skip to Main Content

ফিচার I মেহেদি রঞ্জিত

নতুন জীবনে প্রবেশের স্মারক হিসেবে কনের হাত রাঙানো চাই। নানান নকশায়, বিচিত্র ভাবনায়। সে জন্য জানা দরকার এবারকার মেহেদির ট্রেন্ডগুলো

প্রিন্ট আর প্যাটার্ন
মেহেদি ডিজাইনে পেইজলি বা কলকা প্রিন্ট ক্ল্যাসিক। আকৃতির বিভিন্নতার পাশাপাশি ফর্মের বৈচিত্র্য এর জনপ্রিয়তার মূল কারণ। সাধারণত ছোট পেইজলি আঁকা হয় আঙুলের অংশে, আর হাতের তালুতেই বেশি সুন্দর ফোটে বড় পেইজলি মোটিফ। এ দুয়ের মধ্যে সঠিক সমন্বয় আর রেখার সূক্ষ্মতায় ডিজাইনের সৌন্দর্য ফুটে ওঠে পুরোপুরি। ব্রাইডাল মেহেদিতে চেকার্ড মোটিফও বহুল ব্যবহৃত। হাতভর্তি মেহেদির ঘন ডিজাইন চাইলে এটাই সবচেয়ে সুন্দর ও সহজ অপশন। অন্য যেকোনো প্যাটার্নের সঙ্গে দারুণ মানিয়ে যায় চেকার্ড। স্পাইরাল মোটিফেরও ব্যবহার হয় মেহেদির আঁকিবুঁকিতে। আঁকাবাঁকা ডিজাইন মেনে ফুটিয়ে তোলা হয় ফুল, পাখিসহ নানান বিমূর্ত নকশা। তবে লেটেস্ট ব্রাইডাল মেহেদি প্যাটার্নে এখন সবচেয়ে এগিয়ে লেইসি মোটিফ। সনাতন নকশা থেকে খানিকটা আলাদা হওয়ায় নজর কাড়ে সহজেই। জালের মতো ছড়িয়ে থাকা ডিজাইনের সঙ্গে অনায়াসেই জুড়ে দেওয়া যায় ফুল, লতা-পাতা, এমনকি পাখিও। হাতের সঙ্গে মিল রেখে পায়ে পরে নেওয়া যায় লেইসি ডিজাইনের মেহেদি।
মোটিফে মডার্ন
আধুনিক কনেদের জন্য। যারা হাল ফ্যাশনের অনুসারী। পছন্দ করেন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নিজস্ব ধারা সৃষ্টি করতে। আর ট্রেন্ডসেটার কনেদের জন্য দারুণ অপশন এসব আউট অব দ্য বক্স মেহেদি ডিজাইন। যেমন- কনে যদি ডিজনির ভক্ত হয়ে থাকেন, মেহেদি দিয়ে ফুটিয়ে তোলা যেতে পারে রূপকথার নানান দৃশ্যপট। আলাদিন-জেসমিন জোড়ের সঙ্গে অ্যারাবিক ধাঁচের স্কাইলাইন এঁকে নেওয়া যেতে পারে হাতের ক্যানভাসে। সঙ্গে জালি ডিজাইনের সূক্ষ্ম কারুকাজের মধ্যে ফুটুক গোলাপ, পদ্ম অথবা বর-কনের নাম। মডার্ন মোটিফ হিসেবে এখন কনেদের হাতে অহরহই নজরে আসে নানা আকৃতির ঘণ্টা, গরম ধোঁয়া ওড়ানো চায়ের কাপ-পিরিচ থেকে প্রেমের মোটিফ। জালি, পাতা আর ম্যান্ডেলার সঙ্গতে। এ বছরের ব্রাইডাল মেহেদি ডিজাইনে দেখা মিলবে খাঁচাসমেত এবং মুক্ত বিহঙ্গ। পুরোনো রীতি মতে, এটা একই সঙ্গে স্বাধীনতা এবং জীবনের নতুন অধ্যায় শুরুর প্রতীক। যেসব কনের সাদামাটা কিন্তু অর্থবহ ডিজাইন পছন্দ, তাদের জন্য চমৎকার অপশন হতে পারে এটি। যাদের আদিবাসী আর্টের প্রতি দুর্বলতা রয়েছে, তারা ট্রাইবাল ক্যারিকেচারের ওয়ারলি পেইন্টিং আঁকিয়ে নিতে পারেন হাতে। যাতে ফুটে উঠতে পারে দোলনা, মাটির কলসি, পাখি, পদ্মের মতো ক্ল্যাসিক ট্রাইবাল মোটিফ।
ম্যান্ডেলা
আধ্যাত্মিক এবং ধর্মীয় আচারের প্রতীক হিসেবে বিশ্বজুড়ে প্রচলিত এ ডিজাইন। বিয়ের মেহেদিতেও এর ব্যবহার বহুদিনের। সাধারণত হাতের মাঝের অংশে আঁকা হয় ম্যান্ডেলা। এর চারপাশজুড়ে দেওয়া হয় ফুলের পাপড়ি অথবা জালে জড়ানো ডিজাইন। অনেক সময় দুহাতে অর্ধেক অর্ধেক ম্যান্ডেলা এঁকেও একটি সম্পূর্ণ নকশা তৈরি হয়। তবে খেয়াল রাখতে হবে, এর আকার যেন ঠিক থাকে, রেখাগুলো সূক্ষ্ম আর সুন্দর হয়। তবেই ম্যান্ডেলা আঁকা মেহেদি নজর কাড়বে।
মন্ত্রমুগ্ধ
সনাতন ধর্মাবলম্বী কনেদের জন্য। এতে মেহেদি দিয়ে ফুটিয়ে তোলা হয় বিয়েসংক্রান্ত সংস্কৃত শ্লোক, ধর্মীয় সংকেত আর মন্ত্র। শুভ তো বটেই, অনেকেই মানেন, বিয়ে-পরবর্তী জীবনে আশীর্বাদস্বরূপ এ মোটিফগুলো। এর সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয় বিয়ের নানান আচার, আয়োজন আর বাদ্যযন্ত্রের ছবি। কখনো ফোটে পদ্ম, কখনো ওড়ে পাখি। সাজে পুরো হাত।
ফুলে ফুলে
মেহেদিতে সবচেয়ে সুন্দর দেখায় ফুল। লতাপাতা জড়ানো ফুটন্ত ফুলের আঁকিবুঁকিতে যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে কনের হাতজোড়া। এ বছর ট্রেন্ডে পদ্ম মোটিফ থাকবে সবচেয়ে এগিয়ে। এর পরপরই তালিকায় থাকবে গোলাপ আর টিউলিপের নাম। ভরাট মেহেদি মাখা অংশে নেগেটিভ স্পেস ফর্মুলায় হাতে হঠাৎ যদি এসব ফুল ফুটে ওঠে, মন্দ দেখাবে না কিন্তু। এ ছাড়া হাতজুড়ে একটা ফুলকে হাইলাইট করে তার চারপাশে জালি, পাতা, পাখির ডিজাইনের সংমিশ্রণে তৈরি হতে পারে সনাতন আর সমসাময়িকতার মেলবন্ধন। বড় ফুলে স্বচ্ছন্দ না হলে ছোট ছোট ফুলও ছড়িয়ে থাকতে পারে হাতের ইতিউতিজুড়ে। হাতের কবজিজুড়ে ব্রেসলেটের মতো ডিজাইনেও ফুটতে পারে ফুল।
আভিজাত্যের আবেদন
আভিজাত্য যাদের পছন্দ তাদের জন্য মেহেদির এই ডিজাইন। রাজপ্রাসাদের স্থাপত্য থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে হাতে ফুটে ওঠে মেহেদির রঙ। ডিজাইন নেওয়া যেতে পারে ডোম, পিলার এমনকি দরজার সূক্ষ্ম কারুকাজ থেকেও। রাজা-রানির মোটিফ তো অনেক আগে থেকেই জনপ্রিয় মেহেদির নকশায়। মুখ দুটি ফোকাসে রেখে সূক্ষ্ম প্যাটার্নের কারুকাজ করা হয় একে ঘিরে। তাতেই সৃষ্টি হয় আভিজাত্যের আকর্ষণ।
জীবে জীবন্ত
মেহেদির সাদামাটা ডিজাইনকে আকর্ষক করে তুলতে হাতি, ময়ূরের মতো প্রাণীদের মিনিয়েচার মোটিফ ব্যবহৃত হচ্ছে কনের হাত রাঙাতে। তবে সূক্ষ্ম ও সুস্পষ্ট হতে হবে প্রতিটি রেখা। নইলে হিতে বিপরীতটাই ঘটবে।
কল্পকথায়
বিয়ের কাহিনি রূপ আজকাল শোভা পায় কনের হাতে। যাতে বর-কনের নাম, পরিচয়, পোর্ট্রেেটর সঙ্গে ফোটানো হয় বিয়ের গুরুত্বপূর্ণ সব অনুষঙ্গ। যেমন- পালকি, বরযাত্রা, বরমালা, সানাই থেকে আস্ত বিয়েবাড়ির দৃশ্যপট। কখনো ফুটিয়ে তোলা হয় বর-কনের পরিচয় থেকে বিয়ের আয়োজনের নানা পর্ব। হাতজোড়া হয়ে ওঠে উৎসবের গল্পে সাজানো ক্যানভাস। বিয়ের সাক্ষী।
অল্প গল্পে
যাদের অনেক বেশি হিজিবিজি পছন্দ নয়, তাদের জন্যও রয়েছে অভিনব সব মেহেদি পরার কৌশল। হাফ গ্লাভস ডিজাইন এ ক্ষেত্রে হতে পারে প্রথম পছন্দ। মডার্ন এবং মিনিম্যালিস্টিক কনেদের জন্য। মূলত হাতের কবজি থেকে আঙুলের গোড়ার অংশ পর্যন্ত ছড়ানো থাকে মেহেদির আঁকিবুঁকি। এ ক্ষেত্রে লেস ডিজাইনের সঙ্গে ছোট ছোট গোলাপের মিশেলে হাত সাজানো যেতে পারে। এ ছাড়া আঙুলই হতে পারে মূল ফোকাস। সূক্ষ্ম জালে জড়ানো ডিজাইনে জুড়ে দেওয়া যেতে পারে পাতা অথবা ফুল। তখন বাকি অংশে করা হবে হালকা নকশা। এ ছাড়া পুরো হাত খালি রেখে আঙুল থেকে কবজি অব্দি যদি মেহেদির রেখা টেনে নেওয়া যায়, তাহলেও কিন্তু দারুণ দেখাবে। সে ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হতে পারে স্থাপত্য থেকে ফুল- যেকোনো কিছু অনুপ্রাণিত নকশা।

 জাহেরা শিরীন
মডেল: শ্রাবণী, মায়িশা ও মৌসুম
ওয়্যারড্রোব: রিলা’স
জুয়েলারি: স্পার্কেল
মেকওভার ও হেনা আর্ট: পারসোনা
ছবি: সৈয়দ অয়ন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top