skip to Main Content

তনুরাগ I পরিপুষ্টতায় প্রাধান্য

র‌্যাঙ্কিংয়ে উচ্চপদস্থ। কিন্তু কাজের কতটা? নাকি ম্যাজিক পোশন বলে বিকানোর ব্যাপারটা পুরোই বাজারজাতকরণের অভিনব ফিকির

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের ত্বক শিথিল হতে শুরু করে প্রকৃতির নিয়মে। তবে এমন অবস্থা এড়িয়ে টান টান ভাব ধরে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে দুটি প্রোটিন—কোলাজেন ও ইলাস্টিন। কোলাজেন ত্বক রাখে দৃঢ় ও স্থিতিশীল; ইলাস্টিন ত্বক করে টান টান ও নমনীয়। বয়স বাড়লে শরীরে এই দুই প্রোটিনের উৎপাদন কমে আসে। ফলে ত্বক পাতলা হতে থাকে, টান টান ভাব হারায় এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে ঝুলে পড়ার প্রবণতা দেখা দেয়। তখনই মানুষ আশ্রয় নিতে শুরু করে বিভিন্ন ফার্মিং প্রসাধনীর।
কার্যকারিতা কতটুকু
বিশেষজ্ঞদের মতে, যেকোনো বডি ফার্মিং প্রসাধনী প্রথম ব্যবহারে কিছুটা কার্যকর মনে হলেও এর স্থায়িত্বকাল সাময়িক। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ত্বকের কোলাজেন ও ইলাস্টিন কমে যাওয়ায় অনেক সময় এই প্রসাধনীগুলো আশানুরূপ ফল দিতে পারে না। তাই বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন, ত্বকে বার্ধক্যের লক্ষণ দেখা দিতেই প্রতিরোধমূলকভাবে এসব প্রসাধনীর ব্যবহার শুরু করলে কিছুটা সুফল পাওয়া সম্ভব।
কেনার আগে
 পেপটাইড: এটি ত্বকে কোলাজেন উৎপাদনে সহায়তা করে; ফলে ত্বক হয় টান টান ও দৃঢ়।
 রেটিনল: ভিটামিন এ-এর একটি রূপ, যা ত্বকের কোষ গঠনে সহায়তা করে এবং বয়সের ছাপ কমাতে কার্যকর।
 ক্যাফেইন: রক্তসঞ্চালন বাড়িয়ে ত্বককে সাময়িকভাবে পরিপুষ্ট ও টান টান দেখাতে সাহায্য করে।
 হায়ালুরনিক অ্যাসিড: ত্বকে আর্দ্রতা ধরে রাখে এবং সূক্ষ্ম ভাঁজ কমাতে কার্যকর।
 কোলাজেন: অনেক প্রসাধনীতে ব্যবহৃত হয় বটে; কিন্তু জেনে রাখা ভালো, কোলাজেন ত্বকের গভীরে প্রবেশ করতে পারে না। তাই এটি মূলত ত্বককে আর্দ্র রাখার, দৃঢ়তা বাড়াতে তেমন ভূমিকা রাখে না।
ব্যবহার বিধি
 পরিষ্কার ত্বকে ব্যবহার: গোসলের পর ত্বক উষ্ণ ও লোমকূপগুলো খোলা থাকে। তখন বডি ফার্মিং প্রোডাক্ট সবচেয়ে ভালোভাবে কাজ করে।
 মাসাজ পদ্ধতি: হালকা হাতে, নিচ থেকে ওপরমুখী মাসাজ করলে রক্ত চলাচল বাড়ে এবং উপকরণগুলো ভালোভাবে ত্বকে মিশে যায়।
 নিয়মিততা: দিনে অন্তত একবার বা দুবার নির্ধারিত সময় ব্যবহারে কার্যকর ফল পাওয়া যায়।
 সহায়ক পণ্য: ফার্মিং প্রসাধনীর পাশাপাশি বডি স্ক্রাব ও হাইড্রেটিং লোশন ব্যবহার করা যেতে পারে।
জীবনধারায় বদল
ত্বকের সৌন্দর্য ও সুস্থতা কেবল প্রসাধনীর ওপর নির্ভর করে না। ত্বকের জন্য প্রয়োজন ভারসাম্যপূর্ণ জীবনধারা, যা ভেতর থেকে পরিবর্তন আনতে সাহায্য করবে।
 পর্যাপ্ত ঘুম: রাত হলো ত্বকের কোষ পুনর্গঠনের সময়। প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম অপরিহার্য।
 সুষম খাদ্য: ফলমূল, শাকসবজি, ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ খাবার ত্বকে পুষ্টি জোগায়।
 পর্যাপ্ত পানি: দিনে অন্তত ২ লিটার পানি পান ভেতর থেকে ত্বককে রাখে আর্দ্র।
 মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ: সরাসরি ত্বকের বার্ধক্য প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলে।
 নিয়মিত ব্যায়াম: রক্তসঞ্চালন বাড়িয়ে ত্বক রাখে টান টান ও প্রাণবন্ত।
লাইফস্টাইল স্টেটমেন্টের অংশ
সৌন্দর্যচর্চার দুনিয়ায় এখন শুধু মুখ নয়, পুরো শরীরের চর্চা জরুরি। সোশ্যাল মিডিয়ায় বিউটি ইনফ্লুয়েন্সারদের ফিডে দেখা যাচ্ছে বডি স্কাল্পটিং, ফার্মিং লোশন, স্কিন টাইটনিং মাস্ক এবং এমনকি মাল্টি-স্টেপ বডি কেয়ার রুটিন, যা আগে কেবল মুখের ত্বকের জন্যই ভাবা হতো। বিশেষ করে ‘ক্লিন গার্ল অ্যাসথেটিক’ ট্রেন্ডটির প্রভাবে মিনিমাল, গ্লোয়িং ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ত্বকের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। এই ট্রেন্ডের মূল বার্তা—মেকআপ ছাড়া টান টান, উজ্জ্বল ত্বক।
বর্তমানে বডি কনটুরিং দারুণ জনপ্রিয়। এটি শুধু ফিটনেস-সংক্রান্ত বিষয় নয়; বরং বিউটি স্টেটমেন্ট। অনেকে জিম ও ডায়েটের পাশাপাশি ফার্মিং ক্রিম, স্কাল্পটিং অয়েল এবং বিশেষ মাসাজ টেকনিকের মাধ্যমে ত্বকের টোন উন্নতির চেষ্টা চালান।
ট্রেন্ডিং বডি ফার্মিং হ্যাক
 ড্রাই ব্রাশিং: প্রতিদিন সকালে শুষ্ক ত্বকে ব্রাশ করে রক্তসঞ্চালন বাড়াতে হবে। এটি ত্বক টান টান করতে এবং ডেড সেল দূর করতে সহায়ক।
 কফি স্ক্রাব: ক্যাফেইনযুক্ত বডি স্ক্রাব স্কিন টোনিং এবং ফার্মিংয়ে সাহায্য করে। সপ্তাহে ২-৩ বার ব্যবহারই যথেষ্ট।
 হাইড্রেটিং সেরাম ও লোশন: হায়ালুরনিক অ্যাসিড, রেটিনল ও পেপটাইডস সমৃদ্ধ বডি সেরাম ও লোশন ব্যবহার করা যেতে পারে; বিশেষ করে গোসলের পর।
 বডি মাসাজ টেকনিক: আপওয়ার্ড স্ট্রোক এবং সার্কুলার মোশনে মাসাজ করলে ত্বকে ফার্মিং ইফেক্ট মেলে। এ ক্ষেত্রে মাসাজ অয়েল বা বডি বাটার ব্যবহার করা যায়।
 কোল্ড শাওয়ার থেরাপি: হট শাওয়ারের পরে একবার ঠান্ডা পানিতে শরীর ধুয়ে নেওয়া যায়। এটি ত্বকের লোমকূপ বন্ধ এবং স্কিন টোন ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
বিবিধ বিকল্প
 রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি থেরাপি: এই চিকিৎসায় ত্বকে হালকা তাপ প্রয়োগের মাধ্যমে কোলাজেন ও ইলাস্টিন উৎপাদন বাড়ানো হয়।
 মাইক্রোনিডলিং ও লেজার থেরাপি: ত্বকের গভীরে ঢুকে কাজ করে। ত্বকের টেক্সচারের উন্নতি ঘটায়।
 সার্জিক্যাল অপশন: আর্ম লিফট, থাই লিফট, অ্যাবডোমিনোপ্লাস্টি ইত্যাদি দীর্ঘস্থায়ী সমাধান দিতে পারে।
 প্লাস্টিক সার্জারি: যেমন আর্ম লিফট, থাই লিফট বা অ্যাবডোমিনোপ্লাস্টি, যেগুলো অতিরিক্ত চামড়া, তা সরিয়ে ত্বককে দৃঢ় করে তোলে।
ফার্মিং প্রসাধনীগুলো আসলে পুরোপুরি প্রতারণা নয়; তবে এগুলোর কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। দীর্ঘ সময় ও ধৈর্য ধরে নিয়মিত ব্যবহার করলে কিছুটা সুফল পাওয়া সম্ভব। তবে উল্লেখযোগ্য ও দীর্ঘস্থায়ী পরিবর্তন পেতে ইন-ক্লিনিক ট্রিটমেন্ট বা সার্জারির কথাও বিবেচনায় আনা যেতে পারে। ত্বক টান টান ও দৃঢ় রাখতে চাইলে প্রসাধনীর পাশাপাশি জীবনধারা, খাদ্যাভ্যাস ও অভ্যাসগত পরিবর্তনের দিকে নজর দেওয়া জরুরি। ফার্মিং প্রোডাক্টগুলো সাময়িক সমাধান হতে পারে; তবে নিয়মিত ও সঠিকভাবে ব্যবহার করলেই মিলবে কাঙ্ক্ষিত ফল।

 স্বর্ণা রায়
মডেল: প্রজ্ঞা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: কৌশিক ইকবাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top