skip to Main Content
চলছে মুনেম ওয়াসিফের ‘ক্রমশ’

প্রসিদ্ধ আলোকচিত্রশিল্পী মুনেম ওয়াসিফের একক দৃশ্যশিল্প প্রদর্শনী ‘ক্রমশ’-এর উদ্বোধন হয়েছে শুক্রবার (১৮ এপ্রিল ২০২৫) সন্ধ্যা ৬টায়, রাজধানীর ধানমন্ডির বেঙ্গল শিল্পালয়ে। দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে মুনেম ওয়াসিফের ছবি-নির্মাণ যেন একই কাজের ভেতরে ক্রমাগত বিবর্তিত হয়েছে, আবার কখনো বাঁক বদল করেছে। এই সময়ে পুরান ঢাকার জটিল রূপান্তরের বাস্তবতা রয়েছে, যা এক অর্থে নিত্যদিনের উত্থান-পতনেরও চিত্র। এই অস্থির পরিবর্তনের মুখোমুখি হয়ে তিনি ফিরে আসেন পুরান ঢাকার আদি চৈতন্যে, যা শিল্পীর কাছে বরাবরই ওই স্থানের মূল নির্যাস বা অস্তিত্বের ভিত্তি। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

আলোকচিত্র, ভিডিও মাধ্যম, স্থাপনাশিল্প নিয়ে এই বহুমাত্রিক প্রদর্শনীর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ইতিহাসবেত্তা ও নগরবিদ কাজী খালিদ আশরাফ এবং আলোকচিত্রী ও শিক্ষাবিদ শহিদুল আলম।

কামরুল হাসান প্রদর্শনশালা, বেঙ্গল শিল্পালয়, লেভেল ১, বাড়ি ৪২, সড়ক ২৭, ধানমন্ডি, ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য এই প্রদর্শনী চলবে ৩১ মে ২০২৫ পর্যন্ত; রোববার বাদে প্রতিদিন বিকেল ৪টা থেকে রাত ৮টা।

সামান্য/Bare (২০২২-চলমান) দুর্জয় বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের কমিশনকৃত ‘ক্রমশ’-এর কিউরেটরিয়াল উপদেষ্টা তানজিম ওয়াহাব, স্থাপত্য পরিকল্পনাকারী দেহশার ওয়ার্কস এবং প্রকল্প ব্যবস্থাপক ইফতেখার হাসান।

মুনেম ওয়াসিফ। ছবি: রোহান চক্রবর্তী

মুনেম ওয়াসিফের কাজ প্রায়শ আলোকচিত্র, চলমান ছবি, আর্কাইভাল ডকুমেন্টস এবং সংগৃহীত নানা সামগ্রীর সমন্বয়ে ক্ষণস্থায়িত্ব ও নিরাপত্তাহীনতা বিষয়ক ভাবনা নিয়ে অনুসন্ধান করে। তার কর্মপন্থা দীর্ঘ মেয়াদি এবং পুনরাবৃত্তিক, যা উপস্থাপন করে বহুস্তরীয়, সংবেদী এবং কখনো স্ববিরোধী উপলব্ধি। সম্প্রতি তিনি ঔপনিবেশিক ইতিহাস এবং সংশ্লিষ্ট কৃষি, অর্থনীতি ও এই জনপদের প্রাণ-প্রকৃতি নিয়ে গবেষণা করেছেন। বাংলায় নীল চাষের ইতিহাস নিয়ে কাজ করার জন্য তিনি ২০২৩ সালে রবার্ট গার্ডেনার ফেলোশিপ পান।

তার কাজ সেন্টার পম্পিদু, প্যালে ডি টোকিও, ভিক্টোরিয়া ও অ্যালবার্ট মিউজিয়াম, মিউজি দে এলিসি, ঢাকা আর্ট সামিট, ছবি মেলা এবং শারজাহ, সিঙ্গাপুর, তাইপে, গোয়াংজু, দিরিয়াহ, লিয়ন বিয়েনালে প্রদর্শিত হয়েছে। মুনেম ওয়াসিফের প্রকাশনার মধ্যে রয়েছে বিলঙ্গিং (ক্লেমেন্টাইন দে লা ফেরোনিয়ার, ২০১৩) এবং সল্ট ওয়াটার টিয়ার্স (ইমেজে প্লুরিয়েল, ২০১১)। এ ছাড়া তানজিম ওহাবের সঙ্গে যৌথ সম্পাদনায় আলোকচিত্রবিষয়ক বাংলা ভাষার প্রবন্ধ সংকলন ‘কামরা’, যার দুটি সংস্করণ ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি ২০২০-২১ সালে জার্মানির উইসেনশ্যাফ্টস্কোলেগ জু বার্লিনের ফেলো ছিলেন। ২০১৫-১৬ সালে সুবীর চৌধুরী প্র্যাকটিস গ্র্যান্টের সুবাদে ‘খেয়াল’ নির্মাণ করেন। একই সঙ্গে পাঠশালা সাউথ এশিয়ান মিডিয়া ইনস্টিটিউটের শিক্ষক এবং ২০১৫ সাল থেকে ছবিমেলার কো-কিউরেটর হিসেবে কাজ করছেন।

‘ক্রমশ’ সম্পর্কে কিউরেটরিয়াল নোটে তানজিম ওয়াহাব উল্লেখ করেন,’ক্রমশর শুরু আলোকচিত্রশিল্পী মুনেম ওয়াসিফের বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে; কিন্তু এটি প্রচলিত অর্থে কোনো খেরোখাতা বা ডায়েরিস্টিক কাজ নয়। ছবিগুলো অতীত থেকে ভবিষ্যতের দিকে বিস্তৃত নানা মুহূর্তের এক বিশাল সমাহার– কিছু রেকর্ডেড মুহূর্ত, কিছু আয়োজন করে তোলা, আর কিছু সম্পূর্ণ কল্পনার খোরাক। পুরান ঢাকার প্রচলিত গল্প, আমাদের চেনা সরু গলির প্রাণবন্ত মহল্লা-সংস্কৃতি, আচার-অনুষ্ঠান, বিলুপ্তপ্রায় প্রাচীন স্থাপত্য ও ঐতিহ্য, যা ঢাকার সবচেয়ে বেশি ক্যামেরাবন্দি হওয়া ছবি। আমাদের দেখা গল্পগুলো মূলত দুটি বিষয়কে কেন্দ্র করে আবর্তিত– একদিকে দ্রুত পরিবর্তনের চাপ, অলিগলিতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা পাড়া-মহল্লার ব্যস্ত জীবনপ্রবাহ; অন্যদিকে অতীতের স্মৃতিকাতর রেশ, কল্পলোকে মন্থর একসময়।’

‘ক্রমশ’-এর পোস্টার। ছবি: বেঙ্গল আর্টস

তিনি আরও বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে মুনেম ওয়াসিফের অভিজ্ঞতা বহুমাত্রিক– একজন শিল্পীর আত্মজীবনীর মতো, যেখানে কাজটি সময়ের সঙ্গে বিকশিত হয়ে নিজের স্বতন্ত্র ভাষায় ক্রমশ বেড়ে ওঠে, যদিও শিল্পীর ব্যক্তিগত জীবন ছবিতে প্রায় অনুপস্থিত। দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে ওয়াসিফের ছবি-নির্মাণ যেন একই কাজের ভেতরে ক্রমাগত বিবর্তিত হয়েছে, আবার কখনো বাঁক বদল করেছে। এই সময়ে পুরান ঢাকার আরেকটি জটিল রূপান্তরের বাস্তবতা রয়েছে, যা একভাবে নিত্যদিনের উত্থান-পতনের চিত্র। দালানের ধারণক্ষমতা ছাড়িয়ে দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি, জীবন সংস্কৃতির পরিবর্তিত আবহ, কঠোর শ্রম বিভাজন এবং বাজারমুখী যাপন ব্যবস্থা– এসব মিলিয়ে জীবন যেন এক অস্থির পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়। তবে এই রূপান্তরের ধাক্কা সামলে টিকে থাকার জন্য ওয়াসিফ ফিরে আসেন জায়গাটির আদি চৈতন্যে, যা শিল্পীর কাছে বরাবরই এই স্থানের মূল নির্যাস বা অস্তিত্বের ভিত্তি।’

‘ছবির বয়ানে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা না থাকলেও পুরান ঢাকার সঙ্গে তার নিবিড় সম্পর্ক এই কাজের মূল গাঁথুনি। আলোকচিত্র-জীবনের প্রথমদিকে অলিতে-গলিতে জেনিট ক্যামেরা নাড়াচাড়া করা, বিভিন্ন লেন্স বসিয়ে আলো ধরা, জাদু বাক্স ‘বক্স ক্যামেরা’ নিয়ে পোর্ট্রেট ফটোগ্রাফার সফদার ভাইয়ের সঙ্গে ধীরগতির ছবি তোলার দুর্লভ মুহূর্তগুলো, স্যাঁতসেঁতে ডার্করুমের গন্ধ শোঁকা, সলিউশনের তীব্র সুবাস, মহল্লার মানুষের সঙ্গে অগুনতি প্রহর কাটানো, রাতের নির্ঘুম গলির বিষণ্ণ হাহাকার শোনা বা স্থানটির উদারতায় সিক্ত কোনো অব্যক্ত অনুভূতি– এসবের মধ্য দিয়ে পুরান ঢাকার সঙ্গে ওয়াসিফের সম্পর্কটি ক্রমশ গভীর হয়,’ যোগ করেন তানজিম ওয়াহাব।

তিনি আরও বলেন, “‘ক্রমশ’ আলোকচিত্র, ফিল্ম ও ভাস্কর্যের মিশ্রমাধ্যমে তিনটি পর্বে সাজানো– অন্তর্গত, সামান্য ও খেয়াল। আবার সেই সঙ্গে তিন ধরনের সময়ের দিকে কাজটি ক্রমান্বয়ে বিকশিত হয়, যার কোনো নির্দিষ্ট গতিপথ বা গন্তব্য নেই। অতীত ও বর্তমান থেকে কল্পিত ভবিষ্যতের দিকে যেতে যেতে, সময়ের একাধিক স্তর এ প্রক্রিয়ায় ধরা পড়ে, মাঝপথে বিরতিতে সময়গুলো কোনো এক স্থানে দম নেয় এবং ক্রমশ তারা একে অন্যের সীমানা অতিক্রম করে যায় ‘ক্রমশ’তে।”

  • ক্যানভাস অনলাইন
    ছবি: মুনেম ওয়াসিফের সৌজন্যে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top