skip to Main Content
২২শে শ্রাবণ

বাঙালি সংস্কৃতির মর্মে মর্মে জড়িয়ে রয়েছেন রবীন্দ্রনাথ। শুধুই রবীন্দ্রসাহিত্য, রবীন্দ্রসঙ্গীত ও রাবীন্দ্রিক চিত্রকলার কারণে রবীন্দ্রনাথ বাঙালির জাতীয় জীবনে গুরুত্বপূর্ণ নন। বরং বাঙালির পরিচিতি সত্তা ও বাংলাদেশ হয়ে ওঠার পেছনে রয়ে গেছে সেই রবীন্দ্রনাথের প্রেরণা, যে রবীন্দ্রনাথ শাসকের নন, যে রবীন্দ্রনাথ গণমানুষের, যে রবীন্দ্রনাথ আলোয় আলোয় এই আকাশে মুক্তির মন্ত্রণা দিয়ে গেছেন গোটা বাঙালি জাতিকে। যে রবীন্দ্রনাথের সৃজন হয়ে উঠেছিল মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণা, যে রবীন্দ্রসঙ্গীত আজ স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত। আর তাই ২৫শে বৈশাখ আর ২২শে শ্রাবণ বাঙালির জাতীয় জীবনের গুরুত্বপূর্ণ দুটি বাংলা তারিখ। কিন্তু ২৫শে বৈশাখ কবির জন্মদিনের চেয়েও ২২শে শ্রাবণ বোধ হয় কিঞ্চিৎ বেশিই স্মরণীয়। কারণ, যাঁর জন্মদিন উদ্‌যাপন করা হয়, তাঁর বস্তুনিরপেক্ষ মূল্যায়ণের থেকে একসময় বড় হয়ে দাঁড়ায় ব্যক্তিকে দেবতা বানানোর অভিপ্রায়। কিন্তু মৃত্যু যেহেতু বিয়োগান্ত ও শূন্যতার স্মৃতি, তাই সেই শূন্যতাকে ঘিরে তৈরি হয় ব্যক্তির জীবনের পর্যালোচনা ও মূল্যায়নের এক প্রচেষ্টা। রবীন্দ্রনাথ একজন মানুষই, তাঁর কবিতা, সঙ্গীত, চিত্রকলা- সবকিছুই আলোচনা-সমালোচনা ও মূল্যায়নযোগ্য, রবীন্দ্রনাথের সৃজন ও তাঁর জীবনও একরৈখিক-একমাত্রিক নয়। তাই তাঁর জীবন ও শিল্প-সাহিত্যের পর্যালোচনা ও মূল্যায়ন দরকার বস্তুনিরপেক্ষভাবে। কল্লোল যুগ ও ৫০ দশকের লেখক-কবিদের কেউ কেউ সেই চেষ্টা করেওছেন। কিন্তু বাঙালি রবীন্দ্রনাথের মূল্যায়নের থেকে তাঁকে দেবতা বানাতে ব্যস্ত থেকেছে। তাই যে রবীন্দ্রনাথ গণমানুষের, যে রবীন্দ্রনাথ দ্রোহের, যে রবীন্দ্রনাথ দেশগঠনের প্রেরণার, সেই রবীন্দ্রনাথকে আলাদা করে মূল্যায়নের অভ্যাস একসময়ে থেমে গেছে। ২২শে শ্রাবণ আমাদের সে কথা মনে করায়। এই অশান্ত সময়ে ২২শে শ্রাবণে প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে রবীন্দ্রনাথের রক্তকরবী নাটক। রাজার দম্ভ আর নন্দিনীর প্রেম ও দ্রোহের স্পর্ধা। আসুন, আমরা সেই প্রেম ও দ্রোহের রবীন্দ্রনাথকে স্মরণ করি এই শ্রাবণবেলায়, এই অন্ধ-আকাল সময়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top