skip to Main Content

বিউটি ব্লগার I ব্লগার’স ব্রাইড

বিশ্বখ্যাত হাইএন্ড কসমেটিক ব্র্যান্ড ইংলট। বাংলাদেশে নিয়ে এসেছে আন্তর্জাতিক মানের অফিশিয়াল ফ্র্যাঞ্চাইজি স্টোর। এবারই প্রথম। ‘ইংলট বাংলাদেশ’ নামে। যা এ দেশে ব্র্যান্ডটির এক্সক্লুসিভ কান্ট্রি ফ্র্যাঞ্চাইজি। হাইএন্ড হলেও মেকআপপ্রেমীদের হাতের নাগালে থাকা এর প্রতিটি পণ্যে নিশ্চিত করা হয় সর্বোচ্চ মান। ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে যায় সেরাটাই।
ইংলটের বিশেষত্ব কী? সর্বশেষ বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির সঙ্গে উজ্জ্বল ও আনকোরা সব রঙের মিশেলে তৈরি প্রতিটি পণ্যই এর জবাব। একেকটি মেকআপ রেঞ্জের বেলায়ও একই কথা। ইংলটের পণ্যের কালার ডাইমেনশন ঈর্ষণীয়। অধিকন্তু, এর রয়েছে পণ্যের বৈচিত্র্যপূর্ণ বিশাল সম্ভার। ফলে বিশ্বব্যাপী মেকআপপ্রেমীদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে এই ব্র্যান্ডের স্থান।
ইংলটের আছে নিজস্ব ‘ফ্রিডম সিস্টেম’। মেকআপ প্রডাক্ট বাছাইয়ের এক অনবদ্য সমাধান এটি। যার মাধ্যমে পছন্দসই প্রডাক্টগুলো বেছে নিয়ে একটি প্যালেটে সংগ্রহের সুযোগ মেলে। তৈরি করা যায় নিজস্ব কাস্টমাইজ মেকআপ প্যালেট। মিক্সড অ্যান্ড ম্যাচের মাধ্যমে। এগুলো পরিবেশসম্মত এবং পুনরায় ব্যবহারোপযোগী। ব্র্যান্ডটির সব পণ্যের পিগমেন্টও অতুলনীয়। যার কদর রয়েছে বিশ্বব্যাপী।

লেখা: শিরীন অন্যা
ছবি: ফারাবি তমাল
লোকেশন: স্টুডিও ক্যানভাস

সাহিদা আহসান
বিপণন বিষয়ে পড়াশোনা করা সাহিদা আহসান শখের বশেই আসেন মেকআপ ইন্ডাস্ট্রিতে। বিয়ের পর স্বামীর ব্যবসা দেখাশোনা করতেন। অফিসের অবসর সময় ফেসবুকের মেয়েবন্ধুদের নিয়ে একটা গ্রুপ তৈরি করেন। প্রায় প্রতিদিন তিনি তার মেকআপ লুক কিংবা আউটফিট ওই গ্রুপে পোস্ট করতেন। অনেক সময় মেকআপের রিভিউও পোস্ট করতেন। একসময় তার মেকআপ লুক নিয়ে টিউটরিয়াল করার কথা বলতে থাকেন বন্ধুরা। এভাবেই ২০১৫ থেকে প্রথমে শুধু গ্রুপে এবং পরবর্তীকালে নিজের পেজ থেকে লাইভে এসে মেকআপ ব্লগিং শুরু করেন সাহিদা। ছোটবেলা থেকেই তার বন্ধুদের কিংবা ছোট বোনদের সাজাতে খুব ভালোবাসতেন। ২০১৪ সালে ব্যাংককে একটা মেকআপ ওয়ার্কশপও করেন তিনি।
বাংলাদেশে সাহিদার অনুপ্রেরণা কানিজ আলমাস খান। দেশের বাইরে নিকি টিউটরিয়াল তাকে উদ্দীপ্ত করে। তার মতে নিকির সাজকৌশলের মাধ্যমে বোঝা যায়, মেকআপ দিয়ে আসলে একজনের ফেসের কত ধরনের রূপান্তর সম্ভব। এ ছাড়া কিম কার্দাশিয়ান, কাইলি জেনার, হুদা কাত্তান- এদের কাজও প্রতিনিয়ত দেখেন তিনি।
সবাই এখন মেকআপে ত্রুটিহীন এবং হালকা বেইজ চান। সাহিদাও এর ব্যতিক্রম নন। তবে তিনি হাইলাইটার ব্যবহারের ক্ষেত্রে একটু ব্যতিক্রমী। এর ব্যবহারে মুখ চকচকে না করে, ম্যাট লুক ধরে রাখতে পছন্দ করেন। এ ব্যাপারে সাহিদা বলেন, ‘যতটুকু না হলেই নয়, ততটুকু অবশ্যই ব্যবহার করি। খেয়াল রাখি, যেন কনের চেহারায় একটা স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা নিয়ে আসা যায়।’ বেইজ মেকআপের জন্য তার প্রথম পছন্দ হুদা বিউটির ফাউন্ডেশন। এ ছাড়া ব্রাইডাল মেকআপে ক্রাইলনের প্রডাক্টও ব্যবহার করেন। ইংলট, মরফি কিংবা হুদা বিউটির আইশ্যাডো প্যালেট আর জেফরি স্টারের লিপস্টিক ছাড়া সাহিদা কোনো মেকওভার কল্পনাও করতে পারেন না।
তার সিগনেচার স্টাইল হচ্ছে স্মোকি আই লুক। অর্থাৎ আউটফিটের রঙ যা-ই হোক না কেন, সাহিদা খুব সহজেই ওই রঙের সঙ্গে মিলিয়ে খুব সুন্দর স্মোকি আই করে ফেলতে পারেন। তার নিখুঁত বেইজ মেকআপেরও সুনাম রয়েছে। কোনো কনে তার কাছে তিন দিনের প্যাকেজে গেলে তিনি চেষ্টা করেন তিন দিন তিন ধরনের আই মেকআপ করে দিতে। হলুদে হতে পারে কাট ক্রিজ, বিয়েতে স্মোকি আই আবার বউভাতে সাধারণ স্পটলাইট আই মেকআপ।
সাজানোর আগে তিনি মাথায় রাখেন যেন কনের মেকআপ, হেয়ারস্টাইল- সবকিছু তার ব্যক্তিত্বের সঙ্গে মানিয়ে যায়। চেষ্টা করেন মেকআপের মাধ্যমে মায়াবী লুক ফুটিয়ে তুলতে। কনেদের জন্য সাহিদার পরামর্শ, মেকআপ আর্টিস্ট বেছে নেওয়ার আগে অবশ্যই তাদের আগের কাজগুলো খেয়াল করে দেখতে হবে। সে ক্ষেত্রে ফিনিশিং কেমন কিংবা তার মেকআপ ঠিকমতো ব্লেন্ড হয় কি না, তা-ও দেখা প্রয়োজন।

মডেল: আন্নি
ওয়্যারড্রোব ও জুয়েলারি: দ্য পার্পেল

সিলভী মাহমুদ
ফিনল্যান্ডে অধ্যয়নকালে প্রথম মেকআপের প্রতি ভালোবাসা জন্মে তার। ২০০৫ সালে। বিভিন্ন ধরনের মেকআপ কেনার শখ ছিল। নানা রঙের আইশ্যাডো আর গ্লিটার দেখলেই কিনতে ইচ্ছা করত। এতই কিনে ফেললেন যে সেসব কীভাবে কাজে লাগানো যায়- এই ভাবনায় অস্থির হয়ে পড়েন তিনি। এরপর তিনি ইউটিউবে মেকআপের ভিডিও দেখতে শুরু করলেন আর বিভিন্ন ধরনের মেকআপ লুক নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করতে লাগলেন। প্রাথমিকভাবে অ্যারাবিয়ান মেকআপ লুকগুলো খুব ভালো লাগত তার। কারণ, ওই সবে বিভিন্ন রঙের গ্লিটারগুলো খুব সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা যেত। এসব ভিডিও দেখতে দেখতেই তিনি মনস্থির করেন নিজের মতো কিছু করার। এরই পরিণতি- আজকের সিলভী মাহমুদ, একজন জনপ্রিয় বিউটি ব্লগার। এমনকি ‘মেকআপ বাই জ্যাজ’ নামে নিজস্ব মেকআপ ব্র্যান্ডও আছে তার।
একজন ফিনিশ মেয়ের মেকআপ দেখে শিখেছেন অনেক কিছু, যিনি ছিলেন ফিনল্যান্ডের একটা শপিং মলের ল্যানকম ব্র্যান্ডের মেকআপ ম্যানেজার। মেকআপে অনেক ব্র্যান্ডের প্রডাক্টই তিনি স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে ব্যবহার করেন। এর মধ্যে বিশেষভাবে বলেন ইংলটের নাম। আন্তর্জাতিক এ ব্র্যান্ডের পিগমেন্টগুলো সিলভির খুব পছন্দ। বেইজ মেকআপে তার ব্যক্তিগত পছন্দ হুদা বিউটি। অন্যদিকে নিজের ব্র্যান্ডের আইশ্যাডো, গ্লিটার, আইল্যাশ, মেকআপ ব্রাশ আর বিউটি ব্লেন্ডার ব্যবহারে তিনি সাবলীল। লিপস্টিকের মধ্যে পছন্দ এবিএইচের লিপ প্যালেট।
কনে সাজানোর ক্ষেত্রে ন্যুড লুক দিতে পছন্দ করেন সিলভি। তবে তার কাছে কনের নিজের মতামতই সবার ওপরে। এর সঙ্গে নিজের মেকআপ স্টাইল মিলিয়ে একটা ফলাফল বের করে আনেন। সাজানোর আগে তিনি ত্বকের সৌন্দর্যের খুব সাধারণ দিকগুলো লক্ষ রাখেন। সিলভী বলেন, ‘ব্রাইডাল মেকআপের আগে ত্বকের খুঁটিনাটি দেখে নিতে হয়। ফেসিয়াল করা আছে কি না, আইব্রাও আর আপার লিপ প্লাকড কি না, এসব দেখা জরুরি।’ তার মতে বিয়ের জন্য মেকআপ আর্টিস্ট বেছে নেওয়ার আগে জেনে নিতে হয়- কনের প্রত্যাশিত লুক তৈরিতে তিনি কতটা দক্ষ। এ ছাড়া ভালো মানের প্রডাক্ট জরুরি। কনের সঙ্গে মেকআপ আর্টিস্টের বোঝাপড়াটাও গুরুত্বপূর্ণ।

মডেল: রোজা খান
ওয়্যারড্রোব ও জুয়েলারি: দ্য পার্পেল স্টুডিও বাই জ্যাজ

তানিয়া তারিক
হাতেখড়ি নিজের বাসায়। ছোটবেলা থেকেই তিনি দেখতেন তার মাকে খুব সুন্দর করে মেকআপ করতে। তিন বোনও ছিলেন সমান পারদর্শী। সেখান থেকেই মেকআপ সম্পর্কে তার ধারণা সমৃদ্ধ হতে থাকে। ভালো লাগা থেকেই তানিয়া তারিকের এ জগতে প্রবেশ। বিউটি ব্লগিংয়ে তার বড় অনুপ্রেরণা বোন ও বন্ধুরা। সবাই খুব উৎসাহ জোগাতেন তাকে। এমনকি তানিয়া যখন স্কুলে পড়তেন, তখন থেকেই পরিবারের অনেককেই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যাওয়ার আগে তার কাছে সাজতে চাইতেন। তাদেরই প্রেরণা থেকে তিনি চার বছর ধরে বিউটি ব্লগার হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন।
খুব লাইট কিংবা ন্যুড মেকআপ পছন্দ তানিয়ার। চেষ্টা করেন হালকা বেইজ তৈরি করতে। এমনকি নিজের মেকআপেও চান ফাউন্ডেশন এড়াতে। শুধু কনসিলার আর সঙ্গে একটু কম্প্যাক্ট পাউডার লাগিয়েও তিনি খুব সুন্দর করে নিজের মুখশ্রী ফুটিয়ে তুলতে পারেন। তবে কনে সাজাতে ফুল কভারেজ ফাউন্ডেশন ব্যবহারের ক্ষেত্রে তার পছন্দ নারস, ম্যাক কিংবা এস্টি লডার। আইশ্যাডোর মধ্যে এবিএইচের প্যালেটগুলো। লিপস্টিকেও তাই। তবে ম্যাক, জেফরি স্টার কিংবা ড্রাগস্টোরের লিপস্টিকও ব্যবহার করেন তানিয়া। তার দারুন পছন্দের ব্র্যান্ড ইংলট। বলেন, ‘ইট মেকস মি বেসপোক।’
ব্রাইডাল মেকআপের ক্ষেত্রে তানিয়ার স্টাইল লাইট অ্যান্ড স্মোকি। খুব হালকা বেইজ মেকআপ করে চোখে বেশি করে কাজল দিয়ে অথবা স্মোকি আইড লুক তৈরি করতে ভালোবাসেন তিনি। তবে এখানে ক্লায়েন্টের ইচ্ছা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কেউ যদি খুব ভারী মেকআপ চান, তাহলে সেটাই তিনি করে দেন। রঙের দিক থেকে কনের কোনো পছন্দ থাকলে তা-ও মাথায় রাখেন। তানিয়া বলেন, ‘বিয়ের দিন কনেরা খুব ভারী আউটফিট আর জমকালো গয়না পরে, তাই আমার মতে মেকআপটা একটু হালকা হলে খুব সুন্দর একটা কনট্রাস্ট তৈরি হয়।’
একজন মেকআপ আর্টিস্ট বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন বিয়ের ভেন্যু থেকে মেকআপ স্টুডিওর দূরত্ব। তার মতে, এই জ্যামের শহরে যদি মেকআপ নিয়ে ভেন্যুতে পৌঁছাতেই কনের দেড়-দুই ঘণ্টা লেগে যায়, তবে সেটা খুবই বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। কনের প্রতি আর্টিস্টের মনোযোগ এবং যথাযথ উপকরণের ব্যবহারও তার কাছে জরুরি।

মডেল: মোহিনি
ওয়্যারড্রোব: আনজারা
জুয়েলারি: স্পার্কেল

লিয়া নাজ আহমেদ
যাত্রা শুরু হয় কসমেটিকসের প্রতি অসম্ভব ভালোবাসা থেকে। শৈশবেরই ঝোঁক ছিল এটি। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন ধরনের মেকআপ সংগ্রহ করার নেশা চেপে ধরল। এসব ব্যবহার করে এক্সপেরিমেন্টও করতে লাগলেন। মেকওভারে তার দক্ষতা দিন দিন বাড়তে লাগল। যেকোনো অনুষ্ঠানে নিজের ছোট বোনকে কিংবা ভাবিদের সাজিয়ে দিতেন এবং বেশ প্রশংসাও পেতেন। ২০১৭ সালে ছোট বোনের উৎসাহে খুলে ফেললেন নিজের ফেসবুক পেজ। তারপর সেই পেজ থেকে বিভিন্ন মেকআপের রিভিউ দেওয়া হয়; পাশাপাশি নিজের মেকআপ লুক নিয়ে কথা বলা কিংবা মেকআপ টিউটরিয়ালের মাধ্যমেই শুরু হয় বিউটি ব্লগার হিসেবে তার যাত্রা। নিজের ইউটিউবেও চ্যানেল তৈরি করেন।
মেকআপের ক্ষেত্রে জ্যাকলিন হিলকে অনুপ্রেরণা হিসেবে দেখেন তিনি। মেকআপের বেইজের ক্ষেত্রে লিয়ার পছন্দ নারস, মার্ক জ্যাকব এবং হুদা বিউটির ফাউন্ডেশন। আইশ্যাডো প্যালেটের ক্ষেত্রে তার বর্তমান পছন্দ হুদা বিউটির ন্যুড প্যালেট। এ ছাড়া সব সময় ব্যবহার করেন মরফির ৩৫এম আইশ্যাডো প্যালেট। ক্লায়েন্টকে সাজানোর ক্ষেত্রে সবসময় সঙ্গে রাখেন ইংলটের পিগমেন্টগুলো। লিপস্টিকের মধ্যে তার পছন্দ জেফরি স্টারের লিপস্টিকগুলো। কারণ, এগুলো অনেক বেশি পিগমেন্টেড এবং সারা দিনের জন্য ঠোঁটে লাগিয়ে রাখা যায়।
সাজানোর আগে কনের ইচ্ছাটাকেই সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেওয়ার চেষ্টা করেন লিয়া। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সব মেয়েরই ইচ্ছা থাকে বিয়েতে সবচেয়ে সুন্দরভাবে নিজেদের সাজানোর। তাই চেষ্টা করি মনের মতো লুকটাই যেন সে পায়। অনেকেই আছেন আবার খুব হালকা বেইজ চান, কেউ কেউ খুব ভারী কনট্যুর করতে চান। সবকিছু মিলিয়েই কনের ইচ্ছা জেনে নিই সবার আগে।’ এ ছাড়া তার চোখ কেমন, সেখানে কী মেকআপ করলে ফুটে উঠবে, তার ঠোঁটের গঠন- সবকিছু মাথায় রাখেন লিয়া। ব্রাইডাল মেকআপ আর্টিস্ট বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে সবার আগে ওই আর্টিস্ট কেমন প্রডাক্ট ব্যবহার করছেন, তা জেনে নেওয়ার পরামর্শ দেন। কারণ, এক দিনের সাজই যদি পরবর্তীকালে ত্বকের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি করে ফেলে, তাহলে সেটা মেনে নেওয়া যায় না। মেকআপ করার সময়ও তিনি কিছু ব্যাপার খেয়াল করতে বলেন। যেমন- কনের জন্য যেসব মেকআপ টুল ব্যবহৃত হচ্ছে, সেগুলো পরিষ্কার কি না, কনের চাহিদামাফিক মেকআপ আর্টিস্ট কাজ করছেন কি না ইত্যাদি।

মডেল: অরণী
ওয়্যারড্রোব: আনজারা
জুয়েলারি: স্পার্কেল

মারিয়া মৃত্তিক
শুরুটা অনলাইন ব্যবসার হাত ধরে। ২০১৪ সাল থেকে তিনি মেকআপ প্রডাক্ট ইমপোর্ট করতেন। ব্যবসার সুবাদেই বিভিন্ন ধরনের সৌন্দর্যপণ্য নিয়ে তিনি পরীক্ষা-নিরীক্ষার পাশাপাশি নিজের ত্বকেও সেসব প্রয়োগ করে দেখতেন। এভাবেই ধীরে ধীরে তার মধ্যে মেকআপ করার ইচ্ছা ও দক্ষতা- দুটোই বাড়তে থাকে। এরপর শুরু করেন বিভিন্ন বিজ্ঞাপন ও টিভি শুটের কাজ। মারিয়া যুক্ত হন ইংলট, সিনিকেয়ার ইত্যাদি বড় ব্র্যান্ডের সঙ্গেও। শুরু হয় মেকআপ ব্লগার হিসেবে মারিয়ার ক্যারিয়ার। মেকআপে হুদা বিউটি আর নিকি টিউটরিয়াল তার প্রারম্ভিক অনুপ্রেরণা। কিন্তু তিনি মেকআপের মূল বিষয়গুলো শিখেছেন ভারতীয় মেকআপ আর্টিস্ট সোয়াতি ভারমার কাছ থেকে। তার কাছে থেকে প্রশিক্ষণও নেন।
পছন্দের মেকআপ সম্পর্কে জানতে চাইলে মারিয়া বলেন ইংলটের কথা। বিশেষ করে ব্র্যান্ডটির আইশ্যাডো আর পিগমেন্টগুলো। এগুলোতে কোনো ফলআউট হয় না। আর পিগমেন্টগুলোর মধ্যেও রয়েছে বৈচিত্র্য, যেখানে কাক্সিক্ষত রঙগুলো সহজলভ্য। এ ছাড়া ইংলটের লিপস্টিক তার পছন্দ। পাশাপাশি হুদা বিউটি, মরফি কিংবা নারসের ফাউন্ডেশন এবং আইশ্যাডো প্যালেটগুলো ব্যবহার করতেও তিনি বেশ স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।
ব্রাইডাল মেকআপের ক্ষেত্রে মারিয়ার সিগনেচার স্টাইল- ন্যাচারাল অ্যান্ড গ্লোয়ি। অর্থাৎ কনের স্বাভাবিক স্কিনটোন ধরে রেখে একটু গ্ল্যাম অ্যান্ড গ্লো ধাঁচের মেকআপ তার প্রিয়। খুব গাঢ় কনট্যুর না করেও চেহারায় তীক্ষèতা নিয়ে আসতে ভালোবাসেন তিনি। বিয়ের সাজে কনের নিজস্ব রুচিকে প্রাধান্য দেন। প্রত্যাশিত যে লুক ব্রাইডের কল্পনার মধ্যে থাকে, সেটার সঙ্গে নিজের স্টাইলের মিশেলে কাজ করেন মারিয়া। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমার জীবনে তো আরও অনেক ক্লায়েন্ট আসবে, কিন্তু তার বিয়ের দিন একবারই আসবে। সে জন্যই আমি চেষ্টা করি যতটা সম্ভব বন্ধুর মতো তার ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিতে। তাকে পুরোপুরি সন্তুষ্ট করতে।’
কনেদের জন্য তার পরামর্শ হলো, মেকআপ আর্টিস্ট বেছে নেওয়ার আগে অবশ্যই জেনে নেওয়া যে সে কী প্রডাক্ট ব্যবহার করছে। কারণ, অনেক সময় ওই এক দিনের আজেবাজে প্রডাক্টের ব্যবহার ত্বকে দীর্ঘমেয়াদি বাজে প্রভাব ফেলতে পারে। তিনি বলেন, মেকআপ আর্টিস্টের সঙ্গে এটাও বলে নিতে হবে, এমন সাজ না দেওয়া হয়, যা কনেকে অপরিচিত করে তোলে।

মডেল: বারিশ হক
ওয়্যারড্রোব: জে কে ফরেন ব্র্যান্ডস
জুয়েলারি: আরিশা’স জুয়েলারি

নিদিয়া আফরোজ
নব্বইয়ের দশকে শুরু। যখন খুব বেশি স্যালন কিংবা মেকওভার স্টুডিও ছিল না। তিনি তখন কলেজে পড়েন। সে সময় মেকআপের প্রতি আকৃষ্ট হন নিদিয়া আফরোজ। নিজে সাজতে ভালোবাসতেন। বন্ধুরাও তার মেকআপ খুব পছন্দ করতেন এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যাওয়ার আগে তার কাছে সাজতে আসতেন। এভাবেই মেকওভারের হাত পাকা হতে থাকে নিদিয়ার। তার এক খালাতো বোন খুব সুন্দর মেকআপ করতেন। এই বোনই ছিলেন তার অনুপ্রেরণা। একসময় দেশে মেকআপের ওপর বিভিন্ন কোর্সে প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করলেন তিনি। এরপর ২০১৮ সালে দেশের বাইরে থেকে ব্রাইডাল মেকআপ শিখে আসেন। এভাবেই শুরু হয় মেকআপ ব্লগার হিসেবে নিদিয়ার যাত্রা।
বিয়ের কনে সাজানোর ক্ষেত্রে আধুনিকতার ছোঁয়ায় সংস্কৃতিটা ধরে রাখার চেষ্টা করেন তিনি। কনের ত্বকের ধরন কেমন, তা জেনে নেন আগেই। কারণ, সব ধরনের ত্বকে একই মেকআপ সমানভাবে ফুটে ওঠে না। বেইজ মেকআপে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন তিনি। নিদিয়া বলেন, ‘প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো বেইজ বা ফাউন্ডেশন। ত্বকের স্বাভাবিক রঙের সঙ্গে মিলিয়ে অথবা অনেক ক্ষেত্রে এক বা দুই শেড লাইট ফাউন্ডেশন সিলেক্ট করতে হবে। মুখের সঙ্গে গলার পার্থক্য যেন না থাকে, সে ব্যাপারেও খেয়াল রাখা জরুরি। বেইজ ভালো না হলে পুরো সাজটাই মাটি।’ নিদিয়ার পছন্দ নারস, হুদা বিউটি আর ক্রাইলনের ফাউন্ডেশন। ভালো পিগমেন্টেশন দেয় এমন যেকোনো আইশ্যাডো প্যালেট দিয়ে খুব সুন্দরভাবে চোখের মেকআপ ফুটিয়ে তুলতে পারেন তিনি। তাই ইংলট ব্র্যান্ডের নানা রঙের পিগমেন্ট সবসময় থাকে তার বিউটি বক্সে। এছাড়াও কাজ করেন এবিএইচ আর হুদা বিউটির আইশ্যাডো প্যালেট নিয়ে। এগুলো ছাড়াও পি লুইসের দ্য সিক্রেট সিনার আইশ্যাডো প্যালেট তার খুব পছন্দ। লিপস্টিকের ক্ষেত্রে ব্যবহার করেন এবিএইচের লিপ প্যালেট।
বিয়ের মেকআপ আর্টিস্ট বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে কনেদের অবশ্যই ভাবতে হবে যে, তার পছন্দের সাজে আর্টিস্ট কতটা মনোযোগী- এমনটাই বলেন নিদিয়া। সে জন্য বুকিং দেওয়ার আগে তার কাজের রিভিউ দেখে নেওয়া ভালো। সে কেমন মেকআপ ব্যবহার করছে এবং প্যাকেজগুলো কনের সাধ্যের মধ্যে কি না, এসবও জানা জরুরি। নিদিয়া আরও বলেন, ‘আমি মনে করি, একজন মেকআপ আর্টিস্টের ব্যবহারও খুব গুরুত্বপূর্ণ, যাতে একজন ক্লায়েন্ট তার সঙ্গে প্রত্যাশিত লুকের খুঁটিনাটি নিয়ে আলাপ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।’

মডেল: জয়ন্তী রেহনুমা
ওয়্যারড্রোব: আনজারা
জুয়েলারি: দ্য পার্পেল স্টুডিও বাই জ্যাজ

সোনিয়া খান
২০০৮ সালে শখের বশে নিজের বিউটি স্যালনের মাধ্যমে মেকআপ আর্টিস্ট হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি। কিন্তু ২০১২ সালে তা বন্ধ করে দিতে হয়েছিল। তারপরও মেকআপের বাইরের কোনো বিষয়ে তিনি মনোযোগ দিতে পারছিলেন না। নিজের শখটাকে আবার পেশা হিসেবে নেওয়ায় ২০১৫ সালে মেকআপ ইন্ডাস্ট্রিতে ফিরে আসেন সোনিয়া খান। শুরু করেন বিউটি ব্লগার হিসেবে যাত্রা।
মেকআপ আর্টিস্ট হিসেবে তার অনুপ্রেরণা কানিজ আলমাস খান, জাহিদ খান, আফরোজা পারভিন ও সাহিদা আহসান। তিনি বলেন, ‘মেকআপের জগতে এরাই আমার পথপ্রদর্শক। তাদের যা কিছু সেরা, তা থেকেই আমি অনুপ্রেরণা নিই।’
বেইজ মেকআপের জন্য সোনিয়ার পছন্দ লিকুইড ফাউন্ডেশন। আই প্যালেট কিংবা লিপস্টিকের ব্যবহার করেন মিক্স এন ম্যাচ করে। কোনো নির্দিষ্ট ব্র্যান্ড না হলেই না, তার মধ্যে এমন ভাবনা সাধারণত কাজ করে না। তবে সবার মতোই কিছু ব্র্যান্ড ব্যবহার করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। এর মধ্যে ইংলট, ম্যাক, মরফি, হুদা বিউটি অগ্রগণ্য। সোনিয়া বলেন, ‘ইংলটের জেল লাইনার ও গ্লিটার যাদুকরি। আর ডিউরালাইনের কথা তো না বললেই নয়। সাজে দারুন সহায়ক এটি।’ ব্রাইডাল মেকআপের ক্ষেত্রে তিনি ফিউশন স্টাইলে কনে সাজাতে ভালোবাসেন এবং চেষ্টা করেন সবচেয়ে ভালো ব্র্যান্ডগুলো ব্যবহার করে সাজানোর। কনে ব্রাইডাল মেকআপের আগে কিছু বিষয় অবশ্যই খেয়াল রাখেন। কনের ড্রেস আর জুয়েলারির পাশাপাশি তার পরিবারের কেমন লুক ভালো লাগবে, তা আলাপের মাধ্যমে জেনে নেন তিনি। এ ছাড়া জেনে নেন কনে লেন্সে স্বচ্ছন্দ কি না। কারণ, এই তথ্য তার চোখ সাজানোর কাজে লাগবে। কনের চুলের দৈর্ঘ্য, ঘনত্ব ও ধরন বুঝে কোন হেয়ারস্টাইল তিনি চান; সে সম্পর্কেও পরামর্শ দেন।
সোনিয়া বলেন, ‘একজন মেকআপ আর্টিস্ট বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রথমে তার কাজের ফিনিশিং যাচাই করতে হয়। সব মিলিয়ে তিনি একটি পরিপূর্ণ ব্রাইডাল লুক তৈরি করতে পারেন কি না, তা জেনে নেওয়া জরুরি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, তিনি সময়নিষ্ঠ কি না, তা জানা।’

মডেল: সিনি
ওয়্যারড্রোব: আনজারা
জুয়েলারি: স্পার্কেল

নাম্রাতা খান
মেকআপে মনোযোগী হওয়ার আগে ফ্যাশন নিয়েই ছিল তার ব্যস্ততা। হিজাব এবং অ্যাকসেসরিজের অনলাইন ব্যবসাও গড়ে তুলেছিলেন। এটা ২০১৪ সালের কথা। সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার হিসেবে যাত্রা শুরু করা নাম্রাতা খান কখনো ভাবেননি, একসময় তিনি বিউটি ব্লগার হয়ে উঠবেন। তার মতে, ওই সময়ে অনেকেই এত ভালো কাজ করত যে তিনি এটা পেশা হিসেবে নেওয়ার কথা মাথায়ও আনতেন না। তবে মেকআপের প্রতি তার ছিল অন্য রকম আকর্ষণ। কাজের ফাঁকে তাই নিজেই সাজতেন। মেকআপে প্রাতিষ্ঠানিক কোনো শিক্ষা তিনি নেননি। তবে তার সাজকৌশল দেখে আশপাশের মানুষ তাকে উৎসাহ দিতে লাগল এ নিয়ে কিছু করার জন্য। কাজের ক্ষেত্রে নাম্রাতা সব সময়ই বিদেশের মেকআপ আর্টিস্টদের অনুসরণ করতেন। জ্যাকলিন হিল, ক্যাথলিন লাইটস, ম্যানি মুয়া- এরা ছিলেন পছন্দের তালিকায়। এ ছাড়া দেশের মেকআপ আর্টিস্টদের মধ্যে নাহিলা হেদায়েত আর নাভিন আহমেদের কাজ খুব ভালো লাগে তার। তানসিয়া মুসাব্বিরের একটা ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণ করেন তিনি। নতুন কিছু শেখার চেয়েও আগ্রহ বেশি ছিল তার যে মেকআপ তিনি করছেন, সেটা ঠিক আছে কি না তা জানার। এভাবে সবার উৎসাহে ২০১৭ সাল থেকে বিউটি ব্লগার হিসেবে যাত্রা শুরু করেন নাম্রাতা।
নাম্রাতার সিগনেচার স্টাইল মিনিমালিস্টিক। অর্থাৎ উপাদান খুবই কম ব্যবহার করে হালকা বেজ তৈরি, তাতেই কনেকে আকর্ষণীয় করে তোলা। তিনি বলেন, ‘খুব ভারী মেকআপে কেকি লুক তৈরি না করে বরং কনের যে স্বাভাবিক স্কিনটোন, সেটা ধরে রেখে কনে সাজাতে আমি পছন্দ করি।’ খেয়াল রাখেন, কনের মুখত্বক, হাত আর গলার রঙের মধ্যে যেন একটা সামঞ্জস্য থাকে। নাম্রাতার মতে, মেকআপ করার আগে ত্বকের ধরন জেনে নেওয়া খুব জরুরি। তিনি বলেন, ‘আমি যদি তৈলাক্ত ত্বকের প্রাইমার কোনো শুষ্ক ত্বকে লাগিয়ে ফেলি, তাহলে মেকআপ কখনোই ঠিকভাবে বসবে না। তাই ত্বকের ধরন, ত্বকে কোনো প্রকার অ্যালার্জির সমস্যা আছে কি না, এ সবকিছু জেনে নেওয়া প্রয়োজন।’ তার পছন্দের আইশ্যাডো প্যালেটের মধ্যে রয়েছে এবিএইচের মডার্ন রিনেইসেন্স এবং সাল্ট্রি, হুদা বিউটির রোজ গোল্ড আর নিউ ন্যুড প্যালেট এবং জুভিয়াস প্যালেসের ম্যাস্ক্যারেড। লিপস্টিকের ক্ষেত্রে পছন্দসই শেড ক্যাট ভন ডির ললিটা আর লাভসিক, এবিএইচের ডাস্টি রোজ এবং হলিউড আর হুদা বিউটির বম্বশেল। মেকআপ ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে ইংলটও রয়েছে নাম্রাতার পছন্দের তালিকায়। তিনি বলেন, ‘ইংলটের প্রতিটি প্রডাক্টের পিগমেন্ট দারুণ। এগুলোকে টক্কর দেওয়ার মতো পণ্য বাজারে খুব কম মিলবে।’
কনেদের জন্য তার পরামর্শ, একাধিক মেকআপ আর্টিস্টের কাজ দেখে একজনকে বেছে নেওয়া। আর কনে কী লুক চান, তা অবশ্যই আগে থেকে ভেবে রাখতে হবে। নাম্রাতা বলেন, ‘কোনো মেকআপ লুকে চোখ ভালো লাগতে পারে, কোনোটার চুল। সব কটি ছবি নিয়ে নিজের মেকআপ আর্টিস্টের সঙ্গে কথা বলুন। কারণ, বিয়ের দিন আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তুলতে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করবে আপনার লুকটাই।’

মডেল: নিকি
ওয়্যারড্রোব: আনজারা
জুয়েলারি: স্পার্কেল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top