skip to Main Content
ফ্লাওয়ার পাওয়ার

শুধু শোভাবর্ধনেই নয়, সৌন্দর্য বাড়াতেও ফুলের ব্যবহার বছর পুরানো। ত্বকচর্চা থেকে চুলের যত্নে

গোলাপ

শুষ্কতা সারাইয়ের সঙ্গে সঙ্গে ত্বকের লালচে ভাব কমাতে দারুণ এটি।ত্বকে আদ্রতা যোগাতেও চমৎকার।এছাড়া বুড়িয়ে যাওয়া ত্বকের হারানো জেল্লা ফিরিয়ে আনতে অনেকাংশে সাহায্য করে গোলাপ।বাড়ায় ত্বকের উজ্জ্বলতা।ত্বকচর্চায় বিভিন্ন ভাবে ব্যবহার করা যায় এই ফুল।এক্ষেত্রে সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে গোলাপের কয়েকটি পাঁপড়ি কাঁচা দুধে ভিজিয়ে রেখে আধা ঘণ্টা পর তা বেটে নিতে হবে।এর সঙ্গে ১ চাচামচ মধু মিশিয়ে নিইয়ে তৈরি করতে হবে মিশ্রন।এই মিশ্রণটি পুরো মুখে লাগিয়ে ১০ মিনিট অপেক্ষা করে কুসুম গরম পানিতে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। এটি উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে ত্বককে করে তুলবে কোমল ও মসৃণ। এছাড়া গোলাপ ও কমলার খোসার ফেসপ্যাক ও ত্বকের জন্য বেশ উপকারী। এজন্য গোলাপের পাপড়ি ভাল করে পেস্ট করে এতে ২ টেবিল চামচ কমলার খোসা গুড়া মিশিয়ে নিতে হবে।সঙ্গে যোগ করতে হবে এক টেবিল চামচ দই। মুখে ও গলায় মেখে ৩০-৪০মিনিট পর ধুয়ে নিলেই হবে। এই ফেস প্যাকটি রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে বা সন্ধ্যায় ব্যবহার করাই ভাল। চন্দন ও গোলাপের প্যাক ও ব্যবহার করা যেতে পারে।এটা দেবে দাগহীন নিখুঁত উজ্জলত্বকের নিশ্চয়তা। গোলাপের পাপড়ির পেস্টের সাথে দুই টেবিল চামচ চন্দন গুড়া আর এক চাচামচ গোলাপজল মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিতে হবে। এই পেস্টটি মুখে লাগিয়ে ৪০মিনিট পর ধুয়ে ফেলা চাই। একটা ছোট পাকা আম ও তাজা গোলাপের পাপড়ি পেস্ট করেতা ও মেখে নিতে পারেন ত্বকে। এটা মুখে মাখিয়ে রাখতে হবে ১৫ মিনিট। তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এটা স্বাভাবিক ত্বকের জন্য উপযোগী। আর ত্বকযদি শুষ্ক হয় তবে এতে যোগ করতে হবে পাচ টেবিল চামচ দুধ। আর ত্বক তৈলাক্ত হলে এতে যোগ করতে হবে এক চাচামচ গোলাপ জল। ত্বকের মত কোষ সরিয়ে ত্বকের অতিরিক্ত শুষ্ক ভাব দূর করে ত্বককে কোমল ও উজ্জল করতে গোলাপ ও ডিমের ফেসপ্যাক দারুণ। এক্ষেত্রে ১ টাডিমের সাদা অংশ ও ১ টেবিল চামচ মধু ভাল করে মিশিয়ে নিতে হবে। সঙ্গে যোগ করতে হবে তাজা গোলাপের পাপড়ি পেস্ট। প্যাকটি আধ ঘন্টার জন্য রেখে দিতে হবে ত্বকে।

গাঁদা

চকচকে উজ্জ্বল কমলা, হলুদ কিংবা খয়েরি রঙের এই ফুল খুবই কার্যকরি অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল। ব্রণের সমস্যা দূর করতে যা খুবই ভালো কাজ করে। এক্ষেত্রে গাঁদা ফুল আর এর পাতা থেঁতো করে ব্রণের ও পর লাগিয়ে রাখলে উপকার পাওয়া যায়। রোদে পোড়া দাগ ও ত্বকের কালো ছোপ ছোপ দাগ দূর করতে গাঁদা ফুলের পাঁপড়ি বাটা, চন্দন পাউডার ও গোলাপ জল মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে মুখে মাখা যেতে পারে। এতে দাগ দূর হবে ও ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়বে। ত্বকের টানটান ভাব ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে এই ফুল। এ ক্ষেত্র আগে মুখ ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। তারপর কয়েকটি ফুলের পাপড়ির সঙ্গে গুঁড়া দুধ, টকদই, মধু ও গাজর কুচি একসঙ্গে বেটে পেস্ট তৈরি করে রাখতে হবে। ত্বকে প্রথমে অল্প দুধের সরের সঙ্গে এক টেবিল চামচ চন্দন বাটা, চার ফোটা গোলাপ জল, দুই ফোটা ল্যাভেন্ডার অয়েল মিশিয়ে ভালো করে মাসাজ করে নিতে হবে। উষ্ণ গরম পানি দিয়ে এই প্রলেপ মুছে নিয়ে আগে তৈরি করে রাখা ফুলের মিশ্রণ দিয়ে মাসাজ করতে হবে। এটা ত্বক গভীর থেকে পরিষ্কার করে। মৃত চামড়া সহজেই সরিয়ে নতুন কোষ তৈরিতে সাহায্য করে।

জবা

ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়া রোধে জবা প্রাচীণ কাল থেকেই জনপ্রিয়। অ্যান্থসায়ানোসাইডস অ্যান্টি অক্সিডেন্ট যুক্ত ফুলটি ত্বক কোষকে পুনরজ্জীবিত রাখতে সাহায্য করে। ফ্রি র‍্যাডিকাল থেকে বাচায়। ফলে হাপার পিগমেন্টেশন মুক্ত থাকে ত্বক। থাকে উজ্জ্বল এবং দাগ্মুক্ত ।ফুলটা ত্বকে ব্যবহারও সহজ। এজন্য লাল জবা ফুল থেঁতো করে নিতে হবে। সঙ্গে চালের গুঁড়া মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিয়ে ত্বকে মাখিয়ে রাখুতে হবে ১০ মিনিটের জন্য। তারপর আলতো হাতে ঘষে ঘষে ধুয়ে ফেলতে হবে। ত্বকের মৃত কোষ দূর করে ত্বক গভীর থেকে পরিষ্কার করবে এমিশ্রণটি। এছাড়া জবা ফুলের পাপড়ি দিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিয়ে এর সঙ্গে চালের গুঁড়া, এসেন্সিয়াল অয়েল যেমন ভিটামিন ই আর অল্প পানি দিয়ে একটি প্যাক তৈরি করে তাও মেখে নেয়া যেতে পারে মুখে। মুখ থেকে ময়লা, দুষণ আর তেল থেকে মুক্তি পেতে এটি দারুণ।

এছাড়া চুলের যত্নে জবা জাদুকরী ।চুলের দ্রুত বৃদ্ধিতে এটা দারুণ। এজন্য প্রথমে ৮ থেকে ৯টি জবাফুল ও পাতা নিয়ে ভালো করে ধুয়েতা থেঁতলে নিতে হবে।এরপর একটি পাত্রে এক কাপ নারিকেল তেল নিয়ে তাতে জবা ফুলের পেস্ট দিয়ে সেদ্ধ করে নিতে হবে। পরে ঠান্ডা করে নিয়ে এই তেল চুল ও মাথার তালুতে ম্যাসাজ করে নিতে হবে। ৩০ মিনিট রেখে ধুয়ে নিলেই চলবে। চুলে সারা রাত রেখে দিয়ে পরের দিন শ্যাম্পু করে নিতে পারলে তো আরও ভাল। এটি চুলকে দ্রুত বাড়তে সাহায্য করে। পাশাপাশি কোমল করে তোলে চুল। সঙ্গে জরুরী পুষ্টির যোগান দেয়। চুলকে মজবুত রাখতে ও সহায়ক জবা। এক্ষেত্রে গাছের পাতা থেঁতলে পেস্ট করে তাতে চার টেবিল চামচ টক দই মিশিয়ে চুল ও তালুতে ব্যবহার করা যেতে পারে। এক ঘণ্টার জন্য রেখে শ্যাম্পু করে কুসুম গরম পানি দিয়ে চুল ধুয়ে নিলেই চলবে। চুলের গোঁড়া মজবুত করতে ও বৃদ্ধিতে এই প্যাক সাহায্য করে। খুশকি দূরকরতে দারুণ এই ফুল।এজন্য এক টেবিল চামচ মেথি বীজ সারা রাত ভিজিয়ে রাখতে হবে। শুকনো জবা পাতা ও মেথি বীজ এক সঙ্গে বেটে এর সঙ্গে দই মিশিয়ে পেস্টটি মাথার তালুতে মাখিয়ে রাখতে হবে। এছাড়া জবা পাতা ও মেহেদি পাতা এক সাথে গুঁড়া করে তাতে অর্ধেক লেবুর রস দিয়েও চুলে ব্যবহার করতে পারেন। এটি চুলের খুশকি দূর করার পাশাপাশি কন্ডিশনিং করতে সাহায্য করবে। চুলের গোঁড়া থেকে পুষ্টি জুগিয়ে চুলকে করে তুলবে আরো উজ্জ্বল ও ঝলমলে।

পদ্ম

ক্লিনজার, টোনার ও ময়েশ্চারাইজার – তিন ভাবেই কার্যকরি পদ্মফুলের রস।প্যাক বানাতে পদ্মফুলের পাঁপড়ি বেটে রস ছেঁকে নিতে হবে। ফ্রিজে রেখে ঠাণ্ডা করে এই রস তুলোতে ভিজিয়ে ত্বকে রাখতে হবে মিনিট বিশেক।এতে ত্বক পাবে পরিপূর্ণ পুষ্টি। ত্বকের রঙ উজ্জ্বল করতে ও পদ্ম ফুলের জুড়ি নেই। পদ্ম পাঁপড়ি চটকে নিয়ে চালের গুঁড়ার সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করা জেতে পারে এক্ষেত্রে। এটা স্ক্রাবার হিসেবে খুবই ভালো। রং ফর্সা করতেও পদ্ম জনপ্রিয়। এই ফুলের বিভিন্ন মিনারেল রং ফর্সা করতে সাহায্য করে।এজন্য ফুলের পাপড়ি গুলো খুব ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। তারপর পানিতে চার মিনিট সিদ্ধ করে পেস্ট করতে হবে। সঙ্গে দেয়া যেতে পারে টক দই আর মধু। চাইলে পদ্ম ফুলের পাপড়ি পানিতে ফুটিয়ে যে কোনো ফেইস প্যাকের সঙ্গে এটা মিশিয়ে নিয়মিত ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে খুব বেশী স্পর্শ কাতর ত্বকের জন্য উপযুক্ত নয় পদ্ম।

রজনীগন্ধা

শুষ্ক, রুক্ষ ত্বকে প্রাণ ফিরিয়ে আনতে পারে রজনীগন্ধা। এজন্য ফুলের পাঁপড়ি বেটে নিই য়ে এর সঙ্গে সামান্য মাখন ও মধু মিশিয়ে ত্বকে ম্যাসাজ করতে হবে। ২০ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানিতে ধুয়ে ফেললেই চলবে ।

বেলী

ত্বক টানটান ও মসৃণ করে তুলতে বেলী খুব কার্যকরী। এর নিয়মিত ব্যবহারে বলি রেখাও দূর হয় । বেলী ফুল থেঁতো করে নিয়ে এর সঙ্গে অ্যালোভেরার রস ও মধু মিশিয়ে ত্বকে ব্যবহার করা যেতে পারে । ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলতে হবে প্যাক। যাদের শুষ্ক ত্বক তারা এটি মুখে সপ্তাহে দুবার ব্যবহার করলে উপকার পাবেন।এটা ত্বকের শুষ্কতা সারিয়ে তুলতে সাহায্য করবে।এছাড়া বেলি ফুলের পাপড়ি ফুটন্ত পানিতে তিন থেকে পাঁচ মিনিট রাখার পর পানি ছেঁকে দুধের মালাইয়ের সঙ্গে পেস্ট করে নিয়েও তইরি করা যায় প্যাক। মসৃণ ত্বকের জন্য দারুণ কাজ করে এটি। যাদের সেনসিটিভ বা সংবদেনশীল ত্বক তারা টক দইয়ের সঙ্গে ব্লেন্ড করে মুখে লাগান বেলি। সপ্তাহে এক বার করলেই চলবে। বেলি ফুলের সঙ্গে আলোভেরা মিশিয়ে ত্বকে লাগালে ও ত্বক টানটান ও মসৃণ হয়ে উঠবে।

জুঁই

এই ফুলও ত্বক চর্চায় দারূণ উপকারি। এক মুঠো জুঁই ফুল পানিতে ফুটিয়ে নিয়ে পানি ছেঁকে রেখে দিতে হবে আলাদা করে। আর জুঁই ফুল গুলো আলাদা বেটে টক দইয়ের সঙ্গে মিশিয়ে মুখে মাখতে হবে ১৫ মিনিটের জন্য। পরে জুঁই ফুল ফুটানো পানিটা ও মুখে মাখা যেতে পারে। সেনসেটিভ বা সংবেদনশীল ত্বকের জন্যে এই ফেইসপ্যাক খুবই ভালো।

শাপলা

শাপলা ফুল, নিমের তেল ও তিল বাটা এক সঙ্গে মিশিয়ে নিয়মিত ত্বকে লাগালে ব্রণ সমস্যার সমাধান হয় সহজেই।

ব্যবহারের আগে

প্যাক তৈরির আগে ফুল ভালো করে ধুয়ে নেয়া জরুরি।

ফুল কখনই সরাসরি ত্বকে ব্যবহার করা উচিত নয়। অবশ্যই অন্য কোন তবক বান্ধব উপাদানের সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করাই ভাল।

ফুলের তৈরি প্যাক বা মিশ্রণ গুলো টাটকা অবস্থায় ব্যবহার করা উচিত। বেশি দিন রেখে দিলে এতে ব্যাকটেরিয়া জন্মনিতে পারে, যাত্বকের জন্য ক্ষতিকর।

ফুলের রস ব্যবহার করার আগে হাতের কোনো অংশে তা মেখে দেখে নেয়া উচিত এর থেকে ত্বকে কোন সমস্যার সৃষ্টি হয় কিনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top