skip to Main Content

ফিচার I খাদ্য-নৃত্য সংযোগ

‘নভেনা’। একটি মন্ত্রমুগ্ধকর সমন্বিত নৃত্য পরিবেশনা। ফিলিপিনো-আমেরিকান কোরিওগ্রাফার জে কার্লন ও কম্পোজার মিকায়লা টোবিনের যৌথ উদ্যোগ। সঙ্গে তৃতীয় অংশীদার কোনো ব্যক্তি নয়; একটি খাদ্য উপাদান। চাল! ২০২২ সালে প্রথম মঞ্চস্থ হওয়া এই উপস্থাপনা গড়া হয় নয়টি শোকের পর্যায় ঘিরে। ক্যাথলিক ‘নভেনা’, অর্থাৎ নয় দিনব্যাপী শোকপ্রার্থনার নিয়মকে উত্তর-ঔপনিবেশিক দৃষ্টিকোণ থেকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হয়েছে তাতে। এর সৃষ্টিতে একই সঙ্গে নিজের ফিলিপিনো শিকড়ের প্রতিও নির্ভর করেছেন কার্লন। ফলে ঘটিয়েছেন চালের ব্যবহার; যে খাদ্যপণ্যের সঙ্গে এই কোরিওগ্রাফারের সাংস্কৃতিক ও ব্যক্তিগত গভীর যোগাযোগ এই পরিবেশনাকে জৈব উপাদান, সাংস্কৃতিক ও উপনিবেশের প্রতীক হিসেবে ভিন্নমাত্রা এনে দিয়েছে।
পরিবেশনাটিতে কার্লন একটি চালের ব্যাগ মঞ্চে নিয়ে আসেন। তারপর একটি পাঞ্চিং ব্যাগে ঢেলে দেন সেই চাল। এ সময় তিনি পাঞ্চিংয়ের মাধ্যমে শারীরিক কসরত দেখান। অবশেষে ব্যাগ ফুটো করে নিজের ওপর তা ঢেলে নেন। তার শরীর তখন প্রতীকী শস্যদানার আবরণে ভরে ওঠে। এই আচার-আনুষ্ঠানিক দৃশ্য সাধারণত নভেনায় ব্যবহৃত রোজারি বা জপমালার পরিবর্তে চালের উপস্থাপনা ঘটায়। এটি বিনাশের যন্ত্রণা থেকে নিস্তার পেয়ে আনন্দ অনুভবে রূপান্তরের এক যাত্রাপথের প্রতিচ্ছবি। এর মাধ্যমে শোক পরিণত হয় উদ্‌যাপনে।
নৃত্যের সঙ্গে খাদ্য উপাদান জুড়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে কার্লনের এ যাত্রার সূচনা ২০২০ সালে। করোনা অতিমারির সেই দিনগুলোতে তিনি পারফরম্যান্সকে উপনিবেশমুক্ত করার উপায় খুঁজছিলেন। এই অন্বেষণে তাকে প্রাণিত করে ফিলিপিনো আতিথেয়তার ঐতিহ্য; কেননা, ওই সংস্কৃতিতে অতিথিদের খাওয়ানো একটি মৌলিক সমাদরের প্রতীক।
নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির খাদ্য গবেষক ও ‘ব্রেকিং ব্রেড উইদ বালানচিন’ প্রকল্পের প্রবক্তা মেরিল রসোফস্কির মতে, খাদ্য ও নৃত্যের মধ্যে গঠন আর সৌন্দর্যের নিরিখে গভীর মিল রয়েছে। উভয়ের মধ্যে কৌশলের সময়, নিয়মের প্রয়োজন, তাৎক্ষণিক উদ্ভাবনের সম্ভাবনা, ভুলের কারণে ব্যাঘাতের শঙ্কা এবং তা থেকে উত্তরণের রয়েছে উপায়। এসবের সুফল নিলে সাংস্কৃতিক, আধ্যাত্মিক ও আন্তব্যক্তিক সমৃদ্ধির সম্ভাবনা বাড়ে।
পোর্টল্যান্ড ব্যালের নৃত্যশিল্পী ও অভিজ্ঞ শেফ এলিয়ানা ট্রেনামের চিন্তায়ও এ কথার প্রতিধ্বনি শোনা যায়। তার মতে, নৃত্য ও খাদ্য—উভয়ই সাময়িকতা, আত্মীয়তা ও পরিবর্তনশীলতার বহিঃপ্রকাশ। উভয়ের প্রতিটি উপস্থাপনা যেন একেকটি পারফরম্যান্স; যা সামান্য পরিবর্তিত ভঙ্গিমায় ঘুরে আসার মাধ্যমে ভোক্তা, নৃত্যশিল্পী ও দর্শকের অভিজ্ঞতাকে সতেজ ও প্রাণবন্ত রাখে। রসোফস্কির মতে, খাদ্য গ্রহণ ও নাচ—উভয় অনুশীলনই ঐতিহ্য, পরিচয় ও ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে গভীর গল্প বলে। শুধু তা-ই নয়; আমাদের সংজ্ঞায়ন এবং পূর্বপুরুষের ঐতিহ্যের প্রতিভাস ঘটানোর পাশাপাশি সমকালীন বিশ্বকেও ধারণ করে।
হালে জে কার্লনের পরিবেশনা বেশ আলোচনার জন্ম দিলেও নৃত্যের সঙ্গে খাদ্য উপাদানের সংযোগ ঘটানোর চর্চা অবশ্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অনন্যা ড্যান্স থিয়েটারের প্রতিষ্ঠাতা শিল্প নির্দেশক এবং ভারতীয় নৃত্যশিল্পী ও নৃত্য-পণ্ডিত অনন্যা চ্যাটার্জি ২০০৬ সাল থেকে ভারতীয় কৃষকদের সঙ্গে বর্ষার পরিবর্তিত প্যাটার্ন নিয়ে আলোচনা করার পর নৃত্যে খাবারের থিম অন্তর্ভুক্তি শুরু করেন। এটি তাকে কৃষি, শিল্পাঞ্চলীয় প্রভাব, মরুভূমি ও খাদ্য উৎস থেকে বিচ্ছিন্নতার বিস্তৃত তরঙ্গের দিকে নিয়ে গেছে। অনন্যার ভাষ্য, নৃত্যক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাসের চাপ থাকে বলে খাবার ঘিরে নৃত্যশিল্পীরা সব সময় কম-বেশি ভাবেন। শিল্পীদের মনোজগতে সক্রিয় থাকা এই ভাবনার উৎস, অর্থাৎ খাদ্যপণ্যকে সরাসরি নৃত্যে জায়গা করে দেওয়া তাই নৃত্যশিল্পে চমৎকার এক মাত্রা যোগ করে বলেই অভিমত তার।
 ফুড ডেস্ক
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top