skip to Main Content

ঘরেবাইরে I আনন্দের অন্দর

উৎসবে আপনজন ও অতিথির জন্য নতুন করে সাজাতে হয় অন্দর। এমনভাবে, যেন তাতে সৃষ্টি হয় আনন্দ, উন্মুক্ততা ও প্রশান্তিকর আবহ। লিখেছেন নৌরি আলী

ইতিমধ্যে ঘরে ঘরে শুরু হয়েছে সেই আনন্দবরণের প্রস্তুতি। ইট-কাঠের তৈরি ত্রিমাত্রিক কাঠামোগুলো প্রিয়জনের বিচরণে পূর্ণ যৌবন লাভ করবে এই আশায়। কারণ, শরীর যেমন আত্মার বাড়ি, ত্রিমাত্রিক কাঠামো তেমনি সময়ের গৃহ। আমাদের যাপন এ ছাড়া অসম্পূর্ণ। আনন্দ আয়োজনে গৃহসজ্জা সময়ের একটি মৌলিক বিবেচনা বটে।
সামগ্রিক জীবনযাপনে পৃথিবীজুড়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে মিনিমালিজম।
শুরু করা যেতে পারে দেয়াল থেকে। দেয়ালের রঙ আমাদের মানসিকতা ও অনুভূতিকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে। একটি ঝকঝকে উজ্জ্বল দেয়াল অতিথিকে অনায়াসেই জানাতে পারে উষ্ণ অভ্যর্থনা। বদলে দিতে পারে সামগ্রিক স্থানটিকে।
গাঢ় নয় বরং উজ্জ্বল ও হালকা যেমন, অফ হোয়াইট, আইভরি হোয়াইট কিংবা হালকা হলুদ, হালকা কমলা এ ক্ষেত্রে হতে পারে সঠিক নির্বাচন। দিন ও রাতের জন্য।
পুরো বাসা নয়, বরং নির্বাচিত স্থান, যেমন—প্রবেশদ্বার, ডাইনিং ও ড্রয়িংরুমের দেয়ালগুলো এনে দিতে পারে নতুনত্ব। যেকোনো একটি দেয়ালে থাকতে পারে পেইন্ট বা টেক্সচার্ড পেইন্ট। রঙের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে ওয়ালপেপার। লক্ষ রাখতে হবে, একটি ঘরের সব দেয়ালেই যেন একই পেপার ব্যবহৃত না হয়। সে ক্ষেত্রে স্পেস তার কোয়ালিটি হারাবে।
বনানীর চেয়ারম্যানবাড়ি ও মহাখালীতে রয়েছে ইন্টেরিয়র মার্কেটের বিশাল আয়োজন। দু’জায়গায় সহজেই মিলবে ওয়ালপেপার।
নতুনত্ব হিসেবে দেয়ালে আসতে পারে ‘ঈদকাব্য’। সোশ্যাল মিডিয়ার এই যুগে আমরা প্রিয়জনের সঙ্গে সারাক্ষণ যুক্ত থাকি ফটোগ্রাফ এবং বিভিন্ন পোস্টের মাধ্যমে। সেখান থেকে উল্লেখযোগ্য কিছু আসতে পারে রঙ করা ঝকঝকে দেয়ালের কোনো একটিতে প্রিন্ট আকারে, স্মৃতি জাগিয়ে তোলার জন্য। সিমপ্লেক্স হলে প্রবেশদ্বারে, ডুপ্লেক্স হলে সিঁড়ির দেয়াল হতে পারে এই আয়োজনের ক্যানভাস। এই কম্পোজিশনে যোগ হতে পারে সুন্দর কোনো আরবি ক্যালিগ্রাফি অথবা কোনো অনুপ্রেরণামূলক উদ্ধৃতি।
এই ছোট প্রয়াস ইতিবাচকতায় মন ভরিয়ে দিতে পারে।
ঈদকাব্যে আরও স্নিগ্ধতা যোগ করতে দেয়ালের পাশেই থাকতে পারে ছোট কনসোল টেবিল কিংবা নিদেনপক্ষে জুতার বাক্সটির উপর কিছু তাজা ফুল এবং মোমের আলো।
দেয়ালে হতে পারে আয়নার ব্যবহার। উল্লেখ্য, ওপেন প্ল্যান ড্রয়িং এবং ডাইনিং স্পেসে এই সংযোজন স্পেসটিকে দেখাতে পারে আরও বড়।
আসবাবের পুনরায়োজন স্পেসে এনে দিতে পারে নতুনত্ব। বিশেষ করে ডাইনিং ও ড্রয়িংরুমে কিছু আসবাব এদিক-সেদিক করে সহজেই উন্মুক্ততা আনা সম্ভব। বাড়ানো যায় উপযোগিতাও।
ড্রয়িংরুমের সোফা সেটের সাইড টেবিলগুলো সরিয়ে ডাইনিং রুমে সাজিয়ে রাখা যায়। সেখানে বিভিন্ন খাবার এবং তা বেড়ে দেওয়ার তৈজস বিন্যস্ত হতে পারে। এতে যেমন অতিথি আপ্যায়নে সুবিধা বাড়বে, তেমনি খানিকটা উন্মুক্ততা তৈরি হবে। নতুন স্পেস লুক সৃষ্টি হবে। বসার ঘরটিও বড় দেখাবে।
বসার ঘরে যে জায়গাটুকু হালকা হবে, সেখানে ব্যবহৃত হতে পারে কার্পেট কিংবা রাগ এবং এলোমেলোভাবে ছড়িয়ে থাকতে পারে কিছু পিলো। একটি কর্নারে থাকতে পারে ল্যাম্পশেড। আর বিভিন্ন ইনডোর প্ল্যান্ট, যা নিয়ে আসবে সজীবতা। এতে ঘরের বাতাসের কোয়ালিটিও ভালো হবে। সে জন্য লাগবে এরিকা পাম, আইভি লতা, কিংবা ফার্নের মতো গাছগুলো, যা পাওয়া যায় নার্সারিগুলোয়। ইনডোর প্ল্যান্ট বাতাসের টক্সিন দূর করে। ঘরের পরিবেশ ভালো রাখে। এ ছাড়া মানিপ্ল্যান্ট রাখা যেতে পারে টেবিল কিংবা ওয়াশ বেসিনে। প্রবেশদ্বারেও থাকতে পারে বিভিন্ন গাছ।
বাসার পর্দা, কার্পেট, কুশন, পিলো কাভার, বিছানার চাদর এক সপ্তাহ আগে থেকেই পরিষ্কার ও পরিপাটি করা চাই। সোফায় নতুন-পুরোনো এবং বিভিন্ন রঙের পিলো ব্যবহারে আসতে পারে প্লেফুল ইফেক্ট। ডাইনিং টেবিলে রানার ব্যবহারেও নতুনত্ব চাই। আয়তাকার টেবিল হলে দৈর্ঘ্য বরাবর না বিছিয়ে বিপরীত আসন বরাবর কনট্রাস্ট করে বিছানো যেতে পারে। মাঝের ফাঁকা জায়গায় থাকতে পারে মোম ও কাঁচা ফুল। রানার কিংবা টেবিল ম্যাট পুরোনো শাড়ি বা অন্য কাপড়ে তৈরি করা যেতে পারে।
পর্দা সাধারণত জানালার উচ্চতা পর্যন্ত হয়ে থাকে। এই ঈদে সে রীতি ভেঙে তা হতে পারে সিলিং পর্যন্ত, লিভিং ও ডাইনিং স্পেসে। জায়গাটিকে বড় দেখাতে এটা সাহায্য করবে। চাদর ও পর্দায় নীলের প্রাধান্য মনে আনবে প্রশান্তি।
সব আয়োজন পূর্ণতা পায় পরিচ্ছন্নতায়। রান্নাঘরের মেঝে, কাউন্টার, কেবিনেট ঈদের কয়েক দিন আগে পরিষ্কার করতে হবে। বাসন যা ব্যবহার করা হবে, আগে থেকেই নামিয়ে তা পরিষ্কার করা উচিত। লাইট, ফ্যান, সুইচবোর্ডে প্রচুর ধুলা জমে। সেগুলোও কয়েক দিন আগে পরিষ্কার করা জরুরি।
টুকটাক
লাইটিং নাটকীয়ভাবে বদলে দেয় অন্দরের আবহ। যেমন সাদা লাইটের পরিবর্তে ওয়ার্ম লাইট এ ক্ষেত্রে ভালো। পুরো বাড়িতে না হলেও নির্দিষ্ট কিছু জায়গায়, যেমন প্রবেশদ্বার কিংবা লিভিং রুমে এটি যুক্ত হতে পারে। বিভিন্ন উচ্চতার ও আকৃতির ল্যাম্পশেড রাখা যায় টেবিল, কাউন্টার কিংবা মেঝেতে। বিভিন্ন আলোর ব্যবহার মুহূর্তেই তৈরি করে দিতে পারে স্বপ্নিল আবহ।
মোম ও সুগন্ধির ব্যবহার উৎসবে যোগ করে বাড়তি স্নিগ্ধতা। সেই সঙ্গে থাকতে পারে ইনডোর ফাউন্টেইন।
আজকাল বিভিন্ন লাইফস্টাইল স্টোরে এগুলো পাওয়া যায়। বিশেষত আড়ং, যাত্রা ও গুলশানের ডিসিসি মার্কেটে। প্রতিদিনের ব্যবহার্য কিছু জিনিস (যা অতটা দৃষ্টিনন্দন নয়) সাময়িকভাবে সরিয়ে রাখা যেতে পারে স্টোর রুম কিংবা বাথরুমের ফলস স্ল্যাবের উপর। প্রবেশদরজা এবং বাথরুমের দরজার সামনে রাখা পাপোশ বদলাতেই হবে। সম্ভব হলে বাথরুমে সুগন্ধি ব্যবহার করুন।
সবশেষে
বাড়ি ছোট হোক কিংবা বড়, নকশার গুণে তাতে প্রাণ সঞ্চার করা সম্ভব অনায়াসেই। প্রয়োজন সৃজনশীলতা এবং পরিমিতিবোধ।
বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে, সাময়িক ভালো লাগা যেন কখনোই মৌলিক বিষয়কে অতিক্রম না করে যেমন চলাচলে নির্বিঘ্নতা ও উন্মুক্ততা বজায় রাখা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, আলোর প্রবেশ ও বাতাসের চলাচল।

লেখক: ইন্টেরিয়র ডিজাইনার
স্বত্বাধিকারী: অ্যাটিউনড্ ডিমেনসন্স
ছবি: সংগ্রহ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top