skip to Main Content

অর্গানিক I তিলের তেল

এতে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের শক্তি। সুস্বাস্থ্যে তো বটেই, সৌন্দর্যচর্চায়ও এটি অনন্য

খরা-সহনশীল একটি শস্য তিল। অর্থাৎ যেখানে অন্য কোনো ফসল হয় না, সেখানেও তিলের চাষ সম্ভব। ইতিহাস বলে, প্রথম তিলের চাষ হয়েছিল সিন্ধু উপত্যকায়, তা-ও পাঁচ হাজার বছর আগে। তিলের তেলের উদ্ভবও সেখানে। সিন্ধু উপত্যকার বাসিন্দারা মূলত তেলের জন্যই তিলের চাষ করতেন। আবার অনেকের ধারণা, মসলা হিসেবেও তিলের ব্যবহার হতো। খ্রিস্টপূর্ব ২৫০০ সালে তিলের তেল এবং তিল মেসোপটেমিয়ায় রপ্তানি করা হতো। পরবর্তী সময়ে এশিয়াজুড়ে জায়গা করে নেয় এই শস্য। চীন, কোরিয়া ও দক্ষিণ ভারতে এই তেলের জনপ্রিয়তা বেশি। চীনে মরিচ আর তিলের তেলের মিশ্রণে তৈরি চায়নিজ চিলি অয়েল পেস্ট বেশ জনপ্রিয়। জাপানি ভাষায় একে বলা হয় রায়ু। চীনা ও জাপানিরা বিভিন্ন খাবারে এটি মসলা হিসেবে ব্যবহার করে। দক্ষিণ ভারতে দৈনন্দিন রান্নায় এই তেলের ব্যবহার বেশি।
তিলের তেলে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান ম্যাংগানিজ, কপার, ক্যালসিয়াম, জিংক, ফাইবার, থায়ামিন, ভিটামিন বি৬, ফসফরাস, ট্রিপটোফেন ও প্রোটিন। এটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে পরিপূর্ণ। পাচক এবং স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা প্রতিদিনের রান্নায় তিলের তেল ব্যবহারের পরামর্শ দেন।
সুস্বাস্থ্যে তিলের তেলের অবদান বিস্ময়কর। নিয়মিত এর ব্যবহার উচ্চ রক্তচাপ ও সোডিয়ামের মাত্রা কমিয়ে দেয়। আমেরিকার পুষ্টিবিষয়ক দৈনিক ইয়েল জার্নাল অব বায়োলজি অ্যান্ড মেডিসিনের একটি গবেষণা বলছে, ‘যাদের উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যা আছে, তারা যদি ৪৫ দিন পর্যন্ত নিয়মিত এবং পরিমাণমতো তিলের তেল খাবারের তালিকায় যুক্ত করেন, তাহলে রক্তচাপের মাত্রা আশানুরূপ কমে যায়।’ তিলের বীজে আছে শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সিসামল। এটি দাঁত ও মুখের ভেতর ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া (স্ট্রেপটোকক্কাস মিউটেন্টস), দাঁতে গর্ত হওয়া থেকে সুরক্ষা দেয়। মাড়ির সংক্রমণ রোধ করে। গবেষণায় দেখা গেছে, তিলে রয়েছে প্রচুর ঔষধি বৈশিষ্ট্য, যা অক্সিডেটিভ চাপ এবং ফ্রি র‌্যাডিক্যালের কারণে সৃষ্ট হৃদ্রোগ নিরাময়ে সাহায্য করে। তেলের সিসামল এথেরসক্লেরসিস (ধমনির ভেতরে ফ্যাটযুক্ত পদার্থ) প্রতিরোধ করতে পারে। তিলের বীজ এবং তেলে থাকা কপার আর্থ্রাইটিস রোগ প্রতিরোধে কার্যকর। আমেরিকার জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, তিলের তেলের ম্যাগনেসিয়াম কলোরেকটাল ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়। যদি কেউ খাবারের তালিকায় দৈনিক ১০০ গ্রাম ম্যাগনেসিয়াম যুক্ত করেন, তাহলে কলোরেকটাল ক্যানসার কমে যায় ১২ শতাংশ। এ ছাড়া তিলের তেলের ম্যাগনেসিয়াম শ্বাসনালির খিঁচুনি রোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এটি হাঁপানি রোগের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষেধক। ঝাপসা দৃষ্টি, ক্লান্ত ও শুষ্ক চোখের সমস্যায় এই তেল অত্যন্ত উপযোগী। স্যুপ, স্যালাদ এবং ভাজা খাবারে নিয়মিত তিলের তেলের ব্যবহার বিষণ্নতা ও উদ্বেগ দূর করে।
আয়ুর্বেদে বলা হয়েছে, তিলের তেল ত্বকে ম্যাসাজ করলে দেহের অতিরিক্ত উত্তাপ কমে যায়। এই তেলে আছে গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান জিংক। এটি কোলাজেন উৎপাদনে সাহায্য করে এবং বিভিন্ন সংক্রমণ থেকে ত্বক সুরক্ষিত রাখে। এ ছাড়া জিংক দেহের কোষ তৈরি বৃদ্ধি করে।
তিলের তেল মুখত্বকের জন্য দারুণ ময়শ্চারাইজার। মুখ ধুয়ে এই তেল ভালোভাবে ম্যাসাজ করতে হবে। এরপর ১০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলতে হবে। এটি ব্যবহারের উপযুক্ত সময় গোসলের আগে। যদি তিলের গন্ধ তীব্র হয়, তবে জলপাই তেলের সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করা ভালো। ত্বকের যত্নে হলুদ বাটার সঙ্গে এর পেস্টও দারুণ উপযোগী। ভিটামিন-ই সমৃদ্ধ হওয়ায় বার্ধক্যজনিত রোগ প্রতিরোধক হিসেবে তিলের তেল অনায়াসেই ব্যবহার করা যায়। এই তেল ফ্রি র‌্যাডিক্যালের হাত থেকেও ত্বককে বাঁচায়। হাতের ত্বকের শুষ্কতা, পায়ের গোড়ালির ক্ষত সারাতে এর ভূমিকা অসাধারণ। প্রতি রাতে ঘুমানোর আগে ক্ষতযুক্ত স্থানে তেল ম্যাসাজ করতে হবে, সঙ্গে মোজা ব্যবহার অত্যন্ত জরুরি। সপ্তাহখানেক ব্যবহারের ফলে হাত ও পায়ের গোড়ালি ফিরে পায় হারিয়ে যাওয়া সতেজতা। এতে রয়েছে প্রয়োজনীয় ফ্যাটি অ্যাসিড ওমেগা-৩। এটি চুলে পুষ্টি জোগায় গোড়া থেকে। ফলে চুল দেখায় প্রাণবন্ত। ঈষদুষ্ণ তিলের তেল চুলে ম্যাসাজ করতে হবে। খেয়াল রাখা দরকার, তেল যেন উচ্চ মাত্রায় গরম না থাকে। চুল পাকা রোধে তিলের তেলের সঙ্গে নারকেল তেল, জলপাই তেল এবং বাদাম তেলের মিশ্রণটি দারুণ কার্যকর। এটি মাথার ত্বকের গভীরে প্রবেশ করে রক্তসঞ্চালনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। ফলে চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়। এ ছাড়া দূষণের কারণে সৃষ্ট অক্সিডেটিভ চাপ থেকে চুলকে নিরাপদ রাখতে সাহায্য করে। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির জন্য ড্যামেজ হওয়া চুলে সুরক্ষা দেয়। তিলের তেল মাথার ত্বকের সঙ্গে মানিয়ে যায় এবং ময়শ্চার জোগায়। চুল হয়ে ওঠে স্বাধীনভাবে পরিচালনার যোগ্য। এই তেল খুশকির বিরুদ্ধে কার্যকরভাবে যুদ্ধ করে। নিয়ম করে এক মাস তিলের তেল ব্যবহার করলে সম্পূর্ণ খুশকিমুক্ত থাকা যায়। পাশাপাশি মাথার ত্বকের চুলকানি থেকেও পরিত্রাণ মেলে। তিলের তেল এবং লেবুর রসের মিশ্রণ কন্ডিশনার উপযোগী ফল দেয়। এটি চুলে ম্যাসাজ করতে হবে সার্কুলার মোশনে। তবে তা যেন খুব জোরে না হয়। তারপর উষ্ণ তোয়ালে দিয়ে রাতভর মাথা ঢেকে রেখে দিতে হবে। পরদিন সকালে পরিষ্কার করে নিতে হবে। এ ছাড়া তিলের তেল চুলের প্রান্তভাগের ভাঙা অংশগুলো মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি জোগায়। চুলের গঠন ঠিক রাখতেও এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

 রেন্টিনা চাকমা
মডেল: কারিশমা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: সৈয়দ অয়ন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top