skip to Main Content

ফিচার I ওয়াই টু কে

ফ্যাশন আর স্টাইলিংয়ে সেই পুরোনোর প্রত্যাবর্তন। নতুন রূপে। আগে যারা এই ট্রেন্ডে ছিল, তারা মতোয়ারা হবে নস্টালজিয়ায়। লিখেছেন সারাহ্ দীনা

কোনো ট্রেন্ডই পুরোপুরি হারিয়ে যায় না। ফ্যাশনের জগৎ থেকে। বলা যেতে পারে, ট্রেন্ডসেটাররা তা ফিরিয়ে আনেন। ফ্যাশন লাইনে টাইম ট্রাভেলে এবার হাজির সেই নব্বইয়ের শেষ আর দুই হাজারের শুরুর দিকের ট্রেন্ড ওয়াই টু কে।
এটি ছিল একটি টেক লাভিং ট্রেন্ড। রেট্রোর সঙ্গে ফিউচারিস্টিক টাচের মিংগেল হয়ে ফ্যাশন বাজার মাতিয়েছে ওয়াই টু কে। আধুনিকতার যথাযথ ব্যবহারে ভিন্ন ছিল বলেই হয়তো সেকেন্ড রাউন্ডেও মাত করার সম্ভাবনা দেখছেন ফ্যাশনবোদ্ধারা। দুই শতকের শেষ আর শুরু মিলিয়ে ছিল ট্রেন্ডটির সময়কাল। ইন্টারনেট দুনিয়ায় দারুণ সব পরিবর্তন আসে তখন। গতি ত্বরান্বিত হয়। নতুনের সঙ্গে পরিচয়ের সেই সময়ে ট্রেন্ডে ঢেউ তোলে ওয়াই টু কে। দ্রুতগতির ইন্টারনেটের সঙ্গে পরিচয়ের এ সময়ে বিশ্বকে নতুন করে চেনার সঙ্গে সঙ্গে ফ্যাশন দুনিয়াতেও বিশ্বায়নের ছোঁয়া কেবল লাগছে তখন।
ফ্রেশ টেক নিয়ে ফিরছে ওয়াই টু কে। বিশ শতকের শুরুতে পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি নিয়েই এর আবির্ভাব। নতুনত্বকে স্বাগত জানিয়েছে সব সময়। জেনারেশন জেড আর মিলেনিয়ালের সঙ্গে ওয়াই টু কে ফিরেছে নতুন করে। এবারে কলেবরে বৃদ্ধি পাবে এই ফ্যাশন ট্রেন্ড। স্টাইল ডিভাদের চোখ ইতিমধ্যেই আটকে গেছে এই জনরার ওয়াইড লেগ জিনস, শাইনি জ্যাকেট, বেবি টি আর ভেলোর ট্র্যাক সুটে।
ক্রপ টপের আকর্ষণে মাতোয়ারা ফ্যাশনিস্তাদের জন্য ওয়াই টু কে ট্রেন্ডে আছে বেবি টি। টিনি এই টি-শার্ট শেষ হবে বেলি বাটনের ঠিক সই-সই। চেস্টে হবে বডি ফিটিং। শুধু সলিড কালারই বেছে নিতে হবে, মোটেই তা নয়। কোট, ক্যারেক্টার, প্যাটার্ন, গ্রাফিক্যাল ডিজাইন থাকতে পারে ফ্রন্ট সাইডে। ফায়ারোচি, জুসি কুটিওরের মতো ওয়াই টু কে ব্র্যান্ডের লোগো সংবলিত বেবি টি-এর চাহিদাও থাকবে বেশ। এর সঙ্গে পেয়ারিংয়ে রাখা যেতে পারে লুজ ফিটিং জিনস, প্লেটেড স্কার্ট অথবা ডেনিম কাট টপস।
ওয়াই টু কের প্রথম ধাপে ফিউচারিস্টিক ফ্যাশনের চিন্তায় এসেছে শাইনি ম্যাটেরিয়াল ব্যবহারের বিষয়টি। রুপালি আভা কিংবা মুক্তোর মায়াবী ছোঁয়াতে অনায়াসেই বদলে যায় ওয়্যারড্রোবের ক্লথিং আইটেম। গর্জাস লুক এনে দিতে এসব জ্বলজ্বলে ম্যাটেরিয়ালের জুড়ি নেই। ওয়াই টু কের প্রথম ধাপের ধারাবাহিকতায় এবারেও এই ধরনের পোশাক পপ আপ করবে। টপ কিংবা বটম, ইচ্ছেমতো বেছে নেওয়া যায় নস্টালজিক শাইনি ওয়্যার আইটেম। পোশাকের স্বাধীনতা সম্পূর্ণ নিজের কাছে; তাই আউটফিটে যোগ হতে পারে ওয়াই টু কের শাইনি ম্যাটেরিয়াল। অল্পস্বল্পে তুষ্ট থাকতে চাইলে এই ঘরানার ক্রপ টপ কিংবা জুয়েলারি বেছে নেওয়া যায়। আর লাউড চাইলে মেটালিক পাফার জ্যাকেট কিংবা ট্রাউজার তো আছেই। শাইনি ম্যাটেরিয়ালে হাজার রঙের মধ্যে গোলাপি, নীল আর পার্পল কালার নজর কাড়বে সবার।
ব্যাগেট ব্যাগ। বিশ শতকের প্রথম দিকের ক্রেজ, ফিরছে সাড়ম্বরে। জনপ্রিয় চলচ্চিত্র সেক্স অ্যান্ড দ্য সিটিতে ক্যারি ব্র্যাডশ দর্শকের সামনে নিয়ে এসেছিলেন বাগুতি। খুব সহজে বহনযোগ্য এই ব্যাগ বাহুল্য না হয়ে ঝুলে থাকবে বাহুর সঙ্গে। আলাদা করে বইতে হবে না। নিত্যদিনের প্রয়োজনের সব নিয়ে নেওয়া যায় এতে। স্মার্ট লুক থাকার কারণে ক্যাজুয়ালের সঙ্গে পেয়ার আপে দারুণ। লুই ভিতোঁ অথবা ফেন্ডি ব্যাগেটের এই লাইন মনোযোগ কাড়বে ব্যস্ত ফ্যাশন-সচেতনদের। এই যুগের ফ্যাশনে দ্যুতি ছড়িয়েছে প্যাস্টেল শেডস। ব্যাগেটেও বেছে নেওয়া যায় প্যাস্টেল রং। ফিউচারিস্টিক ফ্যাশনে মেটালিক টাচ থাকবেই। ব্যাগেটও এর বাইরে নয়। আর ব্র্যান্ডিংয়ের ঝলক সব সময়েই নজর কাড়ে। ব্যাগেটেও থাকবে জ্বলজ্বলে।
স্কার্টে স্মার্ট। পাশ্চাত্যের এই পোশাকের আবেদন চিরদিনের। কখনো লং, কখনো নি লেংথ তো কখনো শর্ট। যেভাবেই হোক না কেন, স্কার্ট আছে, থাকবেই। ওয়াই টু কের জমানায় প্লিটেড শর্ট স্কার্ট থাকবে পছন্দের তালিকায়। চারদিকে কুঁচি দেওয়া এই স্কার্টের রিদম মন কাড়বে ফ্যাশনিস্তাদের। এর সঙ্গে টপে থাকতে পারে ক্রপ টপ কিংবা বেবি টি। সামারের পরে ওভার সাইজড সোয়েটারের সঙ্গে পেয়ার আপে লাগবে দুর্দান্ত।
ফ্রন্ট টাই আপের টপ ফিরে আসছে। সামনের অংশ খোলা অথচ লেইস অথবা ফিতার বাঁধনে বেঁধে রাখা, এমন টপ ওয়াই টু কের সময়ে বেশ দাপিয়ে বেড়াবে। রিবড ফ্যাব্রিক ব্যবহৃত হবে, কালারে দুনিয়া মাতাবে প্যাস্টেল শেড। ফ্রন্ট টাই টপের সঙ্গে লেয়ার করতে চাইলে কিউট ব্রালেট অথবা টি-শার্ট জুতসই। লেয়ার না করেও পাওয়া যাবে দুর্দান্ত লুক। বটমে রাখা যেতে পারে হাই ওয়েস্টেড ডেনিম, মিনি স্কার্ট অথবা ওয়াইড লেগ জিনস। ফ্রন্ট টাই টপ আলমিরাতে কখনোই জায়গা নষ্ট করবে না। কারণ, এটা সব সময়েই ফ্যাশনে ইন।
২০০০-এর সব থেকে ফেমাস ফ্যাশন আইটেম ছিল ভেলোর ট্র্যাক স্যুট। ২০ বছর পরে তা ফিরেছে। সেলিব্রিটি ওয়ারে পর্দা কাঁপিয়েছে বহুবার। জে লো, প্যারিস হিলটন, ব্রিটনি স্পিয়ারসের পছন্দের তালিকাতে ছিল এটি। ফ্যাশন ব্র্যান্ড জুসি কতুর, বেবি ফ্যাট ২০ বছর পরে মেকওভার করে হ্যাঙ্গারে এনেছে পুনরায়। ম্যাচিং ক্রপ টপ, ব্রালেট, ডেনিম জ্যাকেটের সঙ্গে পরে নেওয়া যায়। মানাবে। সঙ্গে পিংক, ইয়েলো, ব্লু, গ্রিনের মতো উজ্জ্বল শেডের চাংকি স্যান্ডেলে সম্পূর্ণ রেডি টু গো।
ডেনিমের তুলনা অন্য কিছুতে নয়। এবারের ডাবল ডেনিমের ট্রেন্ডে নিজেকে সাজিয়ে নেওয়া যায়। কাট অব ভেস্ট, ফ্লেয়ারড জিনস, ক্রপ টপ এবং লো রাইজ বটম বেছে নিলে দেখাবে অনন্য। রেগুলারের বাইরে এসব প্যাটার্ন থাকবে ফ্যাশনপ্রেমীদের তালিকায়। ডাবল ডেনিমের সঙ্গে সঙ্গানুষঙ্গ নিয়ে লুকে আনবে পরিবর্তন। কালারফুল সানগ্লাস মাস্ট অ্যাড। হালের ব্যাগেটি ব্যাগ নিয়ে আসবে নান্দনিকতা। সব শেষ পায়ে চাংকি হিলস! ব্যস!
সি থ্রু ফ্যাব্রিকের জয়ধ্বনি শোনা যেতে পারে ওয়াই টু কের ট্রেন্ডের সময়েই। লেয়ারিং পাচ্ছে জনপ্রিয়তা। ট্রান্সলুসেন্ট তাই নতুন মাত্রা পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি করেছে। ডেট নাইট অথবা বন্ধুদের সঙ্গে নাইট আউটে এই ঘরানার পোশাকের আবেদন বাড়ছে। বাটন ডাউন, ক্রপ টপ এবারে জনপ্রিয় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
অ্যাকসেসরিজে ওয়াই টু কের ফিরে আসায় নতুন পালক যুক্ত করবে ব্যান্ডানা। হেড স্কার্ফে লুকের আমূল পরিবর্তন সম্ভব। সঠিকভাবে পেয়ার আপ করা হলে ব্যান্ডানার আবেদন পরিপূর্ণতা পায়। ব্যান্ডানা তিন কোণ করে বাঁধা যায় অথবা ভাঁজ করে টুইস্ট করাও যেতে পারে। এর সঙ্গে চুলকে মুক্ত হাওয়ায় উড়িয়ে বেরিয়ে পড়া যায়। সানগ্লাস নিতে ভুল করা যাবে না।
ব্যান্ডানার পাশাপাশি বাটারফ্লাই ক্লিপও ফিরছে। হেয়ার ক্লিপে চুল পরিপাটি হবে নানাভাবে। কখনো খোলা চুলের পনিটেইল বাঁধনে ছোট্ট প্রজাপতি তো কখনো ফ্রন্ট লংয়ে এক সারি প্রজাপতি।
ওয়াই টু কের আবেদন ঝড় তুলবে বলেই মনে করা হচ্ছে। নতুনদের জন্য নানন্দিক এই ট্রেন্ড যেমন আবেদন নিয়ে আসবে, তেমনি নস্টালজিয়ায় মজবে নাইনটিন কিডসরা। নতুন করে প্রিয় ট্রেন্ডের বাজিমাতে অংশ নেবে তারাও।
মডেল: মাহি
মেকওভার: পারসোনা
ওয়্যারড্রোব: বাটারফ্লাই বাই সাগুফতা
ছবি: তানভীর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top