skip to Main Content

দেহযতন I নো ইকুইপমেন্ট

জিমে বা বাসায় ইকুইপমেন্ট ব্যবহারের মাধ্যমে যারা ওয়ার্কআউট করেন, ঈদের সময় তাদের অনেকে পড়েন বিড়ম্বনায়। অনেক জিম সপ্তাহব্যাপী বন্ধ থাকে; আবার যাদের বাসায় ইকুইপমেন্ট আছে, তারা হয়তো ভিন্ন কোথাও যান ঈদের ছুটিতে। চিন্তা নেই; ইকুইপমেন্ট ছাড়াও এক্সারসাইজ করা সম্ভব

এমন অনেক ওয়ার্কআউট আছে, যেগুলো চাইলে আপনার অবস্থানস্থলে করতে পারেন। প্রয়োজন পড়বে না ইকুইপমেন্ট। রয়েছে বিকল্প বুদ্ধি! এমন কিছু ওয়ার্কআউট নিয়ে কথা বলেছেন সার্টিফাইড ফিটনেস কোচ সাদিয়া শীলা।
কোনো ইকুইপমেন্ট ছাড়াই শুধু শরীরের ওজন কাজে লাগিয়ে ইয়োগা ও স্ট্রেন্থ ট্রেনিং এক্সারসাইজ করা সম্ভব। বাড়িতে ওয়ার্কআউটের ধারণাটি বোরিং লাগলে আরেকবার ভাবা শ্রেয়! সঠিকভাবে শরীরের ওজন ব্যবহার করে ইয়োগা ও স্ট্রেন্থ ট্রেনিং করা হলে সময় ও অর্থ—দুটোরই সাশ্রয় হতে পারে। তাই জিমের অপ্রাপ্যতা কিংবা সময়ের স্বল্পতা—পরিস্থিতি এ ধরনের প্রতিকূলে থাকলে ঘরের নির্দিষ্ট স্থান খালি করে ঘাম ঝরানোর প্রস্তুতি নিন।
বিগিনার রুটিন
বিগিনারদের ক্ষেত্রে কিছু বডিওয়েট এক্সারসাইজ কাজ করবে ফুল বডি ওয়ার্কআউট হিসেবে। প্রতিটি এক্সারসাইজ দুটি সেট আকারে ১০ থেকে ১৫ বার পুনরাবৃত্তি করা চাই। প্রতিটি সেটের মাঝে ৩০ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট বিশ্রাম নেওয়া মঙ্গল। এ ক্ষেত্রে পুরো সেশন শেষ করতে সময় লাগবে ১৫ থেকে ২০ মিনিট।
ব্রিজ
শরীরের কোর এবং পোস্টেরিয়র চেইন (শরীরের পেছনের অংশ) দিয়ে ব্রিজের আকার নিন। ওয়ার্মআপ হিসেবে এই এক্সারসাইজ দুর্দান্ত।
 হাঁটু বাঁকিয়ে, পা মেঝেতে সমতল রেখে এবং বাহু পাশে প্রসারিত করে পিঠের ওপর ভর দেওয়া চাই।
 পায়ের ওপর ভর দিয়ে এবং কোর শক্ত রেখে, হিপ সম্পূর্ণরূপে প্রসারিত না হওয়া পর্যন্ত শরীর ফ্লোর থেকে ওপরে তুলুন।
 ধীরে ধীরে শুরুর অবস্থানে ফিরে আসুন এবং পুনরাবৃত্তি করুন।
চেয়ার স্কোয়াট
স্কোয়াট পা ও কোরকে শক্তিশালী করতে সহায়ক, যা রেগুলার মুভমেন্ট সহজতর করতে কাজে দেয়। প্রথম দিকে চেয়ার রেখে এর চর্চা শুরু করলে সঠিক নিয়মে এক্সারসাইজটি আয়ত্ত করতে সুবিধা হবে।
 বসে থাকা অবস্থায় কাঁধ যে উচ্চতায় থাকে, চেয়ার থেকে সেই উচ্চতায় দাঁড়ানো চাই; এ সময় পায়ের আঙুলগুলো সামান্য বাইরের দিকে বাঁকা করে রাখতে হবে।
 লোয়ার ব্যাক চেয়ার স্পর্শ না করা পর্যন্ত হাঁটু বাঁকিয়ে হিপের ওপর ভর করে থাকুন এবং একই সঙ্গে বাহুগুলোকে সামনে প্রসারিত করুন।
 পুশআপ করে আগের অবস্থায় দাঁড়ানো এবং পুনরাবৃত্তি করা চাই।
নি পুশআপ
এটি একটি বিগিনার স্টাইল পুশআপ, যা স্ট্যান্ডার্ড পুশআপ করার আগে স্ট্রেন্থ তৈরিতে সহায়ক।
 নি থেকে তুলনামুলক হাই প্ল্যাঙ্ক পজিশনে যাওয়া চাই।
 মাথা থেকে হাঁটু পর্যন্ত একটি সরলরেখা বজায় রেখে, কনুই বাঁকিয়ে মাটিতে নামিয়ে আনুন এবং কনুই ৪৫ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেল করে রাখুন।
 এভাবে পুশআপ শুরু করুন।
স্টেশনারি লাঞ্জ
এই দেহচর্চার মাধ্যমে কোয়াডস, হ্যামস্ট্রিং এবং গ্লুটসে প্রেশার ফেলা সম্ভব।
 ডান পা সামনে মাটিতে সমতল অবস্থায় রেখে বাম পায়ের আঙুলে ভর দিয়ে দাঁড়াতে হবে।
 ডান ঊরু মাটির সমান্তরালে আসা পর্যন্ত হাঁটু বাঁকা করে লাঞ্জ করা চাই।
 আগের অবস্থানে ফিরে আসার জন্য ডান পা দিয়ে ওপরে পুশ করুন। পছন্দমতো পুনরাবৃত্তি করে পা পরিবর্তন করা চাই।
প্ল্যাঙ্ক টু ডাউনওয়ার্ড ডগ
এক্সারসাইজটি শরীর ওপরের অংশ, বিশেষ করে কাঁধে প্রেশার ফেলতে সক্ষম।
 হাত কাঁধের নিচে এবং পা একসঙ্গে রেখে উঁচু প্ল্যাঙ্ক পজিশনে বসুন।
 কোর এনগেজ এবং হাত ও পা স্থির রেখে, হিপ ডাউনওয়ার্ড ডগ পজিশনে ওপরে তুলতে হবে। এ ক্ষেত্রে মাটির সঙ্গে শরীরের একটি ত্রিভুজাকৃতি তৈরি করতে হবে। ঘাড় নিউট্রাল এবং দৃষ্টি পায়ের দিকে রাখা চাই।
 এক সেকেন্ড এভাবে স্থির থেকে প্ল্যাঙ্কে ব্যাক আসুন এবং পুনরাবৃত্তি করুন।
এ ছাড়া বিগিনার লেভেল হিসেবে স্ট্রেইট লেগ ডাংকি কিক, বার্ড ডগ, ফোর-আর্ম প্ল্যাঙ্ক, সাইড-লাইং হিপ অ্যাবডাকশন, বাইসাইকেল ক্রাঞ্চ প্রভৃতি ওয়ার্কআউট করতে পারেন।
ইন্টারমিডিয়েট রুটিন
সাদিয়া শীলার মতে, বিগিনার লেভেল আয়ত্তে থাকলে ইন্টারমিডিয়েট রুটিন দিয়েই শুরু করা যেতে পারে। প্রতিটি এক্সারসাইজের ১০ থেকে ১৫টি পুনরাবৃত্তির ২টি সেট সম্পন্ন করা চাই; মাঝে ১ মিনিট বিশ্রাম নিয়ে পরবর্তী এক্সারসাইজ শুরু করা উত্তম। তবে এ ক্ষেত্রে প্রতিটি এক্সারসাইজ ১ মিনিট ধরে সম্পন্ন করে সার্কিটটি দুবার পুনরাবৃত্তি করা অপেক্ষাকৃত অধিক ফলদায়ী।
সিঙ্গেল-লেগ ব্রিজ
এর চর্চা স্বভাবতই নরমাল লেগ ব্রিজের চেয়ে একটু দুরূহ।
 লেগ ব্রিজ পজিশনে আসা চাই।
 পা বাঁকিয়ে, মাটি থেকে প্রথমে এক পা এবং এরপর নিতম্ব ওপরে তুলতে হবে; তারপর আবার পা নিচে নামিয়ে আনুন।
 অন্য পা দিয়ে একই মুভমেন্টে পুনরাবৃত্তি করুন।
 প্রতি পাশে একইসংখ্যক পুনরাবৃত্তি সম্পন্ন করতে হবে।
স্কোয়াট
চেয়ার সরিয়ে, নিয়মিত বডিওয়েট স্কোয়াটের ধরন আয়ত্ত করা চাই। চেয়ার ছাড়াই কল্পনা করতে হবে, আপনি একটি চেয়ারে বসছেন।
পুশআপ
স্ট্যান্ডার্ড পুশআপ আসলে নি পুশআপের চেয়ে আরও বেশি চ্যালেঞ্জিং। একটি উঁচু প্ল্যাঙ্ক পজিশন ধরে একইভাবে পুশআপ করতে হবে, যেন কনুই ৪৫ ডিগ্রি কোণে এবং হাঁটু সোজা থাকে।
ফরোয়ার্ড অ্যান্ড ব্যাকওয়ার্ড লাঞ্জ
এক জায়গায় দাঁড়িয়ে স্টেশনারি লাঞ্জ করার চেয়ে সামনে-পেছনে মুভ করে লাঞ্জ করলে স্ট্যাবিলিটি, মুভেবিলিটি ও ব্যালান্সে আরও উন্নতি দৃশ্যমান হয়ে উঠবে।
 পা একসঙ্গে রেখে ডান পা দিয়ে লাঞ্জিং করে পা সামনের দিকে বাড়ানো চাই।
 শুরুর অবস্থান থেকে সেন্টারে ফিরে আসার জন্য সামনের পা ঠেলে দিয়ে পেছনের দিকে লাঞ্জ করুন।
 ডান পায়ে ১০ থেকে ১৫ বার, তারপর বাম পায়ে একইসংখ্যক পুনরাবৃত্তি করা চাই।
পাইক পুশআপ
এই দেহচর্চার মাধ্যমে কাঁধের মাসলগুলোকে টার্গেট করা যাবে। এ ক্ষেত্রে সমস্ত মুভমেন্ট বাহুতে ঘটবে এবং শরীরের বাকি অংশ থাকবে স্থির। অনুশীলনের জন্য পাইক পজিশনে গিয়ে কনুই বাঁকিয়ে পাশের দিকে বেরিয়ে আসতে দেওয়া চাই; মাথার ওপরের অংশ মাটির দিকে থাকুক।
ইন্টারমিডিয়েট লেভেল হিসেবে এ ছাড়া নিলিং স্কোয়াট, সুপারম্যান ট্রেনিং, প্ল্যাঙ্ক উইদ অলটারনেটিং লেগ লিফট, নিলিং সাইড প্ল্যাঙ্ক উইদ হিপ অ্যাবডাকশন, ডেড বাগ প্রভৃতি দেহচর্চা করা যেতে পারে।
অ্যাডভান্সড রুটিন
ইন্টারমিডিয়েট রুটিন অনুসরণ সহজ হয়ে গেলে অ্যাডভান্সড এক্সারসাইজ ট্রাই করা যেতে পারে। প্রতিটি ব্যায়ামের জন্য ১০ থেকে ১৫টি পুনরাবৃত্তিমূলক ২ সেট করে করা চাই এবং এক্সারসাইজগুলোর মাঝখানে ৩০ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট বিশ্রাম নেওয়া মঙ্গল। অথবা, প্রতিটি এক্সারসাইজের ১ সেট করে চর্চা শেষে ১ থেকে ২ মিনিট বিশ্রাম নিয়ে পুনরাবৃত্তি করা যেতে পারে।
সিঙ্গেল-লেগ ব্রিজ উইদ লেগ এক্সটেন্ডেড
পা তুলে সোজা প্রসারিত করে সিঙ্গেল-লেগ ব্রিজ চর্চা করলে তা আরও কঠিন হয়ে যায়। পুরো মুভমেন্টের সময় পা ফ্লেক্সিবল রাখা চাই। উভয় পায়ে একইসংখ্যক পুনরাবৃত্তি আবশ্যক।
ওভারহেড স্কোয়াট
বাহু মাথার ওপর প্রসারিত করে স্কোয়াট করলে শরীরের ওপরের অংশের মোবিলিটি এবং রেঞ্জ অব মোশন বাড়ার পাশাপাশি নিচের অংশেও স্কোয়াটের সুবিধা মিলবে। এর ফলে শরীরের কোর শক্তিশালী থাকবে। এক্সারসাইজটি করার জন্য, বাহু মাথার ওপরে প্রসারিত করে স্কোয়াট করা চাই।
ওয়ান-লেগড পুশআপ
এক পা তুলে পুশআপ করলে দুই বাহু এবং অন্য পায়ের ওপর আরও বেশি চাপ প্রয়োগ হবে, চ্যালেঞ্জ বাড়বে। এর চর্চার জন্য পুশআপ পজিশন নিয়ে মাটি থেকে একটি পা ওপরে তুলে নিতে হবে; তারপর করা চাই পুশআপ।
জাম্পিং লাঞ্জ
জাম্পিং এক্সারসাইজ, যা প্লাইমেট্রিকস নামে পরিচিত, যার জন্য অল্প সময়ের মধ্যে ম্যাক্সিমাম এফোর্ট দিতে হয়। রিকোয়ার্ড এনার্জির কারণে দ্রুত বার্ন ফিল করা যায়। লাঞ্জকে আরও চ্যালেঞ্জিং করে তোলে এই জাম্পিং।
এলিভেটেড পাইক পুশআপ
পা উঁচু করে করা এই দেহচর্চা পুশআপ সেকশনের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন। পা একটি বেঞ্চ কিংবা ধাপ সমপরিমাণ উঁচু পৃষ্ঠে রেখে পুশআপ করা চাই। পৃষ্ঠ যত উঁচু হবে, পুশআপও তত চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠবে।
এই দেহচর্চাগুলোর পাশপাশি অ্যাডভান্সড লেভেল হিসেবে নিলিং স্কোয়াট উইদ জাম্প, অ্যাডভান্সড বার্ড ডগ, ওয়ান-লেগ ফোরআর্ম প্ল্যাঙ্ক, হোল্ড সাইড প্ল্যাঙ্ক উইদ হিপ অ্যাবডাকশন, হোলো হোল্ড টু জ্যাকনাইফ প্রভৃতির অনুশীলন করা যেতে পারে।
আপনার ফিটনেস লেভেল যা-ই হোক, বডিওয়েট এক্সারসাইজ ঘরে বসে করা ওয়ার্কআউটকে চ্যালেঞ্জিং করে তুলবে। বিগিনার রুটিন দিয়ে শুরু করুন। মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই আপনি অ্যাডভান্সড রুটিন আয়ত্ত করার দিকে এগিয়ে যেতে থাকবেন।

 ফুয়াদ রূহানী খান
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top