skip to Main Content

সেলুলয়েড I দ্য নেট (২০১৬)

ভাষা: কোরিয়ান
দেশ: দক্ষিণ কোরিয়া
কাহিনি, চিত্রনাট্য ও পরিচালনা: কিম কি-দুক
প্রযোজনা: কিম সুন-মো (কিম কি-দুক প্রোডাকশন কোম্পানি)
ডিরেক্টর অব ফটোগ্রাফি: কিম কি-দুক
প্রোডাকশন ডিজাইন: আন-জি-ইয়ে
সম্পাদনা: পার্ক মিন-সান
অভিনয়ে: রিও সেয়াং-বাম, লি ওন-গান, কিম ইয়ং-মিন, চই গাই-বাওয়া প্রমুখ

রাষ্ট্র, রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব, পররাষ্ট্রনীতি—এসবের কাছে সাধারণ নাগরিকের অস্তিত্ব ও যাপন অতিনগণ্য বিষয়। ‘সর্বশক্তিমান’ রাষ্ট্র একসময় সাধারণ নিরীহ নাগরিককেও নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবতে শুরু করে। কিম কি-দুকের ‘দ্য নেট’ রাষ্ট্রবাদের এই মুখচ্ছবি প্রকাশ করেছে। যেখানে সীমান্ত, সশস্ত্র বাহিনী, কর্তৃত্ব এবং রাষ্ট্রবাদের প্রতি নিজের ব্যক্তিসত্তার সমর্পণই নাগরিকের দায়িত্ব। জনকল্যাণ ও নাগরিকের মৌলিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার আর আকাক্সক্ষা পূরণে আধুনিক রাষ্ট্রের যে কর্তব্য, তার চেয়ে রাষ্ট্রের প্রতি নাগরিকের লয়্যালটি রাষ্ট্রনৈতিকতার দৃষ্টিকোণ থেকে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। দ্য নেট এমন সব চিন্তার মধ্যে দর্শককে নিয়ে যায়। কোরিয়ান চলচ্চিত্রী কিম কি-দুকের অন্য ছবিগুলোর তুলনায় এই ছবি কিছুটা আলাদা। তাঁর ছবি সচরাচর যেসব বিষয় বা মুড নিয়ে কাজ করে, এই ছবির কাহিনি, আবহ তা থেকে ভিন্ন। কিম কি-দুক নাগরিক তথা মানবসত্তার প্রতি রাষ্ট্রীয় সত্তার বৈরিতামূলক আচরণের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে এই ছবিকে করে তুলেছেন রাজনৈতিক।
ছবির গল্প খানিকটা এ রকম: উত্তর কোরিয়ার গরিব মৎস্যজীবী নম চুল-উ তার স্ত্রী ও কন্যাসন্তানকে নিয়ে নিজের দেশে সুখে-শান্তিতেই বাস করে। কিন্তু নদীতে একদিন মাছ ধরতে গেলে তার নৌকায় মাছ ধরার জাল আটকে যায়। বন্ধ হয়ে যায় ইঞ্জিন। উত্তর কোরিয়ার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর দৃষ্টিগোচর হওয়ার আগেই স্রোতে নৌকা ভেসে যায় দক্ষিণ কোরিয়ার সীমানায়। কোনোভাবেই নৌকাকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় সাউথ কোরিয়ায় গিয়ে থামে। মৎস্যজীবীকে গুপ্তচর সন্দেহে আটক করে সেখানকার সীমান্তরক্ষী। এরপর নানাভাবে জিজ্ঞাসাবাদ চলে। একসময় টর্চার সেলে নিয়ে গিয়ে তার কাছে জানতে চাওয়া হয় আসল পরিচয়। কিন্তু শেষমেশ পরিষ্কার হয়, সে নেহাতই একজন সাধারণ নিরীহ মৎস্যজীবী; গুপ্তচর নয়। তথাকথিত ‘উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র’ দক্ষিণ কোরিয়ার প্রশাসন ওই ব্যক্তিকে তাদের রাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে থেকে বলে, যাতে তাকে দিয়ে বহির্জগতে প্রচার করা যায় যে উত্তর কোরিয়ায় কোনো গণতন্ত্র নেই। কিন্তু ওই ব্যক্তি দেশপ্রেমী। এ ছাড়া ওখানেই ঘর-সংসার। তাই সে দেশে ফিরে যেতে চায়। উত্তর কোরিয়াও তাকে ফিরে পাওয়ার জন্য নানাভাবে আবেদন করে। একসময় ছেড়ে দেওয়া হয় ওই ব্যক্তিকে। সে তার নৌকা নিয়েই জলপথে নিজ রাষ্ট্রে ফিরে আসে। তাকে ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা জানানো হয়। কিন্তু এই অভ্যর্থনা নেহাত লোকদেখানো। বরং নিজ রাষ্ট্রের সরকারের সন্দেহ, এই মৎস্যজীবী বোধ হয় ইচ্ছা করেই দক্ষিণ কোরিয়ায় গিয়েছিল, সে হয়তো সেখানকার চর! আবার নানাভাবে অত্যাচারের শিকার হয় নম চুল-উ। শেষমেশ তাকে বলা হয়, আর কোনো দিন সে নদীতে মাছ ধরতে পারবে না। কিন্তু এই নিষেধাজ্ঞা এই মৎস্যজীবী মেনে নিতে পারে না। নৌকা নিয়ে সে বেরিয়ে পড়ে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে। পরে সীমান্ত বাহিনী তাকে গুলি করে। এভাবেই দুই রাষ্ট্রের অন্তর্জালে জড়িয়ে পড়ে শেষ হয় নিরীহ, দেশপ্রেমী এক নাগরিকের জীবন। উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার মাঝের জলপথে নৌকায় ভেসে চলে তার লাশ।
এই ছবির নির্মাণ-আঙ্গিক অতি সাধারণ। মিনিমালিস্ট প্রোডাকশন ডিজাইন। চিত্রনাট্যের ড্রামা অত্যন্ত পরিণত এবং প্রয়োজনীয়। কিম কি-দুক সামগ্রিকভাবে এই ছবি পরিচালনার পাশাপাশি নিজেই সিনেমাটোগ্রাফি বিভাগটির দেখভাল করেছেন। ক্লোজআপ, মিড-ক্লোজআপ ও মিডশটের বুননে ক্যামেরার সাবলীল গতিবিধি এবং তার সঙ্গে কাট-টু-কাটের ছন্দ বজায় রেখে সম্পাদনা একেবারেই মেদহীন। সঙ্গে তাল মিলিয়েছে আবহ সংগীত। সিনেমাটোগ্রাফি, এডিটিং ও মিউজিক ছবিটিকে করে তুলেছে কাব্যিক। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মৎস্যজীবী চরিত্রে রিও সেয়াং-বামের নিখুঁত অভিনয়; যা এ ছবির প্রাণ। অন্য অভিনয়শিল্পীরাও সাবলীল।
পোশাকসজ্জা ও রূপসজ্জা প্রয়োজনের অতিরিক্ত নয়। এখানেও মিনিমালিস্ট অ্যাপ্রোচ; যা চিত্রনাট্য অনুসারী।

 অতনু সিংহ

কুইজ
১। এই ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্রের পেশা কী?
ক। মাঝি
খ। মৎস্যজীবী
গ। ফুল বিক্রেতা
২। কী সন্দেহে তাকে দক্ষিণ কোরিয়া গ্রেপ্তার করেছিল?
ক। সন্ত্রাসবাদী
খ। সোনা পাচারকারী
গ। গুপ্তচর
৩। কেন তার ওপর উত্তর কোরিয়ার সীমান্তরক্ষী বাহিনী গুলি চালায়?
ক। অবৈধ অনুপ্রবেশ
গ। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মাছ ধরতে নদীতে যাওয়া
গ। সীমান্তে নাশকতা
গত সংখ্যার বিজয়ী

১. ফারহান রহমান, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা।
২. সোহেল হাসান, বাড্ডা, ঢাকা।
৩. সানজিদা আক্তার, ধানমন্ডি, ঢাকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top