skip to Main Content

ক্যানভাস রিপোর্ট

ছবি – সাজ্জাদ হোসেন

কবিতা, গান, অংশগ্রহণমূলক নানা কর্মশালা, জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা, তাগা ফ্যাশন অ্যাওয়ার্ড, আমরা নতুন ইয়াং চেঞ্জমেকার্স অ্যাওয়ার্ড, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের নানাদেশের শিক্ষার্থীদের সমবেত গান – নেমেসিস, আর্টসেল, নগর বাউল জেমসসহ মঞ্চে নানান উপস্থাপায় তিনদিনব্যাপী ব্র্যাকের হোপ ফেস্টিভ্যালের শেষ দিন উদযাপিত হলো  শনিবার ১১ই ফেব্রুয়ারি। আগামীর বাংলাদেশ নিয়ে আশা আর সম্ভাবনার কথাই মূলত ধ্বনিত হলো এই উৎসবে। এই দেশ বিনির্মাণে যারা ভূমিকা রেখেছেন, যাদের শ্রম, ঘাম, আর হার না মানার শক্তিতে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ – শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে তাদেরকেও। ব্র্যাক হোপ ফেস্টিভ্যালে নানা আয়োজনে ধ্বনিত হয়েছে তারুণ্যের জয়গান, শত বাধা পেরিয়ে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান আর সম্ভাবনার বাংলাদেশের কথা।

এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ব্র্যাকের ৫০ বছরের অগ্রযাত্রার অংশ হিসেবে সকাল ১১টা থেকে রাত ৯:৩০ পর্যন্ত বাংলাদেশ আর্মি স্টেডিয়ামে ৯ই ফেব্রুয়ারি, বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছিলো এই উৎসব। ‘হৃদয়ে বাংলাদেশ’, ‘সম্ভাবনার শক্তি’ ও ‘যে পৃথিবী আমরা গড়তে চাই’ – এই তিনটি প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে সাজানো হয়েছিলো তিন দিনের অনুষ্ঠানমালা। বাংলাদেশ আর্মি স্টেডিয়ামে প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ৯:৩০ পর্যন্ত চলেছে এই উৎসব। এই দিনের সকল আয়োজনের কেন্দ্রে ছিল তারুণ্যের জয়গান। দিনটি শুরু হয় ব্র্যাক স্কুল, কিশোর উন্নয়ন ক্লাব, ব্র্যাক কুমন ও একমাত্রা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের প্রদর্শিত কবিতা, গান ও নাচের পরিবেশনার মাধ্যমে।
উৎসবের শেষ দিনটিকে উৎসর্গ করা হয় বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম ও চেঞ্জমেকারদের প্রতি যারা নিজ নিজ প্রকল্পের মাধ্যমে কমিউনিটির সেবায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। পুরষ্কার প্রদানের মাধ্যমে সম্মানিত করা হয় তাদের। তরুণ প্রজন্মের চেঞ্জমেকারদের দেওয়া হয় ”আমরা নতুন ইয়াং চেঞ্জমেকারস অ্যাওয়ার্ড” এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ৩৫ বছরের কম বয়সী নারীদের এই প্রথমবারের মতো দেওয়া হয় ”তাগা আউটস্ট্যান্ডিং ইয়াং প্রফেশনালস অ্যাওয়ার্ড”। ছিল জলবায়ু পরিবর্তন ও অভিযোজন কৌশল নিয়ে আলোচনা। ভাষার মাসে বিশ্বের সকল মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ব্র্যাক ইউনিভারসিটির দেশী-বিদেশী শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ভাষায় সংগীত পরিবেশনা মুগ্ধ করে দর্শকদের।


‘যে পৃথিবী আমরা গড়তে চাই’ প্রতিপাদ্যকে উপজীব্য করে সাজানো হয় শেষ দিনের আয়োজন। ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনালের নির্বাহী পরিচালক শামেরান আবেদ বলেন, “আমরা মানুষের মধ্যে আশার সঞ্চার, জ্ঞান, দক্ষতা ও অর্থনৈতিক সক্ষমতার সুযোগ তৈরি করে তাকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলি। আমাদের লক্ষ্য মানুষকে স্বনির্ভর করে তোলা, যাতে সে নিজেই নিজের জীবন পরিবর্তনের দায়িত্ব নিতে পারেন। এশিয়া ও আফ্রিকায় ১০ কোটিরও বেশি মানুষ তাদের জীবনমান পরিবর্তনের লড়াইয়ে ব্র্যাকের অংশীদার হয়ে কাজ করছেন। আশা করি সমতাপূর্ণ পৃথিবী গড়ে তোলার এই লড়াইয়ে আপনারা আমাদের পাশে থাকবেন।“
সমাপনী বক্তব্য রাখেন ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ্।
সব শেষে নগর বাউল জেমস-এর জমকালো পরিবেশনায় উন্মাতাল হয়ে উঠে পুরো স্টেডিয়াম প্রাঙ্গণ।
আবেদ ভাই: জীবন দর্শন ও আশার জয়: হোপ ফেস্টিভ্যালে “আবেদ ভাই: জীবন দর্শন ও আশার জয়” শিরোনামে একটি নিমগ্ন অভিজ্ঞতা (“ইমারসিভ এক্সপেরিয়েন্স”) আয়োজন করা হয়েছে। দর্শক ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদের জীবন দর্শন এবং ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাকাল থেকে বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়ার গল্প দেখতে পাবেন ডিজিটালি চারপাশের দেয়ালে ভেসে উঠা বিশেষ এক তথ্যচিত্রে। জীবনের নানা ঘাত প্রতিঘাত পেরিয়ে এসে সাফল্যের দেখা পাওয়া ৫০ জন মানুষের ছবি দেখতে দেখতে শেষ হবে এই অভিজ্ঞতা। “ইমারসিভ এক্সপেরিয়েন্স” ব্যবহার করে তথ্যচিত্র দেখবার অভিজ্ঞতা বাংলাদেশে এবারই প্রথম আয়োজন করা হয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা: পুরো পৃথিবী এখন জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির মুখে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় করণীয় এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বৈশ্বিক বাস্তবতার সাথে সময়োপযোগী অভিযোজন কৌশল নিয়ে “সাসটেইনেবিলিটি: ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড এডাপটেশন স্ট্র্যাটেজি” শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। দৈনিক প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি ইফতেখার মাহমুদের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ্; বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী; এডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান; ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য কৌশল বিভাগের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক জয়নব ফারুকী আলী; আগা খান পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য কৌশল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক খন্দকার হাসিবুল কবির; ব্র্যাকের ক্লাইমেট চেঞ্জ প্রোগ্রামের পরিচালক ড. মো: লিয়াকত আলী, ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব এডুকেশনাল ডেভেলপমেন্ট (বিআইইডি)-র ডিজাইন লিড এমারেল্ড উপমা বৈদ্য; ও ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিসের জলবায়ু অ্যাক্টিভিস্ট ইমরান হোসেন।
আমরা নতুন ইয়াং চেঞ্জমেকার্স অ্যাওয়ার্ড: বাংলাদেশের তরুণদের সক্ষমতা আর উদ্যমী মনোভাবকে স্বীকৃতি দিতে প্রথমবারের মতো আয়োজন করা হয় “আমরা নতুন ইয়াং চেঞ্জমেকার্স অ্যাওয়ার্ড”। গত ডিসেম্বরে ব্র্যাক ইয়ুথ প্ল্যাটফর্ম পরিচালিত “আমরা নতুন নেটওয়ার্ক”-এর পক্ষ থেকে তরুণদের কাছে তাদের নিজ নিজ প্রকল্পের সংক্ষিপ্ত একটি ধারণাপত্র জমা দেয়ার জন্য আবেদনপত্র আহ্বান করা হয়। ঢাকা, রংপুর, খুলনা ও চট্টগ্রাম থেকে সংগ্রহ করা হয় ৭৫টি প্রকল্প আর তার পেছনের গল্প। পূর্ব নির্ধারিত মূল্যায়নের ভিত্তিতে পেছনের গল্পগুলো প্রাথমিকভাবে মূল্যায়ন করে ব্র্যাক ইয়ুথ প্ল্যাটফর্ম দল, ব্র্যাক প্রোগ্রাম ও একজন অতিথি বিচারক। প্রাথমিক মূল্যায়নের পর ব্র্যাকের পাঁচটি স্তম্ভ এবং মূল্যবোধকে মাথায় রেখে সেরা ১০টি প্রকল্পকে বেছে নেয়া হয়। হোপ ফেস্টিভ্যালের শেষ দিনে বিজয়ী ঘোষণা করা হয় এই সেরাদের মধ্যে সেরা ৫টি দলকে, তাদের হাতে তুলে দেয়া হয় “আমরা নতুন ইয়াং চেঞ্জমেকার্স অ্যাওয়ার্ড।”


তাগা আউটস্ট্যান্ডিং ইয়াং প্রফেশনালস অ্যাওয়ার্ড: বাংলাদেশের তরুণ ও উদ্যমী পেশাদার নারীদের স্বীকৃতি জানাতে আড়ং-এর ফ্যাশন ব্র্যান্ড “তাগা”  প্রথমবারের মতো চালু করেছে “তাগা আউটস্ট্যান্ডিং ইয়াং প্রফেশনালস অ্যাওয়ার্ড”। মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে সর্বোচ্চ ৫জন করে ২০ থেকে ৩৫ বছর বয়সী অসাধারণ পেশাদার নারীর নাম চাওয়া হয়। বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেয়া হয় ব্র্যাক হোপ ফেস্টিভ্যালের শেষ দিনে। আড়ং-এর এই ব্র্যান্ডটি মূলত তরুণদের উপযোগী পোশাক তৈরি করছে।
নানা ভাষার সঙ্গীতঃ আরমিন মুসা ও খৈয়াম সানু সন্ধির পরিচালনায় ব্র‍্যাক ইউনিভার্সিটির দেশী-বিদেশী শিক্ষার্থীদের দল ‘ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস কয়্যার’ বিভিন্ন ভাষায় সংগীত পরিবেশন করে। ভাষার মাসে বিশ্বের সব ভাষাকে শ্রদ্ধা জানানোর লক্ষ্য নিয়ে এই আয়োজন নজর কাড়ে উপস্থিত দর্শকদের। নানা ভাষার গানের সুরে মেতে উঠে স্টেডিয়াম প্রাঙ্গণ।
গত অর্ধশতকে ছোট ছোট উদ্যোগ আর আশার আলোর মশাল জ্বেলে নিজেদের জীবন পাল্টে দিয়েছেন হাজারো মানুষ। তাদের গল্পগুলো তুলে ধরার মাধ্যমে বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করা এবং শিক্ষা, আর্থিক ক্ষমতায়ন, নারী-পুরুষের সমতা, জলবায়ু পরিবর্তন, ও মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি ও আচরণ পরিবর্তনের বার্তা দিয়ে শেষ হলো তিন দিনের এই বিপুল আয়োজন।
বাংলাদেশের হৃদয় হতে, সারা বিশ্বজুড়ে আশা জাগানোর ৫০ বছরের পথচলা আর বাংলাদেশের মানুষের দৃঢ়তা, সাহস ও এগিয়ে যাওয়ার শক্তিকে উদ্যাপন করতে অনুষ্ঠিত হয়েছে এই উৎসব। বাধা, বিপদ, দুর্যোগে বাংলাদেশের লড়াকু মানুষ থমকেছে, কিন্তু থামেনি। সীমাহীন সম্ভাবনায় খুঁজে নিয়েছে এগিয়ে যাবার পথ। এই উৎসবের মূল অনুপ্রেরণা ও আয়োজন ছিলো তাদেরকে ঘিরেই। কোটি মানুষের জীবনের মোড় পরিবর্তনের উদাহরণ সবাইকে নিজ নিজ বাধা পেরিয়ে স্বপ্ন জয়ের অনুপ্রেরণা দেবে – এই আশা ব্র্যাকের।
হোপ ফেস্টিভ্যালে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের সহ-আয়োজক প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে, বিকাশ, ব্র্যাক ব্যাংক, আইপিডিসি ফাইন্যান্স এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top