skip to Main Content

ফিচার I সদ্য সুপারফুড

চিয়া, পেরিলা ও কিনোয়া বিদেশি জাতের সুপারফুড। খাপ খাইয়ে নিয়েছে বাংলাদেশি আবহাওয়ায়। হচ্ছে আবাদ। ফলে পুষ্টিকর খাবার তিনটি ধীরে ধীরে দেশি খাদ্যতালিকায় ঠাঁই পাচ্ছে। স্বাস্থ্যগত নানান সমস্যা সারাইয়ের গুণ থাকায় পাচ্ছে গ্রহণযোগ্যতা

প্রথমত ক্ষুধা নিবারণের জন্যই খাদ্য। এরপর পুষ্টিমান। দৈহিক সুস্থতার জন্য চাই পুষ্টি। শুধু উদর পূর্তির জন্য গোগ্রাসে খেলে দিন শেষে অপুষ্টির কবলে পড়ে শরীর হবে বিকল। অঙ্গগুলো হয়ে উঠতে পারে রোগের আঁতুড়ঘর। তাই শিশুকাল থেকেই চাই এমন খাবার, যা ক্ষুধা নিবারণের পাশাপাশি পুষ্টিরও জোগান দেবে।
অতিমাত্রায় পুষ্টি মেলে এমন খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রে সাধারণত তিন ধরনের অপারগতা দেখা যায়। হয়তো খাবারগুলো এতই দামি যে তা নিম্ন আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে; কিংবা সেগুলোরে পুষ্টিমান সম্পর্কে সাধারণ মানুষ জানেন না অথবা এগুলোতে পুষ্টির পাশাপাশি ক্যালরি ও ফ্যাটের এতই আধিক্য থাকে যে এক দিক দিয়ে পুষ্টি মিললেও অন্য দিক থেকে শরীরের ক্ষতি সাধিত হয়।
এসব বিবেচনা করে প্রতিটি দেশের বিজ্ঞজনেরা নিজেদের দেশের খাদ্যতালিকায় এমন কিছু খাবার যোগ করতে চান, যেগুলো জনসাধারণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে। তা ছাড়া সেগুলোকে দেশের আবহাওয়ার সঙ্গে অভিযোজিত হতে হয়, যেন সেই শস্যের প্রচুর আবাদ করে প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণ করা যায়। বেশি পুষ্টির কিন্তু কম ক্যালরি ও ফ্যাটসমৃদ্ধ এসব শস্যের বীজ নানান দেশ থেকে এনে তা দেশের খাদ্যতালিকায় যুক্ত করা হয়। মূলত এ ধরনের খাবারকেই সুপারফুড বলে। সেগুলো খনিজ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর থাকে। বাইরের দেশ থেকে বিভিন্ন সুপারফুডের বীজ এনে সেগুলো দেশি আবহাওয়ায় চাষের উপযোগী করার চেষ্টা করা হয়। সফল হলে সেগুলো একটা পর্যায়ে আর বিদেশি খাবার থাকে না, হয়ে যায় দেশি। সম্প্রতি চিয়া, পেরিলা ও কিনোয়া—এই তিনটি প্রায় দেশি ফুড হয়ে উঠেছে। যদিও এগুলোর উৎপত্তি আমাদের দেশে নয়।
আলাপ শুরু করা যাক চিয়া বীজ নিয়ে। এটি পুদিনাজাতীয় গাছ। চিয়ার পুষ্টিগুণ সম্পর্কে মায়া ও আজটেক সভ্যতার মানুষও ওয়াকিবহাল ছিলেন। এটিই ছিল তাদের প্রধান খাবারগুলোর একটি। মায়া সভ্যতায় চিয়া শব্দের অর্থ ‘বল’। ধারণা করা হয়, শক্তিবর্ধক হিসেবেই এটি খেতেন সে সময়ের মানুষ।
১০০ গ্রাম চিয়াতে মেলে ১৬ গ্রাম প্রোটিন, ৩১ গ্রাম চর্বি এবং ৩৫ গ্রাম ফাইবার। রয়েছে ম্যাঙ্গানিজ, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, জিংক, পটাশিয়াম, ভিটামিন বি১, বি২ ও বি৩। মেলে ৪৮৬ ক্যালরি শক্তি এবং ৪২ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট। প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় বিশেষজ্ঞরা এটিকে বেশ গুরুত্বপূর্ণ খাবার হিসেবে গণ্য করেন। এটি ফ্রি র‌্যাডিক্যাল তৈরিতে বাধা দিতে সক্ষম। ফলে ক্যানসারের ঝুঁকি কমে। ওজনও কমাতে পারে চিয়া। বর্তমানে স্থূলতার সমস্যা বেশ গুরুতর হয়ে উঠেছে। ফলে চিয়া আমাদের দেশে ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। হৃদ্্রোগে আকস্মিক মৃত্যুও বেড়ে চলেছে। চিয়ায় হৃদ্্রোগ কমানোর মতো বিভিন্ন উপাদান রয়েছে। আছে হাড় মজবুত করার প্রয়োজনীয় রাসায়নিকও। এই বীজ রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সক্ষম। তা ছাড়া বিভিন্ন অঙ্গের দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ কমায়।
বর্তমানে দই, শাকসবজি, পুডিং, স্মুদি কিংবা জুসের সঙ্গে খাওয়া হচ্ছে চিয়া। বীজটি খাওয়া যেতে পারে কাঁচাও। সে ক্ষেত্রে পানিতে ভিজিয়ে খান অনেকেই। আমাদের দেশে এর আবাদ শুরু হয়েছে। নীলফামারীতে চিয়াখেতের দেখা মেলে। তবে এই সুপারফুডের কিছু ক্ষতিকর দিকও রয়েছে। এটি খেলে এলার্জি হতে পারে। কখনো কখনো রক্তচাপ অনেক কমে যাওয়ার শঙ্কা থাকে।
দেশে কদর বেড়েছে সুপারফুড পেরিলারও। এটি মূলত একধরনের তেলবীজ। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বেশি ব্যবহৃত হয়। সুগন্ধের জন্য বিভিন্ন রান্নায় তা যুক্ত করেন রসুইকরেরা; বিশেষ করে জাপানি ও কোরিয়ান রন্ধনশিল্পীরা। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলেও এটি সমাদৃত। পেরিলা বীজে কিছু স্বাস্থ্যবান্ধব চর্বি থাকে, যা মগজের উন্নতিতে কাজে লাগে। মেলে ক্যালসিয়াম, আয়রন ও তামা। ভিটামিন এ, ই, কে থাকে। পেরিলার ওমেগা ৬ দেহত্বকের জন্য ভালো। এর ওমেগা ৯ রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে। প্রতি ১ কাপ তথা প্রায় দেড় শ গ্রাম পেরিলায় রয়েছে ৮১৬ ক্যালরি। তা ছাড়া প্রোটিন ৫৫ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট ৪৪.১ গ্রাম ও ফ্যাট ১ গ্রাম। এটিতে ডায়েটারি ফাইবারও থাকে।
পেরিলা পাতা খাওয়াও উপকারী। অবশ্য খাবার গার্নিশিংয়ের জন্যই এর ব্যবহার বেশি। এটি বমির ভাব, হাঁপানি ও সানস্ট্রোক প্রতিষেধক। পেশির খিঁচুনির চিকিৎসায়ও কাজে লাগে। এই উদ্ভিদ ইতিমধ্যে বাংলাদেশের আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়েছে। তেঁতুলিয়ার কয়েক বিঘা জমিতে এর চাষ হচ্ছে বলে জানা গেছে। কোরিয়া থেকে দেশে যে পেরিলা তেল আনা হয়, দাম ২ হাজার ২০০ টাকা লিটার। দেশের জমিতে চাষ করা গেলে তা কৃষিতে নতুন মাইলফলক যুক্ত করতে পারে। তা ছাড়া দেশের তেলের চাহিদাও পূরণ করা সম্ভব। পেরিলা স্বাস্থ্যকর বলে অন্যান্য তেলের স্থান দখল করে নেওয়ার সম্ভাবনাও তৈরি হবে।
বাংলাদেশে পরিচিতি পেয়েছে এমন আরেকটি সুপারফুড হলো কিনোয়া। ইনকা সাম্রাজ্যে এই বীজের বেশ কদর ছিল। তখন এটিকে সব শস্যের মাতা ভাবা হতো। এর সঙ্গে জুড়ে ছিল পবিত্রতার ধারণাও। দক্ষিণ আমেরিকার বাসিন্দারা তাদের রসনায় হাজার বছর ধরেই এটিকে ঠাঁই দিয়ে রেখেছেন। সম্প্রতি এটি একটি ট্রেন্ডি ফুড হয়ে উঠেছে। পেয়েছে সুপারফুডের মর্যাদা। আগেই বলা হয়েছে, স্থূলতা এখন মানুষের স্বাস্থ্যের একটি সাধারণ সমস্যা। এই সমস্যা থেকে নিস্তার পেতেই লোকে উচ্চ প্রোটিন এবং নানান মিনারেল সমৃদ্ধ কিনোয়া খাওয়ার প্রতি ঝুঁকে পড়ছেন। উল্লিখিত সুপারফুডগুলোর মতো কিনোয়াও রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে। উচ্চ রক্তচাপের পাশাপাশি এটি কোলেস্টেরল কমাতেও সক্ষম। ডায়াবেটিস রোগীদের খাদ্যতালিকায় তাই একে রাখা যেতে পারে।
কিনোয়া তিন ধরনের হতে পারে: কালো, লাল ও সাদা। এই শস্যবীজ দেহকোষের ঝিল্লির সুরক্ষা নিশ্চিত করে। মগজের নিউরোনাল ফাংশনেও ভূমিকা রাখে। প্রতি ১ কাপ কিনোয়াতে প্রোটিন মেলে ৮ গ্রাম। ফাইবার আছে ৫ গ্রাম। প্রচুর ম্যাঙ্গানিজ এবং ম্যাগনেশিয়ামও রয়েছে। কিছু ফোলেট, ফসফরাস, আয়রন, তামা, দস্তা ও পটাশিয়ামও পাওয়া যায় কিনোয়াতে। ভিটামিন বি১, বি২ এবং বি৬ মিলবে। এই বীজে রয়েছে ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। এসব উপাদান শরীরের নানান রোগ সারায়। মাথাব্যথা উপশমে কার্যকর কিনোয়া। রক্তসঞ্চালন প্রক্রিয়াও ভালো রাখে। দেশে ‘সাউ-কিনোয়া-১’ জাত উদ্ভাবিত হয়েছে। বর্তমানে এর উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ চলছে।

 ফুড ডেস্ক
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top