skip to Main Content

ফিচার I পার্ল শেপড বাবল ফুড

খাদ্যসংস্কৃতির একটি আকর্ষণীয় ও উদ্ভাবনী প্রবণতা। এ ধরনের খাবারে ছোট, রঙিন, চিবানোর মতো বা ফেটে যাওয়া বুদ্‌বুদ আকারের উপাদান থাকে, যা খাবারের স্বাদ ও উপস্থাপনায় নতুন মাত্রা যোগ করে। বিস্তারিত ফুয়াদ রূহানী খানের লেখায়

পার্ল শেপড বাবল ফুডের মূল উৎস তাপিওকা পার্লস, যা মূলত তাপিওকা স্টার্চ থেকে তৈরি। তাপিওকা স্টার্চ ক্যাসাভা গাছের মূল থেকে পাওয়া যায় এবং এটি গ্লুটেন-মুক্ত হওয়ায় বিভিন্ন খাদ্য প্রস্তুতিতে ব্যবহৃত হয়। তাপিওকা পার্লস প্রথমে তাইওয়ানে বাবল টি বা বোবা তৈরিতে ব্যবহৃত হয়েছিল। গেল শতকের আশির দশকে সে দেশে এই পানীয় জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং ধীরে ধীরে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে পার্ল শেপড বাবল ফুড শুধু বাবল টি-তেই সীমাবদ্ধ নেই; বিভিন্ন ধরনের খাবারেও ব্যবহৃত হচ্ছে। যেমন স্ফেরিফিকেশন প্রযুক্তি ব্যবহার করে তরল উপাদানকে ছোট, চিবানোর মতো কিংবা ফেটে যাওয়া বুদ্‌বুদ আকারে রূপান্তর করা হচ্ছে। এই প্রযুক্তি প্রথমে চল্লিশের দশকে উদ্ভাবিত হয় এবং পরবর্তীকালে স্পেনের বিখ্যাত রন্ধনশিল্পী ফেরান আদ্রিয়ার রেস্তোরাঁ এল বুলিতে (বর্তমানে বিলুপ্ত) জনপ্রিয়তা পায়।

ধরন সন্ধান
বাবল টি
এটি জনপ্রিয় পানীয়; যা চা, দুধ, চিনি আর তাপিওকা পার্ল দিয়ে তৈরি। উদ্ভাবন তাইওয়ানে। বর্তমানে দুনিয়া ছড়ানো। বাবল টি পানীয়টি সাধারণত একটি বড় স্ট্র দিয়ে পান করা হয়, যার মাধ্যমে তাপিওকা পার্লস চিবানো যায়। বোবা পার্ল সাধারণত তাপিওকা স্টার্চ, পানি এবং কখনো কখনো ব্রাউন সুগারের মতো মিষ্টি উপাদান যোগে তৈরি করা হয়। প্রক্রিয়াটি জেলাটিনাইজেশন নামে পরিচিত। ছোট বোবা বা বাবল বলগুলো চিবানোর পক্ষে নরম হয়। এগুলো সাধারণত মিষ্টি ঠান্ডা চায়ে পরিবেশন করা হয়; তবে বিভিন্ন খাবার প্রস্তুতিতেও ব্যবহার করা যেতে পারে। এ ছাড়া পপিং বোবা রয়েছে, যা কামড় দিলে ফেটে যায়। বোবা টি সাধারণত মিষ্টি ও ক্রিমি হয়ে থাকে এবং পরিবেশনের আগে ঝাঁকানো হয় ফেনাযুক্ত টেক্সচার তৈরি করতে। একটি মোটা স্ট্র ব্যবহার করা হয় বলগুলো চুষে খাওয়ার জন্য, যা পান করার সময় চিবাতেও হয়। কফি শপ ও বিশেষ দোকানগুলোতে বোবা টি কিনতে পাবেন। চাইলে বাড়িতেও পানীয় আর অন্যান্য মিষ্টান্ন তৈরির জন্য প্যাকেজড বোবা বা বাবল পার্লস সংগ্রহ করে বানিয়ে নিতে পারেন। যেমন টুইরেল মিল্ক টি লিচি পপিং বাবল এবং ব্রাউন সুগার বাবলের মতো বোবা পণ্য তৈরি করতে পারেন। আপনি প্রস্তুত-পানযোগ্য বোবা টি ক্যান কিংবা বাবল টি কিটসও কিনতে পারেন। বাংলাদেশে এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে।

পপিং বোবা
এটি একধরনের বুদ্‌বুদযুক্ত নতুন খাবার, যা চিবানোর সময় ফেটে যায় এবং ভেতরে রস থাকে। এ ধরনের খাবার সাধারণত ফলের রস দিয়ে তৈরি হয় এবং বিভিন্ন ধরনের পানীয় ও মিষ্টান্নে এর ব্যবহার ঘটে।
স্ফেরিফাইড ফুডস
স্ফেরিফিকেশন প্রযুক্তি ব্যবহার করে তরল উপাদানকে ছোট, চিবানোর মতো কিংবা ফেটে যাওয়া বুদ্‌বুদ আকারে রূপান্তর করা হয়। এই প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের খাবারে নতুন স্বাদ ও উপস্থাপন যুক্ত হচ্ছে। যেমন বালসামিক ভিনেগার, লেবু, পমেগ্রানেট, ভ্যানিলা, কফি, কোকো ইত্যাদি তরল উপাদানকে স্ফেরিফাইড বুদ্‌বুদ আকারে তৈরি এবং স্যালাদ, ডেজার্ট, ককটেল ইত্যাদিতে ব্যবহার করা হচ্ছে।
ন্যাচারাল পার্লস
কিছু প্রাকৃতিক উপাদান যেমন ফিঙ্গার লাইমের ভেতরে ছোট, চিবানোর মতো বুদ্‌বুদ থাকে, যা লাইম ক্যাভিয়ার নামে পরিচিত। এ ধরনের প্রাকৃতিক পার্লস সিফুড, স্যালাদ, ডেজার্ট ইত্যাদিতে ব্যবহার করা হয়। এটি দেখতে চিকন লেবুর মতো; তবে ভেতরে থাকে ছোট খাস্তা ক্যাভিয়ার-সদৃশ লেবুর মতো রসসংবলিত পার্ল। এই খাবার নিঃসন্দেহে নতুন হলেও এতে আহামরি কোনো কৌশল অবলম্বন করতে হয় না। এর স্বাদ ও গঠন ওয়েস্টার থেকে শুরু করে স্ক্যালপ সেভিচের মতো যেকোনো খাবারে অসাধারণ সংযোজন। ফিঙ্গার লাইম সবুজ, বারগেন্ডি বা ম্লান কমলা রঙের হতে পারে, আর এর রসাল পার্ল গ্রিন, হালকা পিচ বা লাল রঙের হয়ে থাকে। ফিঙ্গার লাইমের ক্যাভিয়ার সংগ্রহ করতে লাইমটি মাঝখানে কেটে অর্ধেক করে তারপর চিপে নেওয়া চাই। ফিঙ্গার লাইম তাজা হলে ক্যাভিয়ার সহজে বেরিয়ে আসে। তবে এগুলো সহজলভ্য নয়; শুধুই বিশেষ দোকান বা অনলাইনে কিনতে পাওয়া যায়।
জনপ্রিয়তা ও প্রভাব
পার্ল শেপড বাবল ফুডের জনপ্রিয়তা বিশ্বব্যাপী বাড়ছে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এ ধরনের খাবারের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে এ খাবারের ছবি ও ভিডিও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে, যা এর জনপ্রিয়তা বাড়াতে রাখছে ভূমিকা।
এ ধরনের খাবার শুধু স্বাদে নয়, উপস্থাপনাতেও আকর্ষণীয়। বিভিন্ন রং ও আকারের বুদ্‌বুদযুক্ত ভাব খাবারের সৌন্দর্য বাড়ায় এবং খাদ্য গ্রহণের অভিজ্ঞতাকে আরও আনন্দদায়ক করে তোলে।
বাংলাদেশে ভবিষ্যৎ
আমাদের দেশেও পার্ল শেপড বাবল ফুডের জনপ্রিয়তা বাড়ছে; তবে একটু ধীরগতিতে। ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বাবল টি রেস্তোরাঁ ও ক্যাফে খোলা হয়েছে, যেখানে নানা ধরনের বাবল টি ও পার্ল শেপড বাবল ফুড পাওয়া যায়। এ ছাড়া কিছু স্থানীয় রন্ধনশিল্পী ও উদ্যোক্তা এ ধরনের খাবার তৈরি ও বিক্রি করছেন।
বাংলাদেশের খাদ্যসংস্কৃতিতে নতুনত্ব ও বৈচিত্র্য আনতে পার্ল শেপড বাবল ফুড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top