![interior-4](https://www.canvasmagazine.com.bd/wp-content/uploads/2018/03/interior-4.jpg)
ইন্টেরিয়র I মৃত্তিকাময় অন্দর
শুধু অন্দরসজ্জায় নয়, ঘরের দেয়াল তৈরির উপাদান হিসেবে মাটি বিশ্বস্ত। সৌন্দর্য সৃষ্টিতে এটি তুলনাহীন। লিখেছেন ফায়জা আহমেদ
প্রাচীনকাল থেকে মাটির বাসনকোসন গৃহসজ্জায় ব্যবহৃত। আমরা বিশ্বাস করে ফেলেছি, মাটির বাসনকোসন কেবল বৈশাখের দিনে ব্যবহার করা যায়, অন্যথায় সামাজিক মর্যাদার ক্ষতি হবে। এ ধরনের ভাবনা শেষ পর্যন্ত আত্মঘাতী। মাটির বাসনের উপকারিতা অনেক। বিশেষত স্বাস্থ্যের দিক থেকে। টমেটো, তেঁতুল কিংবা এই ধরনের টক ফল বা সবজির তরকারিতে থাকে হাই অ্যাসিড। আর একে সহনীয় করে ফেলতে সক্ষম মৃৎপাত্র, যা কিনা কাচ, চীনামাটি বা অ্যালুমিনিয়াম পারে না। এ রকম আরও সুসম্পর্ক রয়েছে মাটির বাসনের সঙ্গে খাদ্যের, স্বাস্থ্যেরও। গৃহসজ্জায় মাটির তৈরি ল্যাম্প চমৎকার একটি উপকরণ।
কাঠ, কাচ, সিরামিক ও অন্যান্য যেকোনো উপাদানের থেকে কম খরচে একটি নান্দনিক ল্যাম্প বানিয়ে ফেলা সম্ভব মাটি দিয়েই। এতে থাকতে পারে টেরাকোটা, পিতলের কাজ, কাপড়ের বাঁধুনিসহ নানা কিছু।
মাটির টানে আমরা প্রায়শই শহর থেকে ছুটি, ক্লান্তি কাটাই মাটির ঘরে। মাটির কলসির ঠান্ডা পানি পান করে।
ঘরের যেকোনো একটি বা একাধিক দেয়াল মাটির টেকশ্চারে তৈরি করতে পারেন। এই কাজে কাদামাটি খুব বিশ্বস্ত। রঙিন ঘরে দু-একটি মাটির দেয়াল হলে মন্দ হয় না। কারণ, এর সঙ্গে যেকোনো রঙের বেড কভার অথবা পর্দা কিংবা শতরঞ্জি মানিয়ে যায়।
মাটি দিয়ে আসবাবের কথা আমরা কখনো ভেবে দেখিনি। বিভিন্ন টেকনিক্যাল সলিউশন দিয়ে মাটির ছোটখাটো আসবাব তৈরি করা সম্ভব। পোড়ামাটির ফলকেই আমাদের কান্তজিউ মন্দির তৈরি হয়েছে। কারিগর হারাচ্ছি কেবল আমাদের রুচি হারাচ্ছে বলে। কারিগর বেঁচে থাকবে যদি মাটির প্রতি আমাদের ভালোবাসা ও বিশ্বাস থেকে যায়।
মাটি দিয়ে গৃহসজ্জা কেবল বৈশাখের জন্য তুলে না রাখার একটা পরিকল্পনা যদি সত্যি করা যায়, তাহলে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হবে, আমাদের সাংস্কৃতিক জীবনে আসবে নিজস্বতা।
গৃহসজ্জায় আধুনিকতা কোনো অংশেই মøান হবে না, সঠিক টেকনিক্যাল সলিউশন, সঠিক চিন্তা এবং ডিজাইন ম্যাটেরিয়ালের যথাযোগ্য ব্যবহার যদি করা যায়। বছরজুড়ে বহন করতে পারলে ঐতিহ্য অতীত হবে না, সমকালীন জীবনচর্চার অংশ হয়ে যাবে। রক্ষা পাবে নিজস্ব সংস্কৃতির নান্দনিক ভারসাম্য, বাঁচবে পরিবেশ, হারানো শিল্প জেগে উঠবে নতুন করে।
লেখক: স্বত্বাধিকারী, স্টুডিও গ্রিন
faiza.designer@gmail.com
ছবি: স্টুডিও গ্রিন