skip to Main Content

ট্রাভেলগ I আ টেল অব টু সিটিজ

জাকার্তা-পালেংবাঙ এশিয়ান গেমসের স্মৃতি এখনো টাটকা। গেমসে উপস্থিত থেকে প্রয়োজনীয় দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি দেশ ও মানুষকে দেখা আর তাদের সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্য কাছ থেকে অবলোকনের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন শেখ সাইফুর রহমান

আনিয়ের সৈকতে আবুল হোসেন স্যারের সঙ্গে ইয়োলান্ডা ও লেখক

সকালে [২৩ ডিসেম্বর] অফিসে বসে খবরটা শুনে ভীষণ মন খারাপ হয়ে গেল। আবারও সুনামির থাবা ইন্দোনেশিয়ায়। অকুস্থল এবার জাকার্তার বেশ কাছেই। শুন্ড্রা প্রণালিতে। জায়গাটার নাম পানতাই আনিয়ের। জাভা সাগরের ধারে। এশিয়ান গেমস চলাকালে আমি, শেফ দ্য মিশন আবুল হোসেন স্যার আর আমাদের এনওসি অ্যাসিস্ট্যান্ট ইয়োলান্ডা পুরো একটা বিকেল কাটিয়েছি ওই এলাকায়। ভাবলেই তো গা শিউরে ওঠে। এই খবর শোনার পর আমাদের এনওসি অ্যাসিস্ট্যান্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ওদের পরিস্থিতি জানার চেষ্টা করেছি। ওরা সবাই নিরাপদে আছে। আর তখনই ইয়োলান্ডা জানিয়েছে, আমরা যে সমুদ্রসৈকতে গিয়েছিলাম সেখানেই এই দুর্ঘটনা। এখনো দৃশ্যগুলো ছবির মতো চোখে লেগে আছে। এখান থেকে বেশ খানিকটা দূরের ক্রাকাতাও পাহাড়ে আছে আগ্নেয়গিরি। ইয়োলান্ডা আরও জানায়, এখন ছুটির মৌসুম, তাই অসংখ্য পর্যটকের ভিড় সৈকতজুড়ে। সেখানেই এই বিপত্তি।

আনিয়ের সৈকতে সূর্যাস্ত। এখানেই আঘাত হেনেছে সুনামি

ব্যানতেন একটি আলাদা প্রদেশ। এটা একটা সমুদ্রবন্দরও। গেমস চলাকালে এক সকালে আমার মেয়ে হারমিনকে নিয়ে দামান মিনিতে যাওয়ার কথা। কিন্তু হারমিনকে পাওয়া গেল না। হঠাৎ উপস্থিত আবুল হোসেন স্যার। শুনে বললেন, আমার সঙ্গে যাবেন। আমি ব্যানতেন যাব। রাজি হয়ে গেলাম। যেহেতু আমার দামান মিনি যাওয়ার কথা, তাই আগে সেখানে যাওয়া হলো, তারপর সোজা ব্যানতেনের পানতাই আনিয়ের। বেলা ১১টা নাগাদ আমরা শুরু করে রাতে ফিরি। আমরা ছিলাম তিনজন। স্যার, আমি আর ইয়োলান্ডা। দারুণ একটা দিন আমরা কাটাই। অসাধারণ ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন আবুল হোসেন স্যার। ভীষণই দূরদর্শী আর আধুনিক মানুষ। দীর্ঘ যাত্রায় অনেক কথা হয় তাঁর সঙ্গে। আফসোস লাগে এই ভেবে যে তাঁর মতো একজন বিচক্ষণ ব্যক্তিত্বকে ক্রীড়াঙ্গন ব্যবহার করতে পারছে না।

পারি দ্বীপে আমরা

দামান মিনি থেকে বেরিয়ে আমরা সোজা চলে যাই আনিয়ের। রাস্তায় একটি জাভানিজ হোটেলে সেরে নিই দুপুরের খাবার। ট্র্যাডিশনাল ফুড। যখন যেখানেই খান না কেন, বড় গ্লাসের এক গ্লাস চা আপনাকে দেওয়া হবে। এটা অনেকটা ওয়েলকাম ড্রিংকসের মতো। তবে সেটা গরম চা। ইচ্ছা করলে আপনি শীতল চা অর্থাৎ কোল্ড টি-ও নিতে পারেন। আমি কোল্ড টি নিই। সঙ্গে ভাত, দু-তিন ধরনের মাছ- কোনোটা ভাজা, কোনোটা পাতুরি, মাংস, টফু ভাজা ইত্যাদি। যেটা যেটা খাবেন, দাম নির্ধারণ করা হবে সেই মতো। আপনি টেবিলে বসে খেতে পারেন। কিংবা রয়েছে আয়েশ করে পা ছড়িয়ে বসে খাওয়ার ব্যবস্থাও।
খেয়েদেয়ে আবারও চলা শুরু করি। দীর্ঘ পথ। সম্ভবত জাকার্তা থেকে আনিয়ের পর্যন্ত ৫২ কিলোমিটার। বিচে কাটাই অনেকটা সময়। স্যারের ইচ্ছে ছিল ন্যাশনাল পার্কে যাওয়ার। কিন্তু সময় ছিল না। সন্ধে ঘনিয়ে আসে ততক্ষণে।
ফেরার পথে আমরা যাত্রাবিরতি করি ব্যানতেন শহরে। বড়জোর আমাদের নারায়ণগঞ্জের মতো হবে। অথচ সেখানে রয়েছে ওয়ার্ল্ড ক্লাস মল। এমনকি বিদেশি ব্র্যান্ড আর স্টারবাক কফিও। আমরা গলা ভেজালাম। আবুল হোসেন স্যারের সৌজন্যে।
তাঁর সঙ্গে আরও একদিন আমরা মজা করে কাটিয়েছি। সেটা সমাপনীর আগের দিন। আমরা কয়েকজন মিলে গিয়েছিলাম পারি দ্বীপে। জাভা সাগরে অসংখ্য ছোট দ্বীপ। এগুলোকে বলা হয় থাউজেন্ড আইল্যান্ডস। এরই একটি পারি। রীমা, হারমিন ও মেকা- এই তিন এনওসি অ্যাসিস্ট্যান্ট ছিল আমাদের সঙ্গে। মিস করেছি ইয়োলান্ডাকে। সঙ্গে আরও ছিলেন জুডোর সেলিম ভাই, বিওএর সোহেল ভাই ও হাফিজ। সকালে গিয়ে বিকেলে ফেরা।

জাভা সাগরে নৌকাযাত্রা

আমাদের গাইডকে পাওয়া গেল দ্বীপে পৌঁছেই। তার নাম জানা হয়নি। সবাই মিলে সাইকেল নিয়ে সৈকতে। আমি শটস নিয়ে যাইনি বলে সেখান থেকেই কিনে নেওয়া হলো। পোশাক বদল করে নেমে গেলাম পানিতে। স্যার ঠিকই সুইমিং কস্টিউম নিয়ে গিয়েছিলেন। একসঙ্গে সাঁতার কাটা হলো স্বচ্ছ নীল জলে। তারপর নৌকা ভাড়া করে ঘোরাঘুরিও। স্যার নিজে বৈঠা বাইলেন। স্মৃতিচারণা করলেন ছেলেবেলার। আঞ্চল বিচ থেকে জাহাজে উঠে পেয়েছিলাম ইউক্রেনের ট্রাম্পোলিন জাজ ক্যাটারিনাকে। সঙ্গে তার ইন্দোনেশিয়ান ভলান্টিয়ারকে। ওরাও আমাদের সঙ্গে নৌকায় চড়ল। মনে হচ্ছিল আমরা সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ বনের ভিতর দিয়ে চলেছি। অনেক দূর পর্যন্ত গেলাম। বেশ গভীর। কিন্তু স্বচ্ছ জল। নিচ পর্যন্ত দেখা যায়। অনেকক্ষণ দাপাদাপি করে ফিরে এসে গোসল করে কাপড় বদলে গাছতলায় বসে লাঞ্চ সারা হলো। সুপ, নাসি (ভাত), মাছ ভাজা, টফু আর স্যালাড। সঙ্গে ফল (তরমুজ)। শুকনো ভাত তাই সুপকে ডাল হিসেবেই নেওয়া হলো। খাবারের স্বাদ মন্দ ছিল না। আর খিদায় এই খাবারই অমৃত মনে হচ্ছিল।

পারি দ্বীপে সাইক্লিং

দুপুরে খাবার সেরে আমরা আরেক বিচে গিয়ে বিশ্রাম নিই। বেশ কয়েকটা হ্যামক ছিল। তাতে কেউ কেউ আবার ভাতঘুম দিয়ে নিলেন। সেখানেও ক্যাটারিনাদের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। পরে আবার দেখা জাহাজে করে ফেরার সময়। কারণ, যে জাহাজে আসে তাতেই ফিরতে হয়। পুরোটাই একটা প্যাকেজ। যা হোক, ওই বিচে আমরা আবার এক বুড়ির দোকান থেকে ডাব কিনে খেলাম। প্রথমে আমি আর হারমিন, পরে সবাই। দিনটা দারুণ কাটে। বিশেষ করে স্যারের সঙ্গটাই ছিল বেশি কাঙ্ক্ষিত।

বাংলাদেশের জার্সিতে উচ্ছল পাঁচ

পরের দিন ছিল সমাপনী। এদিন পর্যন্ত বেশ ভালোই কেটেছে। প্রকৃতিও বেগরবাই করেনি। গেমসও উতরে গেছে ভালোয় ভালোয়। কিন্তু সমাপনীর সকাল থেকেই ছিল আকাশের মুখ ভার। আর অঝোর ধারায় ঝরল আমরা সমাপনীর মার্চপাস্টে অংশ নেওয়ার জন্য রওনা হওয়ার পর। যাকে বলে একেবারে মুষলধারে বৃষ্টি। ঢাকায় হলে রাস্তায় হাঁটুপানি জমে যেত। আমাদের সবাইকে রেইনকোট দেওয়া হলো। সেটা পরেই আমরা পূর্বনির্দেশমতো সুইমিংপুলে গিয়ে অবস্থান নিলাম। উদ্বোধনীর মতো এবারও সেখানে নাশতা দেওয়া হলো। এরপর সেখান থেকে মাঠে। বৃষ্টির মধ্যেই আমরা হাঁটতে হাঁটতে মূল স্টেডিয়ামে পৌঁছলাম। ভলান্টিয়ার আর সাধারণ মানুষ সেই বৃষ্টি উপেক্ষা করে দাঁড়িয়ে আমাদের অভিবাদন জানিয়েছে। সমস্বরে গেয়েছে তাদের জাতীয় সংগীত: ইন্দোনেশিয়া তানা আইরকু…ইন্দোনেশিয়া রায়া! মারদেকা, মারদেকা।

রেইনকোট পরে বাসের ভেতরে তৈরি সবাই

ধারাপাত তখনো অব্যাহত। মার্চপাস্ট করে আমরা পৌঁছলাম স্টেডিয়ামে। এবার আর বসার জায়গা নেই। দাঁড়িয়ে থাকতে হলো মাঠের ভেতরে। বৃষ্টি মাথায় করে। তবে মাঠজুড়েই বিছানো ছিল কার্পেট। যেন ম্যাজিক কার্পেট। কোনো পানি জমেনি। একেবারেই শুকনো ছিল মাঠ। বিভিন্ন দেশের ছেলেমেয়েরা তাদের ট্র্যাডিশনাল পোশাক পরে এসেছে। এমনকি আফগানিস্তানের মেয়েরাও পরে এসেছে তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক। অপূর্ব। চোখ ফেরানো দায়। ৪৫ দেশের ক্রীড়াবিদ আর কর্মকর্তারা মিলে সে এক অভূতপূর্ব পরিবেশ। তবে সংখ্যাটা কম। কারণ, অনেকেই দেশে ফিরে গেছে। এ জন্য প্রায় সব দেশই তাদের এনওসি অ্যাসিস্ট্যান্টদের নিয়ে এসেছে। আমরাও। বাংলাদেশের জার্সি গায়ে তারা বেশ এক্সাইটেড ছিল। বলতে দ্বিধা নেই অন্যান্য দেশের পাশে বাংলাদেশের পোশাক-আশাক বড়ই দীন আর বেমানান মনে হয়েছে। বিশেষ করে মেয়েদের পোশাক। এমনকি অনেকে নির্ধারিত পোশাক না পরে ইচ্ছামতোই গেছে। তাতে আর যা-ই হোক দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয় না। এসব বিষয় বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনকে বুঝতে হবে। বোঝাতে হবে কর্মকর্তাদের। আর কনটিনজেন্টের পোশাক নির্ধারণে গুরুত্ব দিতে হবে বিশেষজ্ঞদের। তবে পরিতাপের বিষয় হলো, অনেকেই নির্ধারিত পোশাক না পরে গো অ্যাজ ইউ লাইক করেছেন। সময়ের সঙ্গে না থাকার প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে আমাদের।

সমাপনীর দৃশ্য

আবার এই কর্মকর্তাদের কারও কারও মধ্যে লক্ষ করেছি ডেডিকেশন। কাজী রাজীবউদ্দিন আহমেদ চপল যেমন আরচারির উন্নয়নে নিজেকে নিবেদিত রেখেছেন। এশীয় আর আন্তর্জাতিক সংগঠনে নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করার পাশাপাশি বাংলাদেশের আরচারদের নৈপুণ্য বৃদ্ধির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। একইভাবে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও কাবাডির মোজাম্মেল হকের মধ্যে দেখেছি উদগ্র ইচ্ছা। এদের মতো আরও কর্মকর্তা আমাদের প্রয়োজন। না হলে বারবার আমাদের ফিরতে হবে খালি হাতে। ঠিক এবার যেমন হলো। যে নয়টি দেশ কোনো পদক পায়নি, আমরা তাদের একটা। সত্যি বলতে কি, দিকনির্দেশনাহীন অংশগ্রহণ এর চেয়ে বেশি কিছু দেবে না।
স্টেডিয়ামের ভেতর ৬টি মঞ্চ করা হয়। একের পর এক মঞ্চে শিল্পীরা সংগীত পরিবেশন করে চলেছেন। নানা দেশের। এরই মধ্যে এশিয়ান গেমসের পরবর্তী স্বাগতিক শহর চীনের হাংঝু তাদের উপস্থাপনার ঝলক দেখায়। তা থেকে আন্দাজ করা যায়, ঐতিহ্যকে বজায় রেখে তারা কতটা টেকস্যাভি আসর আয়োজনের পরিকল্পনা করেছে।

প্যাডাংয়ে নৈশাহার

ইন্দোনেশিয়ার বিখ্যাত শিল্পী ইশানা সরস্বতী ছাড়া কোরিয়ার দুটি ব্যান্ড আইকন ও সুপার জুনিয়রের পারফরম্যান্স ছিল মনে রাখার মতো। ফিরতে ফিরতে বেশ রাত হয়ে যায়। ফলে আমরা দ্রুত ডাইনিং হলে গিয়ে ডিনার সেরে ফেলি। বৃষ্টিতে হল ভিজে তখন একাকার। অবশ্য এমন হওয়ার কথা নয়। যদিও সেপ্টেম্বর থেকে ইন্দোনেশিয়ায় বর্ষা মৌসুম শুরু হয়। ওদের ঋতু দুটো- বর্ষা আর গ্রীষ্ম। অ্যাসিস্ট্যান্টরা আবার ডাইনিংয়ে যেতে পারে না। তাই বাইরে থেকে খাবার আনিয়ে নেয়। বেশি রাত হয়ে যাওয়ায় ওরা ভিলেজেই রাতটা কাটিয়ে দেয়। পরদিন আমাদের ফেরার পালা।
খাবার নিয়ে চমৎকার সব অভিজ্ঞতা আছে। এর একটা অন্তত শেয়ার করা যেতেই পারে। এক বিকেলে আমি আর হারমিন হকি মাঠ থেকে সোজা চলে যাই কয়েকটা কাজ দ্রুত সেরে নিতে। কারণ, গেমস শেষ হয়ে আসছে। হাতে সময় কমে আসছে। কাজ শেষ হতে রাত। আমাদের সর্বশেষ গন্তব্য ছিল সারিনাহ। শামস ভাই ফোন করে কোথায় আছেন জানতে চাইলেন। জানালে বললেন অপেক্ষা করতে। এরপর তারা সেখানে এলেন। তিনি, শৈলেন্দুদা, সোহেল ভাই। সবাই ক্ষুধার্ত। খেতে হবে। সোহেল ভাই কেএফসির ওপর ভরসা রাখলেন। শামস ভাই আমাদের নিয়ে গেলেন একটা ট্র্যাডিশনাল প্যাডাং রেস্তোরাঁয়। টেবিল ভরে গেল নানা পদে। অন্তত ২৫ প্রকার। আমরা চারজনে বেছে নিলাম বেশ কয়েকটা। দাম নির্ধারিত হলো সেই মতো। এ এক দারুণ অভিজ্ঞতা। শাক, ভর্তা, মাছের ঝোল থেকে নানা কিছু। শাকটা খেতে মনে হচ্ছিল যেন পাটশাক খাচ্ছি।
যা হোক, জাকার্তা নিয়ে লেখার অনেক কিছুই রয়েছে। এর মধ্যে অবশ্যই উল্লেখ্য প্রথম এশিয়ান গেমসের কথা। ১৯৬৮ সালের আয়োজন এত বিশাল ছিল না। এমনকি সেই সময়ের নির্মিত হোটেল ক্যাম্পনস্কি এখনো রয়েছে। এবারও গেমসে ব্যবহৃত হয়েছে।

ভিলেজ ডাইনিং যেন ভাঙা হাট

তবে অবশ্যই উল্লেখ করতে হয় তাদের হস্তশিল্প, বিশেষ করে বাটিক ইন্ডাস্ট্রির কথা। বিশ্বের সবচেয়ে ভালো বাটিক হয় ইন্দোনেশিয়ায়। তাইতো জাকার্তা এসে এই বিষয়টা না জেনে ফিরে যাওয়ার অর্থ হয় না। বিশেষত কারুশিল্পের জগতে আমার পদচারণও তো কম দিন হলো না। অতএব এক বিকেলে হারমিন আমাকে নিয়ে গেল পালবাতু নামের একটি জায়গায়। সেখানে রুমা বাটিকে দেখা হলো বাটিকের কাজ। শেখা হলো হাতে-কলমে।
এদিকে, দিন যত ঘনিয়ে এসেছে, সর্বত্রই চোখে পড়ছে একটা ভাঙা হাটের চিত্র। ভিলেজে প্রতিদিনই খেলোয়াড়দের বিদায় নিতে দেখেছি। ভলান্টিয়ারদের সঙ্গে বড় একটা সময় কাটানোর ফলে সবার মধ্যেই প্রতিফলিত হয়েছে বিষাদের ছায়া। ডাইনিং হলের সেই গমগমে পরিবেশ ম্লান হয়েছে। আমরা শেষ পর্যন্ত ছিলাম। শেষ দিকে ফুড স্টেশনগুলোর কয়েকটা বন্ধ করে দেওয়া হয়। চেয়ার একদিকে ডাই করে রাখা হতে থাকে। ভিলেজের ভেতরে যে মঞ্চটি প্রতি সন্ধায় সরগরম থাকত, সেটাও ভেঙে ফেলা হলো। আমাদের অ্যাসিস্ট্যান্টদের মন খারাপ। সেই উচ্ছল ভাবটা আর নেই। সবকিছুই তো জীবনের অংশ। এই দৃশ্য অবলোকনে যেন অনুরণিত হতে থাকে রবীন্দ্রনাথের গানের চরণগুলো: আসা-যাওয়ার পথের ধারে/ গান গেয়ে মোর কেটেছে দিন…।

ভিলেজে খেলোয়াড়দের সঙ্গে বিওএর মহাসচিব

ফেরার দিন সত্যিই মন খারাপ ছিল সবার। সবাই অশ্রুসিক্ত। তবে আমার জন্য এই অভিজ্ঞতা একবারে নতুন না হলেও, ভবিষ্যতে কাজে লাগবে তো বটেই; হয়ে থাকবে স্মৃতির মণিকাঞ্চন। কারণ, ভিন্ন পরিচয়ে ২০ বছর পর এশিয়ান গেমস কাভার করলাম। এ জন্য অবশ্যই বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের তিন কর্মকর্তা মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজা, উপমহাসচিব আসাদুজ্জামান কোহিনুর এবং সহসভাপতি শেখ বসির আহমেদ অবশ্য কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ হবেন। আমাকে প্রেস অ্যাটাশের যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তা যথাযথভাবে পালনের চেষ্টা করেছি। সফলতা-ব্যর্থতা বিশ্লেষণের ভারটা না হয় থাকল তাদের এবং অবশ্যই আমার সাংবাদিক সাথী-বন্ধুদের ওপর।
ইন্দোনেশিয়ার এই আয়োজন অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে। এনার্জি অব এশিয়া স্লোগানকে তারা যথার্থ প্রমাণ করেছে। আপাতত লক্ষ্য অলিম্পিক গেমসের স্বাগতিক হওয়া। আয়োজক কমিটির আহ্বান ছিল আইও সাকসেসকান এশিয়ান গেমস (চলো, সবাই মিলে সফল করি এশিয়ান গেমস)। এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে দারুণ সফল এক আসর উপহার দিয়েছে এই দ্বীপদেশ। গোটা এশিয়া নিঃসন্দেহে তা মনে রাখবে বহুদিন।
sksaifurrahman@gmail.com
ছবি: লেখক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top