনপ্রিয়তা কমেনি। বিশেষ করে অলংকার হিসেবে এর ব্যবহার এখনো আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবে গণ্য করা হয়। যিনি মুক্তা পরতে ভালোবাসেন, তিনি স্নিগ্ধ, বিনয়ী এবং একই সঙ্গে মানসিকভাবে শক্তিশালী, এমনটা ভাবা হয়। এই একবিংশ শতাব্দীতেও বলা হচ্ছে, মুক্তা অস্থিরতা, উদ্বেগ প্রশমিত করতে এবং রাগ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। জীবনে আত্মবিশ্বাস, আত্মসম্মান, স্ব-মূল্য ও আনন্দ ফিরিয়ে আনে। রীতিমতো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বলা কথা। আসলে, এর গুণাবলি বিষয়ে এমন সব কথা বলা হয়েছে, তাতে যিনি এ রত্ন পছন্দ করেন না, তারও মনে হবে, আজই একটা মুক্তার অলংকার কিনে পরে ফেলি। যেমন:
 মুক্তা ব্যবহারকারীর মন শান্ত হয়, চোখের দৃষ্টি প্রখর হয়, ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়, পারিবারিক জীবনে শান্তি আসে।
 দুশ্চিন্তাগ্রস্ত এবং সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগা মানুষ মুক্তা ব্যবহার করলে নিশ্চিত উপকার পাবেন।
 যাদের মাথা খুব গরম থাকে, হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে পড়েন, তাদের জন্য মুক্তা ব্যবহার জরুরি।
 ঘুমের মাঝে অশান্তি, অনিদ্রা থেকে মুক্তিসহ গলার সমস্যা, চোখের সমস্যা এবং চন্দ্রের খারাপ প্রভাব থেকে মুক্ত রেখে ব্যবহারকারীকে সাহায্য করে মুক্তা।
 মুক্তা ব্যবহারে সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়, বিশেষ করে নারীর ত্বকের লাবণ্য বাড়ে।
 মুক্তা ব্যবহারে সম্মান, শ্রদ্ধা ও সম্পদ বৃদ্ধি পায়। স্মৃতিশক্তি এবং মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধিতেও কাজ করে এ পাথর।
 এ-ও বিশ্বাস করা হয়, মুক্তা ব্যবহারে সৌভাগ্যের সূচনা ঘটে। প্রিয়জনের মাঝে পারস্পরিক আস্থা, মমতা, দায়িত্ববোধ ও ভালোবাসা বৃদ্ধিতে এটি কাজ করে।
বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর। সবার জীবনে হয়তো ঘটে না, কিন্তু যিনি সত্যিকারভাবেই বিশ্বাস করেন, পাথরটি তার জীবন আনন্দময় করে তুলবে, সেটি ঘটে বলেই তো কথাগুলো প্রচার পায়। একবার ভেবে দেখুন, এসব গুণের কথা জেনে মুক্তা ব্যবহার করা ছাড়া উপায় থাকে কারও? ঠিক যেমনটি আমাদের প্রাচীনরা করেছিলেন, মুক্তাগুলো তাদের শারীরিক সৌন্দর্যের বাইরে প্রশংসা এবং শ্রদ্ধার নিশ্চয়তা দিয়েছিল বলেই তারাও একে বসিয়েছিল সম্মানের আসনে। আসলে, পুরো ব্যাপারটাই বিশ্বাস। শুধু চাকচিক্য নয়, মুক্তা থেকে লালিত্য এবং শক্তির একটি বর্ম তৈরি হয়, সেটি বিশ্বাস করে আপনি নিজেও যদি পরতে পারেন, তাহলে এর এই গুণগুলো আপনার মনমেজাজেও পরিবর্তন এনে দেবে। হয়তো সেই জেলের মতো ভাগ্য ফিরে যাবে আপনারও।
অন্যদিকে, আয়ুর্বেদমতে মুক্তাভস্ম মহা উপকারী ওষুধ। আরও আছে—
 বলা হয়, যারা অকারণ দুশ্চিন্তা করেন অথবা আকাশকুসুম রচনা করা যাদের নেশা, তারা মুক্তা ধারণ করে সুফল পেতে পারেন। যক্ষ্মারোগেও মুক্তা যথেষ্ট উপকারী।
 হৃদ্‌রোগ, বৃদ্ধদের শক্তিহীনতা, ক্রোধ প্রবণতা দূর করার জন্য দুধের সঙ্গে মুক্তার গুঁড়া মহৌষধ হিসেবে গণ্য।
 মুক্তা পাথর ধারণে আকর্ষণীয় করে তোলে এবং আধ্যাত্মিকতার উন্নয়ন ঘটায়।
 দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে উৎসাহিত করে তোলে।
 একজনের ব্যবহৃত মুক্তা অন্য কারও ব্যবহার করা উচিত নয়। কারণ, ব্যবহারকারীর শরীরের ক্ষতিকর কিছু নতুন ব্যক্তির শরীরে প্রবেশ করাতে উদ্বুদ্ধ করে থাকে।
 মুক্তা পাথর গর্ভপাত থেকে সুরক্ষা দেয়।
 যৌনরোগে মুক্তা উপকারী।

 রত্না রহিমা
মডেল: মাহেলেকা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: কৌশিক ইকবাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top