skip to Main Content

ব্লগার’স ডায়েরি I টেকসই ফ্যাশন

‘সাসটেইনেবল ফ্যাশন’-এর ধারণাটা একেবারে নতুন না হলেও অনেকের কাছে তাই-ই। বহির্বিশ্বে এ নিয়ে ব্যাপক গবেষণা ও কাজ চলছে। সেই তুলনায় বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ধারণাটা নতুনই বলা চলে। এর অস্তিত্ব বিশ্বে প্রচলিত আছে, তা এখনো অনেকে জানেন না।
তবে ‘সাসটেইনেবল ফ্যাশন’ কী, বুঝতে হলে আমাদের এরই একটি টার্ম, স্লো ফ্যাশন সম্পর্কে জানতে হবে।
আক্ষরিক অর্থে স্লো ফ্যাশন বলতে বোঝায়, ‘‘Producing less or not producing new product at all’
স্লো ফ্যাশন এমন একটি প্রক্রিয়া, যাতে উৎপাদনশীলতা অনেক কম কিংবা যথাসম্ভব নতুন কোনো পণ্য তৈরি হতে বিরত থাকা। এখানে নতুন কাপড় উৎপাদনের ব্যাপারেই বলা হচ্ছে।
স্লো ফ্যাশনের নীতিকে বাস্তবায়ন করতে সাসটেইনেবল ফ্যাশনের প্রয়োজনীয়তা বিশেষভাবে লক্ষণীয়। তবে একটা প্রশ্ন মনে আসতেই পারে, এই ফ্যাশনের প্রয়োজনীয়তাটা কী? আদৌ এর কোনো দরকার এখন আছে কি না? অবশ্যই আছে।
বাস্তব প্রেক্ষাপট হলো, শুধু একটি টি-শার্ট তৈরি করতে যে তুলার (বা সুতা) প্রয়োজন হয়, সেগুলো প্রক্রিয়াজাতের জন্য ২ হাজার ৭০০ লিটার পানি ব্যবহার করা হয়। নিঃসন্দেহে এটা বলা যায় যে, নতুন কাপড় তৈরি এবং প্রক্রিয়াজাতকরণে বেশি পানির অপচয় হয়; যেখানে তৃতীয় বিশ্বের বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশে এখনো সুপেয় ও বিশুদ্ধ পানির অভাব বিশেষভাবে লক্ষণীয়।
এ ছাড়া কারখানার ডাইংয়ের কাজে ব্যবহৃত ক্ষতিকর কেমিক্যালযুক্ত পানি নদীনালা এবং খালবিলে যত্রতত্র ফেলা হচ্ছে; যা পানিদূষণের বড় একটি কারণ।
এ রকম আরও কিছু সমস্যা চিহ্নিত করে স্লো ফ্যাশন ধারণার আবির্ভাব, যেখানে নতুন কাপড় উৎপাদনে অনুৎসাহিত করা হয় এবং বিদ্যমান বা পুরোনো কাপড়গুলোকে আপসাইকেলের মাধ্যমে পুনরায় ব্যবহার উপযোগী করার ধারণা দেওয়া হয়।
তাহলে কি আমরা নতুন পোশাক পরা ছেড়ে দেব? এটি যার যার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। তবে এই সমস্যা সমাধানের পথও আছে এবং সেটি হলো সাসটেইনেবল ফ্যাশন।
এই ফ্যাশনের ধারণাকে কেন্দ্র করে ২০১৯ সালে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে আত্মপ্রকাশ করে ব্রোক (Broqué)। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এদের কাজ এবং সাসটেইনেবল ফ্যাশনের মধ্যে যোগসূত্র কোথায়?
মূলত, ব্রোকই বাংলাদেশের প্রথম উদ্যোগ, যারা সাসটেইনেবল ফ্যাশনকে সামনে এনেছে। এই ফ্যাশনকে এখনকার ফ্যাশনের একটা উল্লেখযোগ্য ধারা হিসেবে ধরা যায়। ফ্যাশন সাইডে সাসটেইনেবিলিটি নিয়ে কাজ করার মাধ্যমে ব্রুক স্লো ফ্যাশনের ধারণাকেও পূর্ণ করছে।
২০১৯ সাল থেকে ব্রুক ফ্যাশন সাইড-জি সাইটেইনেবিলিটি নিয়ে কাজ করছে। পুরোনো, ব্যবহৃত কাপড়কে আপসাইকেল গেইজ ক্র্যাফটিংয়ের মাধ্যমে কীভাবে পুনরায় ব্যবহারযোগ্য করা যায়, তা নিয়েই ব্রুক মূলত কাজ করছে।
ব্রুক ২০১৯-এর মাঝামাঝি সময় থেকে আজ পর্যন্ত ব্যবহৃত অনেকগুলো পুরোনো কাপড়কে আপসাইকেল এবং ক্র্যাফটিংয়ের মাধ্যমে পুনর্ব্যবহারের সুবিধা দিয়েছে।
যদি সাসটেইনেবল ফ্যাশনের ধারণা নিয়ে ব্রুক তাদের কার্যক্রম পরিচালনা না করত, তবে ব্যবহৃত অনেক কাপড়ই ভাগাড়ে চলে যেত। পরিবেশের জন্য বিরূপ প্রভাবও ডেকে আনত। এ ছাড়া পুরোনো কাপড়কে নতুনভাবে পরার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পানির পরিমিত ব্যবহার এবং অপচয় রোধেও ব্রুকের সফলতা রয়েছে।
মাস্ক, হুডি, জগার, ক্যাজুয়াল প্যান্ট ইত্যাদির আপসাইকেলড ভার্সন, ডেনিম এবং টি-শার্টও এখন ব্রুকের সংগ্রহে আছে। এগুলো সাসটেইনেবল ফ্যাশনকে পুরোপুরি সংজ্ঞায়িত করে।

মাহেনাজ চৌধুরী
ফেসবুক: mahenaz.choudhury
ইনস্টাগ্রাম: mahenaz.chowdhury

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top