skip to Main Content

ছুটিরঘণ্টা I ফারাও রানির আখ্যান

আধুনিক এ সময়ে প্রাগৈতিহাসিক স্থাপত্যশৈলীর নিদর্শন খুব বেশি নেই। তবু যেগুলো রয়েছে, তার মধ্যে মিসরের হাতশেপসুত মন্দির অন্যতম। ঘুরে এসে লিখেছেন এলিজা বিনতে এলাহী

কোমল বয়সে, যখন কেবল সাধারণ জ্ঞানচর্চা শুরু হয়, তখন বহুল প্রচলিত একটি লাইনের সঙ্গে পরিচয় ঘটে আমাদের, ‘মিসর নীল নদের দান।’ কিছু বুঝে ওঠার আগেই দেশটির ইতিহাসের একটি কবাট খুলে যায় চোখের সামনে। জানাশোনার পরিধি যখন বাড়তে থাকে, ধীরে ধীরে পিরামিড, মমি, প্যাপিরাস, হায়ারোগ্লিফিকস, ওবেলিস্ক, ফারাও রাজাদের নানান কথা-উপকথা, মিসরীয় দেবতাদের কাহিনি মনের কোণে সত্য-মিথ্যার প্রশ্ন কিংবা পৃথিবীর টাইমলাইনের অতীত-বর্তমান নিয়ে হরদম দোলা দিয়ে যায়। তবে আমার ক্ষেত্রে সেই দোলাচল বহুগুণ বেড়েছে, যখন মিসর ভ্রমণ করেছি। পথভুলো পথিকের মতো মিসরীয় সভ্যতার নানান নিদর্শন আজও আচ্ছন্ন করে। চিন্তার জগতে দারুণ রেখাপাত করে ফারাও রাজাদের কাজকর্ম, রাজ্য চালানোর ধরন, তাদের অনবদ্য সৃষ্টি। মিসরীয় সভ্যতার বহু রহস্য পৃথিবীর বড় বড় প্রত্নতত্ত্ববিশারদ, ইতিহাসবিদ ও গবেষকেরা আজও ভেদ করতে পারেননি। আমি কোন ছার! মিসর ভ্রমণ করে একজীবনে এই মন তৃপ্ত হবার নয়!
প্রাচীন মিসরীয় রাজাদের ফারাও বলা হতো, এ কথা তো ছোটবেলাতেই জেনেছি আমরা! ফারাও রাজাদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ছিলেন দ্বিতীয় রামেসিস। তার মমি এখনো কায়রো মিউজিয়ামে সংরক্ষিত রয়েছে। প্রতিবছর কোটি কোটি পর্যটক সেই মমি দর্শনে যান। মিসরীয় সভ্যতার ৩০০০ বছরের ইতিহাসে ১৭০ জন ফারাও রাজার কথা জানা যায়। এর মাঝে নারী শাসক ছিলেন ৭ জন। যদিও সংখ্যাটি নিয়ে গবেষকেরা নিশ্চিত নন। সোবেকনেফেরু, হাতশেপসুত, নেফারতিতি আখামেননের, আনাক-সু-নামুন, নিতক্রিস, খেনকস প্রথম ও ক্লিওপেট্রা—ইতিহাসে পাওয়া যায় এ নামগুলো। সময়ের পরিক্রমায় অনেকের চিহ্ন মুছে গেলেও একজন নারী ফারাওয়ের স্মৃতি আজও মিসরের ভূপৃষ্ঠে বিদ্যমান। তিনি ফারাও রানি হাতশেপসুত।
মিসর ভ্রমণে জাহাজে চেপে নীল নদে যাননি, এমন পর্যটক বোধ হয় খুঁজে পাওয়া যাবে না। আমিও গেছি। মিসর ভ্রমণে সেটি ছিল সবচেয়ে চমকপ্রদ বিষয়। জাহাজ যাচ্ছে এক বন্দর থেকে অন্য বন্দরে। বন্দরে নামছি। বিভিন্ন শহর ঘুরছি। স্থাপনা দেখছি। ইতিহাসের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছি। নানান ভাবনা ও প্রশ্ন ভিড় করছে মনে। নীল নদকে দুচোখ ভরে দেখছি। আহা!
নীল নদে আমার জাহাজের নাম ছিল সেমিরামিস। এসে ভিড়ল লুক্সর বন্দরে। লুক্সর মিসরের দারুণ ঐতিহ্যসমৃদ্ধ এক অঞ্চল। আর এখানেই রানি হাতশেপসুতের মন্দির। বিখ্যাত ভ্যালি অব দ্য কিংসের পাশেই এর অবস্থান। ভ্যালি অব দ্য কিংসে ৬৪ জন ফারাও রাজার সমাধি রয়েছে। সুউচ্চ পর্বত দেইর এল বাহারির নিচেই এই মন্দির। ফারাও হাতশেপসুতের সমাধিও এখানে। স্টেপড প্ল্যাটফর্ম, স্তম্ভযুক্ত বারান্দা এবং মরুভূমির পটভূমিতে স্পন্দনশীল ভাস্কর্যগুলো একে বিশ্বের আকর্ষণীয় স্থাপত্যের মাস্টারপিসগুলোর একটি করে তুলেছে। সম্ভবত এই মন্দির আরও উল্লেখযোগ্য হওয়ার কারণ, এটি একজন নারী শাসকের রাজ্য।
কিংবদন্তি যা বলছে
হাতশেপসুতকে বলা হতো ‘মহৎ নারীদের প্রধান’। তিনি রাজা প্রথম থুতমোস এবং তার প্রধান স্ত্রী রানি আহমোসের কন্যা। ১৫০৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দে জন্ম হাতশেপসুতের। রাজা প্রথম থুতমোসের মৃত্যুর পর সিংহাসনে বসার কথা ছিল তারই। কিন্তু তিনি পুরুষ নন বলে তাকে শাসক হিসেবে তৎকালীন মিসরীয়রা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছিলেন না। তাই তার বদলে রাজা হন তার সৎভাই দ্বিতীয় থুতমোস। সৎভাই, কারণ প্রথম থুতমোসের দ্বিতীয় স্ত্রীর পুত্র তিনি। পরে তার সঙ্গেই বিয়ে হয় হাতশেপসুতের। প্রাচীন মিসরে ভাই-বোনের বিয়ের প্রচলন ছিল খুবই সাধারণ ঘটনা। তৎকালীন রাজপরিবার সব সময় চাইত, তাদের রাজরক্তে যেন বাইরের সাধারণ রক্ত প্রবেশ না করে। তাই নিজেদের একেবারে নিকটজনদের মাঝেই বিয়ের রেওয়াজ ছিল।
দ্বিতীয় থুতমোসের সময়কালে তার পাশে থেকে রাজ্য শাসন করেন হাতশেপসুত। এমনকি কথিত আছে, স্বামীর হাত দিয়ে রাজ্য শাসন করতেন মূলত হাতশেপসুত নিজেই। দ্বিতীয় থুতমোসের মৃত্যুর পর রাজপরিবারে আবার একই প্রশ্ন জাগে, এবার কে পরবেন রাজমুকুট? হাতশেপসুত একদিকে ছিলেন একজন শক্তিশালী রাজার কন্যা, আরেকদিকে একজন রাজার স্ত্রী। তার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, তিনি জন্মগ্রহণ করেছেনই শাসক হবার জন্য। কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় শাসকপ্রার্থী হিসেবে তৃতীয় থুতমোসের আবির্ভাব ঘটায়। দ্বিতীয় থুতমোসের অপর স্ত্রীর সন্তান তৃতীয় থুতমোস। তার মানে, হাতশেপসুত ছিলেন তৃতীয় থুতমোসের বিমাতা। সেই সময় তার বয়স মাত্র তিন বছর। এত ছোট বয়সে রাজ্য শাসন তার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই তার হয়ে ১৪৭৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মিসরের সিংহাসনে বসেন হাতশেপসুত। এর পরপরই তিনি এই দায়িত্বকে পাকাপোক্ত করে নেওয়ার কাজ করতে থাকেন।

শাসক হিসেবে হাতশেপসুত
তার প্রথম লক্ষ্য ছিল নিজেকে পূর্ণাঙ্গ ও সার্বভৌম ফারাও হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। আর এ কাজে মিসরীয় পুরাণই সহায় হয় তার। মিসরীয় পুরাণ অনুসারে, রাজা প্রথম থুতমোস ছিলেন মহাদেবতা আমুনের সাক্ষাৎ বংশধর। রাজা প্রথম থুতমোসের সন্তান হিসেবে শুধু দ্বিতীয় থুতমোসই নন, হাতশেপসুতও সমানভাবে দেবতার বংশধর। সুতরাং এবারে তার ফারাও হিসেবে প্রতিষ্ঠা হওয়ার পথ সুগম হয়। কিন্তু দাপ্তরিকভাবে রাজা হলেও একই সঙ্গে মুকুট ধরে রাখা এবং রাজ্যের সবার শ্রদ্ধা পাওয়া তার জন্য ছিল কঠিন পরীক্ষা। বিশেষ করে একজন নারী হয়েও মিসরীয়দের মনে রাজার স্থান পাওয়ার জন্য ভালো বেগ পেতে হয়েছে তাকে। সেই সময়কার মিসরীয়রা রাজা হিসেবে কোনো নারীকে মেনে নিতে রাজি ছিলেন না। হাতশেপসুত একদিকে যেমন ছিলেন অপরূপ সুন্দরী, তেমনি তার ছিল অসাধারণ বুদ্ধিমত্তা। তিনি এই সমস্যারও সমাধান করে ফেললেন। পুরুষের বেশে রাজ্য শাসন করতে শুরু করলেন। বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ সভাগুলোতে তিনি পুরুষের পোশাক এবং নকল দাড়ি পরতেন। এভাবে ধীরে ধীরে মানুষের কাছে হয়ে উঠলেন গ্রহণযোগ্য।
তবে হাতশেপসুত তার এই পুরুষালি বেশভূষা বা নকল দাড়ির জন্য ইতিহাসে বিখ্যাত হননি; হয়েছেন কর্মগুণে। তিনি ছিলেন মিসরের সবচেয়ে সফল শাসকদের একজন। আর অন্য নারী শাসকদের চেয়ে তার রাজত্বকাল ছিল দীর্ঘতর। আধুনিক পণ্ডিতদের মতে, হাতশেপসুত প্রায় ২২ বছর রাজত্ব করেছেন। সে সময় নতুন নতুন রাজ্যজয়ের পরিবর্তে নিজ রাজ্যকে সমৃদ্ধ করাই ছিল তার লক্ষ্য। অবশ্য সে ক্ষেত্রেও তার উল্লেখযোগ্য সফলতা ছিল। রাজকীয় স্থাপত্য, সমাধি, মন্দির তৈরিতেই মনোযোগ ছিল বেশি। তিনি অসংখ্য নতুন মন্দির, ভাস্কর্য, ওবেলিস্ক নির্মাণ করেছিলেন।
কার্নাক ও মা’আত মন্দির
তার সময়ে তৈরি স্থাপনাগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো কার্নাক মন্দির। মিসরের লুক্সরে নীল নদের তীরে অবস্থিত এই মন্দিরে সুউচ্চ ওবেলিস্ক রয়েছে। সেই সময়ে পুরো মিসরের সবচেয়ে উঁচু ওবেলিস্ক ছিল এগুলোই। মন্দিরের প্রবেশদ্বারের এক জোড়া ওবেলিস্কের একটি এখনো অবিকল টিকে রয়েছে। সুদীর্ঘ এই ওবেলিস্কগুলোতে বেশ দক্ষভাবে লাল গ্রানাইট পাথর দিয়ে খোদাই করা হয়েছে বিভিন্ন ছবি বা চিহ্ন।
হাতশেপসুতের তৈরি আরেকটি স্থাপনা মা’আত মন্দির। কার্নাক কমপ্লেক্সের এই মন্দিরের দেয়ালে দেয়ালে অত্যন্ত চমৎকারভাবে খোদাই করা আছে হাতশেপসুত আর তৃতীয় থুতমোসের মূর্তি। আয়তাকার কমপ্লেক্সের ঠিক মাঝখানটায় রয়েছে সুবিশাল এক হল। তখনকার বিভিন্ন আনুষ্ঠানিক কাজে ব্যবহৃত হতো এটি। হাতশেপসুতের তৈরি সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থাপনা হলো দের-আল-বাহরি উপত্যকায় অবস্থিত মন্দিরটি, যা হাজার বছর পরের গ্রিক স্থাপত্যকেও হার মানায়। এর প্রকৃত নামের বাংলা অর্থ দাঁড়ায় ‘পবিত্রের মধ্যে পবিত্র স্থান’। একে পৃথিবীর অন্যতম আশ্চর্য স্থাপত্য হিসেবে গণ্য করা হয়। মন্দিরের দেয়ালে এই পরাক্রমশালী নারীর জন্মের সেই পৌরাণিক কাহিনি খোদাই করা আছে, যেখানে হাতশেপসুতকে বলা হয়েছে মহাদেবতা আমুনের কন্যা।
বাণিজ্য বিস্তার
হাতশেপসুতের সাফল্য যে শুধু স্থাপত্যশৈলীতেই সীমাবদ্ধ ছিল, তা নয়। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যেও তিনি সমান সফল ছিলেন। এ ক্ষেত্রে তার সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ ছিল পান্ট যাত্রা। ২০০ বছর আগে ভেঙে যাওয়া বাণিজ্যিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে অষ্টাদশ রাজবংশের সম্পদ গড়ে তোলার সুযোগ তৈরি করেন হাতশেপসুত। পান্ট বর্তমান ইরিত্রিয়া, ইথিওপিয়া ও সোমালিয়ার কাছাকাছি লোহিত সাগরের উপকূলে অবস্থিত একটি স্থান। এরপর হাতশেপসুতের কল্যাণে পান্টের সঙ্গে মিসরের বহু বছর বাণিজ্যিক সম্পর্ক খুব ভালো ছিল। পান্ট থেকে লোবান, গন্ধরস, সোনাসহ অনেক দুর্লভ বাণিজ্যিক পণ্য মিসরে নিয়ে আসা হয়। হাতশেপসুতের অভিযাত্রীরা পান্ট থেকে ৩১টি গন্ধরসের গাছ নিয়ে আসেন। বিদেশ থেকে গাছ এনে রোপণের চেষ্টার এটাই প্রথম রেকর্ড। আর লোবান গুঁড়া করে হাতশেপসুত তৈরি করতেন চোখের কাজল। তিনি বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অন্য যেকোনো রাজার চেয়ে সফল ছিলেন। তার এই সফলতা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ছিল বহাল।
হাতশেপসুত মারা যান সিংহাসনে আরোহণের প্রায় দুই যুগ পর। তত দিনে তৃতীয় থুতমোস বড় হয়েছেন। এবার তিনি রাজ্যের শাসনভার হাতে নেন। ইতিহাসবিদদের মতে, তৃতীয় থুতমোস সম্ভবত হাতশেপসুতের প্রতি হিংসাপরায়ণ ছিলেন। এর কারণ হতে পারে তার জায়গায় বসে রাজ্য শাসনের কারণেই। তাই ক্ষমতায় আসার পর তৃতীয় থুতমোস সচেষ্ট হন হাতশেপসুতের কীর্তিগুলো মুছে ফেলতে। হাতশেপসুতের বিভিন্ন কীর্তিকে নিজের বলে চালিয়ে দেওয়ারও চেষ্টা করেন তিনি ও তার পুত্র দ্বিতীয় আমেনহোতেপ। অনেকের মতে, এটা ছিল মিসরে নারীদের ফারাও হওয়া থেকে বাধা দেওয়ার এবং তাদের ক্ষমতা হ্রাসের ব্যর্থ চেষ্টা।
তবে তারা পুরোপুরি সফল হতে পারেননি। এর কারণ হাতশেপসুতের দূরদর্শিতা। এ রকম কিছু যে হতে পারে, হাতশেপসুতের যেন সেই আশঙ্কা ছিল। তাই তিনি সমস্ত স্থাপনা, সমাধি, ওবেলিস্কসহ বিভিন্ন জায়গায় নিজের কীর্তির অসংখ্য প্রমাণ রেখে গেছেন। এত এত নিদর্শন চাইলেও ইতিহাসের পাতা থেকে পুরোপুরি মুছে ফেলা কারও পক্ষে সম্ভব নয়।
সময় ফুরায়, ফুরায় না রেশ
ভ্যালি অব দ্য কিংস জায়গাটা বিশাল। হেঁটে হেঁটে পুরো চত্বর দেখা খুবই মুশকিল। তবে মিসর পর্যটনে বেশ গোছানো। আগেই বলেছি, লুক্সর বন্দরে এসে জাহাজ যখন থামল, মনে মনে অপেক্ষা করে ছিলাম কখন হাতশেপসুতকে দেখব। অর্থাৎ, ভাস্কর্য আর মন্দিরের অবয়ব দেখবার জন্য মনটা চঞ্চল হয়ে ওঠে। কাউন্টার থেকে টিকিট নেওয়ার পর গাইড মোহাম্মদ বললেন, আগে আমরা ভ্যালি অব দ্য কিংস দেখব। সেটিও আসলে কম রোমাঞ্চকর নয়।
টয় ট্রেনের মতো একটি বাহন এসে আমাদের নিয়ে গেল সমাধিগুলোর কাছে। ওই বাহনের গন্তব্য ওটুকুই। তারপর হেঁটে হেঁটেই উপভোগ করা। সমাধি দেখা শেষ করেই ছুটলাম হাতশেপসুতের মন্দিরের দিকে। দূর থেকেই দেখতে পাচ্ছিলাম পাহাড়ের মাঝে বিশাল মন্দিরটি। মনে হচ্ছিল, এই তো চলে এসেছি; কিন্তু বেশ অনেকটা পথ এগোতে হলো।
মন্দিরের ওপরে ওঠার সিঁড়িগুলো নতুন করে পাথর কেটে বানানো হয়েছে। নিচের চত্বরে দেয়ালে ও পিলারে পাথর কেটে আঁকা ছবিগুলো উপভোগ করলাম। গাইড মোহাম্মদ হায়ারোগ্লিফিকস দেখিয়ে আমার পরীক্ষা নিচ্ছিলেন। নাইল ক্রুসে বন্দরে বন্দরে ঘুরে তিনি গড়গড় করে যেসব ইতিহাস বলছিলেন, সেগুলো আমার মনে আছে কি না, বোঝার চেষ্টা করছিলেন।
মন্দিরের ওপর তলায় হাতশেপসুতের চারটি ভাস্কর্য। সেখানে ছবি তোলার সুযোগ কোনো পর্যটকই ছাড়তে নারাজ। আমিও তুললাম। হাতশেপসুত মন্দির যখন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছিলাম, প্রকৃতির সুনিপুণ সৌন্দর্যের সঙ্গে একাকার হয়ে ইতিহাসও মনে দিচ্ছিল দোলা। ধারণা করি, যেকোনো পর্যটকের মনেই এভাবে দোলা দেয় বহুদূর অতীত থেকে ভেসে আসা এক বিচক্ষণ নারী শাসকের প্রজ্ঞা ও শিল্পরুচির বারতা।
সময় ফুরাচ্ছে, মোহাম্মদ জানান দিলেন। কী আর করা! ফিরতে হবে। জাহাজ নতুন গন্তব্যে যাওয়ার অপেক্ষায়। ফেরার আগে পেছন ফিরে আরও একবার চোখ ভরে দেখে নিলাম প্রিয় হাতশেপসুতকে!

ছবি: লেখক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top