skip to Main Content

রসনাবিলাস I সিক্রেট রেসিপি

২০১৭ সালের অক্টোবরে ফেয়ার গ্রুপের পেপেরনি লিমিটেডের হাত ধরে বাংলাদেশে পথচলা শুরু। এবারে টিম ক্যানভাসের গন্তব্য এই ক্যাফে চেইন

গল্পের শুরু ১৯৯৭ সালে। দাতুক স্টিভেন সিম নামের এক উদ্যোক্তা কেক তৈরিতে অভিজ্ঞ তার তিন ভাতিজাকে নিয়ে শুরু করেছিলেন সিক্রেট রেসিপি সেন্দিরিয়ান বেরহাদ (মালয় ভাষায় প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি)। কফি, ডেজার্ট ছাপিয়ে সিক্রেট রেসিপি দিনে দিনে ক্যাজুয়াল ডাইনিংয়েরও জনপ্রিয় গন্তব্য হয়ে উঠেছিল মালয়েশিয়াজুড়ে। কেবল মালয়েশিয়া নয়, গোটা এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তার করে চলেছে এই ক্যাফে চেইন। এসেছে বাংলাদেশেও।
রমজান মাসের এক সন্ধ্যায় গুলশান অ্যাভিনিউর বিটিআই ল্যান্ডমার্কের জলপ্রপাত পেরিয়ে তেতলায় গিয়ে পেলাম সিক্রেট রেসিপির ফ্ল্যাগশিপ আউটলেট। দোতলা থেকে প্রবল বিক্রমে আছড়ে পড়া পানির লহরকে জলপ্রপাত না বলে আর কী বলা যায়! ইফতারের পর বলেই বেশ ফাঁকা। শুরুতে বেশ খোলামেলা জায়গা। হাতের ডানে ওয়েটিং জোন; বামে কেক আর কফি কাউন্টার। কাউন্টারের ওপরে বড় বড় কালো ল্যাম্পশেড সাদা ইন্টেরিয়রের সঙ্গে চমৎকার বৈপরীত্য তৈরি করেছে। পুরো আউটলেটেই সাদার প্রাধান্য। ওপরে সিলিংটাও সাদা, মেঝে সাদা মার্বেলের টাইলস। দেয়ালে কাঠের প্রলেপ। শেষ মাথায় বিশাল এলইডি স্ক্রিন। এরপর বাইরে বেশ বড়সড় বারান্দা—স্মোকিং জোন। কফির পেয়ালায় চুমুক দিয়ে, সিগারেটের ধোঁয়া উড়িয়ে বেশ সময় কেটে যায় গুলশানের সিটিস্কেপ আর পথ দেখতে দেখতে। চৈত্র শেষের রাতের বাতাসে সেখানে বসতে মন্দ লাগছিল না। পুরো ফ্লোরটা প্রায় ৩ হাজার ৮০০ বর্গফুটের। বারান্দা আর ভেতর মিলিয়ে প্রায় ৮০ জনের বসার ব্যবস্থা। ভেতরের টেবিলগুলো সব কাঁচা কাঠের রঙের, আর বসার গদি আঁটা সোফাগুলো চকোলেট রঙা। চমৎকার ভালো লাগার মতো ইন্টেরিয়র-এক্সটেরিয়র ডিজাইন কম্বিনেশন। এক পাশে রয়েছে মিটিং করার আলাদা ব্যবস্থা। দেয়ালে দেয়ালে ঝুলছে তাদের ব্যবসায়িক মোটো সংবলিত ছবি।
প্রথমেই স্বাগত জানালেন সেখানকার ম্যানেজার আবুল বাশার আল পনির। জানা গেল এখন মোট ১৩টি শাখা আছে সিক্রেট রেসিপির। এগুলোর মধ্যে তিনটি এক্সপ্রেস আউটলেট—যেখানে মূলত কেক বিক্রি করা হয় টেকএওয়ের জন্য, পাশাপাশি হালকা স্ন্যাকস, কফি, ড্রিংকস মেলে; ছয়টি স্ট্যান্ডার্ড আউটলেট—স্ট্যান্ডার্ড মেনুর ক্যাজুয়াল ডাইন, যেখানে প্রায় সব ধরনের খাবার, কফি, কেক মেলে। রয়েছে চারটি ফ্ল্যাগশিপ আউটলেট, যেখানে পরিবার-পরিজন নিয়ে খেতে বসা যায়, পার্টি করা যায় আর প্রিমিয়াম কিছু খাবারও পাওয়া যায় নিয়মিত মেনুর খাবারের পাশাপাশি। গুলশান অ্যাভিনিউর এই ফ্ল্যাগশিপ আউটলেট রয়েছে ২০২০ সাল থেকে।
কথা বলতে বলতেই টেবিলে এলো ভ্যানিলা মিন্ট কোলাডা। ভ্যানিলা, লেমন আর মিন্টের অসাধারণ কম্বিনেশনের এই মকটেল বেশ রিফ্রেশিং। মি. পনির জানালেন, এখানে ক্যাজুয়াল ডাইনের জন্য যেমন আসে লোকে, তেমনি ভিড় হয় কফি আর কেকের জন্যও। আর বন্ধুদের নিয়ে কিশোর-কিশোরী থেকে করপোরেট লোকজন এবং পরিবার নিয়ে খেতে আসেন অনেকেই। তাই বলা চলে, এখানে সব বয়সের লোকেরাই আসে। কথার পিঠে কথা চলতে চলতেই টেবিলে হাজির হলো নরওয়েজিয়ান স্যামন স্টেক। বলে রাখা ভালো, সামুদ্রিক মাছ রপ্তানিতে বিশে^ দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে নরওয়ে। আর তার বেশির ভাগই আসে সমুদ্রে মাছ চাষের মাধ্যমে। প্রাকৃতিক খাবার খাইয়ে, সমুদ্রেই বদ্ধ অবস্থায় পালন করে তারপর বিক্রি হয় নরওয়ের বিখ্যাত আটলান্টিক স্যামন। ১৯৭০-এর দশক থেকে জাতিসংঘের ফুড অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচার অর্গানাইজেশনের কোড অব কন্ডাক্ট মেনে রেসপনসিবল ফিশিং করে থাকে নরওয়ে। তাই নরওয়ের স্যামনের এত সুনাম, পাশাপাশি মৌসুমি মাছের পর্যায় থেকে স্যামনকে সহজলভ্য করে তুলেছে বছরজুড়েই। আর স্বাদের ব্যাপারেও নরওয়ের ওশান ফার্মড স্যামন মুক্ত সমুদ্র বা স্বাদুপানির (ইলিশের মতোই স্যামন নদীতে ডিম পাড়ে, বাচ্চা নদীতেই বড় হয়ে ফিরে যায় সমুদ্রে) স্যামনের থেকে বিন্দুমাত্র কম নয়। সেই নরওয়েজিয়ান স্যামন আমার সামনে। ম্যাশ পটেটো আর বেক্ড বিনসের বিছানায় শুয়ে রয়েছে লোয়িন কাটের বেক করা স্যামনের টুকরো। স্যামনের এই কাট সবচেয়ে মিটিয়ার বা ফ্লেশি—থিক, ফ্লেভারফুল আর সাকুলেন্ট। ফ্যাট আর ফ্লেশের রেশিও পারফেক্ট থাকায় এই কাট প্যান-সিয়ার, বেক, পোচ বা গ্রিল—সবকিছুর জন্যই পারফেক্ট।
পাশে ছিল লেমন-বাটার সস। মাছের টুকরোয় চামচ নাইফ আর ফর্ক বসাতেই বেরিয়ে এলো গোলাপি আভা। মুখে দিতেই যেন গলে গেল। সঙ্গে পেলাম চিজি একটা ফ্লেভার। এর কারণ অবশ্য এই মাছ বেক করার সময়ে তিন ধরনের চিজের একটা লেয়ার দেওয়া হয়। কোন চিজ কী পরিমাণে দিয়ে করা—এটা অবশ্য সিক্রেট রেসিপির গোপন ব্যাপার। তবে ওপরের স্পাইসি ব্রেড ক্রাম্বে সদর্প উপস্থিতি ছিল কমলা লেবুর খোসার। ফলে চিজ আর স্পাইস ব্রেড ক্রাম্বের মিশ্রণের স্বাদ অনেকটাই জাপানি তরিকার টোগারাশি পাউডারের কথা মনে করিয়ে দেয়। ম্যাশ পটেটো মোটামুটি হলেও লেমন-বাটার সস দিয়ে মাছের সঙ্গে বেশ ভালো জমে যায়।
এরপর ডার্ক রোস্টের বিনের ডাবল শট দিয়ে এক মগ আমেরিকানো হাতে বারান্দায় বসে কথা হলো এক্সিকিউটিভ শেফ থিওফিল অরুণ গোমেজের সঙ্গে। তিনিই এখন এখানকার ফুড রিসার্চ আর ডেভেলপমেন্টের দায়িত্বে রয়েছেন। এসেই গত ছয় মাসে নতুন বেশ কিছু প্রিমিয়াম কন্টিনেন্টাল ডিশ যোগ করেছেন। এর আগে ছিলেন আবুধাবির শেরাটনে। তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেল এখানকার অনেক মেনুই রিশাফল করা হচ্ছে ভোজনরসিকদের কথা মাথায় রেখে। যেমন নতুন যোগ হয়েছে প্রন টেম্পুরা, অজি ল্যাম্ব চপ, চিকেন সুপ্রিম, ফিশ পুতানেস্কা ইত্যাদি।
আমেরিকানোর সঙ্গে সঙ্গত দিচ্ছিল চকোলেট ইন্ডালজেন্স কেকের এক টুকরো। মধুরেণ সমাপয়েৎ-এর মতো। বেলজিয়ান হোয়াইট চকোলেট আর ডার্ক চকোলেট গানাশ চকোলেটের স্পঞ্জ কেকের লেয়ার করে সাজানো আর ওপরে মেল্টেড চকোলেটের কোটিং। পুরোই চকোলেটের উৎসব যেন।
সিক্রেট রেসিপির মেনু কার্ড সাজানো হয়েছে বেভারেজ, স্টার্টার, ব্রেকফাস্ট, স্যালাড, স্যুপ, এশিয়ান ক্ল্যাসিক, ওয়েস্টার্ন, পাস্তা, পিৎজা, পাফস অ্যান্ড বাইটস, স্যান্ডউইচ, কেকস, চিজ কেকস, প্লেইন কেকস, ব্রাউনিজ বিভিন্ন ভাগে ভাগ করে। তাই কেকের ক্রেভিং হোক বা কফির তৃষ্ণা, কিংবা জব্বর খিদে—সিক্রেট রেসিপি হতে পারে আপনার পারফেক্ট ডেস্টিনেশন।
 আল মারুফ রাসেল
ছবি: লেখক ও সিক্রেট রেসিপি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top