skip to Main Content

ফিচার I পার্কবৈচিত্র্য

চিত্তবিনোদন কিংবা প্রশান্তি লাভের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন শহরে গড়ে তোলা হয়েছে সেসব। যেন প্রকৃতি ও মানুষের মিলনস্থল

সাধারণত গাছপালা, তরুলতাবেষ্টিত মনোরম জায়গা নিয়ে পার্ক তৈরি করা হয়। যেখানে মানুষজন হাঁটতে, দৌড়াতে অথবা নাগরিক জীবনের ক্লান্তি ভুলে দুই দন্ড আয়েশ করতে পারে। স্থানভেদে পার্কের আয়তনে বৈচিত্র্য দেখা যায়।

পার্ক গুয়েল, বার্সেলোনা
বার্সেলোনা শহরের আইকন। পার্কটি ইউনেসকো স্বীকৃত। প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং আধুনিক সৃষ্টিশৈলীর সমন্বয়ে স্থানটিকে গড়ে তোলা হয়েছে। এটির ডিজাইন করেন বিখ্যাত আর্কিটেক্ট অ্যান্তনি গাউদি। পার্কটি শহরের উল্লেখযোগ্য স্থান। প্রতিবছর দশ লাখের বেশি দর্শনার্থী এখানে ঘুরতে আসে।
পার্কটির প্রবেশপথে রূপকথাসদৃশ দুটি বাড়ি দেখা যায়। এই পথ ধরে কিছু দূর আগালেই অপরূপ রাজপ্রাসাদ ও বিখ্যাত টিকটিকির ফোয়ারার দেখা মেলে। সিঁড়ি বেয়ে সবচেয়ে উঁচু স্থানে উঠলে বার্সেলোনা শহরের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য অবলোকন করা যায়।
আইবিরা পুয়েরা, সাও পাওলো
পার্কটি সাও পাওলোর কেন্দ্রে অবস্থিত। এটি শহরের প্রধান একটি সাংস্কৃতিক স্থান। বিখ্যাত ল্যান্ডস্কেপ আর্কিটেক্ট রবার্তো বার্লে মার্ক্স এবং অস্কার নাইমেয়ার আইবিয়া পুয়েরার ডিজাইন করেন। সাও পাওলো শহরের ৪০০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ১৯৫৪ সালে পার্কটি প্রথম সবার জন্য খুলে দেওয়া হয়। এখন এটি শহরের সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান।
পার্কটিতে রয়েছে প্রাকৃতিক ঝর্না, লেক ও বিভিন্ন স্মৃতিস্তম্ভ। এখানে একাধিক জাদুঘর আছে, রয়েছে জাপানিজ প্যাভিলিয়ন এবং বিখ্যাত বিয়েনাল। যেটি সাও পাওলোর ফ্যাশন উইক উদ্্যাপনের অনুষ্ঠানস্থল। পার্কটিতে ছুটির দিনে দর্শনার্থীরা লাইভ মিউজিক শো উপভোগ করতে পারে।
দ্য ন্যাশনাল গার্ডেন, এথেন্স
গ্রিক সংসদ ভবনের ঠিক পাশেই এই পার্ক। গ্রীষ্মের উত্তাপ এবং শহরের যান্ত্রিকতা থেকে অবসর যাপনের আদর্শ স্থান। গ্রিসের প্রথম রানি কুইন আমালিয়ার নির্দেশে পার্কটি তৈরি করা হয়েছিল। এখানে প্রায় ৫১৯ প্রজাতির গাছপালা রয়েছে। বেশির ভাগই গ্রিসের হলেও কিছু বৃক্ষ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সংগৃহীত।
পার্কটির দুই পাশে পুষ্পশোভিত পথ ও ছোট হ্রদ রয়েছে। এ ছাড়া আছে সবুজ ঘাসে আচ্ছাদিত খেলার মাঠ, রেস্তোরাঁ ও হাঁস এবং কচ্ছপ ভেসে বেড়ানোর জন্য স্বচ্ছ জলের পুকুর। পূর্ব দিকে গার্ডহাউসের সামনে গ্রিক সৈন্যদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরিহিত একটি মূর্তি আছে, যেটি এভজোনস নামে পরিচিত।
কিউকেনফ, লিস
নেদারল্যান্ডসের লিস শহরে অবস্থিত। বিশ্বের সবচেয়ে বড় ফুলের বাগান হিসেবে এটি বিখ্যাত। ৩২ হেক্টর আয়তনের এই বাগানজুড়ে রয়েছে রংবেরঙের সত্তর লক্ষাধিক ড্যাফোডিল, টিউলিপ ও লিলি ফুলের সমারোহ। মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে মে পর্যন্ত এই বাগান সবার জন্য খোলা থাকে।
বিভিন্ন জাতের ফুলসহ বাগানটিতে প্রায় ৩০ প্রজাতির তরুলতার সন্ধান মেলে। এখানে ব্যতিক্রমধর্মী শিল্প ও শিল্প প্রদর্শনীর আয়োজনও হয়ে থাকে। যেমন টিউলিপ ম্যানিয়া। জীবনে ক্লান্তি ভুলে পরিবার, পরিজন ও বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে কিছু সুন্দর সময় কাটানোর আদর্শ স্থান এটি।
লুমপিনি পার্ক, ব্যাংকক
ব্যাংককের প্রথম পাবলিক পার্ক। লুমপিনির নামকরণ হয় নেপালে গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থানের নামের সঙ্গে মিলিয়ে। শহুরে কোলাহলের ক্লান্তি জুড়াতে ছায়াযুক্ত পথ, সবুজ লন, বৃহৎ হ্রদসংবলিত এই পার্কে ঘুরে আসা যেতে পারে। শিশুদের জন্য রয়েছে সুন্দর খেলার মাঠ আর কাপলদের রোমান্টিক পরিবেশে নৌকাভ্রমণের সুযোগ। এখানে প্রচুর মনিটর টিকটিকি ঘুরে বেড়ায়, এই দৃশ্য বন্য জীবনের অনুভূতি দেয়।
সকালেই পার্কটিতে ভ্রমণের সঠিক সময়। কেননা তখন সেখানে থাকে নির্মল বাতাস, পাখির কলকাকলি, শান্ত স্নিগ্ধ পরিবেশ। এ ছাড়া এখানকার অন্যতর সৌন্দর্য উপভোগ করতে বিকেলেও ঘুরে আসা যেতে পারে।
হিবিয়া পার্ক, টোকিও
শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত। এটি জাপানের প্রথম পার্ক, যা পাশ্চাত্য রীতিতে তৈরি। এর ১৬ হেক্টর আয়তনজুড়ে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ৩ হাজার ১০০ গাছ এবং ১০ হাজার স্কয়ার মিটার এলাকায় আছে ঘাস ও ফুলের বাগান। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে ও বিভিন্ন উৎসবের সময় এখানে লাইভ মিউজিক শোর আয়োজন করা হয়ে থাকে। পার্কটিতে কিছু রেস্তোরাঁ এবং টেনিস কোর্টও রয়েছে।
পার্কটিতে ১২ মিটার উচ্চতাবিশিষ্ট একটি ঝর্না আছে। মূল কেন্দ্র থেকে প্রায় ৩০ মিটার জায়গাজুড়ে এর জল ছিটিয়ে পড়ে। এটিই এখানকার আকর্ষণীয় স্থান। এখানে বেড়ানোর উপযুক্ত সময় শরৎকাল। তখন সেখানকার বৃক্ষের পাতা লাল, কমলা ও হলুদ বর্ণ ধারণ করে। এতে চোখজুড়ানো দৃশ্যের সৃষ্টি হয়।
সেন্ট্রাল পার্ক, নিউইয়র্ক
সম্ভবত এটিই পৃথিবীর সবচেয়ে বিখ্যাত পার্ক। ম্যানহাটানে অবস্থিত। এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিং ও স্ট্যাচু অব লিবার্টির পাশাপাশি সেন্ট্রাল পার্কটিকেও নিউইয়র্ক শহরের প্রতীক হিসেবে ধরা হয়। এখানে প্রতিবছর প্রায় ২৫ মিলিয়ন দর্শনার্থীর ভিড় হয়ে থাকে।
সেন্ট্রাল পার্কের ৮৪৩ একর আয়তনজুড়ে রয়েছে জলের মনোহর ফোয়ারা, সেতু ও বিভিন্ন স্মৃতিস্তম্ভ। এ ছাড়া আছে বিস্তীর্ণ তৃণভূমি, পুকুর, হ্রদ ইত্যাদি। স্থানীয় ও পর্যটকদের জন্য স্কেটিং, সাইক্লিং থেকে শুরু করে ট্র্যাকিংয়েরও ব্যবস্থা রয়েছে এখানে।
হাইড পার্ক, লন্ডন
লন্ডনের আটটি রাজকীয় পার্কের একটি। সারপেন্টাইন লেকের ধারে অবস্থিত। ৩৫০ একর হাইড পার্কে প্রায় ৪ হাজার গাছ, একটি বিস্তীর্ণ তৃণভূমি ও পুষ্প শোভামন্ডিত অনেকগুলো কুঞ্জ রয়েছে। বিখ্যাত স্মৃতিস্তম্ভগুলোর মধ্যে আছে ডায়ানা মেমোরিয়াল ফাউন্টেন, একিলিসের ভাস্কর্য ও সারপেন্টাইন ব্রিজ।
পার্কটির লেকে সাঁতার কাটা, নৌকায় ভ্রমণ, ঘোড়ায় চড়া, সাইক্লিংয়ের সুযোগ রয়েছে। লেকের দুই পাশের রেস্টুরেন্টে কফি থেকে শুরু করে তিন বেলার খাবারও পাওয়া যায়।
হংকং পার্ক
বিশ্বের সুন্দর পার্কগুলোর একটি। এটি প্রাকৃতিক পরিবেশ ও আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর মিলিত অনন্য এক রূপ। আট হেক্টর আয়তনের এই পার্কে রয়েছে জলপ্রপাত, পুকুর, ফোয়ারাসহ অনেক কিছু। হংকংয়ের ফটোগ্রাফারদের জন্য এটি একটি তীর্থস্থান।
পার্কটির প্রধান আকর্ষণ হলো এডওয়ার্ড ইওড পাখির অভয়াশ্রম। ক্রান্তীয় অঞ্চলের বাদলা বনের আদলে তৈরি। প্রায় ১৫০ প্রজাতির পাখি রয়েছে এখানে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই অভয়াশ্রমের আয়তন প্রায় ৩ হাজার স্কয়ার মিটার।

 রাইসুল রাণা
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top