skip to Main Content

ই-শপ I লা ভি এন রোজ

অনেক উদ্যোক্তাই নিজেদের ব্যবসায়িক পদক্ষেপের মাধ্যমে নারী কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করেছেন। বেশ কিছু ই-শপে প্রডাক্ট প্রক্রিয়াজাত থেকে শুরু করে প্যাকেজিং পর্যন্ত সবকিছুই করেন নারীরা।
লা ভি এন রোজের জন্ম হঠাৎ করে, পূর্বপরিকল্পনা ছাড়াই। এটি আসলে নারীর আত্মমর্যাদাবোধ থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প। মুনজারিন জামান, লা ভি এন রোজের কর্ণধার, ফকির অ্যাপারেলসের ডিরেক্টরদের একজন। তিনি অপারেশন অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যানিং নিয়ে কাজ করেন। কাজের সূত্রেই তিনি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠানের খোঁজ পান, যার ভিত্তি এমন কিছু গোলাপ, যেগুলো সারা বছরই তাজা থাকে। কৌতূহলের বশেই তিনি এই ফুলের আয়ু বাড়াতে কী প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়, তা খুব খেয়াল করে দেখেন। প্রক্রিয়াটিও লক্ষ করেন। তার কাছে প্রয়োজনীয় যে পুঁজি ও সরঞ্জাম ছিল। নানা চড়াই-উতরাইয়ের মধ্য দিয়ে পুরো প্রক্রিয়াটি কয়েক মাসের মধ্যেই আয়ত্ত করে ফেললেন।
লা ভি এন রোজের যাত্রা শুরু করার আগে তিনি প্রক্রিয়ায় হাত দেননি। কারণ, তার পক্ষে বোঝা কঠিন ছিল যে স্থানীয় বাজারে সাড়া পাওয়া যাবে কি না কিংবা কতটুকু মিলবে। ২০১৭ সালে শুরু হলো লা ভি এন রোজের যাত্রা। সম্ভাব্য ঝুঁকি মাথায় নিয়েই। কিন্তু খুব কম সময়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠল এটি। মুনজারিনের ঘুরে দাঁড়ানোর গল্পটি কেমন?
২০১৪ সালে একটা বড় দুর্ঘটনায় পড়েন তিনি। বেশ কিছুদিন সংজ্ঞাহীনও ছিলেন। যার কারণে তার মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার হয়। এরপর আশপাশের লোকজন এমনকি কাছের মানুষও তাকে মমতা মেশানো করুণার চোখে দেখতে থাকেন। মুনজারিনের মনে হতে লাগলো, এরপরও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন কি না, তা সন্দেহের চোখে দেখছে সবাই। তাদের কেউ কেউ তাকে পড়াশোনা চালিয়ে যেতেও নিরুৎসাহিত করেন। এসব নিয়ে তিনি হতাশায় ভুগছিলেন। কিন্তু ভেঙে পড়েননি, বরং মনে শক্তি সঞ্চয় করলেন। দুর্ঘটনার চার মাসের মাথায় তিনি নিউইয়র্কে চলে যান পড়াশোনার জন্য। লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস থেকে প্রথম শ্রেণির স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে ২০১৭ সালের জুনে তিনি বাংলাদেশে ফিরে আসেন এবং নিজের পারিবারিক ব্যবসায় যোগ দেন। এরপর সেপ্টেম্বর থেকে যাত্রা শুরু হয় লা ভি এন রোজের। বর্তমানে তিনি একাধারে ফকির অ্যাপারেলস এবং গ্রিন ভিউ রিসোর্টের একজন ডিরেক্টর। পাশাপাশি লা ভি এন রোজের সিইও। মুনজারিন বলেন, ‘এখন আমি তাদের ভুল প্রমাণিত করতে পারি, যারা একজন নারীর সামর্থ্য ও দক্ষতা নিয়ে সন্দেহ রাখে।’ লা ভি এন রোজ পরিচালনা করেন নারীরাই। এ নিয়ে তারা গর্বিত। মুনজারিন এই বিষয়ে বলেন, ‘দিন দিন আমাদের প্ল্যাটফর্ম যত বড় হচ্ছে, তত বেশি নারীর কর্মসংস্থান করতে আমরা সক্ষম হচ্ছি। পাশাপাশি তাদের মাসিক বেতনের বাজেটিং এবং ভবিষ্যতে নিজেদের সফল উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে ওঠার শিক্ষা দিচ্ছি।
লা ভি এন রোজের গোলাপের চাষ হয় ইকুয়েডর ও কলম্বিয়ায়। সেগুলো সংগ্রহ করে নিয়ে আসা হয় ঢাকায়। তারপর কোম্পানিটির নিজস্ব সলিউশন এবং প্যানটোন কালার দেওয়া হয়। চলে পরিচর্যা। ফলে, ফুলগুলো বছরজুড়ে থাকে সতেজ। গ্রাহকদের পছন্দমতো প্যারিসিয়ান সিগনেচার হ্যাটবক্সে প্যাক করে ডেলিভারি কিংবা পিকআপের জন্য প্রস্তুত করা হয় সেগুলো। ঢাকা ও সিঙ্গাপুরে লা ভি এন রোজের কার্যক্রম চলছে। এই পণ্য ভারত ও নেপালে রপ্তানি করা হয়। সময়, শ্রম এবং পুঁজির ব্যাপকতার কারণে এর দাম বেশ চড়া। তবে গুণে ও মানে যে কারোর কাছেই সমাদরযোগ্য। এই ই-শপের ফেসবুক পেজ লিংক: https://www.facebook.com/LVeR2017/
ভবিষ্যতে আরও অন্য কিছু ফুলও নিজেদের প্রডাক্ট লাইনে যোগ করার ইচ্ছা পোষণ করেন মুনজারিন। কোনো আউটলেট দেওয়ার ইচ্ছা তার নেই। কেননা এই ব্যবসার প্রকৃতি অনুযায়ী তিনি মনে করেন, অনলাইন প্ল্যাটফর্মেই এটা খুব ভালো ফল দেবে। এই ই-শপ নারী উদ্যোক্তাদের কৃতিত্বের গল্প স্থানীয় এবং বৈদেশিক পরিসরে ছড়িয়ে দিচ্ছে। তবে তাদের বিশ্বাস, নারীর সফলতার পেছনে বাবা কিংবা স্বামীর ভূমিকা কম নয়। সেই সব পুরুষকে সম্মান জানানোর জন্য তারা প্যাকেজিংয়ের মাধ্যমে একটা ভিন্ন প্রডাক্ট লাইন তৈরি করতে চান।

 শিরীন অন্যা
ছবি: লা ভি এন রোজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top