skip to Main Content

ফিচার I করপোরেট ডায়েট

কর্মক্ষেত্রে দক্ষতা বজায় রাখার জন্য শরীর সুস্থ-সবল রাখতে হয়। পরিমিত স্বাস্থ্যকর খাদ্য ও পানীয় এর চাবিকাঠি। লিখেছেন তামান্না চৌধুরী

দিনের অনেকটা সময় অফিসেই কাটে। ডেস্কে বসে কিংবা মাঠ চষে সপ্তাহে পাঁচ থেকে ছয় দিন জীবিকার ঘানি টানতে হয়। কাজের চাপে স্বাস্থ্যের দিকে নজর দেওয়ার ফুরসত হয় না। ফলে একসময় শরীর ক্লান্ত হয়ে যায়। মেজাজ হয় খিটখিটে। তখন কাজের মান ভালো হয় না। কপাল মন্দ হলে চাকরিচ্যুতি! তাই ব্যস্ততা যতই হোক, স্বাস্থ্যের প্রতি অবহেলা নয়।
সুস্বাস্থ্যের চাবিকাঠি সুখাদ্য। সঠিক ডায়েট। করপোরেট কালচারে শারীরিক ছাড়া মানসিক ধকলও যায়। প্রচুর মাথা খাটাতে হয়। চ্যালেঞ্জের চাপও বেশি। লাগে উদ্ভাবনী ক্ষমতাও। তাই মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখা জরুরি। মানসম্মত যাপন নিশ্চিত করা গেলেই কর্মক্ষেত্রে উন্নতি সম্ভব। তিনটি বিষয়ে খেয়াল রাখলে করপোরেট জীবন স্বাস্থ্যকর হয়ে উঠতে পারে—এনার্জেটিক থাকা, স্ট্রেস ফ্রি থাকা এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা।
প্রতিদিন ব্যালান্সড ক্যালরির মধ্যে থাকতে হবে। বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে সকালের নাশতায়। অফিস শেষে যারা খুব রাতে বাড়ি ফেরেন, তারা হয়তো সকালবেলা অফিসে যেতে খুব তাড়াহুড়া করেন। এমনকি সকালের নাশতা না খেয়েই বেরিয়ে পড়েন। এটা ঠিক হবে না। এনার্জেটিক থাকার মূল শর্ত—সকালের নাশতা যথাযথভাবে খাওয়া। রুটি, ভাজি, কর্নফ্লেক্স, ওটস, দুধ ও ডিম রাখলে দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেলের ঘাটতি পূরণ হয়। ফলে দিনের শুরুতেই এনার্জেটিক হয়ে বাসা থেকে বেরোনো যায়। অফিসে ঢুকে দিনব্যাপী কর্মচঞ্চল থাকতে চাইলে অল্প পরিমাণ খাবার বারবার খেতে পারেন। সে জন্য কিছু হালকা খাবার টেবিলের পাশে রেখে দিতে পারেন। যেমন স্ন্যাকস, ড্রাই ফ্রুটস—খেজুর, বাদাম, দেশি ফল কিংবা বিস্কুট। দীর্ঘ সময় পেট খালি রাখা উচিত নয়। অনেক সময় মিটিং কিংবা অন্য কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে করতে বেশ বেলা হয়ে গেলেও দুপুরের খাওয়া হয় না। খাবারের সময় এলোমেলো না করে, প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে খাওয়ার অভ্যাস করলে সুস্থ থাকা যাবে। দুপুরের আগে একটা মিল থাকতে পারে। সাড়ে ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে। তারপর বেলা দেড়টা থেকে দুইটার মধ্যে লাঞ্চ সেরে ফেলতে পারেন। এভাবে চললে এনার্জেটিক থাকা যাবে।
স্ট্রেস ফ্রি থাকতে চাইলে মানসিক প্রশান্তির ব্যবস্থা থাকা জরুরি। এতেও খাবারের ভূমিকা আছে। সাধারণত করপোরেটে স্ট্রেস একটু বেশিই থাকে। তা যেন শরীরের কোনো ক্ষতি না করে, সে জন্য অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যুক্ত খাবার খেতে পারেন। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলবে। স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করবে। চা-কফি পানের পরিমাণ কমিয়ে দিলে উপকার পাওয়া যাবে। কিন্তু অনেকেই উল্টোটা করেন। চা-কফি ঘুমের সমস্যা করে। এগুলোকে ইরিটেটিং ফুড বলা হয়। সাময়িকভাবে কিছুটা স্বস্তি দিলেও পরবর্তীকালে এসব পানীয় স্ট্রেস বাড়িয়ে দেয়।
রাতে ঘুমানোর আগে এক গ্লাস দুধ বা দুগ্ধজাত খাবার খেতে পারেন। এতে সুনিদ্রা হয়। ভালো ঘুম হলে মাথা ঠান্ডা থাকবে। ফলে অবসাদমুক্ত থাকা যাবে। বেশিক্ষণ খালি পেটে থাকলেও দেহমনে ক্লান্তি ভর করে। মেজাজ খিটমিটে হয়ে যায়। সে জন্য অফিসে খালি পেটে থাকা উচিত নয়।
বাড়িতেও কিছু নিয়ম পালন করলে সুফল পাওয়া যাবে। যত দ্রুত সম্ভব ডিনার সেরে ফেলা উত্তম। এতে স্ট্রেস কমবে অনেকটা। রঙিন ফল ও শাকসবজি স্ট্রেস কমায়। টমেটো, বিট, গাজর—এগুলো খেতে পারেন স্যালাডে। মস্তিষ্ক কর্মক্ষম রাখতে বাদাম দারুণ কার্যকর।
সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা। ভারী শরীর করপোরেট আবহের সঙ্গে খাপ খায় না। কাজের ক্ষেত্রেও স্বস্তিকর নয়। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে পরিমিত কার্বোহাইড্রেট খেতে পারেন। ফ্যাটি ফুড, যেমন—ফাস্ট ফুড, সমুসা, শিঙাড়া এড়িয়ে চলা ভালো। আমাদের দেশে করপোরেট অফিসের আশপাশে বেশ কিছু ফাস্ট ফুড বা ওই জাতীয় দোকান থাকে। সে সব দোকানের খাবার থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকার চেষ্টা করলে ভালো ফল পাবেন।
বড় পজিশনে যেতে হলে একজন কর্মীকে অনেক দিন ধরে ভালোভাবে কাজ চালিয়ে যেতে হয়। সে ক্ষেত্রে শরীর সুস্থ রাখতে হবে। বাসার খাবারে অভ্যস্ত হতে হবে। ওয়েট ম্যানেজ করতে হলে একটি স্মার্ট লাঞ্চ বক্সে বাসা থেকে খাবার আনতে হবে। অফিসে গিয়ে সেটি রেফ্রিজারেটরে রাখতে পারেন। খাওয়ার আধা ঘণ্টা আগে সাধারণ তাপমাত্রায় খাবার রেখে দিলেই চলবে। খাওয়ার কিছুক্ষণ আগে মাইক্রোওয়েভ আভেনে গরম করে নিতে পারেন। গরম না করলেও চলে।
যারা ফিল্ড ওয়ার্ক করেন, তারা কিছু স্মার্ট ফুড সঙ্গে রাখতে পারেন। যেমন খেজুর। এটি খুব এনার্জেটিক খাবার। তা ছাড়া ছোট ছোট ক্র্যাকার্স, আপেল, মাল্টা কিংবা আমাদের দেশীয় কিছু ফল রাখা যেতে পারে। কাজের মধ্যে এগুলো খেলে চনমনে থাকতে পারবেন। সম্ভব হলে ড্রাই ফ্রুটসের একটা মিক্সড প্যাক সঙ্গে রাখুন। কিছু কাজুবাদাম, একটু আমসত্ত্ব—এগুলো মিলিয়ে নিন।
করপোরেট ডায়েট ঋতুর ভিত্তিতে পরিবর্তিত হয়। যেমন গরমে স্যালাড খেয়ে অনেকে হজম করতে পারেন না। সে ক্ষেত্রে সহজে হজম হয় এমন খাবার খেতে পারেন। গরমে বাদাম না খাওয়াই ভালো। কেননা, বাদাম তাপ উৎপন্ন করে। গরমে দই উপকারী। বাদাম ছাড়াও গরমকালে চা-কফির বদলে ডাবের পানি ও লেবুপানি বেশি করে পান করতে পারেন। আবার শীতের সময় বাদাম, একটু র-চা, গ্রিন টি খাওয়া যেতে পারে। বর্তমানে উচ্চ রক্তচাপ একটি সাধারণ সমস্যা। এ জন্য করপোরেট ব্যক্তিদের উচিত হবে বছরে অন্তত একবার থাইরয়েড ও কোলেস্টেরল চেক করা। অতিরিক্ত লবণ না খাওয়াই ভালো। ধূমপান থেকে দূরে থাকতে হবে। কারণ, তা প্রেসার আরও বাড়িয়ে দেয়।
যারা ডেস্ক জব করেন, তাদের দৈনিক আধঘণ্টা করে হাঁটার অভ্যাস দরকার। এক ঘণ্টা পরপর ডেস্ক থেকে উঠে একটু নড়াচড়া করে নিতে পারেন। এ জন্য নিজের ফাইলটা নিজে বহন করা, লিফটের বদলে সিঁড়ি ব্যবহার করা উচিত। আর নিজের কাজগুলো নিজে করলে সুস্থ থাকতে পারবেন। সারা দিনে দুই লিটার পানি পান করা চাই। এসব ঠিকঠাকমতো মানতে পারলে একজন করপোরেট ব্যক্তি নিজের সুস্থতা নিশ্চিত করতে পারবেন।
tamannac@apollodhaka.com
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top