skip to Main Content
ভেগান সমাচার

ভেগান বা নিরামিষাশী। তাদের খাদ্য তালিকায় কোনো প্রকার প্রাণীর মাংস থাকে না। এমনকি পোল্ট্রি, মাছ, দুগ্ধজাত খাবার ডিম ও মধুও খান না একজন ভেগান। পশুর চামড়া, ওল বোনা ও মুক্তার ব্যবহারকেও সমালোচনার চোখে দেখেন তাঁরা। তাদের খাদ্য তালিকায় শাক-সবজি ও ফল-মূল জাতীয় খাদ্যই দেখা যায়।

১৯৪৪ সালে যুক্তরাজ্যে প্রতিষ্ঠিত হয় ভেগান সোসাইটি। প্রতিষ্ঠা করেন ডাল্টন ওয়াটসন। তিনিই ‘ভেগান’ শব্দটির প্রচলন ঘটান। অবশ্য খাদ্য তালিকায় মাংস না থাকা নতুন কোনো বিষয় নয়। আড়াই হাজার বছর আগেও ভারতে এই চর্চা ছিল।

কলিন স্পেনসার তার ‘ভেজিটেরিয়ানিজম: অ্যা হিস্ট্রি’ বইয়ে ভারতে নিরামিষ খাওয়ার শুরুর দিকের ঘটনা বর্ণনা করেছেন। গ্রীক গণিত শাস্ত্রবিদ পিথাগোরাসও প্রাণীর প্রতি মমত্ব ও দয়া প্রদর্শনের পক্ষে বলেছেন। এমনকি ভেজিটেরিয়ান ধারা জনপ্রিয় হওয়ার আগে যারা নিজেদের খাদ্য তালিকায় প্রাণীর মাংস পরিহার করতেন তাদের ‘পিথাগোরিয়ান ডায়েট’ মেনে চলা মানুষ বলা হতো।

যুক্তরাজ্যের এক জরিপে দেখা গিয়েছে প্রায় ৪৯ ভাগ মানুষ নিজেদের স্বাস্থ্যের কথা ভেবে খাদ্য তালিকায় মাংস না রাখার পক্ষে মতামত দিয়েছেন। কেননা, গরুর মাংস এবং প্রক্রিয়াজাতকরণকৃত কৌটার মাংস খেলে অন্ত্রের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। এমন তথ্যই উঠে এসেছে সাম্প্রতিক বেশ কিছু গবেষণায়।

নিরামিষাশী হলে কি সত্যিই স্বাস্থ্যের কোনো উপকার হয়? কিছু গবেষণায় উঠে এসেছে এর উত্তর। প্রাপ্ত ফলাফল জানাচ্ছে, ভেগান হলে স্বাস্থ্যের কিছুটা উপকার হয়। তবে ভেগান হলেই যে কেউ দীর্ঘ জীবন পাবে তা নয়।

পৃথিবীতে ভেগানিজমের দিকে যেমন মানুষের আগ্রহ বাড়ছে তেমনই মাংস খাওয়ার পরিমাণও বৃদ্ধি পাচ্ছে। চীন ও ভারতের মতো যে দেশে জনসংখ্যা বেশি তাদের মধ্যে মাংস খাওয়ার প্রবণতা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

একটি গবেষণায় দেখা গেছে,

গবেষণায় আরো দেখা গেছে, মাংসের যোগান বাড়াতে খামারে ব্যাপক সংখ্যক গবাদি-পশু পালন করার ফলে প্রচুর পরিমাণে মিথেন গ্যাস উৎপন্ন হচ্ছে। এই গ্যাস জলবায়ুর উষ্ণায়নের জন্য দায়ী।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে পৃথিবীর জনসংখ্যা প্রায় ৭০০ কোটি। কিন্তু ২০৫০ সালে তা বেড়ে প্রায় সাড়ে ৯০০ কোটি হবে। এই জনবহুল পৃথিবীতে মাংস বাদ দিয়ে নিরামিষাশী হওয়াকে দায়িত্বশীল খাদ্যাভ্যাস বলে ব্যাখ্যা করছেন ভেগানরা।

এদিকে গ্লোবাল ডাটা রিপোর্ট বলছে, সারা পৃথিবীতেই বেশ দ্রুত হারে বাড়ছে ভেগানিজম বা নিরামিষাশীদের সংখ্যা। কেবল যুক্তরাষ্ট্রেই গত তিন বছরে ভেগানিজমের বিস্তার হয়েছে ৬০০ শতাংশের বেশি।

ভেগান সোসাইটির তথ্য মতে, গত এক দশকে যুক্তরাজ্যে ভেগানিজমের বিস্তার বেড়েছে ৪০০ শতাংশ।

বৈশ্বিক ভাবে মাংসবিহীন খাদ্যের চাহিদা ২০১৭ সাল নাগাদ এক হাজার গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ২০১৮ সাল নাগাদ ভেগানিজমকে বিবেচনা করা হচ্ছে সবচেয়ে বড় ফুড ট্রেন্ড হিসেবে।

ভেগানিজম মেনে চলা মানুষের মধ্যে আছে প্রাণী জগতের প্রতি ভালোবাসা। কিন্তু সম্প্রতি ভেগানিজম নিয়ে কিছু সমালোচনার দেখা সূত্রপাত হয়েছে।

অনেক স্থানে পশু-প্রেমী ও পশু-অধিকার রক্ষাকারী কর্মীদের দ্বারা পশু-পালনকারী খামারী বা কৃষক এবং কসাইদের দোকানগুলো হামলা ও আক্রমণের শিকার হয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়া আক্রমণাত্মক ভাষায় সমালোচনার শিকার হচ্ছেন নিরীহ খামারী, কৃষক ও কসাইরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top