skip to Main Content

ফিচার I ধুতি: দ্য নিউ ড্রেপ

আদি যুগের একখন্ড এই বস্ত্র আগের মতো নেই। আঙ্গিক যেমন বদলেছে, তেমনি এর রঙে এসেছে বৈচিত্র্য। যুক্ত হয়েছে অন্য পোশাকের অংশ ও অনুষঙ্গ

পোশাকের সঙ্গে আবহাওয়া ও সংস্কৃতির সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। ভূপ্রকৃতি ও আবহাওয়ার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মানুষ পোশাক নির্বাচন করে এসেছে। এর প্রভাবক হিসেবে কাজ করে অর্থনীতি ও সৌন্দর্যবোধ। বাঙালির আদি ও সমকালীন পোশাকের মধ্যে রয়েছে বিস্তর ফারাক। কখনো শাসকের প্রভাবে, কখনো ধর্মের প্রভাবে এই জনগোষ্ঠী তাদের পোশাকে পরিবর্তন এনেছে।
প্রাচীন ও মধ্যযুগের যেসব ভাস্কর্য, পোড়ামাটির ফলক ও পান্ডুলিপির চিত্র পাওয়া যায়, তা থেকে বাংলার পোশাক সম্পর্কে জানা যায়। সে সময়ে নারী-পুরুষের পোশাকে খুব একটা পার্থক্য ছিল না এবং এ যুগের মানুষের মতো রকমারি পোশাকও ছিল না। নারী ও পুরুষ উভয়ই পরত সেলাইবিহীন একটিমাত্র বস্ত্র—শাড়ি অথবা ধুতি। অভিজাত পুরুষেরা হাঁটুর নিচ অব্দি ধুতি পরলেও সাধারণ পুরুষেরা অত্যন্ত খাটো ধুতি পরতেন।
আরবের লোকেরা ধুতি পরত লম্বা করে কোঁচা ছাড়া। পরার ধরন ছিল সেলাইবিহীন লুঙ্গির মতো। পারস্যে এই ধরনের পোশাকের নাম ছিল ‘তাহবন্দ’। বাংলাতে এই শব্দ হয়েছিল ‘তহবন’ বা ‘তবন’। যদিও এখন ধুতিকে মনে করা হয় হিন্দুদের পরিধেয় পোশাক। কালক্রমে পরনের কৌপিন লম্বা করে পরার রীতি চালু হয়। সেই সঙ্গে কোঁচার ঝুলও বৃদ্ধি পায়। এই চাহিদার সঙ্গে সংগতি রেখে তৈরি হয় ধুতি। সেকালের মানুষ ধুতি পরত কাছা দিয়ে। কাছা ছিল ঢিলাঢালা। তবে কর্মজীবী পুরুষ তা পরত ‘মালকোঁচা’ দিয়ে।
বেশ কয়েক দশক ঘুরে ধুতি আবারও ফ্যাশন ট্রেন্ডে ইন। এটি কেবলই হিন্দু পুরুষদের আনুষ্ঠানিকতার পোশাক নয়, বরং নারী-পুরুষ উভয়েই পরছে এবং ধুতি স্টাইলে নারীরা পরছে শাড়ি কিংবা সালওয়ার। আজকাল আবার ফ্যাশন ডিজাইনারদের বদৌলতে রেডিমেড ধুতি স্টাইলের শাড়িও বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। ধুতির রঙেও এসেছে পরিবর্তন। ধুতির রং এখন আর শুধু সাদার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। প্রায় সব রঙেরই ধুতি পাওয়া যায়। সঙ্গে রয়েছে নানা ডিজাইনের পাড়। আগেকার দিনে ধুতি ছিল শাড়ির মতো, কিন্তু বর্তমানে ইলাস্টিক দেওয়া রেডিমেড ধুতির আবির্ভাব ঘটেছে, যা পরতে সহজ এবং খুলে যাওয়ার ভয় থাকে না।

ধুতি স্টাইল ঠিকভাবে ক্যারি করে ফ্যাশনিস্তা হয়ে ওঠার জন্য জেনে নিন কয়েকটি জরুরি স্টাইলিং টিপস—
 ধুতি স্টাইলে পোশাক পরার আগে শারীরিক গঠন এবং উচ্চতা একটু বুঝে নিতে হবে। যদি আওয়ারগ্লাস বডি হয়, তাহলে চোখ বুজে ধুতি স্টাইলে পোশাক পরুন। টিউনিক, টি-শার্ট যেকোনো কিছুর সঙ্গে ধুতি প্যান্ট পরতে পারেন। আবার যদি কোমর বা হিপের অংশ ভারী হয়, তাহলে এমনভাবে ধুতি প্যান্ট পরতে হবে। ধুতি স্টাইলে শাড়ি পরতে হবে, যাতে কোমরের কাছটা খুব টাইট হয়। ব্যাগি অংশ নিচের দিকে থাকবে আর টাইট অংশ থাকবে ওপরে। সবচেয়ে ভালো হয় শার্ট দিয়ে ধুতি প্যান্ট পরলে। শাড়ি পরলেও লম্বা হাতা ব্লাউজ দিয়ে পরুন। শার্ট ভেতরে গুঁজে দিন, এতে পায়ের অংশ লম্বা মনে হবে
 ব্যানানা-শেপড বডিতে যেকোনো পোশাকই সাধারণত মানিয়ে যায়। তবে এই বডি শেপের অধিকারীরা ধুতি প্যান্টের সঙ্গে লুজ-ফিট ব্লাউজ বা টপ পরলে সবচেয়ে ভালো দেখাবে। একটা স্টাইলিশ বেল্ট পরলেই চোখে পড়বে এই আউটফিট
 অনেকের ধারণা রয়েছে যে যারা রোগা এবং লম্বা, ধুতি স্টাইল তাদের মানাবে না এবং এতে আরও রোগা দেখাবে। এটি একেবারেই ভুল ধারণা। ঢিলেঢালা টপের সঙ্গে ধুতি প্যান্ট আর ধুতি স্টাইলে শাড়ি পরলে, পরতে হবে লুজ ব্লাউজ। আবার ধুতি স্টাইলের পোশাক পরে শরীরের কার্ভ দেখাতে চাইলে স্টেটমেন্ট বেল্ট পরা যেতে পারে, সঙ্গে নেওয়া যেতে পারে টোটে ব্যাগ
 ধুতি স্টাইলের শাড়িতে ব্লাউজের চেয়ে ক্রপ টপ বা হাই কলারওয়ালা টপ বেশি মানানসই। পায়ে যদি থাকে হাই হিল, তাহলেই লুকটা হয়ে উঠবে সম্পূর্ণ।
 আর যেসব ধুতি স্টাইলের পোশাক এখন ফ্যাশন ট্রেন্ডে চোখে পড়ছে—
ধুতি স্টাইল স্কার্ট আউটফিট: সাটিন, ক্রেপ অথবা জর্জেটের ধুতি ড্রেপ-র‌্যাপড স্কার্টের ওপরে পরা হচ্ছে ক্রপ বা কেপ টপ।
জ্যাকেট স্টাইল ধুতি আউটফিট: টপ, ক্রপ টপ কিংবা শর্ট টিউনিক টপের ওপরে একটি ওপেন স্টাইল জ্যাকেট বা শ্রাগ, আর নিচে ধুতি—ব্যস, হয়ে গেল একটি পরিপূর্ণ স্টাইলিশ আউটফিট।
লং টিউনিক এবং ধুতি: এটিকে ইন্দো-ইউরোপীয় ফিউশন স্টাইলের আউটফিটও বলা যেতে পারে। এই আউটফিটে কাফ-লেন্থ আনারকলি কামিজ টিউনিকের ধুতি প্যান্ট পরা হয়। পেপলাম টপ বা ওয়েস্টকোট স্টাইলের টপ সঙ্গে হাই ওয়েস্ট ধুতিও রয়েছে ট্রেন্ডে।

 সুরবি প্রত্যয়ী
মডেল: নিহাফ ও অন্তরা
মেকওভার: পারসোনা
ওয়্যারড্রোব: রঙ বাংলাদেশ
জুয়েলারি: সিক্স ইয়ার্ড স্টোরি
ছবি: জিয়া উদ্দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top