skip to Main Content

ট্রাভেল ফিচার I ভ্রমণের নতুন রোমাঞ্চ

ভ্রমণস্থানের বাড়িটি নিজের হয়ে উঠবে পর্যটকের জন্য। নতুন নতুন বন্ধু বা সঙ্গী জুটবে। সে রকম নেটওয়ার্ক গড়ে উঠছে বিশ্বজুড়ে। লিখেছেন সিদরাতুল সাফায়াত ড্যানিয়েল

কোথাও ঘুরতে গেলে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন হলো থাকার ব্যবস্থা আর স্থানীয় কারও ভ্রমণ-নির্দেশনা। গ্রুপ ট্রাভেলিংয়ে কোনোভাবে ম্যানেজ করে নেওয়া হয়, তবে একা ভ্রমণের বেলায় এ নিয়ে মুশকিলে পড়তে হয়।
এমন যদি হয়, দেশের বাইরে ঘুরতে গেলে কেউ থাকার জায়গা দিচ্ছে এবং স্থানীয় কেউ ভ্রমণের দিকনির্দেশনা দিয়ে সাহায্য করছে; কিন্তু এসবের বিনিময়ে দিতে হচ্ছে না কোনো অর্থ। এর চেয়ে খুশির কিছু হতেই পারে না ট্রাভেলারদের কাছে।
আইসল্যান্ডের শিক্ষার্থীদের একটি গ্রুপ ই-মেইলের মাধ্যমে এমন ধারণা পায় যে মানুষেরা কোথাও কোথাও অপরিচিতদের সঙ্গে নিজেদের বাড়ি শেয়ার করতে চায়। বলা যায় এমন বন্ধু, যাদের সঙ্গে আগে কখনো দেখা হয়নি। সে রকম ধারণা থেকেই ২০০৪ সালে ক্যাজি ফেন্টন, ড্যানিয়েল হোফার, সেবাস্টেইন লি তুয়ান এবং লিওনার্দো বাসানি দা সিলভিরা মিলে একটি প্রজেক্ট চালু করেন। আর সেখান থেকেই জন্ম নেয় কাউচসার্ফিং।
যেখানে মানুষের বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা এবং আতিথেয়তা প্রদানের মতো পরিষেবা ট্রাভেলাররা পেতে পারেন। কাউচসার্ফিং মূলত অতিথিসেবা এবং সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সার্ভিস, যা একটি ওয়েবসাইট ও মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে নেওয়া হয়ে থাকে।
তারা কল্পনা করেন এমন একটি বিশ্ব, যেখানে মানুষ মানুষের সঙ্গে তৈরি করতে পারে একটি অর্থবহ যোগাযোগব্যবস্থা এবং আবিষ্কার করতে পারে তাদের সাক্ষাতের জায়গা। এটি জাগাতে পারে বৈচিত্র্যের প্রতি উৎসাহ, মানুষের পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও সম্পর্কের আনন্দ। একই সঙ্গে গড়ে তোলে একটি বৈশ্বিক সম্প্রদায়।
কাউচসার্ফিং সাইটে কিংবা অ্যাপের মাধ্যমে প্রোফাইল খুলে নিজের পছন্দমতো শহরকে এক্সপ্লোর করে জানাতে হবে নিজেকে, জানতে হবে অন্যকে। কারণ, প্রদত্ত তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই মানুষজন আপনাকে হোস্ট করতে চাইবে। কাউচসার্ফিংয়ের তথ্যমতে ২০১৮ সাল পর্যন্ত প্রায় ১৫ মিলিয়ন লোক এটি ব্যবহার করছে, যাদের মধ্যে ৪ লাখ হোস্ট হিসেবে সক্রিয়।
বাংলাদেশেও এর ব্যবহারকারী অনেক। কথা হলো এমন কয়েকজনের সঙ্গে। এদেরই একজন সাইফুল ইসলাম। বর্তমানে তিনি কাউচসার্ফিং ঢাকার একজন অ্যাম্বাস্যাডার। আগ্রহবশত ২০১৭ সালে কাউচসার্ফিংয়ের অ্যাকাউন্ট খোলেন তিনি। ৩৫টি দেশের সত্তরের বেশি মানুষকে তিনি হোস্ট করেছেন। তিনি মনে করেন, এর মাধ্যমে কমিউনিকেশন ডেভেলপমেন্ট এবং ভাষাগত দক্ষতা বাড়ে। সাইফুল ইসলাম বলেন, এর মাধ্যমে ভিন্ন ভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষকে চেনা যায়। খুব কাছে থেকে দেখা যায় তাদের আচার, ব্যবহার ও সংস্কৃতিকে। তিনি আরও বলেন, ভ্রমণ চেতনা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে যাচাই করার সুযোগটা সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় এখানে।
ঢাকার আরেকজন অ্যাম্বাস্যাডার শ্যামী ওয়াদুদ। ইউনাইটেড নেশনস ইয়ুথ অ্যান্ড স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি নিয়োজিত। ট্রাভেলিং খুব ভালোবাসেন। তার মতে, কাউচসার্ফিং হলো ট্রাভেল লাইক আ লোকাল। তবে তিনি বললেন অন্য এক গল্প। ২০১৭ সালে ক্যানসার ধরা পড়ে তার। ফলে চিকিৎসার জন্য প্রায়ই তাকে চেন্নাই যাওয়া-আসা করতে হতো। সেখানে থাকতেও হতো। ফলে সবকিছু মিলিয়ে বেশ কঠিন সময় যাচ্ছিল তার। তিনি তখন সবচেয়ে বেশি সাপোর্ট পান এই কাউচসার্ফিংয়ের মাধ্যমে। তাকে হোস্ট করে থাকার ব্যবস্থা করা, দেখা করে সঙ্গ দেওয়া—সবকিছু সম্ভব হয়। ফলে সেখানে তৈরি হয়ে যায় একটি বন্ধুমহল। একজন ক্যানসার-আক্রান্ত মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো মেন্টাল সাপোর্ট। যা পেয়েছেন কাউচসার্ফিং বন্ধুদের মাধ্যমে। এখন তিনি পুরোপুরি সুস্থ। এটা ভেবে তার ভালো লাগে যে অপরিচিত মানুষগুলো কীভাবে একে অপরকে বিশ্বাস করে নেয় শুধু একটা সোশ্যাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে। তিনি এ পর্যন্ত ২০টি বিভিন্ন দেশের ৫০ জনের মতো মানুষকে হোস্ট করেছেন। কোনো সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন কি না জিজ্ঞেস করতেই তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত তেমন কোনো সমস্যার সম্মুখীন হননি। এখানের রেফারেন্স কিংবা রিকমান্ডের কারণে প্রতারণার সুযোগ নেই।
কাউচসার্ফিংয়ের মাধ্যমে রয়েছে অনেক কাজের সুযোগও। এর বদৌলতে ওয়ার্ল্ড ভলান্টিয়ারিং আইডিয়া ডেভেলপ হচ্ছে, সিলেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষার্থী প্রান্ত বড়ুয়া এমনটাই বলছিলেন। তিনি বলেন, এর মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে বন্ধু হবার পাশাপাশি অনেক নতুন কিছুর সঙ্গে পরিচিত হওয়া যায়। ওয়ার্ল্ড ভলান্টিয়ারিং তেমনই একটি বিষয়, যেখানে বিভিন্ন দেশে ভলান্টিয়ারিং কাজের মধ্য দিয়ে ওয়ার্ল্ড এক্সপ্লোর করা যায়। পাশাপাশি বাড়ানো যায় নিজস্ব দক্ষতা।
নিজের জীবনকে শেয়ার করা, সম্পর্ক স্থাপন, উদারতা, কৌতূহল—এগুলোই মূলত কাউচসার্ফিংয়ের মূল বিষয়। সেই সঙ্গে বিশ্ব ঘুরে দেখা, নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে পুনরায় নিজের সংস্কৃতিকে আবিষ্কার করা এবং বিনা অর্থে নিজের বাসস্থানকে ট্রাভেলারদের জন্য খুলে দেওয়াই এর আনন্দ ও সৌন্দর্য। ভ্রমণপিপাসুদের এমন নেটওয়ার্কিং বিশ্বের মধ্যে গড়ে তুলছে একটি অসাম্প্রদায়িক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক।

ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top